সাকিবের চোখে জয়টাই শেষ কথা
উৎপলশুভ্রডটকম
২ সেপ্টেম্বর ২০২১
যে নিউজিল্য্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে টানা ১০টি টি-টোয়েন্টিতে হেরেছে বাংলাদেশ, সেই নিউজিল্যান্ডকে তাদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে দিয়ে পাওয়া জয়ের মহিমা তো একটু আলাদা হবেই। ম্যাচশেষে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ এবং ম্যাচ-সেরা সাকিব আল হাসানের প্রতিক্রিয়াতেও যা প্রকাশিত।
৬২...৬০… এরপর কি তাহলে ৫৮? ক্রিকেট-বিধাতার সংখ্যাতত্ত্বের দিকে বিশেষ আগ্রহ থাকলে তেমনটাই তো হওয়ার কথা!
অস্ট্রেলিয়াকে ৬২ রানে গুটিয়ে দিয়ে সিরিজ শেষ করার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেন সেখান থেকেই শুরু করল বাংলাদেশ। তাসমান সাগরপাড়ের অন্য দেশটা অলআউট হলো ৬০ রানে। ধারা মানলে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ব্ল্যাক ক্যাপসদের তো '৫৮' রানেই গুটিয়ে যাওয়ার কথা!
কথাটাকে রসিকতা হিসেবে নেওয়াই ভালো। এমন ৬০/৬২'র দেখা কী প্রতিদিন মেলে নাকি! এই ৬০ রানই যেমন কিউইদের ১৫ বছরের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে দেখা গেল মাত্র দু'বার। এর আগের বারের ঘটনাও এই বাংলাদেশেই, ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সংখ্যাটা কিউইদের বোধ হয় বিব্রতই করে, তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানের রেকর্ড তো এটাই।
কিউইদের এই রানটা পেরোতেও অবশ্য ১৫ ওভার খেলতে হলো বাংলাদেশকে। তবে শেষ পর্যন্ত সাত উইকেটে পাওয়া জয়টাকেই বড় করে দেখতে চাইলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, আগের দশ দেখাতেও নিউজিল্যান্ডকে না হারাতে পারাই যার বড় কারণ, 'নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (অতীতে) আমরা বেশ কিছু ম্যাচ হেরেছি। সিরিজটা তাই জয় দিয়ে শুরু করতে পেরে ভালো লাগছে।'
ম্যাচ জয়ের পেছনে কাউকে এককভাবে কৃতিত্ব দেওয়া অবশ্য যাচ্ছে না। মাত্র ২ ওভার বল করে ২ উইকেট পেয়েছেন নাছুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমানের ঝুলিতে গেছে ৩ উইকেট। অবদান আছে মাহমুদউল্লাহ-সাইফউদ্দিন-মাহেদীরও। তবুও যে ২ উইকেট পাওয়া সাকিব আল হাসানই ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হলেন, সেটা সম্ভবত ব্যাট হাতে মহামূল্যবান ২৫ রান করার কারণেই। জয় দিয়েই সিরিজ শুরু করতে পারায় বাড়তি ভালো লাগা কাজ করছে তাঁর মনেও, 'নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা কখনো জিতিনি, তাই জয় সিরিজ শুরু করতে পেরে ভালোই লাগছে।'
সিরিজ শুরুর আগে হেনরি বলেছিলেন, লিংকনে স্লো উইকেটে অনুশীলন করে বাংলাদেশ আর পাকিস্তান সফরের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা। তবে প্রথম টি-টোয়েন্টি শেষে অধিনায়ক টম ল্যাথাম স্বীকার করে নিলেন, সেটা আসলে যথেষ্ট ছিল না। যে কারণে বাংলাদেশে এসে এখনো তাঁদের হাতড়ে বেড়াতে হচ্ছে এই উইকেটে খেলার তরিকা। 'এই কন্ডিশনে খেলার উপায় বের করতে হবে আমাদের। এই পিচে ভালো স্কোর কত হতে পারে, সেটা বের করতেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।'
তবে প্রথম ম্যাচের অভিজ্ঞতাতেই বুঝে গেছেন, স্কোরবোর্ডে রান থাকলে এখানে প্রতিপক্ষকে আটকানো কঠিন হবে না। ল্যাথামের ভাবনায় যে কোনো গলদ নেই, মাহমুদউল্লাহর কথা শুনলেও বোঝা যায় তেমনটাই। টস জিতে ব্যাট করার ভাবনা ছিল তাঁরও। তবে উইকেটটা 'ট্রিকি' বলে ব্যাট হাতে আগে কিছু রান করে দ্রুত উইকেট তোলার শর্তটাও আরোপ করে দিলেন মাহমুদউল্লাহ।
ঠিক যেমনটা আজ বাংলাদেশের বোলাররা করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো ইনিংসের প্রথম চার ওভারেই উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড তুলেছে টি-টোয়েন্টি পাওয়ার প্লেতে তাদের সর্বনিম্ন রান। মিরপুরের উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ অবশ্য ভালো বোলিংয়ের এই ধারা তৈরি করেছে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই।
কিন্তু এই ভালো বোলিংয়ের রহস্য কী? মাহমুদউল্লাহর কাছে ওসব রহস্য-টহস্য কিছু নয়, বরং সরল-সোজা বোলিং করেই সাফল্য পাচ্ছেন বোলাররা। 'ব্যাপারটা হচ্ছে, বোলাররা অনেক ক্ষুধার্ত হয়ে আছে। বেশ ভালো ডিসিপ্লিন দেখাচ্ছে। বেশি কিছুর চেষ্টাও করছে না। এই কন্ডিশনে যে ধরনের বোলিং করা উচিত, সেটা করেই ভালো করছে।'
কিন্তু বোলারদের কৃতিত্বে ম্যাচ না হয় জেতা গেল। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ব্যাটিংয়ের প্রস্তুতিটা কি যথাযথ হচ্ছে? প্রথম ১০ ওভারে যখন রান উঠছে ৩ উইকেট ৩৭, ৬১ রানের লক্ষ্যমাত্রা পেরোতে লেগে যাচ্ছে ১৫ ওভার...ব্যাটিংটাকে টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ বলা যাবে না কোনোভাবেই। কিন্তু উপায় কী, মিরপুরের উইকেট তো এর চেয়ে ভালো ব্যাটিং করতেও দিচ্ছে না! সাকিব আল হাসান তাই বলছেন, 'আমাদের ব্যাটিংকে আপ-টু-দ্য-মার্ক বলা যাবে না। কিন্তু এই উইকেটে ব্যাট করা সহজও না।'
সাকিবের চোখে জয় পাওয়ার ধরনের চেয়ে জয় পাওয়াটাই সবচেয়ে বড়। কেন বড়, তা বোঝাতে উদাহরণ টানলেন ২০০৭ বিশ্বকাপের, 'জয় পাওয়াটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৭ বিশ্বকাপের আগেও আমরা টানা অনেকগুলো ম্যাচ জিতেছিলাম, যেটা আমাদের হেল্প করেছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে ভালো করতে। (অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের) বিপক্ষে জয়গুলো আমাদের কনফিডেন্স ভালো অবস্থায় নিয়ে যাবে, যেখান থেকে আমরা ওয়ার্ল্ড কাপে গিয়ে ভালো করতে পারি।'
কিন্তু ভয় একটাই, কঠিন উইকেটে ব্যাট করতে করতে সহজ উইকেটে ভালো করাটাই না কঠিন হয়ে যায় পরে!