কবে মুক্তি পাবেন হাসান আলী?
উৎপলশুভ্রডটকম
১৪ নভেম্বর ২০২১
ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচটা ফেলে দিয়ে হাসান আলী কী বিপদেই না পড়েছেন! সেমিফাইনালের পর দুদিন চলে গেলেও এ নিয়ে কথা থামছেই না। অনেক গুজবও ছড়াচ্ছে, যেটির উত্তর দিয়েছেন হাসান আলীর স্ত্রী। হাসান নিজেও জানিয়েছেন তাঁর ফিরে আসার প্রত্যয়। সমর্থনও পাচ্ছেন ওয়াসিম আকরামের মতো গ্রেটদের।
একটা ক্যাচই তো! কিন্তু সেই একটা ক্যাচই খেলাটাকে কিভাবে বদলে দিতে পারে! জয়ের সম্ভাবনা থেকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দিয়ে যেতে পারে। এবং ওই একটা ক্যাচ গোটা জাতিকে করতে পারে হতাশায় নিমজ্জিত। কিন্তু সব বাদ দিলে এটা একটা ক্যাচই তো! ক্রিকেট ম্যাচে ক্যাচ তো পড়েই। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন এই একটা ক্যাচ ম্যাচের ফলাফল নির্ধারক হয়ে ওঠে। হাসান আলীর ফেলে দেওয়া ক্যাচটা নিয়ে তাই চর্চা থামছেই না।
হাসান আলী ক্যাচটা ফেলে দেওয়ার পর কী কাণ্ডটাই না করলেন ওয়েড! পরপর তিন ছক্কায় অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে। আর এর আগ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ফেবারিট হয়ে ওঠা পাকিস্তানকে দিয়ে দিলেন দুঃখে ভরা বিদায়।
কিন্তু একটা ক্যাচ মিস করাতেই কি জীবন শেষ হয়ে যায়? কত রকম কথাই ছড়াচ্ছে। হাসানের ওপর এতটাই রাগ যে, তাঁর বাড়িতে হামলা করেছে বিক্ষুব্ধ সমর্থকেরা, এমন আরও কত কি! কিন্তু এর কোনোটাই সত্য বলে প্রমাণিত না। হ্যাঁ, হাসানের হৃদয় ভেঙেছে। কিন্তু তিনি তো স্পোর্টসম্যান। একটা বড় ধরনের থাক্কা থেকে কিভাবে উঠে আসতে হয়ে, তা তাঁর খুব জানা। সমর্থনও পাচ্ছেন নানা জায়গা থেকে। পরিবার তো আছেই। আছেন গ্রেটরাও। সেদিন অবশ্য হাসানের অবশ্য ভালোর চেয়ে মন্দই হয়েছে বেশি। ক্যচ মিস করার কথাটা এক পাশে সরিয়ে রাখুন। তার মানের বোলার চার ওভারে ৪৪ রান দিয়েছেন। উইকেটের খাতা শূন্য।
এই যে লাখো কথা হচ্ছে হাসানের হতাশা নিয়ে, কিন্তু হাসানের চেয়ে হতাশ কি কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে? এমন একটা ম্যাচ, যেটা জিতলেই স্বপ্নের ফাইনাল। তারপর তো এক ধাপ দূরে হাতের স্পর্শের নাগালে শিরোপা। এর কোনোটাই হলো না। বিশ্বকাপ অসম্পূর্ণ থাকতেই সিরিজ খেলতে চলে আসতে হলো বাংলাদেশে। অথচ আজকের ফাইনালে পাকিস্তানকেই না দেখছিলেন সবাই।
হাসান আলীর দুঃখটাই তো সবার চেয়ে বেশি। সেই দুঃখের কথা জানিয়ে টুইট করেছেন পাকিস্তানি ফাস্ট বোলার। যাতে লিখেছেন, ‘আমি জানি, আপনারা সবাই আমার পারফরম্যান্সে আপসেট। আমি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু আমার চেয়ে হতাশ তো আর কেউ নয়। তবে এটি আমাকে আরও শক্তিশালী করবে আলহামদুলিল্লাহ।’
টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং সেমিতে দুর্দান্ত খেলা ফখর জামান সাহস জুগিয়েছেন হাসানকে, ‘দোস্ত আমার, তুমি একজন চ্যাম্পিয়ন। বিশ্বে খুব কম খেলোয়াড়ই আছে, যারা তোমার মতো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কঠোর পরিশ্রমী। তুমি লড়াকু। মাথা উঁচু রাখো। তোমাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি।’
এই উপমহাদেশে ক্রিকেট এমন এক ক্রেজ যে, খেলোয়াড়দের একটা ভুল সমর্থকদের পাগল করে দেয়। পরিবারকেও কঠিন সময় পার করতে হয়। হাসান আলীর স্ত্রী সামিয়া আরজু অবশ্য ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছেন এই ঘটনায় তাদের পরিবারের ওপর কোনো হুমকি আসেনি, ‘অনেক ফেইক টুইট দেখলাম যে আমি, হাসান আর আমাদের মেয়ে পাকিস্তানের মানুষের কাছ থেকে হুমকির শিকার হচ্ছি। এটা পুরোপুরি ভুল।’ সামিয়া এর সঙ্গে আশ্বস্ত করেছেন, হুমকি-ধামকির বদলে তারা বরং অনেকের কাছ থেকে সহমর্মিতা পাচ্ছেন। যা খুব সুইট।
میرا سینہ تیری حُرمت کا ہے سنگین حصار،
— Hassan Ali (@RealHa55an) November 13, 2021
میرے محبوب وطن تُجھ پہ اگر جاں ہو نثار
میں یہ سمجھوں گا ٹھکانے لگا سرمایہِ تن،
اے میرے پیارے وطن pic.twitter.com/4xiTS0hAvx
এই লেখাটা কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামের একটা কথা দিয়ে শেষ করলে ভালো হয় সম্ভবত। হাসান আলীর পাশে দাঁড়িয়ে যিনি লিখেছেন, ‘পরিস্থিতিটা খেলোয়াড়দের জন্য যেমন, সমর্থকদের জন্যও তেমন কঠিন। খেলোয়াড়রা রুমে যাবে। চুপ মেরে থাকবে। হয়তো পরিবারের সঙ্গেও কথা বলবে না। এই হার তাদের তাড়িয়ে বেড়াবে। জাতি হিসেবে এই আগুনে ঘি ঢালতে চাই না।’
খেলোয়াড়দের কষ্টটা খেলোয়াড়রাই বোঝেন। যেমন বুঝেছেন ওয়াসিম আকরাম। কিন্তু কথা হচ্ছে, ওয়েডের ওই ক্যাচ মিসের প্রসঙ্গটা আর কতদিন হাসান আলীকে তাড়িয়ে ফিরবে? আর কতদিন এভাবে একটা ভুলের চর্চা হতে থাকবে, যাতে আগুনে পুড়বেন হাসান!