শুভ্র.আলাপে নানা আলাপ
অধিনায়ক হিসাবে কেমন মুমিনুল?
রিজওয়ান রেহমান সাদিদ
২৪ এপ্রিল ২০২১
বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুল হকই কি যোগ্যতম? এখনো বিচার করার সময় আসেনি, দায়িত্ব পাওয়ার পর কখনোই পুরো শক্তির দল পাননি--সব জেনে এবং মেনেও উৎপলশুভ্রডটকমের ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের নিয়মিত আয়োজন শুভ্র.আলাপ-এর শুক্রবারের শোতে প্রসঙ্গটা উঠল।
প্রশ্নটা প্রায় সর্বজনীন। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুল হকই কি যোগ্যতম? এখনো বিচার করার সময় আসেনি, দায়িত্ব পাওয়ার পর কখনোই পুরো শক্তির দল পাননি--সব জেনে এবং মেনেও উৎপলশুভ্রডটকমের ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের নিয়মিত আয়োজন শুভ্র.আলাপ-এর শুক্রবারের শোতে প্রসঙ্গটা উঠল। অনেক দর্শক প্রশ্ন করেছেন এ নিয়ে। উৎপল শুভ্রকে তাই প্রশ্নটা তুলতেই হলো এদিনের শুভ্র.আলাপ-এর অতিথি ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ নাজমূল আবেদীন ফাহিমের সামনে।
মুমিনুলকে বিচার করার জন্য নাজমূল আবেদীন ফাহিমের আদর্শ কাউকে পাওয়া কঠিন। মুমিনুলকে দেখছেন সেই কৈশোর থেকে। বিকেএসপিতে ভর্তি হতে চেয়েও উচ্চতা কম হওয়ায় প্রথমে সুযোগ না পাওয়া, পরে সুযোগ পাওয়ার পর ব্যাটিং দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করা সবকিছুরই সাক্ষী। মুমিনুলের ব্যক্তিত্ব-মানসিকতা এসবও তাঁর খুব ভালো করে জানা। সেই অভিজ্ঞতা থেকে অধিনায়ক মুমিনুলকে বিচার করতে গিয়ে ফাহিম বলছেন, অধিনায়কত্বের ম্যান ম্যানেজমেন্ট বলে যে অংশটা আছে, সেখানে মুমিনুলের কিছুটা ঘাটতি খুঁজে পান তিনি, 'ম্যান ম্যানেজমেন্ট, কিংবা অন্য কারও মধ্যে থেকে তাঁর সেরা বের করে আনার মতো মানুষ ও (মুমিনুল) না। আর ও বোধ হয় ক্যাপ্টেনসি পাওয়ার আশাও করেনি কখনো। হয় না, কেউ সব কাজেই একটু আগ বাড়িয়ে যায়, এই করে-সেই করে, ও কখনোই এরকম মানুষ ছিল না। ও সবসময়ই চুপচাপ নিজের খেলা খেলে যেত, নিজের খেলা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা ছিল, ওইটুকুই। কিন্তু ক্যাপ্টেন হতে গেলে ক্যাপ্টেন হওয়ার অনেক আগে থেকেই, এমনকি দশ-বারো বছর আগে থেকেই চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। সেভাবে ও কখনোই গড়ে ওঠে নাই। তাই ম্যান ম্যানেজমেন্ট স্কিলের দিকটায় ওর কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে।'
কিন্তু মাঠে তাঁর শরীরী ভাষাও কি অধিনায়কের জন্য আদর্শ? এ নিয়ে আলোচনার আগে 'মুমিনুলের ধরনটা যে আর দশজনের থেকে আলাদা'-এটা দর্শককে জানিয়ে দেওয়াটা কর্তব্য মনে করলেন উৎপল শুভ্র। উদাহরণ হিসেবে বললেন ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের দলে ডাক পাওয়ার পর মুমিনুলের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সাংবাদিকদের ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার কথা। বাংলাদেশ দলে ডাক পাওয়ার পর ক্রিকেটারের মুখ থেকে 'ভীষণ খুশি লাগছে' 'বাবা-মা বা অন্য কারও স্বপ্ন পূরণ হলো' এই জাতীয় প্রতিক্রিয়াই তো শুনে অভ্যস্ত সবাই। কিন্তু মুমিনুল ভাবলেশহীন মুখে আনন্দ বা রোমাঞ্চের কোনো চিহ্নই ছিল না। বরং নিরাসক্ত ভঙিতে বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, এ নিয়ে এত উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। পরে মুমিনুলকে কাছ থেকে দেখে উৎপল শুভ্র নিশ্চিত হয়েছিলেন, মুমিনুলের এ ঘোষণায় কোনো ভণিতা ছিল না।
মুমিনুলের ঔদাসীন্যের প্রশ্নে নাজমূল আবেদীন ফাহিমও আছেন সহাবস্থানেই। যদিও এর সঙ্গে ভালো ক্যাপ্টেনসির কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা নিশ্চিত নন তিনি, 'মুমিনুলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হতে পারে, ও অন্যদের হয়তো বা সেভাবে উদ্বুদ্ধ করতে পারছে না। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ও কীভাবে ইন্টার্যাক্ট করে, বাইরে থেকে আমি তা বলতেও পারব না। একেকজনের ইন্টারেকশন করার পদ্ধতিও একেক রকম। তবে আমার যা মনে হয়, ও যদি এই টেস্টে কিংবা এর পরের টেস্টেও জিতে যায়, এর পরের কয়েকটা সিরিজেও যদি ভালো করে; তাহলেই কিন্তু আমরা বলব, ও ওর মতো করে কাজটা করেছে।'
ড্রেসিংরুমের ব্যাপারটা না হয় বাইরে থেকে বোঝা যায় না, কিন্তু মাঠে ফিল্ড প্লেসিং-বোলিং চেঞ্জ দেখেও তো একজন অধিনায়কের যোগ্যতা সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করা যায়। মাঠের ভেতরের অধিনায়ক মুমিনুলকে ফাহিম কেমন দেখলেন? উত্তর দিতে গিয়ে মুমিনুলের পক্ষেই ব্যাট ধরছেন তিনি, 'দেখুন, মুমিনুল কিন্তু অনেকগুলো টেস্ট খেলেছে। আমি কিংবা আরেকজন ফিল্ড প্লেসমেন্ট সম্পর্কে সব জানি, বিপরীতে মুমিনুল কিছুই জানবে না, এটা মনে করাটা বোধ হয় ঠিক না। শুধু মুমিনুল কেন, নাজমুল হোসেন শান্তও ফিল্ড প্লেসিং আমাদের অনেকের চেয়ে এ সম্পর্কে বেশি জানে। তাই, "ফিল্ড প্লেসিং ঠিক নেই, ওটা ঠিক নেই" এসব বলাটা খুবই আনফেয়ার মনে হয়।'
সব মিলিয়ে মুমিনুলের ক্যাপ্টেনসি নিয়ে বড় কোনো অভিযোগ নেই ফাহিমের। ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বললেন, 'হ্যাঁ, ক্যাপ্টেন হিসেবে কেউ একটু ডিফেন্সিভ হয়, কেউ অফেন্সিভ হয়। কেউ রিস্ক নিতে চায়, কেউ চায় না। দুরকমটাই কিন্তু ঠিক-বেঠিক হতে পারে। দিনশেষে, তাঁর দলের পারফরম্যান্স কী, সেটা দিয়েই তাঁকে জাজ করতে হবে। সম্প্রতি দলের পারফরম্যান্সটা ভালো ছিল না, তাই হয়তো আমাদের মনে হচ্ছে, ও ভালো করছে না। তবে এখানে (শ্রীলঙ্কায়) যদি ও ভালো করে, ও আরও কনফিডেন্স পাবে, আরও ভেতরে ঢুকবে বিষয়টার; তখন হয়তো আমরা ভিন্ন এক মুমিনুলকেই দেখব। তবে এই মুহূর্তে ও ভালো করছে না, এই করছে, সেই করছে এমন অনেক কিছু শুনতে হচ্ছে।'
শুক্রবারের শুভ্র.আলাপ-এর শিরোনাম ছিল, মীমাংসা হচ্ছে পাল্লেকেলেতে? কিন্তু আলোচনা শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তা ছড়িয়ে গেছে বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে। ফেসবুকে লাইভ দেখতে থাকা দর্শকের নানারকম প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তা হয়ে উঠেছে আরও বৈচিত্র্যময়।
মুমিনুলের ক্যাপ্টেনসি নিয়ে উৎপল শুভ্রর সঙ্গে নাজমূল আবেদীন ফাহিমের আলাপচারিতার অংশটুকু শুনতে পারেন এখানে: