`রিমেম্বার দ্য নেম`
উৎপলশুভ্রডটকম
৩১ অক্টোবর ২০২১
২০১৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের দুদিন আগে জন্ম নিয়েছিল ‘রিমেম্বার দ্য নেম’ কথাটা। আর অমরত্ব পেয়েছিল ফাইনাল ম্যাচের শেষ ছক্কার পর। ২০২১ বিশ্বকাপে সেই কথাটাই আবার ফিরে এলো আসিফ আলীর এক ওভারে চার ছক্কায়। ফিরিয়ে আনলেন সাড়ে পাঁচ বছর আগে চার ছক্কার শিকার হওয়া ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস।
‘রিমেম্বার দ্য নেম’। কথাটা বললেই কি ইয়ান বিশপের কথা মনে পড়ে যায় না আপনার? ওই যে ইডেন গার্ডেনে কার্লোস ব্রাফেট শেষ ছক্কাটা মারার পর ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে উত্তেজনায় ফেটে পড়া তাঁর ভরাট কণ্ঠ, ‘কার্লোস ব্র্যাথওয়েট! কার্লোস ব্র্যাথওয়েট! রিমেম্বার দ্য নেম।’ অভাগা বোলার তখন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। আর সেই বোলারই সেই 'রিম্বেবার দ্য নেম' কথাটা আবার ফিরিয়ে আনলেন। সাড়ে পাঁচ বছর পর আসিফ আলীর এক ওভারে ছয় ছক্কা হাঁকানো দেখে বেন স্টোকস টুইট করলেন, ‘রিমেম্বার দ্য নেম আসিফ আলী।’
কলকাতার সেই ফাইনালের সঙ্গে দুবাইয়ের এই ম্যাচের তুলনা চলে না। কিন্তু বেন স্টোকস যেভাবে ক্রিকেট ধারাভাষ্যের অমর বাণীতে পরিণত হওয়া বিশপের কথাটা বললেন, তাতে ক্রিকেট রোমান্টিকের মন সাড়ে পাঁচ বছর আগে ফিরে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। সেদিন ইডেন গার্ডেনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইংল্যান্ড ম্যাচটা জিতেই যাচ্ছিল। শিরোপার সঙ্গে ছুঁই ছুঁই দুরত্ব ইংলিশদের। শেষ ওভারে ক্যারিবিয়ানদের চাই ১৯ রান। বোলার সমীহ জাগানিয়া স্টোকস। কিন্তু প্রথম চার বলেই ছক্কা মারার অবিশ্বাস্য এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেন ব্রাফেট। ইংল্যান্ডের হাত থেকে তাই শিরোপাটা আক্ষরিক অর্থে ছিনিয়ে আনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রোমাঞ্চকর সেই মুহূর্তেই জন্ম ‘রিমেম্বার দ্য নেম’ এর।
এবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক ওভারে চার ছক্কা মারার ঘটনা ঘটল। নকআউট বা ফাইনাল ম্যাচ নয়, পরপর চার বলেও নয়। সুপার টুয়েলভে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুই ওভারে পাকিস্তানের চাই ২৪ রান। ১৮তম ওভারে আফগানরা মাত্র ২ রান দিয়ে চেপে বসেছে। কিন্তু পেসার কারিম জানাতের করা ১৯তম ওভারটিতেই খেলা শেষ করে দেন পাকিস্তানের ফিনিশার আসিফ। ছয় বলের মধ্যে চারটিকে উড়িয়ে বাইরে ফেলে রোমাঞ্চকর এক খেলার অনিন্দ্য সুন্দর পরিণতি এনে দিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে করে নেন পাকা জায়গা।
স্টোকসকে মারা ব্রাফেটের সেই চার ছক্কার সঙ্গে এই চারের কি তুলনা চলে? একটি ঘটনা বিশ্বকাপের ফাইনালের মতো ম্যাচে। অন্যটি একরকম প্রাথমিক পর্বে। কিন্তু আলোচনাটা তখনই চলে আসে যখন খোদ ২০১৬ বিশ্বকাপের সেই বেচারা বোলারই কথাটা আবার তোলেন। নইলে হয়তো ইতিহাসের পাতা থেকে বিশপকে উঠে আসতে হয় না। আর এই রাতে কমেন্ট্রি বক্সেও তো ছিলেন না ওই ক্যারিবিয়ান।
কিছুদিন আগে কথায় কথায় উঠে এল ২০১৬-এর প্রসঙ্গটা। সেখানেই জানা গেল কিভাবে উইন্ডিজ-ইংল্যান্ডের ম্যাচের দুদিন আগে অমরত্ব পেয়ে যাওয়া সেই কথাটার জন্ম। ক্রিকেট মাঠের কীর্তির সাথে ধারাভাষ্যে জন্ম নেওয়া ওই কিংবদন্তি কথাটার তুলনা চান না বিশপ। কারণ খেলা ও খেলোয়াড়রা তাঁর কাছে সবকিছুর আগে।
শুধু জানতে চাওয়া বলে বিশপ সবিনয়ে ঘটনা ব্যাখ্যা করেন, ‘‘ফাইনালের দুদিন আগে আমার এক বন্ধুর আয়োজন করা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে একজন জানতে চান যে, ফাইনালে আমরা কোন খেলোয়াড়ের ওপর চোখ রাখব। তা ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভোর মতো প্রধান খেলোয়াড় বাদ দিয়ে? আমার মনে তখন কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের নাম আসে। কারণ, বিশ্বকাপে সে ভালোই বল করছিল। বলও খুব ভালো মারতে জানে ও। আমি ওই ভদ্রলোককে বলি, "কার্লোস ব্র্যাথওয়েট খুব ভালো অলরাউন্ড ক্রিকেটার। রিমেম্বার দ্য নেম।" তারপর সে যখন শেষ ছক্কাটা মারে, তখন আমার মনে সবার আগে চলে আসে ওই ভদ্রলোককে বলা কথাটা।’
এভাবেই জন্ম ‘রিমেম্বার দ্য নেম’-এর। যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা-ই রাখেননি আসিফ। কিন্তু কী দারুণ ব্যাপার দেখুন! স্টোকসের কারণে কিভাবে কিভাবে যেন ২০১৬ বিশ্বকাপের ‘রিমেম্বার দ্য নেম’ কথাটার সঙ্গে ২০২১-এ এসে বাঁধা পড়ে গেলেন পাকিস্তানের এবারের আসরের নায়ক। আসিফ আলী। ‘রিমেম্বার দ্য নেম’!