অ্যামব্রোসকে তো গেইল ধুয়ে দেবেনই...
উৎপলশুভ্রডটকম
১৪ অক্টোবর ২০২১
বিশ্বকাপ শুরু হতে বাকি নেই আর দিন পাঁচেকও। এই মুহূর্তে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে শুরু হয়েছে কথার লড়াই। কয়েকদিন আগেই কার্টলি অ্যামব্রোস প্রশ্ন তুলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ক্রিস গেইলের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে৷ যার জবাবে তাঁকে রীতিমতো এক হাত নিলেন `দ্য ইউনিভার্স বস`।
ক্যারিয়ারের গোধুলি লগ্নে দাঁড়িয়ে সমালোচকদের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করলেন ক্রিস গেইল। বেশ কিছুদিন হলো তাকে আর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন এবং পোস্টার বয় লাগছে না। হারিয়ে খুঁজছেন ফর্ম। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে তারপরও কেন তিনি, এই প্রশ্ন উঠেছে আগেই। সেই প্রশ্ন যারা তোলেন, তাদের মধ্য থেকে গ্রেট ফাস্ট বোলার কার্টলি অ্যামব্রোসকে বেছে নিলেন স্বঘোষিত ‘দ্য ইউনিভার্স বস’। অ্যামব্রোসের জন্য মনে আর কোনো সম্মান নেই জানিয়ে কিংবদন্তি পূর্বসূরিকে ধুয়ে দিলেন গেইল।
অ্যামব্রোস কী বলেছেন, তা শুরুতে একটু বলে নেওয়া যাক। সপ্তাহখানেক আগে ক্যারিবিয়ান এক রেডিওর সঙ্গে কথা বলার সময় নিজস্ব মত দিয়েছেন। জানিয়েছেন, তার চোখে গেইলের উইন্ডিজ বিশ্বকাপ দলে থাকা প্রশ্নসাপেক্ষ। গেইল যে এখন আর দলে 'অটো চয়েজ' হিসেবে ঢুকে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই, সেটাও বলেছেন খোলাখুলি।
অ্যামব্রোস ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের সোনালী দিনের শেষ বেলার সৈনিক। আর গেইল হলেন অ্যামব্রোসের বিদায়ের পর বছরের পর বছর নিজেকে শাণিত করে একা হাতে বিশ্ব মাতানো ব্যাটসম্যান। আমুদে ও হালকা মেজাজের মানুষ হিসেবে গেইলের পরিচিতি থাকলেও এবার তিনি সিরিয়াস হয়ে গেলেন।
‘‘আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে বলছি, এবং আপনি এটা তাকে জানিয়ে দিতে পারেন- কার্টলি অ্যামব্রোসের জন্য 'দ্য ইউনিভার্স বস' ক্রিস গেইলের কোনোরকম কোনো শ্রদ্ধা নেই।’’ সেন্ট কিটসের একটি রেডিও স্টেশনের কাছে রাগে ক্ষোভে জ্বলে উঠে এই কথা বলেছেন গেইল। পড়তি ফর্মের কারণে দলে থাকা নিয়ে সমালোচনা থাকলেও তা মেনে নেওয়ার অবস্থায় যে ৪২ বছর বয়সী জ্যামাইকান নেই সেটা প্রমাণিত তার পরের কথাগুলোতেও।
‘আমি কার্টলি অ্যামব্রোসের ব্যাপারেই বলছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে যখন ঢুকলাম, তখন তার জন্য আমার খুব শ্রদ্ধা ছিল। দলে যোগ দেওয়ার ওই দিনগুলোতে তাকে চেয়ে চেয়ে দেখতাম।’ ক্রিকেটের বিশ্ব ইতিহাসে নিজেকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া গেইল চারশোর বেশি টেস্ট উইকেট শিকার করা অ্যামব্রোসকে আর দুই চোখে দেখতে পারছেন না। ঘটনার শুরু হয়তো অনেক আগে। অন্তত গেইলের কথা শুনলে তাই মনে হয়। অ্যামব্রোস অবসরে গেছেন ২০০০ সালে। তার আগের বছর ক্যারিবিয়ান দলে ঢুকেছেন গেইল। সেইসব দিনের কথা চোখের সামনে এনে গেইল বলছিলেন, ‘তবে আমি এখন আমার অন্তর থেকে কথা বলছি। জানিনা অবসরের পর তার কি হলো আর গেইলের পেছনেই বা কেন লাগলো। এসব নেগেটিভ কথা সে প্রেসকে বলে যাচ্ছে। জানি না সে মনোযোগ কেড়ে নিতে চাচ্ছে কি না কিন্তু মনোযোগটা সে ঠিকই পাচ্ছে। তাই তার যা দরকার সেই মনোযোগ আমিও তাকে দিলাম।’
এসব বলে অ্যামব্রোসের বিরুদ্ধে ঘোষণা করা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করছেন না গেইল। অ্যান্টিগার কিংবদন্তির সঙ্গে কখনো দেখা হলে মুখের ওপর যে দু-চার কথা শুনিয়ে দেবেন না তা নয়, ‘কার্টলি অ্যামব্রোসকে নিয়ে আমার লেনাদেনা চুকে গেছে। তার জন্য আমার মনে কোনো শ্রদ্ধা নেই। তার সাথে দেখা হলেও আমি তাকে বলব, "নেগেটিভ আচরণ বন্ধ করো। বিশ্বকাপের আগে দলকে সমর্থন দাও। এই দলটাই বেছে নেওয়া হয়েছে এবং সাবেক খেলোয়াড়দের সমর্থন আমাদের দরকার। ওটাই আমাদের প্রয়োজন"।' নেগেটিভ কিছু দরকার নেই এসব বলতে গিয়ে একটা প্রশ্নও আসছে গেইলের মনে, ‘অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে তাদের সাবেক খেলোয়াড়রা দলকে সমর্থন করে। আমরা কেন আমাদের দলকেই বড় এক টুর্নামেন্টের আগে সমর্থন করতে পারছি না?’
২০১২ ও ২০১৬ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য গেইল। সাবেক খেলোয়াড়দের আজেবাজে কথার প্রভাব দলের ওপর পড়তে পারে বলে শঙ্কা তার, ‘টুর্নামেন্টটা দুবার আমরা জিতেছি। তৃতীয়বারের মতো সেটা জিততে এবার ঝাঁপাব। দল কিন্তু দেখছে কি হচ্ছে না হচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে দলের ওপর।’ এমনটা চলতে থাকলে সাবেক খেলোয়াড়দের ওপর মহাখাপ্পা হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেও বাধবে না গেইলের, ‘যদি সাবেক খেলোয়াড়রা এভাবে নেতিবাচক হতে থাকে তাহলে আমি ক্রিস গেইল তাদের অসম্মান করবো, মুখের ওপর অসম্মান করব। মিডিয়াতে অশ্রদ্ধা করব।’ আরেকটি কথা বলে শেষ করেন গেইল, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সমর্থন করো। এটাই হলো আসল কথা।’
এই যে ক্রিস গেইল তাঁকে ধুয়ে দিলেন সে কথা কি অ্যামব্রোসের কানে গেছে? একটি মিডিয়া যোগাযোগ করেছিল অ্যামব্রোসের সঙ্গে। ‘আমি সাড়া দেব। তবে সে যা কিছু বলেছে, তা হজম করে নেই আগে। এবং চিন্তা ভাবনাকে একটু গুছিয়ে নেই।’ অ্যামব্রোস ওই মিডিয়াকে বলেছেন, ‘আমি আপনাকে বার্তা পাঠিয়ে জবাব দেব।’
আরেকটা কথা না বললে গোটা জিনিসটা একরকম অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তা হলো ঠিক কি বলেছিলেন অ্যামব্রোস যাতে এমন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন গেইল? ‘না, সে (গেইল) আমার চোখে অটোমেটিক চয়েজ না। (ওয়েস্ট ইন্ডিজে) সম্প্রতি হওয়া হোম সিরিজে তার বলার মতো কোনো স্কোর নেই। আগেও বলেছি হোম সিরিজে সে ভালো করেনি এবং তাকে বিশ্বকাপে নেওয়া উচিত না।’ অ্যামব্রোস আগুন জ্বালিয়েছিলেন এমন কথায়, ‘যাই হোক, সে তো বিশ্বকাপে খেলবে। আমি মনে করি শুরুর একাদশে সে একদমই অটোমেটিক চয়েজ না। কোনো কোনো দিন সে ধ্বংসাত্মক হতে পারে। গেল ১৮ মাসে সে উল্লেখ করার মতো এমন কিছু করেনি যাতে আমি বলতে পারি যে বিশ্বকাপে সে জ্বলে উঠবে।’
অ্যামব্রোসের কথার পিঠে গেইলের গেল কিছুদিনের পারফরম্যান্সের একটা ছবি তুলে না ধরলেই নয়। ২০২১ এর শুরু থেকে ১৬ টি-টোয়েন্টিতে গেইল ১৭.৪৬ গড়ে মাত্র ২২৭ রান করেছেন। আইপিলের সংযুক্ত আমিরাত পর্বে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের একাদশে জায়গা পাচ্ছিলেন না। দুটি ম্যাচে সুযোগ পেয়ে ১ ও ১৪ করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রস্তুতিতে থাকবেন জানিয়ে আইপিএল ছেড়ে চলে যান। আইপিলের আগে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের হয়ে ৯ ম্যাচে ১৮.৩৩ গড়ে ১৬৫ রান করতে পেরেছিলেন। এসব পরিসংখ্যান দেখে কেউ যদি গেইলের বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভূক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাহলে কি তাতে দোষের কিছু থাকে?