বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টির জানা-অজানা

উৎপলশুভ্রডটকম

১৯ নভেম্বর ২০২১

বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টির জানা-অজানা

মাহমুদউল্লাহ ও বাবর আজম: নতুুন অধ্যায় যোগ করার আগে দুই অধিনায়ক

বাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে এই দুই দলের টি-টোয়েন্টি দ্বৈরথের ইন্টারেস্টিং কিছু তথ্য জেনে নিলে কেমন হয়! জয়-পরাজয়, সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন...এসবের বাইরেও তো আছে আরও কত কিছু!

টানা সাতটি ম্যাচ হারার পর পরপর দুটি জয়। এরপর আবার টানা তিন পরাজয়। সংক্ষেপে এই হলো পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টির ইতিহাস।

প্রথম দেখা কেনিয়ায়
টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের প্রথম দেখা ২০০৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে চারজাতি টুর্নামেন্টে। যাতে ৩০ রানে হারলেও বাংলাদেশের ৭ উইকেটে ১৬১ কিছুটা হলেও তৃপ্তি তো জাগিয়েছিলই। বলতে গেলে যা ছিল নাজিমউদ্দিনের একক কৃতিত্ব। অকালে হারিয়ে যাওয়া এই ওপেনারের ব্যাট থেকে এসেছিল দুই দল মিলিয়েই সর্বোচ্চ ৮১ রানের দারুণ এক ইনিংস। মাত্র ৫০ বলের যে ইনিংসে ছিল ৮টি চার ও ৫টি ছয়। 

প্রথমে ব্যাটিং করে পাকিস্তান প্রায় দুই শ রান (১৯১) করে ফেললেও বিস্ময়করভাবে তাতে কোনো ফিফটি ছিল না। সর্বোচ্চ ৪৯ (২৯ বলে) করেছিলেন ইমরান নাজির, ইউনিস খান ২৫ বলে ৪৮। প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসাবে আয়োজিত ওই টুর্নামেন্টের বাকি দুটি দল ছিল স্বাগতিক কেনিয়া ও উগান্ডা।

সাত দেশে ১২ ম্যাচ
কেনিয়াতে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টিতে প্রথম দেখা পরে প্রতীকী অর্থ নিয়ে দেখা দেয়। নানা দেশে টি-টোয়েন্টিতে দেখা হতে থাকে দুই দলের। ম্যাচ হয়েছে মাত্র ১২টি, যা খেলা হয়েছে সাতটি দেশে। সর্বোচ্চ ৪টি বাংলাদেশে, পাকিস্তানে ৩টি। বাকি ৫টি ম্যাচ কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও ভারতে। শেষ চারটি বিশ্বকাপে। 

বিশ্বকাপের পাঁচ ম্যাচে চার ফিফটি
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের কোনোটিতেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে এই পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই বলার মতো চারটি ইনিংস খেলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ২০০৭ বিশ্বকাপে কেপটাউনের ম্যাচে একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিটি করেছিলেন জুনায়েদ সিদ্দিক। ৪৯ বলে ৭১ রানের ওই ইনিংসের সুবাদে বাংলাদেশ করেছিল ১৪০। পাকিস্তান ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ছিল মাত্র ৩৯ (শহীদ আফ্রিদি, মাত্র ১৫ বলে), তারপরও এক ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। পরাজিত দলে থেকেও ম্যাচ-সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন জুনায়েদ সিদ্দিক।

২০১০ বিশ্বকাপে সেন্ট লুসিয়ায় মোহাম্মদ আশরাফুল ৪৯ বলে ৬৫-ও ম্যাচের রেজাল্ট নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা জাগাতে পারেনি। দুই বছর পর শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে সে সময় বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৪ রানের এক ইনিংস খেলে যা জাগিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। ইমরান নাজিরের ক্যাচ ফেলার মাধ্যমে যে সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটে। ২০১৬ বিশ্বকাপে কলকাতায় শহীদ আফ্রিদির তোলা ঝড়ে (১৯ বলে ৪৯) পাকিস্তান ২০১ করে ফেলার পরই ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। ৫৫ রানের পরাজয়ে সাকিবের অপরাজিত ৫০ তাই কোনো সান্ত্বনাও হতে পারেনি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের কোনো হাফ সেঞ্চুরিবিহীন একমাত্র ম্যাচটি ২০১৪ সালে ঢাকায়। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ছিল সাকিবের ৩৮।

টানা দুই জয়
টানা সাত ম্যাচে হারার পর টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় ২০১৫ সালের স্বর্ণালি সেই সময়টায়। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে দেশে ফেরার কদিন পরই পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে ৩-০ হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। জিতে যায় এর পরপরই একমাত্র টি-টোয়েন্টিতেও। যে ম্যাচটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোস্তাফিজুর রহমানের আবির্ভাবের কারণে। বাংলাদেশের মূর্তিমান আতঙ্ক শহীদ আফ্রিদিকে আউট করে যাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট।

পরের বছর এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠার পথে আবার পাকিস্তানকে হারায় বাংলাদেশ। পাকিস্তান করেছিল মাত্র ১২৯, পাঁচ বল বাকি রেখেই বাংলাদেশ যা টপকে যায়। ৪৮ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ-সেরা হয়েছিলেন সৌম্য সরকার।

কে এই মনসুর আমজাদ?
মনসুর আমজাদবাংলাদেশ-পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি দ্বৈরথের ইতিহাসকে রেকর্ডের আয়নায় দেখতে গেলে একটি নাম আপনাকে নির্ঘাত চমকে দেবে। পাকিস্তানের হয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড মনসুর আমজাদের। কে এই মনসুর আমজাদ? নাম না শুনে থাকলে বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তো ওই একটিই (ওয়ানডেও একটি)। ২০০৮ সালে করাচির সেই ম্যাচে ১৬তম ওভারে প্রথম বোলিং করতে এসে দ্বিতীয়, পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফি ও শাহাদাতের উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ করে দেন এই লেগ স্পিনার। ওই এক ওভারেই শেষ তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারও। টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম রান (৩) দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড এখনো মনসুর আমজাদের। সেরা বোলিং গড়ও (১.০০)।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×