উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
সাকিবকে কি মনে রাখবে বিশ্ব ক্রিকেট?
শাওন শেখ শুভ
২৫ অক্টোবর ২০২১
টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, সব ফরম্যাটেই দলকে ম্যাচে ফেরান বা ম্যাচে রাখেন সাকিব, সেটা হোক ব্যাট হাতে কিংবা বল হাতে। ব্যাট-বল হাতে সাকিব দলকে কতটুকু দেন, সে আলোচনা ইতিমধ্যে ক্লিশে হয়ে গেছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ দল সাকিবকে কী দেয়?
নিসাঙ্কা-আসালাঙ্কার জুটি চোখ রাঙাচ্ছিল বাংলাদেশকে। তিনি এলেন, ভাঙলেন সে জুটি। সেখানেই থামলেন না। নিসাঙ্কার পর বোল্ড করলেন প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়া আভিস্কা ফার্নান্দোকেও। ম্যাচে ফিরল বাংলাদেশ।
এটা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত ম্যাচের দৃশ্যপট। এবার আরেকটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক। গ্রুপ পর্বে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হার। শঙ্কা ছিল সুপার টুয়েলভ নিয়ে। এবারও রক্ষাকর্তা তিনি। পরের দুটি ম্যাচেই হলেন ম্যাচসেরা, দলকে তুললেন সুপার টুয়েলভে। এই তিনিটা কে, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র নাটক সাজাবার সুযোগ নেই। শিরোনামেই নামটা বলা আছে। বলা না থাকলেও গত ১৫ বছর বাংলাদেশের ক্রিকেটকে যদি সাদা চোখে দেখে থাকেন, এই 'তিনি কে'র উত্তর আপনার অজানা থাকার কথা নয়!
এই তিনিটা সাকিব আল হাসান।
টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, সব ফরম্যাটেই দলকে ম্যাচে ফেরান বা ম্যাচে রাখেন সাকিব, সেটা হোক ব্যাট হাতে কিংবা বল। ব্যাট-বল হাতে সাকিব দলকে কতটুকু দেন, সে আলোচনা ইতিমধ্যে ক্লিশে হয়ে গেছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ দল সাকিবকে কী দেয়?
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের কথাই ধরুন না! ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট নিয়ে নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপের সেরা পারফরমার ছিলেন সাকিব। কিন্তু দিনশেষে টুর্নামেন্ট-সেরার পুরস্কারটা উঠল কেন উইলিয়ামসনের হাতে। কারণ, ওই যে দল হিসেবে বাংলাদেশ ভালো করেনি।
এই ধারার শুরুটা হয়েছিল ২০০৮ সালে মুলতানে। ব্যাট হাতে ১০৮, বল হাতে ৩৪ রানে ১ উইকেট নেওয়ার পরও দলের শোচনীয় হার। টেস্ট ক্রিকেটেও এমন ঘটনা একাধিকবারই ঘটেছে। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাট হাতে ৭১ রানের ইনিংস, বল হাতে ৯ উইকেট...তারপরও সাকিবকে থাকতে হয়েছে পরাজিত দলে।
টেস্ট-ওয়ানডের উদাহরণ যখন দেওয়া হলো, টি-টোয়েন্টিই বা বাদ যাবে কেন? ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেললেন ৮৪ রানের দারুণ এক ইনিংস, বাংলাদেশ করে ফেলল ১৭৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। বাজে বোলিং আর ফিল্ডিং করে সেই ম্যাচেও ঠিকই হারতে হলো বাংলাদেশকে।
২০০৮ থেকে শুরু হয়ে ২০২১...দৃশ্যপট কি খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে? হয়তো কিছুটা পরিবর্তন এসেছে, কিন্তু ঠিক যতটা প্রয়োজন ততটা আসেনি। দুর্দান্ত ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের পরও পরাজয়ের বেদনায় নীল হওয়ার মতো দিন ক্রিকেটে আসতেই পারে। তবে এমন দিন যদি বার বার আসে, তাহলে তা অবধারিতভাবে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।
এবারের টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্ট-সেরার দৌড়ে এগিয়ে আছেন সাকিব। কিন্তু আসল লড়াইটা যাদের সাথে হবে, তাদের আগেই টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাবার সম্ভাবনা সাকিবেরই বেশি! এ কথা আমরা যেমন জানি, সাকিবও নিশ্চয়ই জানেন। এমন অবস্থায় টু্র্নামেন্ট-সেরার লড়াইয়ে সাকিব কতটা থাকতে পারবেন?
অলরাউন্ডার হিসেবে বোধ করি বর্তমানে সাকিবের লড়াইটা রবীন্দ্র জাদেজা বা বেস স্টোকসের সঙ্গে। জাদেজা ও স্টোকস দুজনই নিজ দেশের হয়ে বড় ট্রফি জিতেছেন। কিন্তু সাকিবের খাতা এখনও শূন্য। সম্ভাবনাও ক্ষীণ! ব্যক্তিগত অর্জনের বিচারে হয়তো এগিয়ে আছেন জাদেজা কিংবা স্টোকসের চেয়ে, কিন্তু শিরোপার লড়াইয়ে যে ঢের পিছিয়ে। আর দিনশেষে লড়াইটা তো দলের, কোনো ব্যাক্তির নয়।
প্রত্যেক ক্রিকেটারের কাছেই ব্যাক্তিগত রেকর্ডের চেয়ে দলীয় সাফল্য বেশি কাঙ্ক্ষিত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচেই যেমন সাকিব টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটিকে নিজের করে নিয়েছেন। কিন্তু সেই সাফল্য তিনি উদযাপন করতে পারলেন কই? ম্যাচে ব্যক্তিগত রেকর্ড না বাংলাদেশের জয়...এই অপশন দিলে সাকিব নিশ্চয়ই বাংলাদেশের জয়ই চাইতেন।
'জো জিতা ওহি সিকান্দার' ক্রিকেটে এই কথাটার প্রাসঙ্গিকতা খুঁজতে গেলে দল হিসেবে জয়ের বিকল্প নেই। পরাজিত দলের ভালো পারফরমারদের মানুষ দিনশেষে মনে রাখে না। তারা থাকে আফসোসের নাম হয়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই আফসোসের নাম সাকিব।
তাই মাঝে মাঝে ভয় হয়, সাকিব আল হাসানকে বিশ্ব ক্রিকেট মনে রাখবে তো!