২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
যাদের বিপক্ষে লড়বে বাংলাদেশ
উৎপলশুভ্রডটকম
১৫ অক্টোবর ২০২১
আজ বাদে কালই বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের, খেলতে হবে প্রাথমিক পর্ব। কোন দল কেমন খেলে, কার ব্যাটে পা হড়কাতে পারে বাংলাদেশের, কে-ই বা কাঁপিয়ে দিতে পারেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপ… উদ্বেগমাখা চোখেই প্রশ্নগুলো করছেন বাংলাদেশের সমর্থকরা। সমর্থকদের এই কৌতূহলগুলো মেটানোর চেষ্টা করছে উৎপলশুভ্রডটকম।
বছর-মাস-দিন পেরিয়ে অপেক্ষা এখন ঘণ্টার। রাত পোহালেই তো পর্দা উঠবে টি-টোয়েন্টির বিশ্ব আসরের। বাংলাদেশও মাঠে নামছে উদ্বোধনী দিনেই, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা শুরু রাত আটটায়।
প্রাথমিক পর্বে খেলতে হচ্ছে তথ্যেই পরিষ্কার, ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটটা বাংলাদেশের কাছে এখনো ধাঁধার নাম। সমর্থকদের মনে চাপা শঙ্কা আছে আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশগুলোর বিপক্ষে ম্যাচগুলো নিয়েও। কোন দল কেমন খেলে, কার ব্যাটে পা হড়কাতে পারে বাংলাদেশের, কে-ই বা কাঁপিয়ে দিতে পারেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপ… উদ্বেগমাখা চোখেই প্রশ্নগুলো করছেন সবাই। সমর্থকদের এই কৌতূহলে শামিল হতে চেয়েছে উৎপলশুভ্রডটকম-ও। বিশ্বকাপের প্রাথমিক পর্বে বাংলাদেশের তিন প্রতিপক্ষ-- স্কটল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি ও ওমান-- নিয়ে কাটা-ছেঁড়ার একটা চেষ্টাই হচ্ছে এখানে।
স্কটল্যান্ড
যতটুকু না স্কটিশ, তার চেয়েও বেশি ইংলিশ; এই কথাটা যেন স্কটল্যান্ডের ক্রিকেটারদের নামের পাশে বসে যায় বেশ ভালোভাবেই। দলটার অধিকাংশ ক্রিকেটারই কাউন্টি ক্রিকেটের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে নিজেদের করে তুলেছেন সমৃদ্ধ। বছরজুড়েই তারা ব্যস্ত থাকেন ইংল্যান্ডের ঘরোয়া লিগগুলোতে। তাই দল হিসেবে স্কটল্যান্ড বড় কোনো নাম না হলেও কাউন্টি ক্রিকেটে অবাধ বিচরণ তাদের পারফরম্যান্সটা এগিয়ে দিয়েছে অনেক দূর।
অভিজ্ঞ কাইল কোয়েতজারের নেতৃত্বে জর্জ মানসি, ম্যাথু ক্রস, রিচি বেরিংটন, জস ডেভি, সাফেয়ান শরিফ, মার্ক ওয়াটদের নিয়ে বিশ্বকাপে নামবে স্কটল্যান্ড। ২০২১ সালে স্কটল্যান্ড খেলেছে ৫ টি-টোয়েন্টি, সেখানে ২ জয়ের বিপরীতে হার জুটেছে তিন ম্যাচে। তবে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা বেশ আটঘাট বেঁধেই নিয়েছে তারা। মানে চলে এসেছে বিশ্বকাপ শুরুর প্রায় এক মাস আগেই। আইসিসি ওয়ার্ল্ড লিগের ম্যাচ, পিএনজি আর ওমানের সাথে ওয়ানডে-টি২০ সিরিজ খেলে তৈরি করেছে নিজেদের।
ব্যাট হাতে স্কটিশ ব্যাটসম্যান রিচি বেরিংটন রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। সর্বশেষ পাঁচ ইনিংসে তাঁর গড় ৫৪। এমনিতেই বেরিংটনের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। তাঁর সেঞ্চুরিতেই তো ২০১২ সালে বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি হারিয়েছিল স্কটিশরা।
ক্যাপ্টেন কোয়েতজারের সাম্প্রতিক ফর্ম সুবিধার না হলেও বড় আসরে স্কটিশদের মূল ভরসার নাম এই কোয়েতজারই। পাশাপাশি ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন মানসি ও ক্রস। শেষ তিন টি-টোয়েন্টির দুটিতেই ফিফটি করেছেন মানসি। ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে রয়েছেন জোনাথান ট্রট, বিশ্বকাপে স্কটিশদের ব্যাটিং নিয়ে তাই দুর্ভাবনার কারণ নেই তেমন।
বোলিং বিভাগে সাফেয়ান শরিফ বরাবরই স্কটিশদের নির্ভরতার প্রতীক, ডেথ ওভারে স্কটিশদের মূল ভরসা তিনিই। পাশাপাশি কাউন্টিতে অসাধারণ পারফরম্যান্সকে সঙ্গী করে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন জস ডেভি। চোখ রাখতে হবে ইয়র্কার স্পেশালিস্ট ব্র্যাড হুইলের ওপরও।
স্পিন বোলিংয়ে মার্ক ওয়াট ও হামজা ছাড়াও লেগ স্পিনার ক্রিস গ্রিভসও প্রস্তুত।
বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ তাদের বিপক্ষেই। বেশ হিসাব কষেই সেদিন মাঠে নামতে হবে টাইগারদের।
পাপুয়া নিউ গিনি
দিনের পর দিন ব্যর্থ হয়েও হাল না ছাড়া এক দলের নাম পাপুয়া নিউ গিনি। বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়ার আশায় বারংবার কোয়ালিফায়ারে অংশ নেওয়া দলটি অবশেষে পা রাখতে পারছে বিশ্বকাপের মঞ্চে। নিঃসন্দেহে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে পা রাখতে পারাটাই এখন পর্যন্ত পিএনজি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন।
তবে এখানেই থামতে চাইছে না তারা। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে মূল পর্বে ওঠার স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছে তারা। আর স্বপ্ন পূরণের পথে মূল বাধা মনে করছে বাংলাদেশকে। পিএনজি অধিনায়ক আসাদ ভাল্লা বলেছেন, 'নিজেদের যোগ্যতা যাচাইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে মুখিয়ে আছি।'
টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর এবারই প্রথম পাপুয়া নিউ গিনির মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। তবে আইসিসি ট্রফিতে কিন্তু ১৯৮২ সালেই মুখোমুখি হয়েছিল দু'দল। ৬০ ওভারের সেই ম্যাচে ৩ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। মাঝে পেরিয়েছে ২৯ বছর, এখন দু'দলের পার্থক্যটা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। চাপটা পুরোপুরিই থাকবে বাংলাদেশের ওপর। বাংলাদেশের এখন একটাই ভয়, পচা শামুকে পা যেন না কাটে।
পিএনজির সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতিটা তাদের মোটেও ভালো হয়নি। সবশেষ আট ওয়ানডে ও দুই টি-টোয়েন্টিতেই পরাজিত হয়েছে তারা। ব্যাটিং বা বোলিং, দু'দিকেই বেশ ধুঁকছে দলটা। দুয়েকজন ভালো করলেও ফলাফলের ডিঙি ভেড়ানো যায়নি নিজেদের অনুকূলে।
অধিনায়ক আসাদ ভাল্লা অবশ্য দারুণ ছন্দেই আছেন। শেশে বাউ ও টনি উড়াও ব্যাট হাতে ভয়ংকর হয়ে ওঠার বার্তা দিয়েছেন। বোলিংয়ে সাবেক অধিনায়ক ক্রিস আমিনিকে মূল ভরসা ধরে এগোতে হবে বারামুন্দিসদের। তবে সমস্যা একটাই, তারা কেবল ম্যাচগুলোই জিততে পারছে না।
একে তো প্রথম বিশ্বকাপ, তার ওপর এমন হারের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে থাকা দল; কে জানে, এটাই বিশ্বকাপে গিয়ে তাদের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে কি না।
ওমান
ক্রিকেটে স্বাগতিক দল তো বাড়তি সুবিধা লাভ করে বরাবরই। চেনা উইকেটে খেলার কারণে ওমানের সুযোগটা অন্যান্যদের চেয়ে বেশি থাকবে স্বাভাবিকভাবেই। আর প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে বিশ্ব আসর, গ্যালারি থেকে প্রেরণা তো থাকবেই।
প্রস্তুতি ম্যাচে ওমান যে একাদশ বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামিয়েছিল, তাদের করোরই বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই হয়নি। এরপরেও তাদের করা ১৫০ ছুঁইছুঁই স্কোর ধারণা দিচ্ছে ওমানের মূল দলের সামর্থ্য সম্পর্কে।
যদিও বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হওয়া দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে একেবারেই নিষ্প্রভ ছিলেন শুরুর দিকের চার ব্যাটসম্যান। অধিনায়ক জিসান মাকসুদও ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অল্প রানে হারের পেছনে পাওয়ারপ্লে ব্যবহার করতে না পারারও একটা ভূমিকা রয়েছে।
মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ নাদিম ও লোয়ার অর্ডারে নাসিম খুশির ক্যামিওতে ভর করেই মূলত ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ওমান। তাই, এতটুকু নিশ্চিতভাবেই বলা চলে যে, ওমানের টপ-ওর্ডার রানে ফিরলে প্রতিপক্ষকে তুমুল চাপে রাখবে স্বাগতিকরা।
এ বছর ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ১০ ম্যাচের ৫টা জিতেছে ওমান। বাকি ম্যাচগুলোর চারটিতে হেরেছে। এ বছর জয়ের সংখ্যা বেশি হলেও, বিশ্ব আসরে ওমানের পারফরম্যান্স খুব একটা সন্তোষজনক নয়। সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের সাথে জিতলেও বেশ বাজেভাবেই হেরেছিল বাংলাদেশের কাছে। বাংলাদেশের বিপক্ষের ম্যাচকে যদিও তারা শিক্ষাসফর হিসেবেই নিয়েছিল সেবার।
এবারের গল্পটা ভিন্ন হলেও হতে পারে, তবে সে জন্যে নিজ মাঠের ফায়দা কাজে লাগাতে হবে। আকিব ইলিয়াস, জিসান মাকসুদ, যতিন্দর সিংদের ব্যাট হেসে উঠলে ওমান গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে যাবে অনায়াসাসেই। বল হাতে বাঁহাতি পেসার বিলাল খান আর লেগ স্পিনার খাইবার আলী তো আছেনই বাকি দায়িত্বটুকু সামলে নিতে।
আর যদি সবাই জ্বলে উঠতে পারেন এক সঙ্গে, কেবল বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক হয়েই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে হবে না তাদের।