সাকিব বলছেন বলেই...
উৎপলশুভ্রডটকম
১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
বিশ্বকাপের আগে শেষ ম্যাচটা বাংলাদেশ হেরে গেছে ২৭ রানে। প্রস্তুতি কেমন হলো, প্রশ্নটা যেমন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছে গিয়েছিল; গিয়েছিল বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছেও। কী বললেন তাঁরা?
বাংলাদেশ সিরিজ জিতে গেছে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই, সিরিজের প্রেক্ষিতে ম্যাচটা ছিল নিছকই নিয়মরক্ষার। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে শেষ ম্যাচ বলে হেলায় নেওয়ার সুযোগ ছিল না এই ম্যাচকেও। দলের পরিকল্পনা-কৌশল নির্ধারণের শেষ প্রস্তুতির সুযোগ তো এই ম্যাচেই ছিল।
সেটাই যদি হয়, তো প্রস্তুতিটা ভালো হলো না মোটেই। কিছুটা ব্যাটিং উইকেটে নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশে গত ১০ টি-টোয়েন্টির মাঝে রান তুলল সর্বোচ্চ, তাদের দেওয়া ১৬২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ থেমে গেল ১৩৪ রানেই।
ব্যাটিং উইকেটের ভূমিকা তো ছিলই, নিউজিল্যান্ডের রানটা ১৬০-এর ওপারে যাওয়ার পেছনে বোলিংও একটা কারণ। সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে বোলিং লাইনআপটা বদলে ফেলা হয়েছিল প্রায় পুরোটাই। মোস্তাফিজ-সাইফউদ্দিন-সাকিব-মাহেদির বদলে সিরিজে প্রথমবার সুযোগ পেয়েছিলেন তাসকিন-শরিফুল-শামীম। শামীম এক ওভার করার সুযোগ পেয়ে রান দিয়েছেন মাত্র ৪, কিন্তু অনেকদিন বাদে পাওয়া সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি শরিফুল-তাসকিনের কেউই। দুজনে মিলে ৮ ওভার বল করে রান দিয়েছেন ৮২!যদিও তাসকিন শুরুটা ভালোই করেছিলেন, প্রথম ২ ওভারে দিয়েছিলেন মাত্র ৭ রান। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও প্রশংসা করলেন বোলারদের ভালো সূচনার। তবে সেই শুরুটাকে সুন্দর পরিসমাপ্তি দেওয়া যায়নি বলে আক্ষেপ ঝরল তাঁর কণ্ঠে, 'বোলাররা ভালোই করেছে। নিজেদের উজাড় করেই বল করেছে, তবে শেষটা ভালো হয়নি।'
আগের ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের জয়ের ভিত্তি গাঁথা হয়েছিল বোলারদের হাতেই, সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে বোলারদের উদ্ধারের দায়িত্ব পড়েছিল ব্যাটসম্যানদের হাতে। কিন্তু তারা ব্যর্থ এবারও। সিরিজ শেষের পরিসংখ্যানে তাকিয়ে তাই আঁতকেই উঠতে হচ্ছে। ৫ ম্যাচ মিলিয়েও ওপেনার লিটন দাস ৯৮.৪৮ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন মাত্র ৬৫; আরেক ওপেনার নাঈম শেখ ৪০ রান বেশি করলেও তাঁর স্ট্রাইক রেট নেমে এসেছে ৯০-এর নিচে! পুরো সিরিজে নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন মুশফিকুর রহিমও, ৫ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ৩৯!
কিছুটা স্পোর্টিং উইকেট হলেই হারতে হচ্ছে ম্যাচ, ব্যাটসম্যানরা রুগ্ন দশা কাটাতে পারছেন না ব্যাটিং উইকেটেও…তখন তো বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কেমন হলো, সেখানটায় একটা বড়সড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন থেকেই যায়। মাহমুদউল্লাহ যদিও আশাবাদীর দলেই। টানা তিন সিরিজ জিতে পাওয়া আত্মবিশ্বাসটা কাজে লাগিয়ে চাইছেন বিশ্বকাপ থেকেও কিছু ম্যাচ জিতে ফিরতে।ম্যাচশেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কেমন হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন ছুটে গিয়েছিল তাঁর কাছেও। টানা তিনটি সিরিজ জিতে খেলোয়াড়রা বাড়তি আত্মবিশ্বাস সঙ্গী করেই ওমানের বিমানে চড়বে বলে মত তাঁর। যদিও আরও অনেক কিছু করা যেত বলে আক্ষেপও আছে, 'আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল, সেটা ঠিকঠাক করতে পারিনি। দেড়টা বছর তো কিছুই করতে পারিনি। আমাদের দেশে কাউকে আনা কিংবা অন্য দেশে গিয়ে আমাদের খেলা, এগুলো নিয়ে একটু সমস্যা ছিল। আমি বলব না, প্রস্তুতি খুব একটা ভালো হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি।'
তারপরও বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ভালো করবে বলেই আশা করছেন নাজমুল হাসান। আর তাঁর বিশ্বাসের ভিত্তি সাকিব আল হাসান। আঙুলের চোটে শেষ ম্যাচ না খেললেও মাঠে নাজমুল হাসানের পাশে বসেই খেলা দেখেছেন সাকিব। নাজমুল হাসান জানাচ্ছেন, 'সাকিব আমাকে বলেছে, আমাদের ভালো সুযোগ আছে এবার। সাকিবের মতো খেলোয়াড় যখন বলে এবার ভালো সুযোগ আছে, তার মানে দলের উপরও তার আত্মবিশ্বাস আছে। যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রস্তুতিটা যখন যথাযথ হলো না, তখন তো আত্মবিশ্বাসটাকেই আঁকড়ে ধরতে হবে!