`মুমিনুলের আরও দশ বছর টেস্ট ক্যাপ্টেন থাকা উচিৎ`
শুভ্র.আলাপে তামিম ইকবাল
রিজওয়ান রেহমান সাদিদ
৫ মে ২০২১
তিনি যাঁর জুতোয় পা গলিয়েছেন, তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া তো বটেই, ছোঁয়াটাও বেশ দুঃসাধ্য। বাংলাদেশের জেতা ১৩১ ওয়ানডের ৫০টিই এসেছে ওই মানুষটির সময়কালে, এই পরিসংখ্যানও মাশরাফি নামের মহীরূহের সামান্যই বোঝাতে পারছে। যা বুঝতে হলে মাঠে-মাঠের বাইরে তাঁর অনুকরণীয় অধিনায়কত্বে মন্ত্রমুগ্ধ সতীর্থদের
তিনি যাঁর জুতোয় পা গলিয়েছেন, তাঁকে ছাড়িয়ে যাওয়া তো বটেই, ছোঁয়াটাও বেশ দুঃসাধ্য। বাংলাদেশের জেতা ১৩১ ওয়ানডের ৫০টিই এসেছে ওই মানুষটির সময়কালে, এই পরিসংখ্যানও মাশরাফি নামের মহীরূহের সামান্যই বোঝাতে পারছে। যা বুঝতে হলে মাঠে-মাঠের বাইরে তাঁর অনুকরণীয় অধিনায়কত্বে মন্ত্রমুগ্ধ সতীর্থদের মন পড়তে হবে।
সেই মাশরাফির কাছ থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন তামিম ইকবাল। প্রশ্নটা জেগেছে অবধারিতভাবেই, এগিয়ে নেওয়ার কাজটা তামিম করবেন কী করে? মাশিরাফর নেতৃত্বে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলে ফেলা ফেলা গেছে, সুতরাং তামিম বাংলাদেশকে পরবর্তী ধাপে তুলে গেছেন বলতে হলে তো ফাইনালেই খেলতে হবে। শুভ্র.আলাপে তামিম অতিথি হয়ে আসছেন জেনে এক দর্শক তো প্রশ্নই করে ফেললেন, 'বাংলাদেশ কি ২০২৩ বিশ্বকাপ জিততে পারবে?' খানিকক্ষণ ভেবে-টেবেও পষ্টাপষ্টি উত্তরটা অবশ্য তামিম দিতে পারলেন না। এখনো প্রায় দু'বছর বাকি বিশ্বকাপ শুরু হতে, এত আগে থেকেই ওসব ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় নাকি! তবে বাংলাদেশের জোর সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।
প্রশ্ন হলো তামিমের 'অধিনায়কত্ব দর্শন' নিয়েও। তামিমও বললেন, আক্রমণই তাঁর অধিনায়কত্ব দর্শনের শেষ কথা। 'যেভাবে আমি ক্যাপ্টেন্সি করতে চাই, ইট হ্যাজ টু বি অ্যাগ্রেসিভ।' অ্যাগ্রেসিভ বলতে তামিম কী বোঝেন, এর ব্যাখ্যাও দিলেন, 'অ্যাগ্রেসিভ মানেটা হচ্ছে, আমি যখন ফিল্ডিংয়ে যাব, আমি আমার বোলারদের উইকেট নেবার চান্সটা দেব। তো সে জন্য যে সময় আমার অ্যাগ্রেসিভ থাকতে হবে, থাকব; যে সময় আমার ডিফেন্সিভ থাকতে হবে, থাকব। বাট ইন ন্যাচার, আই উড লাইক টু অ্যাটাক, এভরি টাইম।'
তাঁর আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বের একটা নমুনাও দাঁড় করালেন নিজেই, 'নিউজিল্যান্ড ট্যুরটাও যদি দেখেন, স্লিপ তো নরমালি একটা অ্যাটাকিং পজিশন। এবার যত সময় পর্যন্ত স্লিপ দাঁড়িয়ে ছিল, নরমালি আমাদের খেলায় এতক্ষণ পর্যন্ত স্লিপ থাকে না। মানে আমি আমার বোলারদের (উইকেট তোলার) সব সুযোগই দিয়েছি।'
এ জন্যে দলে তাঁর বোলারদের ভূমিকাও ব্যাখ্যা করলেন ছোট্ট করে, 'দেখেন, প্রত্যেকটা বোলার কিন্তু ইকোনমিক্যাল হবে না। আমার টিমে যদি পাঁচটা বোলার থাকে, দুইটা বোলার থাকবে অ্যাটাকিং বোলিং করবে। তো অ্যাটাকিং বোলিং করতে গিয়ে তাঁরা ষাট-পয়ষট্টি বা সত্তর রানও দিয়ে দিতে পারে। কিন্তু তাঁদের দুইটা-তিনটা উইকেট নিতে হবে। আমি এভাবে চিন্তা করে। হ্যাঁ, আবার দুয়েকটা বোলার থাকবে, যাঁরা ১০ ওভারে ত্রিশ/পঁয়ত্রিশ/চল্লিশ রান দিবে। তাঁদের কাজ হলো ডিফেন্স করা।'
নিজেদের দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও যে সতীর্থদের ওপর কোনো ক্ষোভ থাকবে না তাঁর, তামিম জানালেন তা-ও। 'তাসকিনের কথাই যদি বলি, প্রোবাবলি (নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে) সেকেন্ড ওডিয়াইতে ও সম্ভবত সেভেন্টি ফাইভ রান দিয়েছিল। কিন্তু সেখানে আমাদের জেতার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। তো আই ডোন্ট মাইন্ড দৌজ কাইন্ড অব থিংস। কারণ আমি জানি, ও প্রত্যেকটা বল করছিল টিমের জন্য। হি ওয়েন্ট ফর উইকেটস। যখন আপনি উইকেটের জন্য যাবেন, তখন আপনি রান লিক করবেনই। আই অ্যাকচুয়েলি এনজয় দৌজ কাইন্ড অব থিংস।'
কিন্তু এই অধিনায়কত্বের দর্শনটা কেবল এক ফরম্যাটের জন্যই বরাদ্দ থাকবে কেন? তামিম যেহেতু তিন ফরম্যাটই সমানতালে খেলছেন, তামিমকে অধিনায়ক বানালেই তো দর্শনটা ছড়িয়ে পড়ে সব সংস্করণে! তামিম জানালেন, টি-২০তে এই দর্শন ছড়ানোর দায়িত্বটা নিলেও নিতে পারেন তিনি, তবে টেস্ট ক্রিকেটে এমন কিছু ভাবতেই চান না। 'তিনটা ফরম্যাটের ক্যাপ্টেন্সি আমি নেব না। হ্যাঁ, হোয়াইট বলের দুইটা ফরম্যাটের ক্যাপ্টেন্সি যদি বলা হয়, আমি চিন্তা করতে পারি!'
অবধারিতভাবেই প্রশ্নটা জাগে, কেন নয়? প্রশ্নটা উঠতে পারে জেনেই তামিম ব্যাখ্যা দিলেন সঙ্গে, টেস্ট ফরম্যাটের বর্তমান অধিনায়ক যিনি, সেই মুমিনুল হকের টেস্ট নিয়ে ভাবনা-চিন্তার ওপর তাঁর অগাধ আস্থা এবং আগামী দশ বছরেও এই আস্থায় চিড় ধরবে না। 'ওর টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি যে ফিলিংস, যে চিন্তাধারা; আমার মনে হয়, ওইটা আমার মধ্যে নাই। টিমের কারও যদি (টেস্টের প্রতি) ফিলিংসটা কাছাকাছি থেকে থাকে, সম্ভবত সেটা মুশফিকের। বাট, ওর (মুমিনুল) যে ফিলিংস, যে চিন্তাধারা, প্ল্যানিং, কিংবা কী করতে চায়--টিমের মধ্যে আর কারও সেটা নেই। আনফরচুনেটলি টেস্ট ক্রিকেটে আমরা দুর্বল, কিন্তু আমার মনে হয় না, ওর চেয়ে ভালো কেউ কাজটা করতে পারবে। হি ইজ দ্য ফিউচার। শুধু আজকে না, ওর আরও দশ বছর টেস্ট ক্যাপ্টেন থাকা উচিৎ।'
কিন্তু তামিমের এই কথার সঙ্গে 'সহমত' বলার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে তো? টেস্টে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যে বেহাল দশা, তার পরে খোদ বিসিবি ঘাঁটালেই তো 'মুমিনুল হটাও' মিশনে সঙ্গী পাওয়া যাবে বেশ কজন। উৎপল শুভ্র তাই তামিমকে মনে করিয়ে দেওয়া চেষ্টা করলেন, মিডিয়ার কাজই খুঁত বের করা। কেউ বাজে শট খেলে আউট হলে তাঁকে সমালোচনার বাণে বিদ্ধ করা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিসিবিরই তো দায়িত্ব, মুমিনুলকে আগলে রাখা।
তামিমও একমত হচ্ছেন এখানটায়। বিসিবি তাঁদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেন, তবে জনসম্মুখে নিজেদের সমর্থনটা সরাসরি জানালে অধিনায়ক আরও বেশি বল-ভরসা পাবেন বলেও মনে হয় তাঁর। সঙ্গে একটু মুখচোরা স্বভাবের বলে মিডিয়া মুমিনুলের ভেতরটা ঠিকঠাক পড়তে পারেন না বলেও খেদও ঝরল তামিমের কণ্ঠে, 'অনেক কিছু হয়তোবা ও এক্সপ্রেস করতে পারে না মিডিয়াতে এসে, ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারে না। বাট, ও তো আমাদের সাথে থাকে, আমাদের সাথে কথা বলে। আমরা জানি, ও কতটুকু ফিল করে; কতটুকু আপসেট হয় একটা ম্যাচ হেরে গেলে, কিংবা কতটুকু খুশি হয় যখন আমরা ছোট ছোট সেশন জিতি।'
তা মুমিনুলের বন্ধ হয়ে থাকা কুঠুরির চাবিটা গণমাধ্যম খুঁজে না পেলে কি-ই বা ক্ষতি হবে, বিসিবি কর্তারা খুঁজে পেলেই তো চলে!