ভারত-পাকিস্তান ছয় ক্ল্যাসিক ম্যাচ

উৎপলশুভ্রডটকম

২২ অক্টোবর ২০২১

ভারত-পাকিস্তান ছয় ক্ল্যাসিক ম্যাচ

ভারত-পাকিস্তান মানেই স্মরণীয় সব ম্যাচ

মূলত রাজনৈতিক কারণে এখন আর ভারত-পাকিস্তান সিরিজ হয় না। তাই ক্রিকেটের সবচেয়ে ক্ল্যাসিক লড়াই মিস করেন খেলাপ্রেমীরা। এই দুই দল মুখোমুখি হলে যদিও খেলাটা আর শুধু খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। তেমন একটা লড়াইয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আজ মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। তার আগে চলুন ঘুরে আসা যাক চির প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দলের ছয়টি ক্ল্যাসিক ম্যাচ থেকে।

শেষ বলে ছক্কা
এপ্রিল ১৮, ১৯৮৬, শারজা


জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে সেই ঐতিহাসিক ছক্কা এখনো ক্রিকেট রোমান্টিকদের আড্ডার টেবিলে ঘুরে ফেরে। মহানাটকীয় এক ফাইনালে পাকিস্তানের ১ উইকেটের জয় কোটি কোটি ভারত ভক্তের হৃদয় ভেঙেছিল। পাকিস্তানের সামনে ২৪৬ রানের টার্গেট দিয়েছিল ভারত। ৬১ রানে ৩ উইকেট নেই। পাকিস্তান বিপদে। সেই ম্যাচে প্রাণ এনে দেন চার নম্বরে ব্যাট করা মিয়াঁদাদ। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১১৪ বলে ১১৬ রানের অসাধারণ ইনিংস। খেলার শেষ বলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ৪ রান। ভারতের ফাস্ট বোলার চেতন শর্মা ফুল টস দিয়ে দেন। সেই বলকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে মিয়াঁদাদ পাকিস্তান ভক্তদের উন্মাতাল উৎসবে মাতান।

শচীনের দাপট
১ মার্চ ২০০৩, সেঞ্চুরিয়ন 

ভারতকে অসংখ্য ম্যাচ জিতিয়েছেন শচীন টেন্ডুলকার। কিন্তু সেবারের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর ৯৮ সবসময় আলাদা করে আলোচনায় আসে। সেটা স্পিডস্টার শোয়েব আখতারের সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথের কারণে। আলোচিত ম্যাচে পাকিস্তানের পেস বোলিং অ্যাটাকে ছিলেন গ্রেটরা। ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনিসের সাথে শোয়েব। পাকিস্তানের দেওয়া ২৭৪ রানের চ্যালেঞ্জ শচীন জয় করেছিলেন ৭৫ বলে খেলা দুর্ধর্ষ ইনিংসে। শোয়েবের একটা এক্সপ্রেস ডেলিভারিকে আপারকাটে থার্ড ম্যানের ওপর দিয়ে দেখার মতো ছক্কায় পরিণত করেছিলেন, যে শটটা শচীনের ক্যারিয়ারে  আইকনিক হয়ে আছে। শোয়েব শেষে শচীনকে আউট করে প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচে ভারতের জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। ২৬ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতেছিল ভারত।

বোওল-আউট নাটক 
১৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭, ডারবান

ইতিহাসের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচটা ছিল থ্রিলার। জম্পেশ নাটকে ভরা। ম্যাচ আসলে টাই হয়েছিল। পাকিস্তান পরে ব্যাট করে ভারতের মতো ঠিক ১৪১ রান করেছিল। তবে শেষ হাসিটা হেসেছিল ভারত। টাই হওয়া ম্যাচে ফল আনতে তখন ছিল বোওল-আউট প্রথা। প্রত্যেক দলের ৫ জন করে খেলোয়াড় খালি স্টাম্পে বল করবেন। কোনো ব্যাটসম্যান থাকবে না। যাদের বল স্টাম্পে বেশিবার লাগবে, তারা জিতবে ম্যাচ। অনেকটা ফুটবলের টাইব্রেকারের মতো। এই কাজের জন্য ভারত অধিনায়ক এমএস ধোনি বেছে নেন তার পার্ট টাইম স্লো বোলারদের। ভারতীয় বোলাররা প্রতিবার স্টাম্পে বল লাগালেও পাকিস্তানি পেসাররা সবাই মিস করেন। ৩-০ তে জয় হয় ভারতের। এই বোওল-আউট প্রথা পরে আর থাকেনি। টাই হলে ফল নির্ধারণ করতে সুপার ওভারের নিয়ম আসে। 

মিসবাহ-কাণ্ড
২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭, জোহানেসবার্গ

সেবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১০ দিন পর আবার ভারত-পাকিস্তানের দেখা হয়। এবার কানায় কানায় পূর্ণ স্টেডিয়ামে প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল। ১৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৭৭ রানে ৬ উইকেট হারায় পাকিস্তান। তাদের আর আশা কোথায়! কিন্তু দলটা আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। মিসবাহ-উল-হক লড়াকু ইনিংস খেলে পাকিস্তানের আশা ধরে রাখেন। ম্যাচ যায় শেষ ওভারে। শেষ ৬ বলে দরকার ১৩ রান। বোলার মিডিয়াম পেসার জোগিন্দর শর্মা। ওভারের দ্বিতীয় বলে মিসবাহ ছক্কা হাঁকান। এরপর স্কুপ শট খেলতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে। শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচটা মিস করেননি শ্রীশান্ত। শিরোপা ছোঁয়ার কাছাকাছি দুরত্বে গিয়ে পাকিস্তানের হৃদয় ভেঙে খানখান। ভারত চ্যাম্পিয়ন।


 
প্রফেসরের ক্লাসে
২৫ ডিসেম্বর ২০১২, ব্যাঙ্গালোর


ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের একমাত্র টি-টোয়েন্টি জয়টা এসেছিল তখনকার অধিনায়ক মোহাম্মদ হাফিজের ব্যাটে। সেটা ছিল দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথমটি। জয়ের জন্য ১৩৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পাকিস্তান। ভুবনেশ্বর কুমারের বলে কোনো রান না করে উমর আকমল বিদায় নিলে ১২ রানে ৩ উইকেট হারানো দল তারা। সবকিছু সম্পর্কেই মোটামুটি ধারণা এবং তা গুছিয়ে বলতে পারার কারণে হাফিজ পরিচিত ‘প্রফেসর’ নামে। তো প্রফেসর সেদিন শোয়েব মালিকের সঙ্গে ১০৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন। পাকিস্তান ২ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয়। হাফিজ ৪৪ বলে ৬১ রান করেছিলেন। শোয়েব মালিক অপরাজিত ছিলেন ৫৭ রানে। প্রসঙ্গত, টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের সঙ্গে ৮ দেখার ৭টিতেই জিতেছে ভারত।

 
চমকের নাম ফখর জামান
১৮ জুন ২০১৭, লন্ডন

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তান উঠেছিল আন্ডারডগ হিসেবে। ভারত ছিল পরিষ্কার ফেবারিট। গ্রুপ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জিতেওছিল। ফাইনালে পাকিস্তান দলে নবীন ফখর জামান মারমার কাটকাট এক সেঞ্চুরিতে করেছিলেন বাজিমাৎ। ইনিংসের শুরুর দিকেই জসপ্রীত বুমরাহর বলে আউট হয়েও নো বলের কারণে বেঁচে যাওয়া ফখর ১০৬ বলে করেছিলেন ১১৪ রান। যাতে ছিল ১২টি চার ও ৩টি ছক্কা। উদ্বোধনী জুটিতে আজহার আলীর সঙ্গে ১২৮ রানের জুটি। ৩৩৮ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে বিরাট কোহলির দলকে চাপা দেয় পাকিস্তান। তাঁর ওই কীর্তির পর উজ্জীবিত পাকিস্তানি বোলাররা মাত্র ১৫৮ রানের ভারতকে গুঁড়িয়ে দিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে। 

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×