বিশ্বকাপেই নেই তিন হ্যাটট্রিকম্যান
উৎপলশুভ্রডটকম
৭ নভেম্বর ২০২১
১৪ বছর পর ব্রেট লির সঙ্গে একে একে যোগ দিয়েছিলেন তিনজন বোলার। কিন্তু ব্রেট লির সঙ্গে এই তিনের পার্থক্য কোথায়, জানেন? অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার দুই ধাপ পার হয়ে সেমিফাইনালে খেলেছিলেন। আর এবারের দুই হ্যাটট্রিকম্যান যেদিন হ্যাটট্রিক করলেন, সেদিনই তাঁদের দল বিশ্বকাপ থেকে নিয়েছে বিদায়। অন্যজনের দল তো প্রথম রাউন্ডই পার হতে পারেনি।
এই সেদিনও কুইজটাতে আসত শুধু ব্রেট লির নাম। সঙ্গে আসত শিকার বাংলাদেশের নামও। প্রাসঙ্গিকভাবে উঠত ২০০৭ প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্ব আসরের কথা। সেই ব্রেট লি এখন আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের একমাত্র হ্যাটট্রিকম্যান নন। এবার এক আসরেই আরও তিনজন যোগ হয়েছেন ওই তালিকায়। কিন্তু ব্রেট লি ও তাঁর দল গ্রপ পর্ব পেরিয়ে সুপার এইটের পর খেলেছিল সেমিফাইনালে। এবারের তিন হ্যাটট্রিকম্যানের কেউই যে আর বিশ্বকাপেই নেই!
যোগ করে তো বুঝেই নিয়েছেন, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের কীর্তি এখন চারজনের। ব্রেট লি কীর্তিটা করার পরের পাঁচটি আসরে আর কেউ তা স্পর্শ করতে পারেননি। এবারের এক আসরেই তিনটি হ্যাটট্রিক হয়েছে। প্রথমটি আবার ডাবল হ্যাটট্রিক। আয়ারল্যান্ডের মিডিয়াম ফাস্ট বোলার কার্টিস ক্যাম্ফার চার বলে চার উইকেট নিয়েছিলেন প্রথম রাউন্ডে। যেটাকে বাছাই পর্বও বলেন কেউ কেউ। তো সেই বাছাই পর্ব পেরিয়ে আইরিশরা সুপার টুয়েলভেই আসতে পারেনি। হ্যাটট্রিকম্যান ক্যাম্ফারের বিশ্বকাপ তাই শেষ হয়ে গেছে প্রথম রাউন্ডেই। তিনজনের মাঝের হ্যাটট্রিকটা শ্রীলঙ্কার লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার। যে ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলেন, সেই ম্যাচ হেরেই তার দলের বিশ্বকাপ প্রায় শেষ হয়ে গেছে সুপার টুয়েলভ থেকে। সেমিফাইনালে খেলার আশা তখন বেঁচে ছিল শুধু কাগজে কলমে। শেষ হ্যাটট্রিকটা গতকাল করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ফাস্ট বোলার কাগিসো রাবাদা। তারও কী ভাগ্য দেখেন! দল জিতল বটে, কিন্তু যে হিসেব মিলিয়ে জিততে হতো, সেটা পারল না বলে রাবাদার বিশ্বকাপও শেষ সেমিফাইনালের আগে!
প্রসঙ্গটা এবারের তিন হ্যাটট্রিকম্যানের বিশ্বকাপে আর না থাকা নিয়ে। তাই ব্রেট লির কথা আর না আসুক। একটু ফিরে দেখা যাক চলমান বিশ্বকাপের তিন হ্যাটট্রিকম্যানের কীর্তি। রাবাদারটা তো একেবারে টাটকা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা ২ উইকেটে ১৮৯ রান করেছে। এর পর নির্দিষ্ট একটা রানের মধ্যে ইংলিশদের বেঁধে রাখতে পারলে অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা যায় সেমিতে। কিন্তু তা হলো না। অবশ্য শেষটায় খেলা জমে উঠল। রাবাদা তার আগে একটাও উইকেট পাননি। শেষ ওভারে জিততে ১৪ রান লাগে ইংল্যান্ডের। ৫টা উইকেট হাতে। রাবাদা এলেন এবং পরপর তিন বলে যথাক্রমে তুলে নিলেন ক্রিস ওকস, অধিনায়ক এউইন মরগ্যান ও ক্রিস জর্ডানের উইকেট। প্রত্যেকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন। বিশ্বকাপ হ্যাটট্রিকের আনন্দে মাতলেন রাবাদা। দলকে জেতালেন ১০ রানে। বোলিং ফিগার হলো ৪-০-৪৮-৩। কিন্তু দল সেমিতে যেতে পারল না বলে রাবাদার হ্যাটট্রিক আর জয়ের আনন্দ কোনোটাই উদযাপন করা হলো না।
হ্যাটট্রিক কি আর যা তা কীর্তি! ভাবুন একবার। মাঝের পাঁচ বিশ্বকাপে একটাও হ্যাটট্রিক হয়নি। কিন্তু এবারের হ্যাটট্রিকম্যানদের কপালটাই যেন কেমন। চলুন হাসারাঙ্গার ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলা যাক। বোলার হিসেবে অসাধারণ। হ্যাটট্রিক তাঁর কাছে নতুন কিছু না। ওয়ানডে অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন এবং তা ইতিহাসের কনিষ্ঠতম বোলার হিসেবে। এবার আবার তাঁর দিন এল দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ম্যাচে। একটু মনে করিয়ে দেই, শ্রীলঙ্কা বোর্ডে তুলেছিল ১৪২ রান। সেমির লড়াইয়ে টিকে থাকতে দুই দলেরই জয় চাই। তো প্রোটিয়ারা ওই রান তাড়া করতে গিয়ে হাসারাঙ্গার হ্যাটট্রিকে বিপদে পড়ল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডেভিড মিলার ও রাবাদা মিলে এক বল বাকি থাকতে জয় এনে দিলেন।
১৫তম ওভারের শেষ বলে এইডেন মার্করামকে বোল্ড করেন হাসারাঙ্গা। এরপর আবার বোলিংয়ে ফেরেন ১৮তম ওভারে। লড়াই তখন জমজমাট। ওভারের প্রথম বলে ফিফটির কাছে থাকা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে সাজঘরে পাঠান হাসারাঙ্গা। পরের বলে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ক্যাচ দিলে হয়ে যায় হ্যাটট্রিক। ১১২ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে লঙ্কানরা তখন প্রোটিয়াদের ওপর চেপে বসেছে। কিন্তু শেষমেশ হতাশা শ্রীলঙ্কার। সেই সঙ্গে হাসারাঙ্গার।
এবারের আসরের প্রথম হ্যাটট্রিকটা যে ক্যাম্ফারের, তা তো আগেই বলা হলো। কাণ্ডটা তিনি আবু ধাবিতে করে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেছিলেন। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ। আয়ারল্যান্ড টেস্ট মর্যাদার দল। বড় আসরে খেলার অভিজ্ঞতায় অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। নেদারল্যান্ডস ২ উইকেটে ৫১ পর্যন্ত গেছে। সব ঠিক আছে। কিন্তু তারপরই পরপর চার বলে তাদের ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেন ক্যাম্পার। ম্যাচের দশম ওভারের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বলে একে একে তুলে নেন কলিন অ্যাকারম্যান, অভিজ্ঞ রায়ান টেন ডোসকাট, স্কট এডওয়ার্ডস ও রোলফ ফন ডার মারউইকের উইকেট। ৫১ রানে নেই ৬ উইকেট! ওখান থেকে ১০৫ রান বোর্ডে তুলতে পেরেছিল ডাচরা। আর আইরিশরা ৭ উইকেটের জয় তুলে নিয়ে আদর্শ এক জয়ে আসর শুরু করতে পেরেছিল। কিন্তু পরে আর প্রথম রাউন্ডের গণ্ডিই পেরুতে পারল না তারা।
এই হলো এবারের বিশ্বকাপে তিন হ্যাটট্রিকম্যানের দুঃখভরা গল্প। তিনজনের দুজনার দল সেমিফাইনালে খেলতেই পারতো। অন্যটি উঠতে পারত সুপার টুয়েলভে। বাস্তবে তার কোনোটাই ঘটেনি।