মুখোমুখি বাংলাদেশ-উইন্ডিজ

ক্যারিবিয়ান ঝড় না বাঘের গর্জন?

উৎপলশুভ্রডটকম

২৯ অক্টোবর ২০২১

ক্যারিবিয়ান ঝড় না বাঘের গর্জন?

বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের একই দশা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু না হতেই শেষ হয় হয়। শারজায় আজকের ম্যাচের পর টিকে থাকবে একটা দল। সেটা দুবারের চ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজ না নিজেদের হারিয়ে খোঁজা বাংলাদেশ? ২০০৭ বিশ্বকাপের সেই জয় আর ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে নিকট অতীতের মুখোমুখি লড়াইয়ের ইতিহাসই শুধু বাংলাদেশের আশার প্রদীপ জ্বেলে যাচ্ছে।

জিম্বাবুয়েকে এক পাশে সরিয়ে রাখুন। তারপর দেখুন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাস। দেখবেন, বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ১২ ম্যাচে ৫ জয়। আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে সাত আসর মিলে জয় সাকুল্যে একটি। সেটাও ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে। কিন্তু দুবারের চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে এবারের দেখাটা হচ্ছে খুব কঠিন সময়ে। যেখানে হারলেই বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের বিদায়। এই পরিস্থিতিটাই সবচেয়ে বেশি ভয়ের। ক্যারিবিয়ান ঝড় উঠতে পারে যখন তখন।

অবস্থা অবশ্য দুই দলেরই বেগতিক। শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ধূসর প্রায়। আর একটি হার মানে নিশ্চিত বিদায়। তারপর শুধু অলিম্পিকের চেতনায় টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়াটাই থাকবে বাকি। একই কথা উইন্ডিজের জন্যও। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৫৫ রানে অলআউট হতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে পরের ম্যাচেও একরকম আত্মসমর্পণের মতো হার। আজ বিকেল চারটায় শারজায় শুরু ম্যাচটা তাই দুই দলের জন্যই বাঁচা-মরার।

২০০৭ সালে প্রথম বিশ্বকাপের সেই জয়টা ছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বলার মতো আর কিছু নেই। সেই ম্যাচের ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো ও রবি রামপল এবারও আছেন। তিনজনই একাদশে থাকবেন ধারণা করা যায়। ওদিকে ১৪ বছর আগের জোহানেসবার্গের সেই ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র দুজন এখনো টিকে আছেন। একজন ব্যাটে-বলে ঝলমলে সাকিব আল হাসান। বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার। অন্যজন, মুশফিকুর রহিম, খেলার চেয়ে তাঁর বলা আয়নায় মুখ দেখার কথাই রসিকতা হয়ে বেশি ঘুরে ফিরছে সবার মুখে।

সাকিবের কাছে তো প্রত্যাশা তো থাকবেই, খেললে নাসুমের কাছেও

শুধু এই টিকে থাকা পাঁচ সেনানীর কথা বলে আসলে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচকে বোঝানো যায় না। সর্বশেষ ছয় দেখায় দুই দলই সমান তিনটি করে ম্যাচ জিতেছে। ওসবও আলোচ্য বিষয় নয়। আসল কথা হলো, দুই দলই একে অন্যকে খুব ভালো করে চেনে। এই যে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসে বেশ হম্বিতম্বি করে গেলেন নিকোলাস পুরান, তাঁরও তো অধিনায়কের নাম একসময় ছিল মাহমুদউল্লাহ। বিপিএলে দুই দফা খুলনা টাইটানসের হয়ে খেলার সময় অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছেন বাংলাদেশের বর্তমান অধিনায়ককে। সেই সূত্রে বন্ধুতাও হয়েছে।

শুধু পুরানই নন, বাংলাদেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ বিপিএলের গোড়ার দিক থেকে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপনের নামই তো গেইল। বিপিএলের অনেক রেকর্ডই শেষবারের মতো জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় থাকা বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। বিপিএল সূত্রেই বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের খুঁটিনাটি সব জানা আন্দ্রে রাসেল-ব্রাভোদেরও।

পুরান তাই যতই বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরুন না কেন, এ-ও বলতে ভোলেন না যে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে আরও জেনেশুনেই মাঠে নামবেন তাঁরা। কথা ওখানেই তো শেষ না। সামর্থ্যের ছিটেফোঁটাও এখনো দেখাতে পারেননি বলে আক্ষেপে পুড়ছে দলটা। সেই আক্ষেপ থেকে বের হওয়ার পণও আছে পুরানের কণ্ঠে, ‘আমরা মেনে নিয়েছি, এখন পর্যন্ত আমরা একদমই ভালো খেলতে পারিনি। আমরা তাই সামনের দিকে তাকাচ্ছি। আশা করি, আমরা এর চেয়ে অনেক ভালো করতে পারব।’

শেষ দেখাগুলোতে ক্যারিবিয়ানদের চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের গল্প বাংলাদেশের। এমনকি ২০০৭-এ সেই প্রথম দেখায় জয় পাওয়ার সময় থেকে কোনো ম্যাচে উইন্ডিজ জেতে তো কোনোটায় বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যগুলোর একটি। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বাঘের তো নখদন্ত বের করে প্রচণ্ড গর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা। সেই মানসিক অবস্থাটা বাংলাদেশের এখন আছে কি না, সেটা অবশ্য বড় একটা প্রশ্ন।

ক্রিস গেইলের ব্যাট এখনো রানের দেখা পায়নি। এটা আশার কথা, না ভয়ের?

এই সুপার টুয়েলভে আসতেই তো বাংলাদেশের কতো হ্যাপা পোহাতে হয়েছে। প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ার পর মাঠের বাইরেও কত ঘটনা। কখনো সেখানে প্রতিপক্ষ খোদ বোর্ড সভাপতি, কখনো তাঁর আদলে নিন্দুকেরা। যাদের আয়নায় মুখ দেখতে বলে এখন ট্রলের শিকার মুশফিক।

বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দূর্জয় অবশ্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর একটা পরামর্শ দিয়েছেন দলকে। এখন তো এটাই সবাই দিতে পারছে বেশ। নাঈমুর বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ না রেখে দলটা যেন মাঠের খেলায় মন দেয়। সেই সাথে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এখন আর দলটার কাছে কেউ সেমিফাইনালে খেলার আশা করছে না। মানে মানে সম্মান আর মর্যাদাটা নিয়ে মরুর দেশের বিশ্বকাপটা শেষ করতে পারলেই হয়।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর নবীন নাসুম আহমেদকে প্রেস কনফারেন্সে ঠেলে দিয়েও সমালোচনার শিকার বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের আগের দিনও অধিনায়ক তো আসেনইনি, সিনিয়র কোনো খেলোয়াড়ও নন। পাঠানো হয়েছে নুরুল হাসান সোহানকে। এসব আর যা-ই হোক, সাহসের কোনো পরিচয় নয়। 

সব মিলে দেখা যাচ্ছে মাঠের খেলার চেয়ে এই বিশ্বকাপের মাঠের বাইরের ব্যাপার স্যাপারের কারণেই বাংলাদেশ দলকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। তা হয়তো হতেই পারে দল পারফর্ম করতে পারছে না বলে। আজকের দিনটাই যে সেই পারফর্ম করার দিন, তাও সম্ভবত মনে হচ্ছে না কারও। তবুও তো এই বাংলাদেশ দলটাকে ঘিরে আবর্তিত কোটি কোটি মানুষের আশা। সেই আশার প্রদীপটা জ্বালিয়ে রাখতে কি বাঁচা-মরার এই দিনে ক্রিকেট বিশ্ব আরেকবার শুনতে পারে না বাঘের গর্জন? 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×