শাহিন আফ্রিদিকে যা করতে বলেছেন ওয়াসিম আকরাম
উৎপলশুভ্রডটকম
২৬ নভেম্বর ২০২১
পেস বোলারদের জন্য ‘ওয়ার্কলোড’ আধুনিক ক্রিকেটের বহুল চর্চিত একটা বিষয়। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন, ওয়াসিম আকরামের কাছে এই ওয়ার্কলোড শব্দটা অকারণ বাড়াবাড়ি। কারণ, একজন ফাস্ট বোলার যতো বেশি বল করবে, তার ফাস্ট বোলিং পেশি ততই শক্তিশালী হবে। তাঁর সঙ্গে ইদানিং যাঁর তুলনা, সেই শাহিন শাহ আফ্রিদিকে এই পথটাই বাতলে দিলেন ওয়াসিম আকরাম।
আধুনিক ক্রিকেটে খেলার পরিমাণ এত বেড়ে গেছে বলে ‘ওয়ার্কলোড’ শব্দটার অহরহ ব্যবহার দেখবেন আপনি। কিন্তু ওয়াসিম আকরামকে জিজ্ঞেস করুন, তিনি হাসবেন। ’ওয়ার্কলোড’ শব্দটার যে তেমন কোনো যৌক্তিকতাই খুঁজে পান না তিনি। কথাটা আগেও অনেকবার বলেছেন, আবারও বললেন শাহিন শাহ আফ্রিদিকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে। উত্তরসূরির জন্য তাঁর একটাই পরামর্শ, ‘শুধু বল করে যাও, আরও বলা করো। যত বেশি বল করবে, তত বেশি ভালো হয়ে উঠবে।’
ওয়াসিম আকরাম যে ক্রিকেটের সেই পুরোনো স্কুলের ছাত্র। যেটি বলে, যত বেশি বল করা হবে, জোরে বোলারের সম্পদ ফাস্ট বোলিং পেশি ততই শক্তিশালী হয়ে উঠবে। বলের গতি বাড়বে, বোলিং আরও ধারালো হবে।
এত খেলেছেন, অথচ জীবনে ওয়ার্কলোড ব্যাপারটাই মানেননি ওয়াসিম। যখন দলের জন্য যত স্পেলে যত বোলিং করা দরকার পড়েছে, করে গেছেন। পেস বোলারের জন্য সংখ্যাটা চমকে যাওয়ার মতো। কিন্তু সাধারণ অর্থে ওয়ার্কলোড বলতে কী বোঝায়? আধুনিক ক্রিকেটের রীতি অনুযায়ী, একজন বোলার সপ্তাহে কত ওভার করতে পারবেন, তার একটা সীমা টেনে দেওয়া হয়। পেস বোলারকে ইনজুরিমুক্ত রাখতেই এই সাবধানতা। যা একদমই অকারণ বলে মনে করেন ওয়াসিম আকরাম, বোলারের পরিপূর্ণ বিকাশের অন্তরায়ও।
কদিন আগে শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শাহিন শাহ আফ্রিদি সবাইকে চমক দিয়েছেন। গতির বৈচিত্র্যের সঙ্গে সুইং করানোর ক্ষমতা মিলিয়ে নাভিশ্বাস তুলেছেন ব্যাটসম্যানদের। ভারত যে এবারের বিশ্বকাপ থেকে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় হয়ে গেল, তাতেও তো শাহিন আফ্রিদির বড় অবদান। ভারতের বিপক্ষে তাঁর ওপেনিং স্পেলটা তো বিশ্বকাপেরই সবচেয়ে আলোচিত স্পেল হয়ে আছে।
গালফ নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই সময়ের সেনসেশন শাহিন আফ্রিদির প্রসঙ্গ ওয়াসিম আকরামের সামনে আসাটা তাই অবধারিতই ছিল। শাহিনের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন। তবে অন্য দশজন যেখানে বলতেন, তাঁকে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে, ওয়াসিম আকরাম তার ধারেকাছেও যাননি। উল্টো সব সময় যা বলে এসেছেন, সেটাই বলেছেন আবারও। শাহিন শাহ আফ্রিদি যত বোলিং করবে, ততই ভালো।
‘দেখেন, ওয়ার্কলোড নামের এই নতুন শব্দটা আমরা কতই না শুনছি! অথচ আমি ১০ বছর কাউন্টি ক্রিকেট খেলেছি। ওয়াকার (ইউনিস) আর ইমরানও (খান) টানা কত বছর।’ নিজের ক্যারিয়ারের একটা পরিসংখ্যান দিয়ে ওয়ার্কলোড কথাটাকে আরও হাস্যকর বানিয়ে দিলেন আকরাম, ‘একদিন একজন আমাকে একটা পরিসংখ্যান জানাল। আমি ৩০ বার এক ইনিংসে ২৭ ওভার বল করেছি। এখনকার সময়ের কয়জন ফাস্ট বোলার এটা করে?’
শাহিন আফ্রিদিকে নিয়ে পাকিস্তানের টিম ম্যানেজেমেন্টের কাছে একটা পরামর্শ আছে ওয়াসিমের, ‘ওর মাত্র ২১ বছর। সে যত বেশি বল করবে, তত ভালো হয়ে উঠবে। আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। শরীরে কোনো সমস্যা না থাকলে যেন সে খেলতেই থাকে। তাকে যদি বিশ্রাম দিতে হয়, তাহলে যেন শক্তিশালী দলের বিপক্ষে না দিয়ে ছোট দলের বিপক্ষে দেওয়া হয়।’
ওয়ার্কলোড নিয়ে এই কিংবদন্তির একটা মজার ভাবনা আছে, ‘ওয়ার্কলোড ব্যবস্থাপনা, রোটেশনের মতো বিষয়গুলো মূলত প্রচারিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আমাকে কখনো কোনো তরুণ যদি জিজ্ঞেস করে, কিভাবে বলের গতি বাড়াতে হবে, আমি তাকে একটা কথাই বলি। যত বেশি বল করবে, তোমার ফাস্ট বোলিং পেশিগুলো ততই শক্তিশালী হবে।’
আর ফাস্ট বোলিং পেশি শক্তিশালী হওয়া মানেই তো বলের গতি বেড়ে যাওয়া।