মরতে বসেছিলেন বেন স্টোকস
উৎপলশুভ্রডটকম
২৯ নভেম্বর ২০২১
সামান্য একটা পিল। ট্যাবলেট। সেটা গলায় আটকে গেলেও মহা বিপদ হতে পারে। কেউ কেউ তো মরণও দেখে ফেলেন চোখের সামনে। যেমন দেখেছেন অনেক দিন বাইরে থাকার পর অ্যাশেজ দলে ফেরা ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস।
বেন স্টোকসের মনে হয়েছিল, মৃত্যু বুঝি এমনই হয়। এভাবেই আসে। মানুষকে কিছু বুঝে ওঠার সময় না দিয়ে নিয়ে চলে যায় অন্য কোনো ভুবনে। নিজের জীবনের এই ভয়াবহ দিনক্ষণটার কথা স্টোকস তাঁর ডেইলি মিররে লেখা কলামে উল্লেখ করেননি। তবে এটা নিশ্চিত ঘটনাটা ঘটেছে ইংল্যান্ড দল অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখার পর।
ঘটনা সামান্য একটা ট্যাবলেট বা ওষুধ নিয়ে। কিন্তু ছোট্ট এই বস্তুটি যে কী মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে যাচ্ছিল সেটাই লিখেছেন স্টোকস, ‘এটা সামান্য একটা ওষুধ’, যা ভুল পথে চলে গিয়েছিল। এটা গিয়ে আমার শ্বাসনালীতে আটকে গেল। তাতে করে আমার দম এতটাই আটকে গিয়েছিল যে, মনে হচ্ছিল আমার মুখটা ফেটে পড়বে।’
এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতায় সামান্য সহায়তা করার জন্য তখন হোটেল রুমে স্টোকসের সঙ্গী আর কেউ নেই। মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখতে পাচ্ছেন, হয়তো একরকম মরণ অভিজ্ঞতাও হচ্ছিল। সেই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে স্টোকস আরও লিখেছেন, ‘যতক্ষণ না এটা মুখ থেকে বেরিয়ে এল, ততক্ষণ মনে হচ্ছিল আমি হয়তো শেষ। আমরা এরকম পরিস্থিতিতে প্রায়ই হয়তো পড়ি, কিছু একটা গলায় আটকে যায়, কিন্তু সাধারণত সহায়তা করার জন্য কেউ না কেউ থাকে।’
এমন পরিস্থিতিতে যেমনটা হয় আর কি। সামান্য সময়কেও খুব দীর্ঘ লাগে। সেই অসহায় অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে স্টোকস লিখেছেন, ‘কিন্তু আমি তো আমার রুমে একাই ছিলাম। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল, এটা গলায় আটকে গিয়ে ফেটে যাচ্ছে। মন হচ্ছিল আমার মুখের মধ্যে আগুন জ্বলছে।’ এর সঙ্গে স্টোকস যোগ করে দিয়েছেন, ‘আরও বিস্তারিত না বলে এইটু্কু বলি রবিবার সকালে (নিজের) যতটা লালা আমি দেখেছি, আগে কখনো তা দেখিনি। সত্যিকার অর্থেই এটা আমার জন্য ছিল ভয়াবহতম একটা অভিজ্ঞতা।’
ঘটনা স্টোকসকে নিয়ে তো ঘটেই যাচ্ছে। প্রথমে মানসিক অবসাদের জন্য খেলা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্রাম নিলেন। এর মধ্যে হাতে হলো দুটি অস্ত্রোপচার। আইপিএলে রাজস্থান রয়্যালসে খেলতে গিয়ে বাঁ হাতের তর্জনিতে চোট পেয়েছিলেন। সেটা প্রথম অস্ত্রোপচারে সারেনি। দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার হলো অক্টোবরে। এমনকি তাঁর তো অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় এবারের অ্যাশেজেও খেলার কথা ছিল না। শেষ মুহূর্তে ইসিবি সবাইকে চমকে দেয় এবং স্টোকস সব টেস্টে খেলবেন বলে ঘোষণা দেয়।
যদিও ইসিবির ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যাশলে জাইলস বলেছেন, ‘বেন এখন ভালোই আছে মনে হচ্ছে। কিন্তু এখনো তাকে আমাদের দেখতে হবে, কারণ অনেক দিন হলো সে ক্রিকেট খেলে না।’
জাইলসের কথার যৌক্তিকতা তো আছেই। কতদিন ক্রিকেটে নেই স্টোকস। তার ওপর নানা ঝামেলা। ঝামেলার কি আর শেষ আছে? বিপদ একের পর এক আসছেই স্টোকসের জীবনে। গতকাল মানে রবিবারই তো স্টোকস ভেবেছিলেন, তাঁর হাতের সামনের অংশটা ভেঙেই গেছে। অ্যাশেজ শেষ। ব্রিসবেনে দলগত ট্রেনিং চলছিল। ব্যাটিং কোচ জোনাথন ট্রটের ছুড়ে দেওয়া একটা বল লাগে স্টোকসের বাঁ হাতে। প্রাথমিক অনুভূতিতে স্টোকসের মনে হয়েছিল, হাতটা বুঝি ভেঙেই গেছে।
স্টোকসের লেখা থেকেই তুলে দেওয়া যাক, ‘আমি যে ট্রেনিং করতে পারছি, তাতে ভালোই লাগছিল। কিন্তু তারপর এল ভয়ঙ্কর একটা সময়, ব্যাটিং কোচ জোনাথন ট্রটের বলে যখন হাতে ব্যথা পেলাম।’ চিকিৎসক দেখেশুনে বলেছেন সব ঠিক আছে। কিন্তু যে মুহূর্তে আঘাতটা পেয়েছিলেন স্টোকস, তখন তাঁর দুনিয়াটা ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল,‘ব্যথায় ছটফট করছিলাম। হাতটা তুলতেই পারছিলাম না। ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার পর ফিজিও যখন বলল, এটা ভাঙেনি, তখন শান্ত হলাম।’
ঘটনার পর ঘটনা। আরেকটি অ্যাশেজ যখন সামনে, অপ্রীতিকর সব ঘটনার মধ্যে প্রীতিকর একটা মনে করিয়ে দেওয়া যাক। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট হেডিংলিতে ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটা ইনিংস খেলেছিলেন স্টোকস। অপরাজিত ১৩৫ রানের সেই ইনিংসে ইংল্যান্ড তুলে নিয়েছিল ১ উইকেটের জয়। সম্মানের লড়াই অ্যাশেজটা ইংল্যান্ড শুধু স্টোকসের কারণে সেবার হারেনি। ১-১ এ ড্র হয়েছিল সিরিজ। আরেকটি অ্যাশেজে তাঁর ফেরা মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই স্মৃতি।
৮ ডিসেম্বের ব্রিসবেন টেস্ট দিয়ে শুরু হবে এবারের অ্যাশেজ।