অধিনায়ক কি টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ নন?
উৎপল শুভ্র
১৮ নভেম্বর ২০২১
ক্রিকেট খেলায় টিম ম্যানেজমেন্টের কেন্দ্রবিন্দুতে অধিনায়কের উপস্থিতি তো এত দিন প্রশ্নাতীত বলেই জেনে এসেছি। এত দিনের জানা-বোঝাটাই রীতিমতো প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল মাহমুদউল্লাহর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন দেখার এবং শোনার পর।
টিম ম্যানেজমেন্ট যেন কাকে বলে? ক্রিকেট দলের টিম ম্যানেজমেন্ট মানে তো অধিনায়ক আর কোচ, তাই না? ম্যানেজার কখনো এর অংশ, কখনো না। ম্যানেজার থাকতেও পারেন, না-ও পারেন, তবে ক্রিকেট খেলায় টিম ম্যানেজমেন্টের কেন্দ্রবিন্দুতে অধিনায়কের উপস্থিতি তো এত দিন প্রশ্নাতীত বলেই জেনে এসেছি। এত দিনের জানা-বোঝাটাই রীতিমতো প্রশ্নের মুখে পড়ে গেল মাহমুদউল্লাহর ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন দেখার এবং শোনার পর।
বিশ্বকাপ বিপর্যয়ের পর নতুন চেহারায় আবির্ভূত বাংলাদেশ দলে ছয়-ছয়টি পরিবর্তন। যে ছয়জন ঢুকেছেন দলে, তাদের চারজনেরই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির অভিজ্ঞতা বলতে কিছু নেই। যে দলটি নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে গিয়েছিল, সেটিই যে বাংলাদেশের সম্ভাব্য সেরা দল, এ নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তোলেনি। মাঝখানে এমন কোনো খেলা হয়নি যে, ‘ব্যর্থ’দের বদলে কেউ দলে আসার জায়গা দাবি তুলবেন। তারপরও এতগুলো পরিবর্তন হয়েছে। মাস দেড়েক আগে যাঁদের দলে আসার যোগ্য বলে বিবেচিত হননি, তাঁরাই এখন বাংলাদেশ দলে।
এসব পুরোনো কথা। এটাও পুরোনো যে, টেস্ট ম্যাচে পেতে মুশফিকুর রহিমকে সতেজ পেতে তাঁকে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে। নির্বাচকদের ভাষ্যটাই বললাম আর কি! নতুন বলতে এই তথ্যটা যে, মুশফিকের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। এই ‘বিশ্রাম’ যে তিনি চাননি, বরং খেলার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিলেন, এটাও মুশফিক পরিষ্কারই জানিয়ে দিয়েছেন সংবাদ মাধ্যমকে। এই ‘বিশ্রাম’-এর অনুবাদ যে ‘বাদ’...নিজের মতো বুঝে নেওয়া এই উপলব্ধির কথাও।
তামিম তো আগে থেকেই ছিলেন না, সাকিবও নেই, বাদ পড়েছেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকারও; মুশফিককেও বিশ্রাম/বাদ দেওয়ায় পরাক্রান্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহকে মাঠে নামতে হচ্ছে কচি কাঁচার এক দল নিয়ে। পাকিস্তানের এই বোলিং লাইন আপ বিশ্বসেরা কি না, এ নিয়ে আলোচনা হয়। অথচ বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে অভিজ্ঞতা বলতে একমাত্র মাহমুদউল্লাহই। সাকিব বা মুশফিক তো শুধু তাঁদের খেলাটাই খেলেন না, পরামর্শের জন্য অধিনায়কের শরণাপন্ন হওয়ার জায়গাও ছিলেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করায় মাহমুদউল্লাহ বলব না বলব না করেও বলে ফেললেন, ‘দেখুন, অভিজ্ঞতা সব সময়ই কাজে লাগে। সাকিব-মুশফিকরা থাকলে ওদের সঙ্গে যে কোনো কিছু নিয়ে আলোচনা করা যায়। কিন্তু এখন ওটা চিন্তা করে তো লাভ নেই। আমার যতটুকু জ্ঞান আছে, সেটাই কাজে লাগাতে চেষ্টা করব।’
মুশফিককে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে অনেক প্রশ্নই হলো, ঘুরেফিরে প্রায় একই কথা বলে যার প্রায় সবই এড়িয়ে গেলেন অধিনায়ক। মুশফিক কী বলেছেন, তা এখনো জানেন না বলে অবিশ্বাস্য একটা দাবিও শোনা গেল। তবে একের পর এক প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে এক সময় স্বীকার করে ফেললেন, ‘আমি মুশফিককে মিস করব।’
মুশফিককে যদি অধিনায়ক মিসই করেন, তাহলে তিনি দলে নেই কেন? নির্বাচকেরা টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তা-ই যদি হয়ে থাকে, তাহলে মাহমুদউল্লাহর মত কী ছিল? এসব প্রশ্নে মাহমুদউল্লাহর উত্তরই আসলে ‘টিম ম্যানেজমেন্ট’-এর সংজ্ঞা নিয়ে সংশয় জাগানোর মূলে। একবার যেমন বললেন, ‘এ ব্যাপারে আসলে টিম ম্যানেজমেন্টের কাউকে প্রশ্ন করলে সম্ভবত ভালো হবে। এটা পুরোটাই টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। আমি নিজে এ মুহূর্তে এটা নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
বলতে না চাইলেও এক সময় ঠিকই বলে ফেললেন, ‘আমি তো ডিসিশন নিই না।’ প্রশ্নটা এখানেই। দল নির্বাচনে অনেক দেশে অধিনায়কের ভোট থাকে, অনেক দেশে থাকে না। তবে অধিনায়কের মতামতের একটা মূল্য তো অবশ্যই থাকে। পাকিস্তান সিরিজের দল নির্বাচনে তা একেবারেই উপেক্ষিত হয়েছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। মূল সমস্যা এটা নয়। অধিনায়ক তাঁর মত দিতে পারেন, তবে সেটি মানা না-মানা পুরোই নির্বাচকদের এখতিয়ার। কিন্তু নির্বাচকেরা যে বলছেন, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, অথচ অধিনায়ক কিছুই জানেন না, এর কী ব্যাখ্যা? বরং মুশফিককে বিশ্রাম/বাদ দেওয়ার কারণ টিম ম্যানেজমেন্টকে জিজ্ঞেস করতে বলে অধিনায়ক প্রকারান্তরে জানিয়ে দিচ্ছেন, তিনি টিম ম্যানেজমেন্টের অংশ নন।
এ কারণেই প্রশ্নটা জাগছে মনে, টিম ম্যানেজমেন্টের সংজ্ঞাটা যেন কী!