কখনো ওভার স্টেপিং না করেও হাফিজের `নো`
উৎপলশুভ্রডটকম
১৪ নভেম্বর ২০২১
একটা ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমই হয়ে থাকবেন মোহাম্মদ হাফিজ। এমন বোলার তো আর একজনও পাওয়া যাবে না, ওভার স্টেপিংয়ের কারণে যাঁকে আম্পায়ারের ‘নো’ কল শুনতে হয়নি, অথচ ক্যারিয়ার রেকর্ডে ঠিকই একটা নো বল আছে!
মোহাম্মদ হাফিজের ওই বলটার কথা মনে আছে? ডেভিড ওয়ার্নারের ছক্কা?
পাকিস্তানি অফ স্পিনারের হাত থেকে ছুটে যাওয়া বল দুই বার বাউন্স খেয়ে পৌঁছেছিল ডেভিড ওয়ার্নারের কাছে। ওয়ার্নার তাতে ছক্কা মেরে দেন। ওই বলে ছক্কা মারা উচিত হয়েছে কি হয়নি, এ নিয়ে একেকজনের একেক মত। তবে এখানে প্রসঙ্গ এটা নয়। ওই ‘ডাবল বাউন্স’ খাওয়া বলটার কারণে অভূতপূর্ব একটা ঘটনা ঘটে গেছে, তা কি আপনি এরই মধ্যে জেনে গেছেন? বিচিত্র ওই বলটির কারণেই মোহাম্মদ হাফিজের ক্যারিয়ার-রেকর্ডে প্রথমবারের মতো ‘নো’ বল করার 'কলঙ্ক' লেগেছে।
১৮ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন মোহাম্মদ হাফিজ। বোলিং করেন ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই। যদিও মাঝখানে একাধিকবার অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বোলিং করায় নিধেষাজ্ঞার কবলে পড়তে হয়েছে। তারপরও তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ২১৭৫.৫ ওভার বোলিং করে ফেলেছেন। বলের হিসাব করলে ১৩,০৬১ বল। এর একটাতেও কখনো ওভার স্টেপিং হয়নি তাঁর।
পুরো ক্যারিয়ারেই কোনো নো বল করেননি, খুঁজলে এমন বোলার আরও পাওয়া যাবে। তবে সংখ্যাটা খুব বেশি হওয়ার কথা নয়। একটা ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রমই হয়ে থাকবেন মোহাম্মদ হাফিজ। এমন বোলার তো আর একজনও পাওয়া যাবে না, ওভার স্টেপিংয়ের কারণে যাঁকে আম্পায়ারের ‘নো’ কল শুনতে হয়নি, অথচ ক্যারিয়ার রেকর্ডে ঠিকই একটা নো বল আছে!
এত নিশ্চিত করে বলতে পারার কারণ, বল দুবার বাউন্স খেলে সেটিকে নো ডাকার এই আইনটা চালু হয়েছে মাত্রই ২০১৭ সালে। এর আগে দুবার বাউন্স খাওয়া বল বৈধ ডেলিভারি হিসেবেই গণ্য হতো। দুবারের বেশি বাউন্স খেলে তবেই নো ডাকতেন আম্পায়ার। তবে সে সময়ও এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল। দুবার বাউন্স খাওয়া বলও যে বৈধ ডেলিভারি হিসেবে বিবেচিত হয়, অনেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারেরই তা অজানা ছিল। এবি ডি ভিলিয়ার্স যার বড় প্রমাণ।
২০০৮ সালের এপ্রিলে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্সের ওই কাহিনি। সেই টেস্টে বাংলাদেশের অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের দুইবার বাউন্স খাওয়া বলটা ডেভিড ওয়ার্নারের মতোই উড়িয়ে দিতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। সেই ক্যাচ ধরেন বোলার আশরাফুলই। কিন্তু আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর 'এটা কিভাবে আউট হয়' বলে তাঁর সঙ্গে রীতিমতো তর্ক জুড়ে দেন ডি ভিলিয়ার্স। দক্ষিণ আফ্রিকান ড্রেসিংরুমের সামনে অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও চোখে পড়ছিল প্রেসবক্স থেকে। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে আইনটা নিশ্চয়ই জেনে এসেছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। এ কারণেই দুবার বাউন্স করা বলে আউট হওয়াটাকে ‘অন্যায়’ বললেও বলার সময় তাঁর মুখে কোনো বিরাগের চিহ্নের বদলে ছিল হাসি, ‘আমি আশা করছিলাম, যদি কেউ নো বল ডাকে!’
কে জানে, সেদিনই একাধিকবার বাউন্স খাওয়া বলকে নো ডাকার আইনটার বীজ বোনা হয়ে গিয়েছিল কি না!