অধিনায়ক হয়েই কামিন্সের ইতিহাস

উৎপলশুভ্রডটকম

২৬ নভেম্বর ২০২১

অধিনায়ক হয়েই কামিন্সের ইতিহাস

প্যাট কামিন্স: এবার গুরুদায়িত্বে

অধিনায়ক হয়েই প্যাট কামিন্স নতুন এক ইতিহাস গড়ে ফেললেন। অস্ট্রেলিয়ার পূর্ণকালীন অধিনায়ক হিসেবে কোনো ফাস্ট বোলার যে এই প্রথম। এর আগে ফাস্ট বোলার অধিনায়ক বলতে এক রে লিন্ডওয়াল। তবে ১৯৫৬ সালে একটা মাত্র টেস্টে তাঁর নেতৃত্ব দেওয়া তো নিয়মিত অধিনায়ক খেলতে না পারায়।

অনুমিত ঘোষণাটাই এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার ৪৭তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে ঘোষিত হয়েছে প্যাট কামিন্সের নাম। সেক্সটিং কেলেঙ্কারিতে টিম পেইন টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঠিক এক সপ্তাহ পর কামিন্স নেতৃত্ব পেলেন। কামিন্সের নাম ঘোষণার দিনেই ক্রিকেট থেকে অনির্দিষ্টকালের বিরতিতে গেছেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। অনেকেই মনে করছেন, সাবেক অধিনায়ক টিম পেইন অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে তাঁর শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন।

কামিন্সের অধিনায়ক হওয়ার চেয়েও বড় খবর সম্ভবত স্টিভ স্মিথের লিডারশিপ গ্রুপে ফিরে আসা। কামিন্সের ডেপুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারিতে অধিনায়কত্ব হারানো স্টিভ স্মিথকে। 

পাঁচ সদস্যের প্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া শেষে কামিন্স ও স্মিথের নিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পুরো বোর্ড তাতে সম্মতি দিয়েছে। নির্বাচক প্যানেলের জর্জ বেইলি ও টনি ডোডেমেইড, সিএ বোর্ড সদস্য ও সাবেক অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় মেল জোন্স, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রিচার্ড ফ্রুডেনস্টেইন ও প্রধান নির্বাহী নিক হকলি এই প্যানেলের অংশ ছিলেন।
 
অধিনায়কত্ব পাবার প্রতিক্রিয়ায় কামিন্স বলেছেন, 'গ্রীষ্মের বিশাল অ্যাশেজ সিরিজের আগে রেখে এই দায়িত্ব পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। আমি আশা করি গত কয়েক বছর ধরে এই দলকে টিম পেইন যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই একইভাবে আমিও নেতৃত্ব দিতে পারব। স্টিভ এবং আমি অধিনায়ক হিসেবে, পাশাপাশি  এই স্কোয়াডে বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় এবং কিছু দুর্দান্ত তরুণ প্রতিভা রয়েছে, যার ফলে দল আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এটি একটি অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি, যেটির জন্য আমি খুব কৃতজ্ঞ এবং অধীর আগ্রহে  অপেক্ষা করছি।'

প্যাট কামিন্স। ছবি:গেটি ইমেজেস

কামিন্সকে অনেক বছর ধরে সম্ভাব্য ভবিষ্যত অধিনায়ক হিসাবে ভাবা হলেও ২০১৮ সালে সহ-অধিনায়ক হিসেবে উপেক্ষিত থাকে তার নাম। যদিও ২০১৯ সালে যৌথভাবে পান এ দায়িত্ব।

অধিনায়ক হিসেবে খুব বেশি অভিজ্ঞ,তা বলার সুযোগ নেই। পেশাদার ক্রিকেটে গত মৌসুমে নিউ সাউথ ওয়েলসের ওয়ানডে দলকে চার ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নিউ সাউথ ওয়েলস গত মৌসুমে শিরোপা জিতলেও আইপিএলের কারণে ফাইনাল খেলা হয়নি কামিন্সের।

অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের নেতৃত্ব যেকোনো সময় পেতে পারেন প্যাট কামিন্স -এমন ভাবনা থেকেই নিউ সাউথ ওয়েলস কামিন্সকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেয়। তাছাড়া অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাব্য অধিনায়করা ঘরোয়া লিগে দলকে নেতৃত্ব দেবার তেমন সুযোগ পান না, এমন উদ্বেগ তো ছিলই।

কামিন্সের নিয়োগে নতুন এক ইতিহাসও হলো। প্রথম ফাস্ট বোলার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ণকালীন অধিনায়ক নির্বাচিত হলেন তিনি। এর আগে ১৯৫৬ সালে নিয়মিত অধিনায়ক খেলতে না পারায় রে লিন্ডওয়াল অস্ট্রেলিয়াকে এক টেস্টে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের টালমাটাল এই সময়ে কামিন্সের কাছে অনেক প্রত্যাশা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার। প্রধান নির্বাহী নিক হকলির কথায় যা স্পষ্ট, 'প্যাট একজন অসাধারণ খেলোয়াড় এবং নেতা। তিনি তার সতীর্থদের কাছ থেকে মাঠ ও মাঠের বাইরে তাঁর মানসিকতা এবং অর্জনের জন্য সম্মানিত। আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে, সিনিয়র খেলোয়াড়দের একটি অভিজ্ঞ দল পেয়েছি, যারা প্রত্যেকেই দুর্দান্ত নেতা। আমার কোন সন্দেহ নেই যে, প্যাট এবং স্টিভ ভালো সহযোগিতা পাবেন'।

টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কান্ডারি! ছবি:গেটি ইমেজেস

তিন ফরম্যাটেই দলের গুরুত্বপূর্ণ পেসার হওয়ায় কামিন্সের জন্য অধিনায়কত্ব বাড়তি চাপ হয় কি না, তা নিয়ে অনেকের শঙ্কা আছে। বিশেষ করে যেখানে তাঁর ইনজুরির ইতিহাস আছে। যদিও ২০১৭ সালে দলে ফেরার পর সর্বশেষ ৩৫ টেস্টের ৩৩টিই খেলেছেন কামিন্স। টেস্ট ক্রিকেটে ২০১১ সালে অভিষেক হলেও ২০১৭ সালের পর থেকেই হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। বর্তমানে আইসিসি টেস্ট বোলারদের র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরে থাকাই যার বড় প্রমাণ।

অন্যদিকে একজন পেসার অধিনায়ক হওয়ায় সহ-অধিনায়ক স্টিভ স্মিথের  নেতৃত্ব পাবার সম্ভাবনা আরও প্রবল হলো। সহ-অধিনায়ক হবার প্রতিক্রিয়ায় স্মিথ বলেছেন, ’অস্ট্রেলিয়ার লিডারশিপ গ্রুপে ফিরতে পেরে আমি খুশি। প্যাট কামিন্সকে তথা পুরো অস্ট্রেলিয়াকে সহযোগিতা করতে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে সাহায্য করব।

আগামী ৮ ডিসেম্বর ব্রিসবেনের গ্যাবায় শুরু হচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ সিরিজ। যে সিরিজ দিয়ে নতুন এক যুগে প্রবেশ করবে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম  পূর্ণকালীন পেসার অধিনায়কের যুগে।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×