কুইন্সটাউনের অপমান, হ্যামিল্টনের অপমান

উৎপল শুভ্র

২৮ মার্চ ২০২১

কুইন্সটাউনের অপমান, হ্যামিল্টনের অপমান

হ্যামিল্টনে বাংলাদেশের আরেকটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মনে করিয়ে দিচ্ছে ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে। ছবি: ইএসপিএন-ক্রিকইনফো

কুইন্সটাউন বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে এক নম্বর। কিন্তু ম্যাচ হারার ধরনে অপমান বোধ হয়েছে, এই বিবেচনায় হ্যামিল্টনও খুব একটা পিছিয়ে নেই। ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি যে টি-টোয়েন্টি ম্যাচটাতে বাংলাদেশ ৭৮ রানে অলআউট হয়েছিল। ম্যাচ শেষ হয়ে গিয়েছিল মাত্র ২৫.৫ ওভারে।

কুইন্সটাউন শহরটা কেমন সুন্দর, তা বোঝাতে প্রায়ই আমি একটা উপমা ব্যবহার করি। স্বর্গ তো আর দেখিনি, তবে সেটি কুইন্সটাউনের মতেই সুন্দর হবে বলে অনুমান করি। যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে জীবনে একবারই। সুযোগ পেলে আরেকবার কোথায় যেতে চান প্রশ্ন করলেও আমার উত্তর হবে–কুইন্সটাউন।

না গিয়েও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী মাত্রই কুইন্সটাউনের নাম জানেন। জানেন ‘কুখ্যাত’ ওই ম্যাচের কারণে। ২০০৭ সালের উৎসবমুখর থার্টি ফার্স্ট নাইটটাকে যে ম্যাচ বাংলাদেশ দলের জন্য দুঃস্বপ্নের রাত বানিয়ে দিয়েছিল।

যতই সুন্দর হোক, নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে দুঃখের স্মৃতিও তাই কুইন্সটাউন। অপমানেরও বলতে পারেন। ৯৩ অলআউট নিয়ে এত কাতর হওয়ার কিছু নেই। অনেক বড় বড় দল এর চেয়েও কম রানে অলআউট হয়েছে। ওয়ানডেতে তো হয়েছেই, টেস্টে বা টি-টোয়েন্টিতেও। অপমানটা গায়ে লেগেছিল মাত্র ৬ ওভারেই নিউজিল্যান্ড ওই ৯৩ টপকে যাওয়ায়। নিউজিল্যান্ড না বলে ব্রেন্ডন ম্যাককালামও বলতে পারেন।

ম্যাককালামের ২৮ বলে ৮০ রানের আসুরিক এক ইনিংস রীতিমতো হতবিহ্বল করে দিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। ম্যাচ শেষ হওয়ার ঘন্টা দুয়েক পর অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলকে ইন্টারভিউ করতে গিয়ে যা আরও ভালো বুঝতে পেরেছিলাম। বারবার বলা তাঁর একটা কথা দিয়েই পরে হেডিং করেছিলাম। ‘কী বলব...এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না!’

কুইন্সটাউন বিশাল ব্যবধানে এগিয়ে এক নম্বর। কিন্তু ম্যাচ হারার ধরনে অপমান বোধ হয়েছে, এই বিবেচনায় ২০২১ সালের শুরুতে বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফরে প্রথম টি-টোয়েন্টির ভেন্যু হ্যামিল্টনও খুব একটা পিছিয়ে নেই। ২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারির সেই ম্যাচটাও ছিল টি-টোয়েন্টি। অলআউট হওয়ার আগে ১৭.৩ ওভার ব্যাটিং করেও বাংলাদেশ যাতে ৭৮ রানের বেশি করতে পারেনি। কুইন্সটাউনের মতো এখানেও রানটা নিয়ে এত হাহুতাশ করার কিছু থাকত না, যদি পরের অংশটা প্রায় কুইন্সটাউনের মতোই না হতো। ৮.২ ওভারেই সে সময় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোরটা টপকে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এখানেও কোনো উইকেট না হারিয়ে। এখানেও জনাব ম্যাককালাম। কুইন্সটাউনের তুলনায় স্ট্রাইক রেট অবশ্য ‘খুবই খারাপ’। মাত্র ২০৭.৪১। 

এই জাতীয় একটা রেকর্ড হ্যামিল্টনেও হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। মাত্র চার বল বেশি খেলে ফেলায় নিউজিল্যান্ড নিজেদেরই গড়া বিশ্ব রেকর্ডটা ছুঁতে পারেনি। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে ৭৪ বল বাকি রেখে রেকর্ড জয়েও অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছিলেন ম্যাককালাম।

কুইন্সটাউনে ২৮ বলে অপরাজিত ৮০ করেছিলেন, হ্যামিল্টনে এক বল কম খেলে অপরাজিত ৫৬। সেই ট্যুরে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তখন আইপিএলে ম্যাককালামের কেকেআর টিমমেট। দুজনের মধ্যে খুব বন্ধুত্বও হয়ে গেছে। বন্ধুকেও ছাড়েননি ম্যাককালাম, ছাড়ার অবশ্য কথাও নয়। বন্ধুদের মধ্যে খেলা হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজটা আরও বেশি থাকে। ইয়ান বোথাম সারা জীবনই বলে এসেছেন, ভিভ রিচার্ডসকে পেলেই বাউন্সার দেওয়ার জন্য তাঁর হাত নিশপিশ করত। রিচার্ডসও ‘বিফি’র বলে চার-ছয় মারার মতো আনন্দ আর কিছুতে পাননি।

সেই ম্যাচে সাকিব বোলিংই করেছিলেন দুই ওভার। ১২ বলের চারটি পড়েছিল ম্যাককালামের পাতে। আগে-পরে তিনটা সিঙ্গল নিয়ে তৃতীয় বলে তাঁর দুই ছক্কার দ্বিতীয়টি সাকিবকেই। সাকিবের কাছেও কুইন্সটাউনের তুলনায় এটাকে কমই মনে হওয়ার কথা। কুইন্সটাউনে এক ওভারই বোলিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন। ওভারের পাঁচটা বল খেলেছেন ম্যাককালাম। এর একটা ডট রাখতে পেরেছিলেন বলে সাকিবের যারপরনাই আনন্দিত হওয়ার কারণ ছিল। বাকি চার বলে যে দুটি ছক্কাখচিত ১৫ রান!

হ্যামিল্টনের টি-টোয়েন্টি শেষে সাকিব মুখে বিষন্ন একটা হাসি ফুটিয়ে বলেছিলেন, ‘ওই দুইটা বাংলাদেশকে পেলেই জ্বলে ওঠে। ‘একটা তো ম্যাককালাম বোঝাই যাচ্ছে, আরেকটা কে? ‘আরেকটা’এই সিরিজে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে বসছেন। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি।

কুইন্সটাউনে ম্যাককালামের অমন তাণ্ডবের পরও ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারটা ভেট্টোরির হাতেই উঠেছিল। ৬ ওভারে মাত্র ৭ রান খরচ করে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচটা যে আগেই শেষ করে রেখেছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ম্যাককালাম শুধু তা একটু ত্বরান্বিত করেছেন, এই যা!

কুইন্সটাউন ওয়ানডের মতো হ্যামিল্টন টি-টোয়েন্টিতেও ভেট্টোরি ম্যান অব দ্য ম্যাচ। এবার ৪ ওভারে ৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট। টি-টোয়েন্টিতে পুরো কোটা বোলিং করে তখন যা সবচেয়ে হিসেবি বোলিংয়ের রেকর্ড। উতসেয়া, পোফু ও প্রাইস—তিন জিম্বাবুইয়ানেরও ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান দেওয়ার ‘কিপটেমি’ ছিল। ভেট্টোরিকে একটু এগিয়ে রাখতে হচ্ছিল উইকেট বেশি নিয়েছেন বলে।

দুটি ম্যাচেই পরে ব্যাটিং করে দ্রুততম সময়ে ম্যাচ শেষ করার রেকর্ডটা ঘাঁটাঘাটি করতে হয়েছিল। কুইন্সটাউনে নিউজিল্যান্ড জিতেছিল ২৬৪ বল বাকি থাকতে। ওয়ানডেতে এর চেয়ে বেশি বল অব্যবহৃত রেখে জয়ের ঘটনা ছিল তখন আর মাত্র দুটি। এক হিসাবে কুইন্সটাউনেরই এক নম্বরে থাকা উচিত ছিল। কারণ ২৭৭ বল হাতে রেখে জেতার ঘটনাটি ১৯৭৯ বিশ্বকাপে ৬০ ওভারের ম্যাচে। আর ২৭২ বল বাকি থাকতে জয়ী দলের সামনে টার্গেট ছিল মাত্র ৩৯ রান।

এই জাতীয় একটা রেকর্ড হ্যামিল্টনেও হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। মাত্র চার বল বেশি খেলে ফেলায় নিউজিল্যান্ড নিজেদেরই গড়া বিশ্ব রেকর্ডটা ছুঁতে পারেনি। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে ৭৪ বল বাকি রেখে রেকর্ড জয়েও অপরাজিত থেকেই মাঠ ছেড়েছিলেন ম্যাককালাম।

হাফ সেঞ্চুরির পর ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে (ডানে) পিটার ইনগ্রামের অভিনন্দন। ম্যাচ শেষ হলো বলে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি

অপমানের কথা বলছিলাম না, মাঠে বাংলাদেশ দলের অমন পারফরম্যান্সে কোনো ভূমিকা না থাকার পরও অপমান কিন্তু আমাকেও ছূঁয়েছিল। কুইন্সটাউনে আগেভাগেই বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ায় টেস্ট ম্যাচের মতো দশ মিনিট বিরতির পরই ব্যাটিংয়ে নেমে পড়েছে নিউজিল্যান্ড। লাঞ্চ হতে তখনো ৩৫ মিনিট বাকি। সকালে মাঠে যাওয়ার পর সিরিজের স্পনসর ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিনিধি ব্লন্ড চুলের যে তরুণীর সঙ্গে পরিচয় বিনিময় হয়েছে, সে আমার দিকে একটা ফিচকে হাসি দিয়ে বলল, ‘লাঞ্চটা প্রেস কনফারেন্সের পরেই দিই।’

৩৫ মিনিটে ৯৪ রান করে ফেলবে নিউজিল্যান্ড, এতই সোজা! আমি তাই কটমট করে তাকিয়ে অপ্রস্তুত করে দিয়েছিলাম ওই তরুণীকে। এমনই কপাল, লাঞ্চটা প্রেস কনফারেন্সের পরেই খেতে হলো। একটু ভয়ে ভয়েই, ওই মেয়েটার সঙ্গে না আবার দেখা হয়ে যায়!

হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শুরু করতে নামছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও পিটার ইনগ্রাম। প্রেসবক্সে ডাকওয়ার্থ-লুইসের হিসাবসংবলিত কাগজটা বিলি করতে এলেন প্রৌঢ় এক ভদ্রলোক। আমার পাশে বসা সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রেজাল্ট হতে কমপক্ষে কত ওভার হতে হয়? ‘৮ ওভার’–উত্তরটা ওখানেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত। অথচ সৌম্যদর্শন ওই বুড়ো মানুষটা কিনা এর পর  আমার দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ একটা হাসি দিয়ে বললেন, ‘দেখুন না, এর আগেই ম্যাচ শেষ হয়ে যায় কি না!’

হ্যামিল্টনের এই সেডন পার্ক আমার খুব চেনা। আগের দুই ট্যুরেও এখানে ম্যাচ ছিল। মাঠের মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে রাস্তার ওপারেই হ্যামিল্টন ফিউনেরাল হাউসটাও তাই আমার খুব পরিচিত। মাঠে বাংলাদেশের অসহায় অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে আমার মনে হলো, জায়গাটা রাস্তা পেরিয়ে এপারে চলে এসেছে।

আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রেসবক্সে এ ধরনের খুনসুটি চলতেই থাকে। অন্য সময় আমিও তাতে অংশ নিই। কিন্তু কুইন্সটাউনে ওই মেয়েটার ওপর যেমন রাগ হয়েছিল, হ্যামিল্টনেও ওই বুড়োর ওপরও তা হলো। ৮ ওভারে অবশ্য ম্যাচ শেষ হয়নি। তবে হিসাবের সুবিধার জন্য বাড়তি দুটি বল কেউ বাদ দিয়ে দিতেই পারেন।

কুইন্সটাউন এমনই অভাবিত ছিল যে, আমার অনুভূতিটাও আশরাফুলের মতোই হয়েছিল। চোখের সামনে দেখেছি, তারপরও বিশ্বাসই হতে চাইছে না। ‘অপমান-টমপান’বোধ করার অনুভূতিটাকে ভোতা করে দিয়েছিল বিস্ময়। হ্যামিল্টনে তা হয়নি। ম্যাচশেষে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলব বলে মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। তখনই অদ্ভূত একটা উপমা এলো মাথায়। হ্যামিল্টনের এই সেডন পার্ক আমার খুব চেনা। আগের দুই ট্যুরেও এখানে ম্যাচ ছিল। মাঠের মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে রাস্তার ওপারেই হ্যামিল্টন ফিউনেরাল হাউসটাও তাই আমার খুব পরিচিত। ছবির মতো সাজানো-গোছানো ছোট্ট এই শহরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য নির্ধারিত স্থান। মাঠে বাংলাদেশের অসহায় অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে আমার মনে হলো, জায়গাটা রাস্তা পেরিয়ে এপারে চলে এসেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াই সম্পন্ন হয়েছে আসল ফিউনেরাল হাউসের ওপারে!

উপমাটা অবশ্যই বাড়াবাড়ি। একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পরাজয়, তা যত বাজেভাবেই হোক না কেন, কীভাবে একটা দেশের ক্রিকেটের মৃত্যুসংবাদ হয়ে যায়! ম্যাচ রিপোর্টে তাই লিখেছিলাম, ‘হয় না, আবার হয়ও। হয় বলেই তো ক্রিকেটে অ্যাশেজ শব্দটা এসেছে। ১৮৮২ সালে ওভালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে নিজেদের মাটিতে টেস্টে প্রথম হারার পর স্পোর্টিং টাইমস পত্রিকায় ছাপা হওয়া ইংলিশ ক্রিকেটের "অবিচুয়ারি" থেকেই জন্ম অ্যাশেজ কিংবদন্তির। সেই টেস্টেও তো ইংল্যান্ডের এমন লজ্জায় মুখ লুকানোর মতো অবস্থা হয়নি, এই ম্যাচে যেমন হলো বাংলাদেশের।‘

সেই ম্যাচ নিয়ে লেখাগুলো পড়তে গিয়ে সাকিব আল হাসানের প্রচুর ‘কোট’ পেলাম। কয়েকটা তো খুব ইন্টারেস্টিং। এর দু’একটা বলি। এমন বাজে পারফরম্যান্সের দুটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছিলেন অধিনায়ক। প্রথমটি অনেক দিন পরপর টি-টোয়েন্টি খেলা। তা বলতে গিয়ে টেনে এনেছিলেন ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টিতে পুরো ভিন্ন দুই বাংলাদেশকে। বোঝাতে গিয়ে যা বলেছিলেন, তা হুবহু তুলে দিতে ইচ্ছা করছে। 

সাকিব উবাচ-১:  ওয়ানডেটা আমরা খুব ভালো বুঝি। টেস্টটাও একটু বুঝতে শুরু করেছি। কিন্তু টি-টোয়েন্টিটা আমাদের কাছে একেবারেই অচেনা লাগে। এই যে আট মাস পর ম্যাচটা খেললাম, আবার একটা টি-টোয়েন্টি আসতে আসতে এই ম্যাচে যে ভুলগুলো করেছি, আমরা তা ভুলে যাব।

সাকিব উবাচ-২: ‘ওয়ানডেতে একসময় বাংলাদেশ কবে জিতবে কেউ জানত না, এখন কিন্তু প্রতি ম্যাচেই সবাই জয়ের আশা করে। টি-টোয়েন্টিতে এখন আমাদের আগের ওয়ানডের মতো অবস্থা, আবার কবে জিতব, কেউ জানে না। টি-টোয়েন্টি খেলতে নামার আগেই সবাই জানে, আমরা হারবই।

প্রথম কারণটা তো জানলেন, দ্বিতীয়টা বলে লেখাটা এবার শেষ করি। সাকিবের দর্শিত দ্বিতীয় কারণ ছিল, একেবারেই ভিন্ন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ না পাওয়া। বড় বড় দলগুলোও যেখানে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে খাবি খায়, সেখানে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলেই বাংলাদেশ দলকে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে পড়তে হয়েছিল। কথাটা যেভাবে বলেছিলেন, তা আপনাকে বুঝিয়ে দেবে, সাকিব তখনো সাকিবই ছিলেন, ‘আমরা এখানে একটা প্রস্তুতি ম্যাচও পেলাম না। অথচ ইংল্যান্ড আমাদের দেশে গিয়ে যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়ামে টেস্ট ম্যাচ, সেখানেই তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে। একবার ভাবুন তো, ইংল্যান্ড কি লর্ডস টেস্টের আগে বাংলাদেশকে লর্ডসে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে দেবে?’

প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না পারার ক্ষোভটা অবশ্যই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের উদ্দেশে নয়, লক্ষ্যবস্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব তো বিসিবিরই ছিল। আর চট্টগ্রাম ও লর্ডস মিলিয়ে যে উদাহরণ, তা তো সরাসরিই বিসিবির পরিকল্পনাহীনতা ও অপেশাদারিত্ব নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ। লিখতে লিখতে ভাবছিলাম, কিছু জিনিস বোধ হয় কোনো দিনই বদলানোর নয়। এই ‘কিছু জিনিস’-এর মধ্যে সাকিব আল হাসান তো পড়েনই, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও পড়ে।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×