বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া অন্যরকম এক ‘ফাইনাল’!

উৎপল শুভ্র

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া অন্যরকম এক ‘ফাইনাল’!

ম্যাচ শুরুর আগে। ছবি: আইসিসি

রসিকতা করে অনেকে আজকের ম্যাচটাকে ‘ফাইনাল’ বলছে। মুখোমুখি হচ্ছে সুপার টেনে জয়ের দেখা না পাওয়া দুই দল। ‘ফাইনাল’-ই তো! তবে পার্থক্য হলো, এটি শিরোপা-নির্ধারণী নয়। কোন দল শূন্য হাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ করবে—এই ‘মহাগুরুত্বপূর্ণ’ প্রশ্নটারই শুধু মীমাংসা হবে এতে।

প্রথম প্রকাশ: ১ এপ্রিল ২০১৪। প্রথম আলো।

প্রথমে অস্ট্রেলিয়া। এরপরই বাংলাদেশ।

ইংরেজি বর্ণানুক্রমিকভাবে লেখা হয় বলে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর শুরুতেই থাকে এই দুটি দেশের নাম। কে ভেবেছিল, এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও ক্রমটা একই রকম সাজিয়ে দেবে!

কাল চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি ‘কমলা রূপকথা’ বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়াকে মিলিয়ে দিয়েছে এক বিন্দুতে। সুপার টেনে শুধু এই দুটি দলের কাছেই জয় এখনো অধরা এক স্বপ্ন।

একটা জায়গায় অবশ্য এগিয়ে থাকার দাবি করতে পারে বাংলাদেশ। প্রাথমিক পর্বে খেলতে হয়েছে বলে অন্তত দুটি জয়ের সুখস্মৃতি তো আছে। সেটিও তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই। অস্ট্রেলিয়ার সঞ্চয়ে যেখানে শুধুই পরাজয়।

প্রাপ্তির সবটুকু প্রাথমিক পর্বেই! ছবি: এএফপি

প্রথমে অস্ট্রেলিয়া।

এরপরই বাংলাদেশ।

আরেকটি ক্ষেত্রেও এটি সত্যি। সুপার টেনের দুই নম্বর গ্রুপে এক শর নিচে অলআউট হওয়ার ‘কীর্তি’ তো শুধু এই দুই দলেরই। অস্ট্রেলিয়ার নাম আগে আসবে। গত পরশু ভারতের বিপক্ষে ৮৬ রানেই গুটিয়ে গেছে পরাক্রান্ত বিগ হিটারদের দল। বাংলাদেশের সর্বনিম্ন যেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯৮।

রসিকতা করে অনেকে আজকের ম্যাচটাকে তাই ‘ফাইনাল’ বলছে। মুখোমুখি হচ্ছে সুপার টেনে জয়ের দেখা না পাওয়া দুই দল। ‘ফাইনাল’-ই তো! তবে পার্থক্য হলো, এটি শিরোপা-নির্ধারণী নয়। কোন দল শূন্য হাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ করবে—এই ‘মহাগুরুত্বপূর্ণ’ প্রশ্নটারই শুধু মীমাংসা হবে এতে।

ক্রিকেট রহস্য করতে ভালোবাসে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট আরও বেশি। নইলে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ‘অস্ট্রেলিয়া’ ‘অস্ট্রেলিয়া’ রব কীভাবে এমন হাহাকারে রূপান্তরিত হয়! যে জর্জ বেইলির হাতে ট্রফি দেখেছিলেন অনেকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ড্যারেন স্যামির সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে সেই বেইলিই কেন সংবাদ সম্মেলনকক্ষের মেঝেতে বসে পড়বেন! চোখে শূন্য দৃষ্টি। এই একটা ট্রফিই অস্ট্রেলিয়ার কেবিনেটে নেই। সেই আক্ষেপ ঘোচা দূরে থাক, উল্টো অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে দুঃস্বপ্নের নামান্তর হয়ে গেল এই বিশ্বকাপ।

এই অস্ট্রেলিয়া বড্ড অচেনা! ছবি: গেটি ইমেজেস

বাংলাদেশের জন্যও তো তা-ই। পার্থক্য বলতে, বাংলাদেশের চাওয়া ছিল বড় সামান্য। ‘দেশেই বিশ্বকাপ রেখে দেব’ এমন কথাবার্তা কারও কারও মুখে শোনা গেছে বটে, তবে সেটি ক্রিকেট বোধ বিবর্জিত বাঁধনহীন আবেগের প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রাথমিক পর্বের বৈতরণি পেরিয়ে সুপার টেনে দু-একটা অঘটন—বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই চাওয়া এর বেশি কিছু ছিল না। সুপার টেনে ওঠা গেছে, যদিও সেই আনন্দে কালি ছড়িয়ে দিয়েছে হংকংয়ের কাছে পরাজয়। আসল বিশ্বকাপে পরাজয়ের মালাটা শুধু দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হয়েছে এখন পর্যন্ত। শেষটা কি কোনো চমক নিয়ে অপেক্ষা করছে?

সেই আশার ভেলার যাত্রীরা আজও ঠিকই ভরিয়ে তুলবে মিরপুরের গ্যালারি। কিন্তু আশার উল্টো পিঠে আশঙ্কাও কি নেই? টি-টোয়েন্টির বিগ হিটারদের তালিকা করতে গেলে অস্ট্রেলিয়ানরা সেটির অনেকটা জুড়ে থাকেন। ফিঞ্চ-ওয়ার্নার-ওয়াটসন-ফকনার-ম্যাক্সওয়েল-বেইলি...কী সব নাম! এই টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত এসব শুধু ‘নাম’-ই থেকে গেছে। সব হারিয়ে নির্ভার এসব ‘দৈত্য’রা আজ আবার ভয়াল রূপে দেখা দেবেন না তো!

দিলে দেবেন। বাংলাদেশেরই বা আর কী হারানোর আছে!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×