উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

জেতার আগে জয়ী নয়!

রিফাত বিন জামাল

১ নভেম্বর ২০২১

জেতার আগে জয়ী নয়!

কে ভেবেছিল! ছবি: আইসিসি

বিশ্লেষক থেকে শুরু করে অনুসারী যে কারোরই ফেবারিটের ছোট্ট তালিকায় নাম ছিল ভারতের। পরপর দুই ম্যাচে ভারতের শোচনীয় পরাজয়ে আবারও প্রমাণ হলো পুরোনা সত্যিটাই, মাঠে গিয়ে যতক্ষণ না আপনি জিতছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি জয়ী নন! 

ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের নামগুলো একবার ভাবুন তো! নামগুলোই বলে দেবে, ভারত কতটা শক্তিশালী! বিশ্লেষক থেকে শুরু করে অনুসারী যে কারোরই ফেবারিটের ছোট্ট তালিকায় নাম ছিল ভারতের। ভারতের পরে কে? সেটাই ছিল আলোচনার বিষয়! ভারতের দলটাই যে এমন! 

পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচের আগে তো হরভজন 'ওয়াকওভার' দিয়ে দিতেই বলেছিলেন পাকিস্তানকে! হরভজনের এমন বলার পেছনে বিশ্বকাপে দুই দলের অতীত ইতিহাসের হয়তো ভূমিকা ছিল। দেশের টান তো ছিলই। কিন্ত অধিকাংশই তো বাজি ধরেছিলেন ভারতের পক্ষে।

সেই ভারত এমনভাবে হারল, ১০ উইকেটে হার বলেই দিচ্ছে অনেক কিছু। সেদিন যেন 'ভারত'কে খুঁজেই পাওয়া যায়নি! বোলিংয়ে পারফেক্ট প্ল্যানিং থেকে তা সফল বাস্তবায়ন, পাকিস্তান ছিল এক কথায় অসাধারণ! তারপরও ভারত লড়ার মতো স্কোর অন্তত করতে পেরেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে শিশিরের প্রভাবে বোলিং করা কষ্টকর, ব্যাটারদের জন্য সুবিধা থাকলেও তবু ভারতের বোলিং দেখে আপনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করবেন, ভারতই খেলছে তো? 

পাকিস্তান ম্যাচ গেল, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও তো একই হাল! ব্যাটিংয়ে আরও বিবর্ণ। আবারও টসে হেরে পরে বোলিং করার কঠিন কাজটা পড়তে হয়েছে। পিচ স্লো ছিল বলে ব্যাটিং কঠিন ছিল, কিন্ত কোহলি নিজেই তো ম্যাচশেষে স্বীকার করেছেন, তাঁরা যথেষ্ট 'সাহসী' ছিলেন না কোনো ডিপার্টমেন্টেই! কিউইরা ভালো বোলিং করে গেছে, কিন্ত ভারতের ব্যাটসম্যানদের 'ভালো' বলকে খারাপ বানানোর চেষ্টা কিংবা ঝুঁকি নিয়ে চাপ উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেও দেখা যায়নি। ১১০ রানের পুঁজি নিয়ে জেতাটা অসাধ্য হলেও ফিল্ডিংয়েও ভারত ছিল নিস্তেজ!

সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীর বলছেন, স্কিলে কোনো সমস্যা না থাকলেও মানসিক দিক দিয়ে শক্তিশালী ছিলেন না ভারতের ক্রিকেটাররা। 'নকআউট' বনে যাওয়া ম্যাচের চাপটা নিতে পারেননি তাঁরা। ভারতের প্রথম ম্যাচের পর ছয় দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ। অনেকেই এতে ভারতকে অন্যায় সুবিধা দেওয়া হয়েছে মনে করেছেন। তবে টম মুডি বলছেন অন্য কথা। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার ও এখন কোচ উল্টো বলছেন, এই বিরতিটা ভারতের জন্য বুমেরাং হয়েছে। অন্য অনেক দল তিনটি করে ম্যাচ খেলে ফেলার কারণে অনেকটা হিসাব সারা হয়ে যাওয়ায় ভারতের জন্য ম্যাচটা হয়ে গিয়েছিল 'নকআউট'! অর্থাৎ, 'জিততেই হবে' ভাবনাটাই বিষম চাপ হয়ে চেপে বসেছিল ভারতীয় ক্রিকেটারদের মাথায়। আর পাকিস্তানের কাছে হারের পর হয়তো 'জয় চাই-ই চাই' মাথায় বসত করে ফেলেছিল!

পুরো ভারতের প্রতিচ্ছবি! ছবি: এএফপি

আচ্ছা, ভারতের ক্রিকেটাররা চাপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন, অবাক করা বিষয়ই বটে! তাদের থেকে বেশি চাপে বোধহয় পৃথিবীর কোন দেশের ক্রিকেটাররাই খেলেন না। তবে আইপিএল তো সেই চাপ উড়িয়ে দেওয়ার মঞ্চই হয়ে গেছে। আইপিএলের চাপ সামলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারতের এই দলের অনেক ক্রিকেটাররা যখন পা রেখেছেন, তখন তাদের খেলায় 'চাপ' নামক কোনো কিছুর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই যে তরুণদের চাপ তাড়িয়ে দিয়ে বড় মঞ্চে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটাই অনেকের চোখে আইপিএলের সফলতা। অবশ্য আন্তর্জাতিক ম্যাচের চাপের সমতুল্য তো কিছুই হতে পারে না। কোহলি, রোহিত, জাদেজারা বেশ অভিজ্ঞ হলেও ম্যাচের পারিপার্শ্বিকতায় তাঁরাও তাই চাপে পড়তে বাধ্য! 

এখন এমনই অবস্থা যে, ভারতের সেমিফাইনালের যাওয়া না-যাওয়াটাও অন্যের হাতে। বাকি তিন ম্যাচ তো জিততেই হবে, সাথে অন্যদের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে! দুই ম্যাচ খেলে দুটিতেই ভারতের হার, ভাবতে পারেন?

সে যাই হোক, এক দিক দিয়ে ভালোই হলো। ভারতের ম্যাচ নিয়ে ভারতের মিডিয়ায় আলোচনা থেকে একটা বিষয় এক ধরনের উঠেই গিয়েছিল, অনিশ্চয়তা! ভারতের জয়ই সবাই অবধারিত মেনে নিয়েছিলেন। দুটি দল জয়ের জন্য খেলতে নামবে এবং একটি দলই জয়ী হয়ে মাঠ থেকে বেরোবে। আর সেটি ভারত যেমন হতে পারে, তেমনই অন্য কেউও হতে পারে, ব্যাপারটা হারিয়ে গিয়েছিল যেন। অবশ্য অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেও পুরো ক্রিকেট বিশ্বের অধিকাংশই তো এগিয়ে রেখেছিলেন ভারতকেই!

এখন হয়তো অনেকে বলতে পারেন, ভারত জিততে পারবে না, এটা তিনি আগেই বলে দিয়েছিলেন। কিন্ত এটা বিশ্বাস করা কষ্টকর যে, আপনি প্রথম দুটি ম্যাচেই ভারতের হারের কথা আগে থেকেই বলে দিয়েছেন! অবশ্য বললেও বলতে পারেন! ভারতের 'হার' দেখতে চাওয়া মানুষের অভাব তো নেই এদেশে, কিন্ত মনে মনে তো সকলেরই জানা আছে, আদতেই ভারত দলটা কতটা শক্তিশালী।

সেই ভারতই এখন গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে! ভারতীয় দলে কত বড় বড় নাম, বিশ্বসেরা ক্রিকেটার। তবে খাতায় কলমে যতই আপনি কাউকে এগিয়ে রাখেন না কেন, খেলাটা যে খেলতে হয় গিয়ে মাঠেই। 

ভারতের হারে তো তাই আবার প্রমাণ হলো পুরোনা সত্যিটাই, মাঠে গিয়ে যতক্ষণ না আপনি জিতছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি জয়ী নন! 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×