মুশফিকের কান্না
উৎপল শুভ্র
২৬ মে ২০২১
ওয়ানডেতে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি দলকে জেতাতে পারেনি। জয়ের দুয়ারে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে নিজেরই ভুলে। ম্যাচশেষে ড্রেসিংরুমে ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়া মুশফিকুর রহিম তাই ম্যাচ-সেরার পুরস্কার নিতেও যাননি।
প্রথম প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০১১। প্রথম আলো।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ হিসেবে নাম ঘোষণা করা হলো। কিন্তু মুশফিকুর রহিম কোথায়?
মুশফিকুর রহিম তখন ড্রেসিংরুমে কাঁদছেন! ওয়ানডেতে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি, সেটিও কি অসাধারণ এক ইনিংস! নইলে কি আর পরাজিত দলে থেকেও ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান! তারপরও মুশফিকুরের প্রাপ্তি কান্না! স্টুয়ার্ট লর কাছেও এটি ‘অন্যায়’ বলে মনে হচ্ছে, ‘এটা খুব লজ্জার ব্যাপার যে, ছেলেটা তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেও পরাজিত দলে! ড্রেসিংরুমে ফিরে ও একেবারে ভেঙে পড়েছে।’
পুরস্কার বিতরণীতে যেতেই হয়েছে সাকিব আল হাসানকে। মুশফিকুরের পুরস্কারটাও তিনিই নিলেন। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে পাঠালেন কোচকে। ম্যান অব দ্য ম্যাচেরও সংবাদ সম্মেলনে আসা নিয়ম। মুশফিকুর যে তখনো নিজেকে সামলেই উঠতে পারেননি। কাঁদতে কাঁদতে কখনো কি তাঁর মনে হচ্ছিল, ওভারের দ্বিতীয় বলেই ছক্কা মারতে না গিয়ে আরেকটু অপেক্ষা করলেই হতো? ল এই আলোচনায় অংশ নিতেই রাজি নন, ‘ওকে একটুও দোষ দেওয়া যায় না। ওর আগে যে ব্যাটসম্যানরা আউট হলো, ওরা একটু অন্য রকমভাবে খেললেই গল্পটা হয়তো অন্য রকম হতো।’
এর চেয়ে সত্যি কথা আর হয় না। মুশফিকুর তো শুধু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই খেলছিলেন না, তাঁকে খেলতে হচ্ছিল নিজের দলের ব্যাটসম্যানদের অসহযোগিতার বিপক্ষেও। অন্য প্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়তে পড়তে উইকেটে শেষ ব্যাটসম্যান। বেচারা আর কী করবেন!
মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তাঁর জুটিটা ম্যাচ থেকে জিম্বাবুয়েকে বেরই করে দিচ্ছিল। ১৯ বলে ২৪ রান প্রয়োজন, হাতে ৫ উইকেট—অথচ ভিটরিকে ছক্কা মারার চেষ্টা করতে গেলেন মাহমুদউল্লাহ! মাঝখানে এক বল পরই নাসিরও নেই। পরের ওভারে নেই শফিউল ও রুবেলও। মুশফিকুর গুছিয়ে আনেন আর বাকিরা এলোমেলো করে দেন। শেষ পর্যন্ত সব এলোমেলোই হয়ে গেল।
সবচেয়ে এলোমেলো তো ক্যাচিং। পুরস্কার বিতরণীতে সাকিব বলে এসেছেন, এমন ফিল্ডিং করলে ওয়ানডে জেতা যায় না। স্টুয়ার্ট ল নখ কামড়ানো সমাপ্তির পরও ভুলতে পারছেন না ক্যাচের পর ক্যাচ ছাড়া, ‘আমরা আজ যে চারটি ক্যাচ ফেলেছি, এখনো সেটি মাথা থেকে তাড়াতে পারছি না।’
সিরিজ শেষ। বাকি দুই ম্যাচে শুধুই মুখ রক্ষার লড়াই। ভেঙে পড়া দলকে চাঙা করতে তুলতে এই মন ভেঙে দেওয়ার ম্যাচেরই শরণাপন্ন ল। প্রথম দুই ম্যাচে মেরুদণ্ডহীন পারফরম্যান্সের পর এটিতে জিততে জিততে হারা। অনেক ইতিবাচক দিক খুঁজে পাচ্ছেন স্বাভাবিক। সবচেয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন হারারে থেকে ‘পালাতে’ পেরে। এখানে হারের পর হার। পরদিন সকালে বুলাওয়ের বাসে উঠতে যেন তাই তর সইছিল না লর, ‘হারারে আমাদের এমন সব বাজে সব স্মৃতি উপহার দিয়েছে যে, এখান থেকে চলে যেতে পারাটা খুব ভালো হবে।’