অ্যামব্রোস এখন গেইলকে বলতেই পারেন...

উৎপলশুভ্রডটকম

৫ নভেম্বর ২০২১

অ্যামব্রোস এখন গেইলকে বলতেই পারেন...

ক্রিস গেইল: সময় তাহলে ফুরাল! ছবি: রয়টার্স

কার্টলি অ্যামব্রোস চাইলে এখন বলতেই পারেন, ‘বলেছিলাম না গেইল!’ তাঁর মন্তব্যের জবাব মুখে দিলেও ব্যাট হাতে দিতে ব্যর্থ গেইলের কিই-বা করার থাকত অ্যামব্রোস এই সুযোগে কিছু শুনিয়ে দিলে? আগেও অন্যায় কিছু বলেননি, এখনো অন্যায় হতো না। বিশ্বকাপের চার ম্যাচে পারফরম্যান্স গেইলের কিছু বলার মুখ রেখেছে নাকি!

বয়স কি আসলেই একটা সংখ্যা? আইপিএল থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ। কিংবা বিশ্বকাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আরও কয়েকটি ম্যাচ। কোথাও ক্রিস গেইলকে প্রমাণ করার মতো কোনো পারফরম্যান্স নেই। যে ব্যাটটাকে খাপ খোলা তলোয়ারের মতো ব্যবহার করতেন, সেটাতে বুঝি আজ মরচে ধরে গেছে খুব! আইপিএল থেকে বিদায়টা হয়েছে করুণভাবে। এবারের বিশ্বকাপের বাজে পারফরম্যান্স গেইলকে আরও বর্ণহীন করে দিয়ে গেল। বয়স হয়েছে ৪২। এটা কি তাহলে শুধু সংখ্যা নেই আর, শেখাতে শুরু করেছে বয়স নামের কোনো আজব ত্রিকোণমিতি?

এক ম্যাচ বাকি থাকতেই দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর  গেইল পারফরম্যান্স যেন একটি আরেকটির প্রতিচ্ছবি। চার ম্যাচের গেইলের রান যথাক্রমে ১৩, ১২, ৪ ও ১। যোগফল ৩০। শেষটা রাঙিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন কী করুণ পরিণতিই না পাচ্ছে!

সত্যি বলতে এবারের বিশ্বকাপে গেইল ঠিক তাঁর মতো করে শুরুও করতে পারেননি কোনো ম্যাচেই। কোনো ধ্বংস নেই, নেই বিস্ফোরণ। টিকে থাকার চেষ্টা করতে গিয়ে বোলারের শিকার হয়েছেন কখনো, কোনো ইনিংসে আবার খেলব কি খেলব না করে বিদায় নিয়েছেন। না, মোটেও গেইলসুলভ নয় বলেই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি কার্টলি অ্যামব্রোস এখন চাইলে এক হাত নিয়ে নিতে পারেন। পরিপাটি ভদ্রলোক বলে সেটা হয়তো অ্যামব্রোস করবেন না, কিন্তু তাঁর কথাই তো শেষ পর্যন্ত সত্য হলো। বিশ্বকাপের আগে বলেছিলেন, গেইলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ দলে থাকা নিয়েই তাঁর প্রশ্ন আছে। এর সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন, দলে থাকলেও একাদশে গেইল মোটেও অটো চয়েজ নন।

এই কথার জবাব মুখে দিতে গিয়ে গেইল কী অসম্মানটাই না করেছিলেন অ্যামব্রোসকে! অ্যামব্রোসের জন্য তাঁর মনে বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা নেই জানিয়ে ঝাঁজালো সেই জবাব শুনে দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস। অ্যামব্রোসও যে খানিকটা ক্রিকেট খেলেছেন, গেইলকে তা মনে করিয়ে বলেছিলেন, গেইলের উচিত মুখে কিছু না বলে ব্যাটে জবাব দেওয়া। সেটিই তো পারলেন না গেইল। শেষ ম্যাচে যদি কিছু করেও ফেলেন, তাতেও এটা তাঁর জন্য ব্যর্থতার গল্প হয়েই থাকবে।

তা শেষটা হয়তো ভালো হলো না। তবে গেইলকে ছাড়া যেমন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাস লেখা অসম্ভব, তেমনই এই ফরম্যাটের বিশ্বকাপও গেইলের অনেক কীর্তিতে ভাস্বর। এবারের বিশ্বকাপে কিছুই করতে পারেননি, তারপরও সব বিশ্বকাপ মিলিয়ে ব্যাটসম্যানদের যত রেকর্ড, তার প্রতিটিতেই তাঁর সরব উপস্থিতি।

গেইলের বিশালতা বুঝতে তাই ওই সব রেকর্ডে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া দরকার। এমন বিবর্ণ না থাকলে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা এবারই হয়ে যেত গেইলের। হতে পারে এখনো। তবে সে জন্য শেষ ম্যাচে করতে হবে ৬৭ রান। ৩১ ম্যাচে ১০১৬ রান রেকর্ডটি শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনের। আর গেইলের ৩২ ম্যাচের ৩১ ইনিংসে ব্যাট করে রান ৯৫০। গড় ৩৫.১৮। স্ট্রাইকরেট ১৪২.৪২। 

২০০৭ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের চরিত্রটা ঠিক করে দিয়েছিলেন গেইল

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একাধিক সেঞ্চুরি শুধুই তাঁর। ফিফটির রেকর্ডে স্থান দ্বিতীয়। ১০টি হাফ সেঞ্চুরি নিয়ে ওখানে এক নম্বর ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এবারই ছাড়িয়ে গেছেন সাবেক আইপিএল টিমমেটকে। ৯টি ফিফটি গেইলের। সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডে গেইলের ধারে কাছে কেউ নেই। ৩৩ ছক্কা নিয়ে যুবরাজ সিং যেখানে দ্বিতীয়, সেখানে গেইলের ছক্কা ৬১টি। এখনো খেলছেন, এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে ডোয়াইন ব্রাভো ২৪ ছক্কা নিয়ে অনেক পেছনে। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডের ১, ২, ৫, ১১ ও ১৮তম স্থানে লেখা গেইলের নাম। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংসে ১১ ছক্কা তাঁকে রেখেছে সবার ওপরে।

২০০৭ বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন যে ১১৭ রানের ইনিংসে, সেটিতে ১০ ছক্কায় দ্বিতীয় স্থানটিও তার। এক ইনিংসে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি থেকে তোলা সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটাও তাঁর। ১০ ছক্কা ও ৭ বাউন্ডারিতে এসেছিল ১১৭ রানের ৮৮। দ্বিতীয় স্থানেও গেইল, যদিও নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালামের সঙ্গে তা ভাগাভাগি করতে হচ্ছে। অপরাজিত ১০০ রানের ৮৬ এসেছিল চার-ছক্কা থেকে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের চরিত্র কী হওয়া উচিত, তা কিন্তু এই সংস্করণের ক্রিকেটের প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই ঠিক করে দিয়েছিলেন গেইল। স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উদ্বোধনী ম্যাচে তাঁর ১১৭  কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই প্রথম সেঞ্চুরি। 

তবে বিশ্বকাপের গেইল মানে সবসময় যে রানের তোড়ে প্রতিপক্ষকে ভাসিয়ে দেওয়া, তা নয়। বিশ্বকাপের গেইল কখনো চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ, আবার হঠাৎ জ্বলে উঠে সব কূল রানে ভাসিয়ে দেওয়া এক বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান। ২০০৭ এর বিশ্বকাপ যেমন গেইলের একটা ইনিংসের কারণে স্মরণীয়, তেমনি ২০১২ বিশ্বকাপ শিরোপা দলকে জেতাতে ধারাবাহিকভাবে রান পাওয়া এক খেলোয়াড় তিনি। ২০১৬ বিশ্বকাপ দল জিতলেও গেইলের ফর্ম ছিল বড় অদ্ভুত। এক ম্যাচে অপরাজিত ১০০ করলেও বাকি চার ম্যাচ মিলিয়ে করেছিলেন মাত্র ১৩!

২০১৬ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করলেও অন্য ম্যাচগুলোতে গেইলের পারফরম্যান্স ছিল বাজে ছবি: গেটি ইমেজেস

তবে শুধু পরিসংখ্যানের আয়নায় যদি বিশ্বকাপের গেইলকে জানতে চান, তাহলে সেটাও জেনে নিন।

* ২০০৭ বিশ্বকাপে ২ ম্যাচে ১১৭। গড় ৫৮.৫০। স্ট্রাইকরেট ১৯৫.০০।

* ২০০৯ বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে ৪৮.২৫ গড় ও ১৩৪.০২ স্ট্রাইকরেটে রান ১৯৩।

* ২০১০ বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে ৩৩.০০ গড় এবং ১৫৭.১৪ স্ট্রাইকরেটে রান ১৩২।

* ২০১২ বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচের ৬ ইনিংসে ২২২ রান। ৪৪.৪০ গড় আর স্ট্রাইকরেট ১৫০.০০।

* ২০১৪ বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে ২৮.৬০ গড় আর ১০৭.৫১ স্ট্রাইকরেটে ১৪৩। 

* ২০১৬ বিশ্বকাপে ৩৭.৬৬ গড় ও  ১৯৪.৮২ স্ট্রাইকরেটে ১১৩ রান।

* ২০২১ বিশ্বকাপের হিসাবটা না হয় আরেক ম্যাচ পরেই হোক।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×