টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২১
যে পাঁচ কারণে পাকিস্তান এখন ফেবারিট
উৎপলশুভ্রডটকম
২৯ অক্টোবর ২০২১
পাকিস্তানকে এখন সবাই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফেবারিট বলতে শুরু করেছে। শেন ওয়ার্ন বলেছেন বাবর আজমের দল ভারতকে হারানোর পরই। নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বললেন পাকিস্তানের কাছে হেরে। অথচ বোর্ডে পরিবর্তন আর শেষ মুহূর্তে কোচিং স্টাফে বদলের পর পাকিস্তান ছিল অস্থিরতায় ঘুরপাক খাওয়া এক দল। ২০০৯-এর চ্যাম্পিয়নরা গত দুই আসরের সেমিফাইনালেই উঠতে পারেনি। গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন দুটি ম্যাচ জিতে এবার সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিতই করে ফেলেছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া পাকিস্তান দলের ঘুরে দাঁড়ানোর ৫টি কারণ খুঁজে বের করেছে।
নির্বাসনে গিয়ে ঘর বানিয়ে ফেলা
২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের বাসে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তান পরিণত হয়েছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য নিষিদ্ধ ভূমিতে। আবার যখন পাকিস্তানে খেলা ফিরতে শুরু করেছিল, বিশ্বকাপের ঠিক আগে নিউজিল্যান্ড দল পাকিস্তানে গিয়েও শেষ মুহূর্তে না খেলে দেশে ফিরে যায়। সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দীর্ঘ দিন হলো 'দ্বিতীয় ঘর' মানতে বাধ্য হয়েছে এসব কারণেই। ব্যাপারটা পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ভালো না হলেও দুবাই, শারজা ও আবুধাবিতে তাদের এক যুগের অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। তাই ভারতের 'হোম বিশ্বকাপ' আদতে পাকিস্তানের হোম ইভেন্ট হয়ে গেছে। মরুর ভেন্যুগুলোতে তারা বিপুল সমর্থন পায়। গত পাঁচ বছরে ওখানে অপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। টানা ১৩ ম্যাচে জয় তাদের।
বিশৃঙ্খলার মধ্যে গুছিয়ে ওঠা
অভ্যন্তরীণ সমস্যার মধ্যে পাকিস্তান আরও একতাবদ্ধ হয়ে ওঠে। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ের কথাই ধরুন না! বিশ্বকাপ শুরুর আগে আগে ওয়াকার ইউনিসকে হারিয়ে ফেলার সঙ্গে দলে নানা ইগোর লড়াই ছিল। ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ও তো সেই লাহোর ট্র্যাজেডির পর। তার ওপর শোয়েব আখতারকে দল থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে প্রধান নির্বাচক আবদুল কাদির পদত্যাগ করেছিলেন।
এবার দুই কোচ মিসবাহ উল হক ও ওয়াকার ইউনিস ঠিক বিশ্বকাপের আগে পদত্যাগ করেন। কারণ তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন, নতুন পিসিবি চেয়ারম্যান রমিজ রাজা দুজনকেই বরখাস্ত করবেন। রমিজ নতুন পরিস্থিতিতে ম্যাথু হেইডেন ও ভারনন ফিল্যান্ডারকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন। সেটা তাদের কাজে দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
বাবরের পছন্দের দল পাওয়া
অধিনায়কের মনমতো দল পাওয়াটা খেলায় বড় প্রভাব ফেলে। বাবর আজম তা পেয়েছেন। ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়ে গেলেও তাতে শেষ মুহূর্তে তিনটি পরিবর্তন আনা হয়। ফখর জামান পরে ঢুকেছেন। দুই ম্যাচেই যিনি একাদশে ছিলেন। এর পাশাপাশি আসে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবরের কথা। এই ২০২১ সালেই ওপেনিং জুটি গড়েছেন তাঁরা। টি-টোয়েন্টিতে তাদের জুটির গড় (৬৭.৩০) চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো। বোলিংয়ে আছে সব ধরনের বৈচিত্র্য এবং শাহিন আফ্রিদি আছেন নিজের ফর্মের তুঙ্গে।
শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ হাফিজের অভিজ্ঞতা
ক্রিস গেইল ছাড়া শোয়েব মালিক টুর্নামেন্টের একমাত্র খেলোয়াড়, যাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে গত শতাব্দীতে। মালিক নিজেকে খুব ফিট রাখতে পেরেছেন। অভিজ্ঞ। খেলাটা চমৎকার বোঝেন। খুব আন্ডাররেটেড ফিনিশার। রান তাড়া করে দলকে জেতানো ১৮টা অপরাজিত ইনিংস আছে তাঁর। টি-টোয়েন্টিতে যা বিশ্ব রেকর্ড। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচে ২০ বলে অপরাজিত ২৬ রানের ইনিংস খেলেছেন। পাকিস্তান দলের ইনিংস যখন একটু টালমাটাল হয়ে উঠেছিল, তখন হাল ধরেছিলেন। ওদিকে অবৈধ অ্যাকশনের কারণে আগে যার বোলিং নিষিদ্ধ হয়েছিল, সেই হাফিজ বোলিংয়ে ফিরেছেন। এটা পাকিস্তানের কাজে এসেছে। বাড়তি এক অফ স্পিনার ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে দল। স্মার্ট ব্যাটিংয়ের কারণে হাফিজ একটা কমপ্লিট প্যাকেজও।
পিএসএলের ডানা মেলা
২০ ওভারের ক্রিকেটের শুরু থেকেই পাকিস্তান ছিল এই ফরম্যাটের পাওয়ার হাউজ। প্রথম তিন আসরেরই ফাইনাল খেলেছিল তারা। কিন্তু ২০০৯ থেকে পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা আইপিএলে খেলার অধিকার হারিয়ে ফেলে। ২০১০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলেও এরপর থেকেই টি-টোয়েন্টিতে পিছিয়ে পড়ার শুরু। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত হলেও সেমিফাইনালেই উঠতে পারেনি। উপমহাদেশে টি-টোয়েন্টি না খেলার অভ্যাসকে যেটির কারণ বলেন অনেকে। কিন্তু শেষ পাঁচ বছরে একটু একটু করে চিত্র বদলাতে শুরু করে। ২০১৫ থেকে পাকিস্তান তাদের নিজস্ব ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ শুরু করে। পিএসএলে ভারতের খেলোয়াড়রা নেই। কিন্তু বিশ্বের আর সব বড় তারকারা ওখানে খেলেন। পাকিস্তানের এই প্রজন্মের ক্রিকেটাররা তাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চাপ নেওয়া স্বভাবের সঙ্গে খুব অভ্যস্ত। বিশ্বকাপে তা খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে।