স্টোকসের চোখে `বিশ্বসেরা` বাটলার
উৎপলশুভ্রডটকম
৩ নভেম্বর ২০২১
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩২ বলে ৭১ করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংস খেলেছেন মাত্র ৬৭ বলে। স্ট্রোক খেলা কঠিন, এমন উইকেটে যে ইনিংস দেখে জস বাটলারকে বিশ্বসেরা বলে ঘোষণা করে দিয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস।
ইংল্যান্ডের সেরা অলরাউন্ডার কে? এই প্রশ্নে আপনার জবাব হয়তো ‘বেন স্টোকস’। কিন্তু জানেন কি, সেই স্টোকসের চোখে শুধু ইংল্যান্ড নয়, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান কে? জস বাটলার। এই বিশ্বকাপে স্টোকস খেলছেন না। কিন্তু খেলা যে দেখছেন, টুইট করে তা জানান দিচ্ছেন প্রায়ই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কঠিন এক উইকেটে বাটলারের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি দেখার পর সর্বশেষ টুইটটিতেই তাঁকে ঘোষণা করেছেন ''বেস্ট ইন দ্য ওয়ার্ল্ড' বলে।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই ফর্মে থাকার প্রমাণ দিয়ে আসছেন বাটলার। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ার্ম আপ ম্যাচে খেলেছেন ৫১ বলে ৭৩ রানের ইনিংস। মূল টুর্নামেন্টেও নিয়ে এসেছেন সেই ফর্ম। যেটির চূড়ান্ত রূপ দেখা গেছে এবারের বিশ্বকাপের প্রথম সেঞ্চুরিতে। দল হিসেবে এউইন মরগানের নেতৃত্বে শিরোপার অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠেছে গতবারের রানার্সআপ ইংল্যান্ড। বাটলার ব্যাট হাতে সামনে থেকে আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছেন সেই শিরোপা স্বপ্নে।
সব ঠিক থাকলে এই বিশ্বকাপ দেখতে পারত স্টোকসের অলরাউন্ড ঝলক। কিন্তু সেই জুলাই থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন। মানসিক অবসাদে ধরে ফেলেছে। তাই মনের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে গিয়ে খেলা থেকে সরে গেছেন। ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট সিরিজে খেলেননি। আইপিএলের দ্বিতীয় অংশেও ছিলেন না। নেই চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। তবে ফিরে আসবেন আসন্ন অ্যাশেজে। স্টোকসের মতো আইপিএলের দ্বিতীয় অংশে খেলেননি বাটলারও।
৪ ম্যাচে ২১৪ রান করে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান। মাত্র একবারই আউট হয়েছেন বলে গড়ও ২১৪! একটি করে ফিফটি ও সেঞ্চুরি। প্রথম ম্যাচে ২৪ রানে অপরাজিত থাকার পর বাংলাদেশের ম্যাচেই কেবল কম রানে (১৮) আউট হয়েছিলেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩২ বলে অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংস বিধ্বংসী ইনিংস খেলার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচসেরা হলেন সেঞ্চুরিতে। ৬৭ বলে হার না মানা ১০১, সমান ৬টি করে চার ও ছক্কায়। দ্বিতীয় ফিফটি মাত্র ২২ বলে। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি।
Best in the world @josbuttler ? ?
— Ben Stokes (@benstokes38) November 1, 2021
এই ইনিংস দেখার পরই মুগ্ধ স্টোকসের ওই টুইট, ‘বিশ্বের সেরা জস বাটলার।’
বাটলারের ইনিংসটা দেখে থাকলে স্টোকসের এই ঘোষণাকে শুধু সতীর্থের প্রতি অনুরাগ বলে মনে হবে না। শারজার স্লো-লো উইকেট ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিল। তারপরও ইংল্যান্ড যে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৬৩ করে ফেলল, তা বলতে গেলে বাটলারের একক কৃতিত্ব। উইকেট ছিল ধীর। বল উঠছিলও না। যাও উঠছিল তাও ছিল অসমান বাউন্সে। টি-টোয়েন্টি ক্রস ব্যাটের খেলা। একদিকে উইকেট পড়ছে অন্যদিকে উইকেটের এই হাল, তাই সবুরে মেওয়া ফলে প্রবাদটা মানার পণ করেছিলেন বাটলার।
কাজ হয়েছে তাতেই। অধিনায়ক মরগানের সঙ্গে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ। সেটিও কোন পরিস্থিতিতে? ১০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের রান ৩ উইকেটে ৪৭। রান যা উঠল, তা পরের ১০ ওভারে। বাটলারের প্রথম আর দ্বিতীয় ফিফটির মধ্যে বৈপরীত্যটা দেখলে যা ভালো বোঝা যায়। ফিফটি করতে ৪৫ বল খেলেছিলেন, সেখানে ছক্কা মোটে একটি। পরের ২২ বলে ৫টি ছক্কা ও ২টি চার।
পরের দিকে বাটলারের মেরে খেলা কতটা কাজে দিয়েছে? শ্রীলঙ্কার শেষ তিন ওভারে জিততে দরকার ছিল ৩৪ রান। কিন্তু আট রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ২৬ রানের পরাজয় মেনে নিতে হয় তাদের। বোলারদের ভালো করার মঞ্চটাই যে তৈরি করে দিয়েছিলেন বাটলার। ইংল্যান্ডের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করার কীর্তিটাও হয়ে গেছে তাঁর। স্টোকসের স্বীকৃতিটাকে মনে হয় না এর চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে রাখবেন বাটলার।