আজ টেস্ট স্ট্যাটাসের স্বপ্নপূরণের দিন
উৎপল শুভ্র
২৬ জুন ২০২১
দিনটি শুরু হয়েছিল প্রত্যাশা পূরণের অপেক্ষা নিয়ে। বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাচ্ছেই, লর্ডসে আইসিসির সভায় সেটির চূড়ান্ত অনুমোদন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ টেস্ট পরিবারের দশম সদস্য হতে অন্য দেশগুলোর যে সমর্থন, তা পাওয়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল সভার আগেই। এই লেখাটা সেই স্বপ্নপূরণের জন্য ক্ষণ গণনার গল্প।
প্রথম প্রকাশ: ২৬ জুন ২০০০। প্রথম আলো।
২৬ জুন ২০০০—আজকের এই দিনটি অন্য দশটি দিনের মতো নয়। আজও একই নিয়মে পূর্ব দিকে উঠেছে সূর্য, সন্ধ্যায় তা অস্ত যাবে পশ্চিমে। অনেক কিছুই চলবে একই প্রাত্যহিক নিয়মে, তারপরও আজকের দিনটি অন্যরকম। আজই বিশ্ব ক্রিকেটের এলিট শ্রেণিতে স্থান পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্রিকেটের ১২৩ বছরের ইতিহাসে মাত্র দশম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পাচ্ছে টেস্ট খেলার অধিকার। আজ থেকে টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে পরিচিত হবে বাংলাদেশ!
এত নিশ্চিত করে কি বলা যায়? এখনো তো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে বাকি। তকে গত কয়েক মাসের ঘটনা প্রবাহ যাঁরা অনুসরণ করেছেন, তাঁরা কিন্তু নিশ্চিতই। আজ লর্ডসে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসির যে বার্ষিক কনফারেন্স হচ্ছে, সেখানে শুধু আনুষ্ঠানিকতাটুকুই সম্পন্ন হতে বাকি। কাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে একথা বলতেই অবশ্য প্রতিবাদ করলেন বিসিবির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক। ‘আমি নিশ্চিত’ বলার ঝুঁকি নিতে রাজি নন তিনি, থেমে থাকলেন ‘আমি আশাবাদী’তেই। বললেন কারণটাও, ‘ভোটের ব্যাপার তো, না হওয়া পর্যন্ত কোনো বিশ্বাস নেই।’ এই সংশয় থাকার পরও একটু পরই অবশ্য আবার বললেন, ‘আশা করি ৩৫টি ভোট পেয়ে সর্বসম্মতভাবেই আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস পাব।’
৩৫টি ভোট মানে ২৬টি সহযোগী সদস্য আর ৯টি পূর্ণ সদস্য দেশ। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের পর আইসিসির দশম পূর্ণ সদস্য দেশ হতে চেয়ে বাংলাদেশ আবেদন করেছিল ১৯৯৮ সালের ১৫ জানুয়ারি। এ জন্য প্রয়োজন সহযোগী সদস্য দেশগুলোর সব কটিকে পাশে পাওয়া এবং পূর্ণ সদস্য ৯টি দেশের মধ্যে কমপক্ষে ৭টির সমর্থন।
সহযোগী সদস্য দেশগুলো একযোগে বাংলাদেশকে সমর্থন করে আসছে আগে থেকেই। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে—এই ৫টি পূর্ণ সদস্য দেশও গত বছরের সভাতেই সমর্থন জানিয়েছিল। গতবার বিপক্ষে থাকা চারটি দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের মত পরিবর্তন করেছে এবার, সে কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েও দিয়েছে তারা। একমাত্র ইংল্যান্ডই একটু গাঁইগুঁই করছে বলে শোনা গিয়েছিল, সৈয়দ আশরাফুল হককে এমনকি তাদের সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারেও নিশ্চিত মনে হলো গতকাল।
তা যদি না-ও হয়, যেমন শোনা যাচ্ছে, ইংল্যান্ড যদি পক্ষে বিপক্ষে না গিয়ে নীরবও থাকে, তাতেও বাংলাদেশের সমস্যা নেই। সাতটি পূর্ণ সদস্য দেশের সমর্থন হলেই চলে, সেখানে কনফারেন্স শুরু হওয়ার বেশ কদিন আগেই আটটি দেশ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশকে। তারপরও চূড়ান্ত উৎসবে মেতে উঠতে অপেক্ষা করাই ভালো। ‘ভোটের ব্যাপার তো!’
তবে অপেক্ষাটা এমন দীর্ঘ কিছু হচ্ছে না। আজ বিকেল নাগাদই হয়তো আরেকটি ‘ক্রিকেটীয় উল্লাসে’ মেতে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। ১৯৭৭ সালের ২৬ জুলাই আইসিসির সদস্যপদ লাভ, ১৯৯৯-এর মে’তে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দুটি স্মরণীয় জয়—প্রতিবারই বলা হয়েছে ‘নতুন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশের ক্রিকেট!’ ভুল বলা হয়নি। এগুলো সবই এ দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে স্মরণীয় সব মাইলফলক। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট সত্যিকার নতুন যুগে প্রবেশ করছে আজ থেকেই। টেস্ট স্ট্যাটাস তো শুধু পাঁচ দিনের একটি ক্রিকেট ম্যাচ খেলার সুযোগ নয়, এটি ‘ক্রিকেটিং নেশন’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও।
সেই স্বীকৃতি পাওয়াটা উৎসব করার মতোই একটা উপলক্ষ।