সাকিবের পরামর্শেই অন্য নাসুম

উৎপলশুভ্রডটকম

৪ আগস্ট ২০২১

সাকিবের পরামর্শেই অন্য নাসুম

৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ-সেরা নাসুম আহমেদ। ছবি: বিসিবি

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে জয় এই প্রথম, তা-ও আবার মাত্র ১৩১ রান করে। কীভাবে জিতল বাংলাদেশ? ম্যাচসেরা নাসুম আহমেদ জানাচ্ছেন, সাকিবের পরামর্শ আর ডট বল করার চেষ্টাতেই মিলেছে সাফল্য। আর পর দিনই দ্বিতীয় ম্যাচ বলেই হয়তো অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এক জয়েই আবেগে ভেসে যাওয়ার সুযোগ নেই।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশ আগেও খেলেছে, তবে দ্বিপক্ষীয় টি-২০ সিরিজে এবারই প্রথম। আর প্রথম ম্যাচটাই স্মরণীয় হয়ে গেল ২৩ রানের জয়ে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম।

ম্যাচটা প্রথম হয়ে গেল নাসুম আহমেদের জন্যেও। পাঁচ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ম্যাচসেরার পুরস্কার পেলেন এই ম্যাচেই। এর আগের চার ম্যাচে পেয়েছিলেন ২ উইকেট, এক ম্যাচেই এর দ্বিগুণ। ছোটখাটো একটা তালিকাতেও উঠে গেল তাঁর নাম, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কোনো বোলারের ৪ বা এর বেশি উইকেট নেওয়ার মাত্র একাদশ ঘটনা এটি।

একে তো প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, তার ওপর আগের ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ওভারে দিয়েছেন ৩৭ রান,  নাসুমের জন্য কাজটা তাই সহজ ছিল না মোটেই। ম্যাচ শেষের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নাসুম নিজেই জানিয়েছেন, ম্যাচের আগে তাঁরও মনে ফিরে ফিরে আসছিল আগের ম্যাচেই বেধড়ক মার খাওয়ার স্মৃতি, 'কাল যখন নেটে বল করছিলাম, তখন কোচ আমাকে বললেন যে, "আগামীকাল (আজ) তুমি খেলবে। তোমার ওপর অনেক দায়িত্ব।" তখন থেকেই আমি ভাবছিলাম, খেললে আমি কী করব। শেষ একটা ম্যাচে একটু বাজে বল করেছি তো!'

ছবি: বিসিবি

এদিন অবশ্য নাসুমের জন্য সবই হয়ে গেল 'ভালো বল'। জশ ফিলিপেকে ফিরিয়েছেন নিজের প্রথম ওভারেই, গলার কাঁটা হয়ে ওঠা মিচেল মার্শকে ক্যাচ বানিয়ে পেয়েছেন চার নম্বর উইকেট। তবে বাকি দুটো উইকেটেই ছিল সৌভাগ্যের ছোঁয়া। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অ্যাশটন অ্যাগারের আগে যদিও সাতজন ক্রিকেটার হিট উইকেটের শিকার হয়েছেন; তবে নাসুমের করা লেগ স্টাম্পের হাতখানেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ম্যাথু ওয়েড যেভাবে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন, খুব সৌভাগ্যবান না হলে এমন বলে উইকেট পাওয়া যায় না।

তবে দিনশেষে এসব কে-ই বা মনে রাখতে গেছে! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়টা এমনিতেই ঐতিহাসিক মর্যাদা দাবি করে, আর এই জয়ট এসেছে স্কোরবোর্ডে মাত্র ১৩১ রান তুলে। নাসুমকে তাই উত্তর দিতে হলো, ১৩২ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেওয়ার পরও কি জয়ের স্বপ্নটা টিকে ছিল বাংলাদেশের? নাসুম জানাচ্ছেন, নিজেদের ইতিহাসে টি-টোয়েন্টিতে এত কম রান ডিফেন্ড করার রেকর্ড না থাকলেও ড্রেসিংরুমে এই রান দিয়েই লড়াইয়ের বিশ্বাস ছড়িয়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, 'যখন আমরা ১৩১ করেছি, তখন নামার আগে রিয়াদ ভাই বলছিলেন যে, আমরা এ রানেই ফাইট করব। যতটুক পারি চেষ্টা করব জেতার জন্য। ডট বল করব, তো ওই ডট বলের চিন্তাই করছিলাম।'

ছবি: এএফপি

আর ডট বল করার জন্য পর্যাপ্ত সাহায্য মিলেছে উইকেট থেকেও। মিরপুরের উইকেটকে দ্রুতগতির বলে 'দুর্নাম' করবে না কেউ, আর এদিন যেন বোলারের হাত থেকে বেরোনো বল ব্যাটসম্যান পর্যন্ত পৌঁছানোর আগে সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলোও পৌঁছে যায়, এমন অবস্থা। উইকেটের চরিত্র বুঝতে পেরেই সাকিব আল হাসান বল করেছেন বেশ ফ্লাইট দিয়ে, আর ওই তরিকাই অনুসরণ করতে বলেছেন নাসুমকেও, 'যখন ব্যাক অব লেংথে প্রথম দুটি বল করলাম, তখন সাকিব ভাই আমাকে বললেন যে, এই উইকেটে আস্তে বল করাই ভালো, আর সামনে সামনে করলে ভালো হয়। তো ওটাই চেষ্টা করেছি।'

এই চেষ্টায় যে ফল মিলেছে, তা তো ম্যাচের ফলেই পরিষ্কার। তবে এই ফলটাও যে বাংলাদেশ দলকে আবেগে উথাল-পাতাল করে দিতে পারছে না, ম্যাচ শেষে নিরাবেগ উদযাপনই তার প্রমাণ। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে এসে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠেও অনুরণন শরীরী ভাষারই, 'এই জয়ে আমরা ভেসে যাচ্ছি না। আমরা জিতেছি, এটা এখানেই শেষ। এখন দরকার পরের ম্যাচে মনোযোগ দেওয়া। এই ম্যাচে যে ভুলগুলো করেছি, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তা নিশ্চিত করা।'

নিশ্চিত তো করতেই হবে। ২৩ রানে জয়ের ম্যাচেও তো খোঁচা দিচ্ছে নিজেদের ইনিংসের প্রথম ১৪ ওভারে ৪০ বলে রান নিতে না পারার ব্যর্থতা। আজ না হয় জয় এসেছে ১৩১ করে, পরদিন্যও  জয় মিলবে এমন স্কোরেই, সে আশায় বসে থাকার ভুল নিশ্চয়ই কেউ করবেন না!

যতই ওয়ার্নার-ফিঞ্চ-ম্যাক্সওয়েল না আসুন, দলটার নাম তো অস্ট্রেলিয়া।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×