যেখানে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন লিটন

উৎপলশুভ্রডটকম

৩০ নভেম্বর ২০২১

যেখানে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন লিটন

কানপুর টেস্টের শ্রেয়াস আইয়ার আর চট্টগ্রাম টেস্টের আবিদ আলী ও লিটন কুমার দাসের মধ্যে কী মিল? মিল প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি ও দ্বিতীয় ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরিতে। তারপরও শেষে এসে আলাদা হয়ে গেলেন লিটন। আলাদা হয়ে গেলেন হতাশায়।

দলকে সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শেষে হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছিলেন পাকিস্তানি ওপেনার আবিদ আলী। পঞ্চম দিন আউট হয়ে ফেরার আগে আবিদের ব্যাটে এলো ৯১ রান। তখন অবশ্য মুখে হাসি নেই। 

প্রথম ইনিংসে অনবদ্য ১৩৩ রানের ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও জাগিয়েছিলেন শতকের সম্ভাবনা। খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত আর হয়নি। চতুর্থ ইনিংসে বড় রানের ইনিংস খেলা সহজ নয় বলেই প্রথমে ভাবা যায়নি, আবিদ পঞ্চম দিনেও এতদূর চলে আসবেন। ৯১ রান করে তাইজুলের স্পিনে কাটা না পড়লে জোড়া সেঞ্চুরি তো হয়েই যেত। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরি হিসেবেই লেখা থাকবে চট্টগ্রাম টেস্টে আবিদ আলীর পারফরম্যান্স।

এটা কি কানপুর টেস্টে অভিষিক্ত ভারতীয় ব্যাটসম্যান শ্রেয়াস আইয়ারের কথা একটু হলেও মনে করিয়ে দিচ্ছে না? আবিদ আলীর মতো তাঁরও তো সেঞ্চুরি আর হাফ সেঞ্চুরি। অভিষেকেই শ্রেয়াসের সেঞ্চুরিও তো মনে করিয়ে দেয় আবিদ আলীর কথা। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে আবিদও খেলেছিলেন অপরাজিত ১০৯ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। অভিষেককে রাঙানো অবশ্য আবিদ আলীর অভ্যাসই বলতে পারেন। টেস্টের মতো ওয়ানডে অভিষেকেও সেঞ্চুরি আছে তাঁর। এই কীর্তি আর কারও নেই। 

এবার শ্রেয়াসের সেঞ্চুরি করার দুদিন পার হওয়ার আগেই আবিদও সেঞ্চুরি করলেন। ভারতের টেস্ট একদিন আগে শুরু হয়ে একদিন আগেই শেষ। শেষ উইকেট জুটির প্রতিরোধে নিউজিল্যান্ড টেস্ট ড্র করে ফেললেও অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে ১০৫ আর ৬১ রানে শ্রেয়াস আইয়ারের ম্যাচসেরার স্বীকৃতি মিলে গেছে। 

দুই ইনিংসে আবিদের ব্যাটে ভর করে পাকিস্তান জিতেই গেছে। চতুর্থ দিন শেষে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকার পরেও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না ম্যাচসেরা আবিদ আলীই কি না। ৯১ পর্যন্ত ইনিংস টেনে নিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো অনিশ্চয়তাই থাকেনি। তখনই অনেকখানি নিশ্চিত যে ম্যাচসেরার পুরস্কার আবিদের হাতেই উঠতে যাচ্ছে। হাসান আলী আর শাহীন আফ্রিদির দারুণ বোলিং পারফরম্যান্সের পরও আবিদ তাদের টপকে গেছেন।

আবিদ ও শ্রেয়াসকে কি জোর করে এক বিন্দুতে টেনে আনা হচ্ছে? টেনে আনা যায় কিন্তু আরেকজনকে। শ্রেয়াসের সেঞ্চুরির দিনই লিটন দাসও পেয়েছেন। লিটনের অভিষেক ছয় বছর আগে হলেও সেঞ্চুরিটা শ্রেয়াসের মতোই ক্যারিয়ারের প্রথম। দলের প্রথম ইনিংসে তিনজনেরই শতরান। লিটন আর শ্রেয়াসের আবার ক্যারিয়ার প্রথম। তিনজনকে তো  চাইলে মেলানোই যায়। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিতে লিটন আর শ্রেয়াসের মিল। আবিদ আর শ্রেয়াসের মিল আবার অভিষেকে সেঞ্চুরিতে। আরেকটা বিন্দুতে তো মিলে যাচ্ছেন তিনজনই। শ্রেয়াস আইয়ার ও আবিদ আলীর মতো লিটনেরও প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি।

শ্রেয়াসের মতো আবিদও ম্যাচসেরা। চতুর্থ দিনের ৫৬-তেই যদি আটকে যেতেন আবিদ, তাহলে ম্যাচেসেরার পুরস্কার না-ও জিততে পারতেন। তাতেও অবশ্য ম্যাচে তাঁর ব্যাটিং প্রভাবশালীই থাকত। এখানেই বাকি দুজনের তুলনায় ব্যতিক্রম। আবিদ আলী ম্যাচ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন, শ্রেয়াস আইয়ারের জিততে জিততে ড্র করার হতাশা থাকলেও হারতে হয়নি। যেখানে ক্যারিয়ার-সেরা পারফরম্যান্সের পরও লিটনকে ডুবতে হয়েছে বড় পরাজয়ের গ্লানিতে। 

১১৪ ও ৫৯...এই দুটো সংখ্যাই যথেষ্ট লিটনের পারফরম্যান্সকে ব্যাখ্যা করতে। কিন্তু লিটনের পাশে প্রথম ইনিংসে মুশফিকের ৯১ আর দ্বিতীয় ইনিংসে মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়ার আগে রাব্বীর ৩৬ রানের ইনিংস ছাড়া কোনো সঙ্গই ছিল না। বাংলাদেশের ইনিংসে আর দুটি ফিফটি থাকলে প্রেক্ষাপটটা ভিন্ন হলেও তো হতে পারত৷ 

শ্রেয়াস আইয়ার, আবিদ আলী ও লিটন দাস তিনজনেরই পারফরম্যান্স প্রায় একই রকম। আবিদ আলীর মুখে জয়ের হাসি আরও চওড়া হয়েছে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়ে। শ্রেয়াস আইয়ার অন্তত ম্যাচসেরা হওয়ার সান্ত্বনাটুকু পেয়েছেন। ব্যতিক্রম হয়ে থাকলেন শুধু লিটনই। পরম আরাধ্য প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি, দ্বিতীয় ইনিংসেও সর্বোচ্চ রান...তারপরও শুধু হতাশাই জুটল তাঁর। পারফরম্যান্সে মিল থাকার পরও এখানে এসেই আলাদা হয়ে যাচ্ছেন লিটন। হতাশায়!

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×