বাবর আজম, পতাকা বিতর্ক এবং বাংলাদেশ সিরিজে রণকৌশল
উৎপলশুভ্রডটকম
১৮ নভেম্বর ২০২১
বিশ্বকাপটা পুরো বিপরীত কেটেছে দুই দলের। সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে পাকিস্তান, যেখানে বাংলাদেশ দলের জন্য বিশ্বকাপ ছিল দুঃস্বপ্নের নামান্তর। পাকিস্তান-বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজটা তাই যথেষ্টই কৌতূহলোদ্দীপক। তা পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম কী বলছেন সিরিজ শুরুর আগে?
অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডে এই রীতি আছে। ম্যাচের আগের দিনই, কখনো তারও আগে দল ঘোষণা করে দেওয়ার। উপমহাদেশে যা বিরল। ১১ বা ১২ জনের দল নিয়ে জল্পনা-কল্পনা যেখানে যে কোনো ম্যাচের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। এ কারণেই জুম সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বাবর আজম যখন পরদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টির জন্য পাকিস্তানের ১২ জনের নাম জানিয়ে দিলেন, তা একটু চমক হয়েই এলো।
পতাকা-বিতর্ক
যেটা একদমই চমক নয়, তা হলো, পাকিস্তানের মিডিয়া ম্যানেজার শুধুই পরদিনের খেলা আর ক্রিকেটে প্রশ্ন সীমাবদ্ধ রাখতে বলার পরও ‘পতাকা বিতর্ক’ নিয়ে প্রশ্ন হওয়া। এক পাকিস্তানি সাংবাদিকই করলেন প্রশ্নটা। প্র্যাকটিসের সময় ছোট্ট ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডে মাঠে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে নিচ্ছে পাকিস্তান দল। এ নিয়ে অনেকেই আপত্তি তুলেছেন। তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান জ্বালাময়ী বক্তৃতাও দিয়েছেন। এসব উল্লেখ করে বাবর আজমের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলেন ওই পাকিস্তানি সাংবাদিক। তা বাবর আজম কী বললেন?
কিছু্ই না! বাবর আজম তো উত্তর দেওয়ার কোনো সুযোগই পেলেন না। সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন পাকিস্তান দলের মিডিয়া ম্যানেজার ইব্রাহিম বাদিস। তা কী বললেন তিনি? তাঁর সারাৎসার এমন: এটা সাকলায়েন মুশতাকের (পাকিস্তান দলের স্পিন বোলিং কোচ) কোচিং দর্শন। তিনি মনে করেন, এতে খেলোয়াড়েরা অনুপ্রাণিত হবেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজ (যেটি শেষ পর্যন্ত হয়নি) ও বিশ্বকাপেও তিনি এটা করেছেন।
দলে পরিবর্তনের কারণ
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নাটকীয়ভাবে পরাজিত পাকিস্তান দলের বেশ কজন নেই প্রথম ম্যাচে। মোহাম্মদ হাফিজ তো এই সিরিজ থেকে সরিয়েই নিয়েছেন নিজেকে। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য দুটি নাম ইমাদ ওয়াসিম ও আসিফ আলীও নেই। বাবর আজম অবশ্য সুনির্দিষ্টভাবেই জানিয়ে দিলেন, দলে চারটি পরিবর্তন করা হয়েছে। যেটির মূল কারণ ভিন্ন ভিন্ন কম্বিনেশন পরীক্ষা করে দেখা। ‘বেঞ্চ স্ট্রেংথ’টাও একটু যাচাই করে নেওয়া। ঘুরে ফিরে বিশ্বকাপের কথা বেশ কবারই এলো। প্রতিবারই ‘মোমেন্টাম’ ধরে রাখার গুরুত্ব বুঝিয়ে দিলেন বাবর আজম। টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে ওঠার পর সেখানে শেষে গিয়ে হেরে যাওয়া থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথাও বললেন। ওই পরাজয়ের পর পাকিস্তান শিবিরের অবস্থা কী জানতে চাওয়ায় অধিনায়কসুলভ অনুমিত উত্তরই দিলেন বাবর, ‘খারাপ তো লেগেছেই। সবারই খুব খারাপ লেগেছে। কোথায় আমাদের ভুল হয়েছে, কোথায় উন্নতি করতে হবে...এসব নিয়ে কথা বলেছি।’
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে
বিশ্বকাপটা পুরো বিপরীত কেটেছে দুই দলের। পাকিস্তান টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে ওঠার প্রথম কীর্তি গড়েছে আর বাংলাদেশ হেরেছে সুপার টুয়েলভের সব ম্যাচেই। এই সিরিজটা তো তাহলে সহজই হওয়ার কথা? যা শুনেই প্রতিবাদ বাবর আজমের। এটা বাংলাদেশের হোম সিরিজ এবং নিজেদের দেশে বাংলাদেশ সব সময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ ইত্যাদি ইত্যাদি বলার সময় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ দুই সিরিজের প্রসঙ্গও এলো। চার/পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে খেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথাও বললেন বাবর। উইকেট তখনো দেখেননি। তবে সেটি যে একটু স্লো হবে, স্পিন ধরবে...অতীত অভিজ্ঞতার কারণে এটা বলতে তো আর উইকেট দেখতে হয় না।
পুরোনো রণকৌশল
১৫ ওভারের ফিল্ডিং বাধ্যবাধকতা চালু হওয়ার পর বদলে গেছে ওয়ানডে। ত্রিশগজী বৃত্তের বাইরে মাত্র দুজন ফিল্ডার থাকার সুবিধা কাজে লাগানোটা ম্যাচের নির্ধারক হয়ে ওঠাটাও নিয়মিত ঘটনাই। টি-টোয়েন্টিতে এই সময়সীমা ৬ ওভারের। মিরপুরের উইকেটের কথা মাথায় রেখে এই পাওয়ার প্লের চেয়ে শেষে গিয়ে ঝড় তোলার পুরোনো তরিকাতে বিশ্বাস রাখার কথাও জানিয়ে দিলেন বাবর, 'ইউএই-এর মতো এত রান এখানে হবে না। উইকেট হাতে রেখে শেষ ৭/৮ ওভারে মারতে হবে। যত উইকেট হাতে থাকবে, ততই ভালো।'
মাঠে স্বাগতিক দর্শক
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বলতে গেলে নিজেদের মাঠেই খেলেছে পাকিস্তান। একে তো সংযুক্ত আরব আমিরাত অনেক বছর ধরেই তাদের হোম ভেন্যু, তার ওপর গ্যালারি ভরা ছিল পাকিস্তানি সমর্থকে। পাকিস্তান-বাংলাদেশ সিরিজ দিয়ে মিরপুরের গ্যালারিতে দর্শক ফিরছে এবং তারা তো সবাই বাংলাদেশেরই সমর্থক। এ নিয়ে প্রশ্নে বাবর আজমের উত্তর শুনে মনে হলো, পাকিস্তানও সেখান থেকে সমর্থন পাবে বলেই হয়তো আশা করছেন তিনি। নইলে কেন বলবেন, 'বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট ভালোবাসে। পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য তাদের সমর্থনও আমরা বুঝতে পেরেছি। আমাদের অনুশীলন দেখার জন্যও আশেপাশের ছাদে মানুষ দেখেছি। আমাদের টিম বাস যাওয়ার সময় দেখেছি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে।'