ব্যাটসম্যান না ব্যাটার, শেন ওয়ার্ন কোনটার পক্ষে?
উৎপলশুভ্রডটকম
১৫ অক্টোবর ২০২১
ব্যাটসম্যান শব্দটা বদলে লিঙ্গ-নিরপেক্ষ `ব্যাটার` করার পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথাই হচ্ছে। কেউ এতে খুশি, কেউ বা আবার এত বছরের ঐতিহ্যকে বদলে দেওয়ার বিপক্ষে। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন কী বলেন?
যারা ব্যাট করেন, তারা ‘ব্যাটসম্যান’। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে কী হবে? আগে থেকেই ‘ব্যাটার’ শব্দটা ব্যবহার করা হচ্ছিল কম-বেশি। ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন অবশ্য ক্রিকেটের এই টার্মটা জেন্ডার-নিউট্রাল বা লিঙ্গ বৈষম্যহীন হয়ে যাওয়ায় খুশি। ঘরে দুই মেয়ে আছে বলেই কি না কে জানে, ব্যাটসম্যানের চেয়ে ‘ব্যাটার’ টার্মটাই তাঁর চোখে আদর্শ।
কেন হঠাৎ ‘ব্যাটসম্যান’ আর ‘ব্যাটার’ নিয়ে আলোচনা, সেটা তো অনুমান করতে পারছেন আশা করি। ক্রিকেট আইনে গত মাসে একটা পরিবর্তন এসেছে। ‘ব্যাটসম্যান’ বা ‘ব্যাটসমেন’ শব্দকে বদলে ফেলা হয়েছে। ক্রিকেটের আইনের পরিভাষায় এখন শব্দটা হবে ‘ব্যাটার’ বা ‘ব্যাটার্স’। ক্রিকেটের আইন প্রণয়ন সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে ‘ব্যাটার’ হিসেবে অভিহিত করার আইন করেছে।
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসিও তাদের সব প্লেয়িং কন্ডিশনে এবং আসন্ন টি-টেয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটসম্যানকে ব্যাটারে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই যারা ব্যাট করেন, তারা এখন আর ব্যাটসম্যান বা ব্যাটসমেন নন, আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাটার বা ব্যাটার্স। কারও চোখে এটা ছোট্ট একটা পরিবর্তন। অনেকে এত বছর ধরে চলে আসা 'ব্যাটসম্যান' শব্দটা তুলে দেওয়ারও বিপক্ষে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি লেগ স্পিনার এর পক্ষে তো বটেই, তাঁর মনে হচ্ছে ছোট দেখালেও পরিবর্তনটা আসলে অনেক বড়।
শুনুন ওয়ার্নের মুখেই ‘এটা নিরপেক্ষ (একটা শব্দ)। আসলে আমাদের খেলাটায় এমন পরিবর্তনটা হওয়ারই ছিল। এখন আমাদের ব্যাটাররা বোলার, ফিল্ডার এবং উইকেটকিপারদের মতো জেন্ডার-নিরপেক্ষ।’ ছোট্ট এই পরিবর্তন কেমন বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে ওয়ার্ন বলেছেন, ‘এটা ছোট্ট একটা পরিবর্তন। কিন্তু এর মাধ্যমে ক্রিকেটে বিরাট এক প্রভাব পড়বে। এর কারণে খেলাটা আরও বেশি অন্তর্ভূক্তিমূলক হবে।’
সময়ের সঙ্গে সবকিছুই বদলায়। ওয়ার্নও মানেন বিবর্তনের ধারায় বদলাতে হয়, ‘আমার মতে ব্যাটসম্যান থেকে বদলে ব্যাটার করাটা যথেষ্ট ভালো হয়েছে। এটা ভালো। খেলা এখন অনেক বড় ব্যাপার, এটা জনপ্রিয় খেলা। সেটা সময়ের ধারায় বদলে যাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।’
মেয়েদের ক্রিকেটের চিত্রটা যে দ্রুত বদলে যাচ্ছে, সেটাও অজানা নয় ওয়ার্নের। আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি মেয়ে খেলায় আসছে। নারী ক্রিকেটারদের জন্য সুযোগ সুবিধাও বাড়ছে। পুরুষ ক্রিকেটারদের সমানে সমান এখনো তারা হতে পারেনি। এই বৈষম্যও ঘুচে যাওয়ার পূর্বশর্তও মেয়েদের আরও বেশি সংখ্যায় ক্রিকেটে নিয়ে আসা।
ওয়ার্ন তাই বলছেন, ‘এখন নারীদের জন্য ক্রিকেট চমৎকার একটা ক্যারিয়ার। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও সব বোর্ড চেষ্টা করছে। মেয়েদের ক্রিকেটে এখন যত টাকা বিনিয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে, তা খুব ভালো একটা ব্যাপার।’
এক ব্যাটসম্যান শব্দটা বদলে লিঙ্গ বৈষম্যহীন ব্যাটার করলেই যে নারী ক্রিকেটের চেহারা আমুল বদলে যাবে, তা নয়। আরও অনেক কিছুই করতে হবে। আইসিসিও এরই মধ্যে সদস্য দেশগুলোকে নারীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়াতে বলেছে।
মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজের মেয়েদের সঙ্গে একসময় খেলার প্রসঙ্গ টেনেছেন ওয়ার্ন, ‘আমার কন্যারাও খেলতে ভালোবাসে। পেশাদার হিসেবে হয়তো নয়, তবে আমরা বাড়ির পেছনের আঙিনায় খেলতাম। এখন আর খুব বেশি খেলা হয়ে ওঠে না। খেলতাম তখন, যখন ওরা আরও ছোট ছিল।’