পাকিস্তান কেন জিতবে না
উৎপলশুভ্রডটকম
১২ নভেম্বর ২০২১
আজকের সেমিফাইনালে পাকিস্তান কেন জিতবে না, এর সম্ভাব্য কিছু কারণ বের করতে পারবেন? ভাবলে নিশ্চয়ই পারবেন। দেখুন তো, সেসবের সঙ্গে এই লেখায় উল্লেখ করা কারণগুলো মেলে কি না। পাকিস্তান জিতবে না মানে অস্ট্রেলিয়া জিতবে...কারণগুলো ভাবার সময় উল্টোভাবেও চিন্তা করতে পারেন।
নকআউটের গেরো
পাকিস্তান জিতবে না, কারণ প্রতিপক্ষের নাম অস্ট্রেলিয়া এবং এটা নকআউট ম্যাচ। আর ‘নিয়ম’টা হলো, আইসিসি টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচে পাকিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারে না। আমিরাতে অজেয় থাকা প্রসঙ্গে ‘এক সময় পাকিস্তান হারত’ বলে একটা টীকা লাগে, এখানে তা-ও লাগছে না। পাকিস্তান আসলেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নকআউট জেতে না। উল্টো করে বললে অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তানের কাছে নকআউটে হারে না। এই ধারার শুরু ১৯৮৭ বিশ্বকাপে। লাহোরে সেমিফাইনালে ইমরান খানের পাকিস্তানকে হারিয়ে যেটির সূচনা করেছিল অ্যালান বোর্ডারের অস্ট্রেলিয়া, সেটি বয়ে চলেছে এখন পর্যন্ত।
চারবার নকআউট
পাকিস্তানের অস্ট্রেলিয়ায় হোঁচট খেয়ে পড়ার ঘটনা আছে নকআউটের সব পর্যায়েই এবং ৫০ ওভার ও ২০ ওভারের দুটি বিশ্বকাপেই। ১৯৮৭ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পর ১৯৯৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল, ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই দলের একমাত্র নকআউট ম্যাচটি সমাপ্তির কারণে রীতিমতো ক্ল্যাসিক। শেষ দুই ওভারে ৩৪ রান লাগে, শেষ ওভারে ২২...মাইক হাসির অবিশ্বাস্য এক ইনিংস পাকিস্তানের হাতের মুঠো থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল জয়। সাঈদ আজমলের শেষ ওভারে প্রথম চার বলেই ২২ রান তুলে নিয়ে হাসি বলতে গেলে শেষই করে দিয়েছিলেন এই অফ স্পিনারের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার।
অস্ট্রেলিয়ার পুনর্জাগরণ
এই বিশ্বকাপ শুরুর আগে অস্ট্রেলিয়াকে কেউ সম্ভাব্য সেমিফাইনালিস্ট হিসেবে ধরেইনি। কঠিন এক গ্রুপ, যাতে ছয়টি দলই টেস্ট নেশন...এই কারণ তো দেখা দিয়েছে পরে। এর আগেই অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে বাতিল করে দেওয়ার ব্যাপারে সবার একমত হয়ে যাওয়ার কারণ ছিল, বিশ্বকাপের আগে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে সময় কাটানো। শুধু 'বাজে সময়' বলেও আসলে যা বোঝানো যাচ্ছে না। সেই ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ সিরিজ জেতার পর থেকেই তো অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ের মিছিল। কার কাছে হারেনি অস্ট্রেলিয়া?
ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর সর্বশেষ বাংলাদেশের কাছেও। বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ সিরিজটি ছিল বাংলাদেশেই। তাতে ৪-১ ব্যবধানে হার, যার একটা নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হয়ে...অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি দলের ইতিহাসে এমন ভয়াল দুঃসময় আর আসেনি। সেখান থেকে এই বিশ্বকাপে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অজিরা, তাতে তাদের থামানো এখন কঠিনই হবে। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ এই বদলে যাওয়া সম্পর্কে দারুণ বলেছেন, ‘সবকিছুই দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। কদিন আগেই আমাদের বলা হচ্ছিল ‘বুড়ো’দের দল, এখন বলা হচ্ছে অভিজ্ঞ।’
অপরাজিত থাকার ‘কাঁটা’
পাকিস্তান কেন জিতবে না, এর কারণ হিসেবে এটাকে একটু অদ্ভুত লাগতেই পারে। পাকিস্তান জিতবে না, কারণ পাকিস্তান গ্রুপ পর্বে একটা ম্যাচও হারেনি! এটা কি সেমিফাইনালে হারার কোনো কারণ হতে পারে? হয়তো না। তবে একটু ঘুরিয়ে বললে কারণ হিসেবে দাঁড় করানো যায় বৈকি! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোনো দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়নি। প্রথমবারের মতো পাকিস্তান সেই সম্ভাবনা জাগিয়েছে। নতুন ইতিহাস হওয়ার আগ পর্যন্ত সেটিকে তো একরকম অসম্ভব বলেই মনে হয়, তাই না? তবে সেজন্য সেমিফাইনালেই হারতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। ফাইনালে হারলেও অবশ্য অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপ না জয়ের রেকর্ড অক্ষুন্নই থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার অপূর্ণতা তো ঘুচবেই একদিন
এক সময় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও এমন একটা ধাঁধার নাম ছিল। ৫০ ওভারের আরেক আইসিসি টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এসে নিয়মিত মুখ থুবড়ে পড়ত। প্রথম চারটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে শূন্য হাতে বিদায় নেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া এই রহস্য ঘোচায় ২০০৬ সালে পঞ্চম টুর্নামেন্টে এসে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে ঘিরে অস্ট্রেলিয়ার অপূর্ণতা তো ছাড়িয়ে গেছে সেটিকেও। ছয়টি বিশ্বকাপ হয়ে গেছে, জেতা হয়নি একবারও। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের ক্যাবিনেটে এই একটা ট্রফিই শুধু নেই। একদিন না একদিন এই অপূর্ণতা ঘুচবেই। কে জানে, হয়তো এবারই। আর চ্যাম্পিয়ন হতে হলে তো সেমিফাইনালে জয়ের কোনো বিকল্প নেই।