বায়োবাবলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার খরচ জেনে নির্ঘাত চমকে যাবেন

উৎপলশুভ্রডটকম

১৫ অক্টোবর ২০২১

বায়োবাবলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার খরচ জেনে নির্ঘাত চমকে যাবেন

ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে চার্টার্ড বিমানে ঢাকায় এসেছিল অস্ট্রেলিয়া দল

করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ব ক্রিকেটের সব বোর্ডকেই নানা চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে এখন বুঝি জয়ী ঘোষণা করা যায়। গত অর্থ বছরে শুধু খেলোয়াড়দের বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত করতেই তাদের ব্যয় হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। তারপরও সিএর ব্যাংক ব্যালেন্স বেড়েছে। বিগ ব্যাশও গড়েছে সবচেয়ে বেশি দর্শকের দেখার রেকর্ড।

সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের তালিকায় ওপরের দিকেই আছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। আয়-ব্যয়ও সেরকম। একটা ব্যয়ের তথ্য জেনে অবশ্য আপনি নির্ঘাত চমকে যাবেন। অনুমান করতে পারেন, কোভিড-১৯ এর কারণে বায়োসিকিউরিটির পেছনে ২০২০-২১ অর্থ বছরে সিএ কত টাকা খরচ করেছে? অঙ্কটা ২৩ মিলিয়ন ডলার! বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ১৯৭ কোটি টাকা।

এখন বলুন, ওই যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে চাটার্ড বিমানে বাংলাদেশে আসার এত রকম শর্ত দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া দল, এ জন্য কি তাদের দোষ দেওয়া যায়? আগস্টের শুরুতে ঢাকায় পাঁচ ম্যাচের ওই টি-টোয়েন্টি সিরিজটার কথা নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে। মনে থাকার কথা আসার আগে ও পরে দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার শর্তগুলোর কথাও। মুশফিকুর রহিম যে অস্ট্রেলিয়ার বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত সময়ে বাবলে ঢুকতে না পারায় খেলতে পারেননি, এটাও ভুলে যাওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশে পৌঁছে বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশনের ঝামেলায়ও যায়নি অস্ট্রেলিয়া দল। সরাসরি হোটেলে নিতে হয়েছে তাদের। গোটা পাঁচতারা হোটেলটা তাদের জন্য ভাড়া করতে হয়েছিল। এমনকি রান্না-বান্নার জন্য বাবুর্চিও সঙ্গে এনেছিল তারা। ম্যাচ ডেতে যেটা নিয়ম. সেটা মেনে ড্রেসিংরুমে স্বাগতিক বোর্ডের দেওয়া খাবারেও তাদের ছিল নিষেধাজ্ঞা। 

এরকম কত কী! ছক্কায় বল গ্যালারিতে চলে গেলে আবার নতুন বল দিয়ে খেলা শুরুর শর্তও ছিল। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে করমর্দন বা ফিস্ট আপের সৌজন্যও তারা দেখায়নি। সিরিজটা ৪-১ জিতে গেল যখন বাংলাদেশ, তখন বাংলাদেশের অনেক সমর্থক আকর্ণ হেসেছিলেন এই ভেবে যে, ‘এতো বায়নাক্কা করার কড়া একটা জবাব দেওয়া গেল বটে!’ 

কিন্তু ক্রিকেটারদের কী করার ছিল, এখন তা নিশ্চয়ই আরেকবার ভাববেন আপনি। নিজেদের দেশেও তো এমন নিচ্ছিদ্র বায়েবাবল নিশ্চিত করেই খেলে অস্ট্রেলিয়ানরা। নইলে কি আর এক অর্থ বছরে শুধু বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত করতে এত টাকা খরচ হয়?

সিএর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, বায়োবাবল নিশ্চিত করতে এই যে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, তার সিংহভাগ গেছে দুটি খাতে। প্রথমত, দেশ বিদেশে উড়ে বেড়াতে হয়েছে চাটার্ড বিমান ভাড়া করে। তাতে এড়ানো গেছে সাধারণ বিমানে অন্যদের সঙ্গে যাতায়াত। দ্বিতীয়ত, টিম হোটেলকে শূন্য করে শুধুমাত্র টিমের জন্য তা ভাড়া করার খরচ। যাতে দলের বাইরের কারো সংস্পর্শে না যেতে হয়।কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারের সঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান আর্ল এডিংস। ছবি: গেটি ইমেজেস

গত বৃহস্পতিবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অ্যানুয়াল জেনারেল মিটিং বা এজিএমে গত অর্থ বছরের আর্থিক রিপোর্ট থেকে আরও অনেক কিছুর হিসাব পাওয়া গেছে। এটাও জানা গেছে, গত অর্থবছরে সিএ'র রাজস্ব ৬ শতাংশ বেড়ে ৪১৪.৭ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এটাকে সিএ বড় অর্জন হিসেবে দেখছে। করোনা মহামারীর কারণে সবার আয়ে বড় প্রভাব পড়েছে। তারপরও শেষ অর্থবছরে ৫৪ মিলিয়ন ডলার সঞ্চয় করতে পেরেছে তারা। 

বুধবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান আর্ল ইডিংস পদত্যাগ করার পর অন্তর্বতীকালীন সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রিচার্ড ফ্রেডেনস্টেইন বলেছেন, ‘গত ১২ মাসে যা কিছু অর্জন, তা কেবল আমাদের খেলাটার সহনশীলতার প্রমাণ নয়, এটা প্রমাণ করে সমষ্টিগত হিসেবে কাজ করলে কত কিছু করা যায়। মহামারী থেকে আমরা সবাই শিক্ষা নিয়েছি এবং আগামী মৌসুমেও তা আমাদের সঙ্গে থাকবে।’   

বিধিনিষেধের মধ্যেও এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় ৮৫৮,৪৬৫ দর্শক গ্যালারিতে উপস্থিত থেকে খেলা উপভোগ করতে পেরেছেন। রেকর্ড হয়েছে বিগ ব্যাশেও। গত ১০ বছরের মধ্যে এবারের বিগ ব্যাশই সবচেয়ে বেশি দর্শক টেনেছে। টেলিভিশনে মোট ৪৪.৮২ মিলিয়ন দর্শক খেলা দেখেছেন। রেকর্ড দর্শক টেনেছে নারীদের বিগ ব্যাশও। 

সবকিছু মিলিয়ে কোভিড নাইনটিনের বিপক্ষে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে জয়ী ঘোষণা করাই যায়।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×