সাকিব আল হাসানের সাক্ষাৎকার: পর্ব ২
`যেন কোচিং স্টাফ চেঞ্জ করে ফেললেই টিম ভালো খেলবে`
উৎপল শুভ্র
২০ ডিসেম্বর ২০২১
তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরিবর্তন দিয়ে শুরু হয়ে ছড়িয়ে গেছে নানা দিকে। যেসব কোচকে পেয়েছেন, তাঁদের ভালো-মন্দ; কথিত পঞ্চপাণ্ডবের পারস্পরিক সম্পর্ক...এমন আরও প্রসঙ্গে যথারীতি খোলামেলা কথা বলেছেন সাকিব আল হাসান।
উৎপল শুভ্র: ২০০৬ সালে আপনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক, এরপর এই ১৫ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় কী পরিবর্তন দেখেন?
সাকিব আল হাসান: আচ্ছা, আপনি আমাকে নিয়ে জিজ্ঞেস না করে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কেন জিজ্ঞেস করেন? আমি কী...আমি না প্রেসিডেন্ট, না বোর্ড ডিরেক্টর, না ক্যাপ্টেন, না কোচ, না সিলেক্টর, না হেড অব...
শুভ্র: কারণটা তো আপনাকে আগেও বলেছি। আপনি মিস্টার বাংলাদেশ ক্রিকেট বা বলা যায়, ফেস অব বাংলাদেশ ক্রিকেট...আপনার তাই সার্বিক বিষয়ে কথা বলার একটা দায় তো আছেই। এড়িয়ে যেতে চাইলে ভিন্ন কথা...
সাকিব: আমারও তো কোড অব কনডাক্ট আছে। এ কারণে যেটা বলব, আপনি সেটা শুনে কোনো মজা পাবেন না। ওটা বলে কোনো লাভ আছে?
শুভ্র: সেটাও ঠিক। তাহলে কি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে চাচ্ছেন না?
সাকিব: তা না, তবে আমার চোখে তো আসলে খুব বেশি কোনো পরিবর্তন দেখি না। সবই সমান-সমান মনে হয়। যখন খেলা শুরু করেছি, মিরপুরে তখনো ২৪০-৫০ ছিল জেতার স্কোর। এখনো ২৪০-৫০-ই জেতার স্কোর। পৃথিবীতে আর কোথাও এমন নাই, তাই না? ধরেন, নাইনটিজে ২০০-২২০ করলে জিতত। ২০০০ সালের দিকে শুরু হলো ২৪০...২৫০...দুয়েকটা বড় স্কোর যে হতো না, তা না...আমি বেশির ভাগ সময় যা হতো সেটাই বলছি আর কি...এরপর ৩০০-৩৫০ চেজ করা শুরু হলো, এখন তো চার শ রানও চেজ হয়...কিন্ত আমরা সেই ২৪০-৫০-এ পড়ে আছি।
শুভ্র: এটা তো খুব ভালো বললেন...সিম্বলিকও...আমি প্রশ্নটা করেছিলাম আমাদের ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট, সারা দেশের অবকাঠামো এসব নিয়ে জানতে...মিরপুর দিয়েই তো তাহলে সব ব্যাখ্যা করা যায়...সেভাবে কোনো কিছুই চেঞ্জ হয়নি, এটাই তো বলতে চাইছেন আপনি?
সাকিব: না, আমি এসব কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি শুধু বললাম, ওভাবে দেখলে ওই রকমই আছে আর কি! আর কিছু জানি না, হ্যাঁ-না কিছু নাই। আমি কোনো কন্ট্রোভার্সিতে যেতে চাই না।
শুভ্র: কিন্তু দেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই তো এসব নিয়ে কথা বলে যাওয়া উচিত। আপনি বললে মানুষ তা শুনবে...
সাকিব: সেটা আপনাদের না বলে জায়গামতো বলে চেঞ্জ করতে পারলে আরও ভালো।
শুভ্র: তা করতে পেরেছেন আজ পর্যন্ত?
সাকিব: ট্রাই করা লাগবে। এটা আমি এতদিনে বুঝতে পেরেছি (হাসি)।
শুভ্র: ঠিক আছে, তাহলে নির্দোষ প্রসঙ্গে যাই। সেই বিকেএসপি থেকে শুরু করে অনেক কোচকেই তো পেয়েছেন। আপনার খেলাটাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন কে?
সাকিব: ফাহিম স্যার (নাজমূল আবেদীন ফাহিম)। মানসিকতা বা চিন্তাধারার কথা যদি বলেন, তাহলে ওগুলো ফাহিম স্যারের কাছ থেকেই বেশির ভাগ এসেছে। স্যার আমার সঙ্গে কথা কম বলতেন। আমি ফাহিম স্যারের কথাগুলো শুনতাম ওই রকম, ‘যেটা বলবেন, সেটাই রাইট’। ভুল হলেও রাইট। রাইট হলে তো রাইটই। ওনার কথাগুলো আমার জীবনে প্রভাব ফেলেছে অনেক বেশি। আন্ডার ফিফটিন থেকেই উনি আমার ডিরেক্ট হেড কোচ। আন্ডার সেভেনটিনের হেড কোচ, আন্ডার নাইনটিনের হেড কোচ, একাডেমির হেড কোচ। যেহেতু আমার বেড়ে ওঠার সময় তিনি আমার হেড কোচ বেশি ছিলেন, পুরোটা সময় উনিই আমাকে গাইড করেছেন। এমন না যে, তিনি আমার খেলার ক্ষেত্রেই শুধু হেল্প করেছেন, মানুষ হিসাবেও আমাকে তৈরি হতে হেল্প করেছেন।
শুভ্র: এরপর যখন প্রফেশনাল ক্রিকেটার হলেন, জাতীয় দলে খেলতে শুরু করলেন, তখন তো হাই প্রোফাইল-লো প্রোফাইল অনেক রকম কোচই পেয়েছেন। ডেভ হোয়াটমোর থেকে শুরু করে এত সব কোচের মধ্যে কারও কোনো টোটকার কথা মনে আছে, যা আপনাকে অনেক সাহায্য করেছে?
সাকিব: ডেভ হোয়াটমোর আমাকে অনেক হেল্প করেছেন। ছোট্ট একটা-দুইটা কথায়। উনি আমার জীবনে দুইটা বড় পরিবর্তন এনেছেন। আমি যখন ন্যাশনাল টিমে ঢুকেছি, তখন যখন তিনি হেড কোচ ছিলেন। চিফ সিলেক্টর ছিলেন ফারুক ভাই। যে-ই আমাকে সিলেক্ট করে থাকুন, করেছেন তো...দুইজনই এগ্রি না করলে তো আমি আর আসতাম না। এরপর আইপিএলে প্রথমবার যখন সুযোগ পেলাম, কেকেআরের (কলকাতা নাইট রাইডার্স) কোচ ছিলেন হোয়াটমোর। আমার লাইফের আরেকটা বড় টার্নিং পয়েন্ট। ওর রিকমেন্ডশন না থাকলে তো আমি ওখানে কখনোই সুযোগ পেতাম না। সেদিক দিয়ে চিন্তা করলে হোয়াটমোরের অনেক বেশি হেল্প ছিল। আর কোচিংয়ের দিক দিয়ে চিন্তা করলে আমার মনে হয় স্টিভ রোডস ভালো ছিলেন, জেমি সিডন্স, হাথুরুসিংহেও খারাপ না।
শুভ্র: কোনো কোচের কথা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট কোনো টেকনিক্যাল পরিবর্তন, যেটা আপনাকে অনেক হেল্প করেছে?
সাকিব: জেমি সিডন্স ব্যাটিংয়ে অনেক হেল্প করেছেন। আর স্টিভ রোডসের সময় বলব, চিন্তা-ভাবনাগুলোকে আরও বেটার গুছিয়ে নিতে শিখেছি। আর হাথুরুসিংহের সময়...মাস্টারের কথা শুনে শুনে যতটুকু ইমপ্রুভ হয়েছে (হাসি)।
শুভ্র: মাস্টার মানে?
সাকিব: মানে একজন টিচার যেমন ধরে ধরে সব শেখান...
শুভ্র: কড়া হেডমাস্টারের মতো...
সাকিব: (হাসি) হ্যাঁ।
শুভ্র: সব কোচেরই তো কিছু না কিছু অবদান থাকে। তবে আমি বলছিলাম সুনির্দিষ্ট কোনো টেকনিক্যাল দিক যদি থেকে থাকে...
সাকিব: ব্যাটিংয়ে জেমি সিডন্স। আমার পুল শট ইমপ্রুভ হওয়াতে তাঁর বড় অবদান বা আমার ব্যাক লিফট। আগে তো আমার ব্যাক লিফট ছিলই না। যখন দাঁড়াতাম, আমি ব্যাট নিচে রাখতাম। এখন ব্যাট আগেই উঠিয়ে ফেলি। এই জিনিসটা ওর করে দেওয়া। এটার কারণেই পুল শটটা বেটার হয়েছে। সময় বেশি পাওয়া যায় এই আর কি।
শুভ্র: বর্তমান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো কি আপনাকে কোনো হেল্প করতে পেরেছেন?
সাকিব: ওর সাথে তো আসলে টেকনিক্যাল জিনিসগুলো নিয়ে অত কথা হয় না। ও বেশি পছন্দ করে না। কিন্তু যেগুলো মনস্তাত্বিক ব্যাপার, সেগুলো নিয়ে কাজ হয়। যেমন ম্যাচ সিনারিও সম্পর্কে...আইডিয়া, ডাটা।
শুভ্র: এসবে কেমন তিনি?
সাকিব: আমার কাছে তো মনে হয় ভালোই আছে।
শুভ্র: ডমিঙ্গোকে নাকি এর মধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য তা প্রকাশ করা হয়নি। এটা আপনি জানেন?
সাকিব: আমার ধারণা এমন কিছু হয় নাই।
শুভ্র: তার মানে ডমিঙ্গো চালিয়ে যাবেন বলে মনে হচ্ছে আপনার?
সাকিব: অন্তত আরও কিছু দিন তো অবশ্যই। কোচ নিয়ে জিজ্ঞেস করছেন বলে বলি, আমার কাছে একটা জিনিস না খুব অদ্ভুত মনে হয়। ভাবটা এমন যে, কোচিং স্টাফ চেঞ্জ করে ফেললেই টিম ভালো খেলবে...এটাই যদি হতো, তাহলে পৃথিবীতে সব দেশ এমন করত যে, যার কাছে সবচেয়ে বেশি টাকা, সে সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়ে বেস্ট কোচকে রাখত আর সারা জীবনই জিতত। ব্যাপারটা তো আসলে তা না। কোচ বলেন, ক্যাপ্টেন বলেন, টিম বলেন-এসব তখনই ভালো, যখন একটা টিম ভালো খেলে টিম হিসেবে, তার আগ পর্যন্ত কেউ ভালো না।
শুভ্র: এভাবেও তো বলা যায়, একটা দল তখনই ভালো হয়, যখন দেশটার ওভারঅল ক্রিকেট ভালো হয়...
সাকিব: হ্যাঁ। পিএসজির কথাই ধরেন না! পিএসজির একটা প্লেয়ারের টাকা দিয়ে ধরেন একটা টিম করা যায় বা দুইটা টিম করা সম্ভব। তাই না? তারপরও কি ওরা অন্যদের সঙ্গে স্ট্রাগল করে না? ড্র করে না? ম্যাচ হেরেও তো যায় অনেক সময়। তাহলে তো ওরা দুনিয়া কিনে ফেলতে পারত, ওদের তো টাকার অভাব নেই। কিন্তু হয় না তো সেটা। অনেক দল আছে যাদের সুপারস্টার নাই, কিন্তু ভালো রেজাল্ট করছে। চেলসি যখন লাস্ট চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতল, কে চিন্তা করেছিল যে ওরা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতবে?
শুভ্র: এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে যে কোচদের পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আপনার চোখে সেরা কে?
সাকিব: রেজাল্টের বিচারে স্টিভ রোডস, হাথুরুসিংহে, ডেভ হোয়াটমোর।
শুভ্র: রেজাল্ট দিয়ে তো আমরাও বিচার করতে পারি। স্ট্যাটস্ তো আছেই...
সাকিব: ডমিঙ্গোর জয়ের পার্সেন্টেজ কিন্তু হাথুরুসিংহের চেয়ে বেশি (হাসি)।
শুভ্র: তাহলে আপনার এক-দুই-তিন নম্বর স্টিভ রোডস, হাথুরুসিংহে, হোয়াটমোর।
সাকিব: হ্যাঁ। তবে হোয়াটমোরের ব্যাপারটা আসলে বলা ঠিক হবে না। তখন আমি একদম ইয়াং, তার ওপর যে টিম ছিল...। এখন যেমন অনেক কিছু বুঝতে পারি, তখন তো আর অত বেশি কিছু বুঝতাম না। সবকিছু খেয়ালও করতাম না, টিম নিয়ে আলোচনা করতে হতো না। তাই এক আর দুই যদি বলি, স্টিভ রোডস আর হাথুরুসিংহে।
শুভ্র: হোয়াটমোর যখন এলেন, তখন তো বাংলাদেশ নিয়মিত হারে। টানা ৪৭টি ওয়ানডেতে জেতেনি বাংলাদেশ। পরিস্থিতি ছিল খুব ভিন্ন।
সাকিব: ঠিক তাই। মোটামুটি একটা দল হওয়ার পর বাকিরা তা পেয়েছে। হোয়াটমোর তো তা পায় নাই।
শুভ্র: কোচদের প্রসঙ্গটা আরেকটা প্রশ্ন দিয়ে শেষ করি। টুকটাক টেকনিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্ট তো সব কোচরাই করেন। এর বাইরে কোনো কোচের এমন কোনো কথা কি মনে আছে, তা জীবন নিয়ে হতে পারে, মাঠের বাইরের প্রস্তুতি নিয়ে বা মাঠে খেলাটাকে কীভাবে অ্যাপ্রোচ করবেন তা নিয়ে...যা শুনে একটু চমকে গিয়েছিলেন বা ধাক্কা খেয়েছিলেন? ফাহিম ভাই বাদে, উনি তো আপনাকে এমন অনেক কিছুই বলেছেন।
সাকিব: কেকেআরে খেলার সময় ট্রেভর বেলিস একটা কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমরা আমাদের হাতে যতটুকু সময় আছে বলে মনে করি, বিশেষ করে নিচের দিকে যারা ব্যাট করে, তাদের জন্য সময়টা আসলে একটু বেশি থাকে। আমরা হয়তো ভাবি মাত্র ১০ বল আছে, তবে এই ১০ বল কিন্তু অনেক। এই ১০ বলের কথা ভেবে কেউ প্রথম বলেই মারতে যায়, তাহলে কিন্তু আউট হওয়ার চান্সটা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু ওই প্লেয়ারটা যদি প্রথম তিন বলে তিনটা সিঙ্গেল নেয় এবং পরের ৭ বলে মারার চেষ্টা করে কিংবা ৫ বলে ৫ রানও করে এবং পরের ৫ বলে মারতে চায়, ওর সাকসেসফুল হওয়ার চান্সটা অনেক বেশি। প্রথম বলে মারতে গিয়ে আউট হয়ে যাওয়ার চাইতে শেষ তিন বলে যদি তিনটা বাউন্ডারিও মারে, তখন খেলাটা অনেক ইজি হয়ে যায় এমন চিন্তা করলে। এমনকি ওয়ানডেতেও। কোনো ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ৬০/৭০, এটাকে ভালো করতে কিন্তু দুইটা বা তিনটা বাউন্ডারিই লাগে। কিন্তু প্রথম বলেই মারতে গেলে কিন্তু আউট হওয়ার চান্স বেশি থাকে।
শুভ্র: সাকিব, এই যে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আমরা পঞ্চপাণ্ডব বানিয়েছি...না, আমরা বানাইনি, আপনারা খেলেই তা হয়েছেন...
সাকিব: আগে ক্লিয়ার করি, শোনেন, প্রথমে এক পাণ্ডব, তারপর বাকি চার-পাঁচ যা নাম দেন, দেন।
শুভ্র: প্রথম পাণ্ডব কে? আপনি?
সাকিব: আর কারও নাম আছে?
শুভ্র: বয়স, ম্যাচুরিটি, অনেক দিন খেলা, ওয়ানডে টিমের ক্যাপ্টেন হিসেবে পারফরম্যান্স সব মিলিয়ে মাশরাফির নামটাও হয়তো আসে।
সাকিব: আমার কাছে তা মনে হয় না।
শুভ্র: যা হোক, যে কারণে আমি পঞ্চপাণ্ডব প্রসঙ্গটা আনলাম, আমার মনে হয়, একতাবদ্ধ থাকলে এই পাঁচজনের ক্ষমতা ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পরের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার। ভারতে রাহুল দ্রাবিড়, শচীন টেন্ডুলকার, বীরেন্দর শেবাগ, ভিভিএস লক্ষ্মণ, সৌরভ গাঙ্গুলী এই পাঁচজন মিলে যা করেছিলেন। ভেতরে ভেতরে ওদেরও নিশ্চয়ই ইগোর সমস্যা ছিল। বড় প্লেয়াররা এক দলে খেললে থাকেই। কিন্তু আপনাদের ওপরে ওপরে খুব খাতির, ভেতরে ভেতরে সমস্যা, এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। আপনি কি একমত?
সাকিব: ওই যে রুবেল মাঝেমধ্যে স্ট্যাটাস দেয় না, এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে তেমন বলতে হয়।
শুভ্র: রুবেলের স্ট্যাটাস মানে?
সাকিব: রুবেল (ফেসবুকে) কিছু স্ট্যাটাস লেখে না...যেমন জাতীয় ফল খেতে গেলে হাতে তেল মাখাতে হয়...(হাসি)। এই জিনিসগুলা আসলে এরকম।
শুভ্র: মারফতি কথা না, সরাসরি উত্তর চাই্, আপনি কি আমার সাথে একমত?
সাকিব: হ্যাঁ, আমি আপনার সঙ্গে একমত।
শুভ্র: অনেকে বলে, এটা শুরু হয়েছে আপনার আর তামিমের সমস্যা দিয়ে। আপনারা দুজন সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিলেন। যেকোনো কারণেই হোক, এখন শুনি, আপনাদের সম্পর্কটাকে টেনেটুনেও ভালো বলা যায় না। যদি বলি, আপনাদের এই সমস্যা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে, আপনার জবাব কী হবে?
সাকিব: আমার তো প্রশ্ন, আপনাদের কেন মনে হবে, আমরাই সবকিছুর দায়িত্ব নেব? দায়িত্ব যাদের হাতে, তারা দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের কাজ খেলা, আমরা খেলব। সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করলে এসবে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
আর এই সব আবেগী কথাবার্তা না বাংলাদেশে খুব সমস্যা। আমার কথা হলো, যার যেটা কাজ সে সেটা করতে পারলেই যথেষ্ট। ধরেন, মুশফিকুর রহিমের কাজ উইকেটকিপিং করা আর ব্যাটিং করা। আমার কাজ হচ্ছে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করা। রিয়াদ ভাইয়ের কাজ হচ্ছে ব্যাটিংয়ে ম্যাচ ফিনিশ করা। যার যে কাজ, সে সেটা করতে পারলেই তো হয়। এত কিছু ভাবার কী আছে? আর সিদ্ধান্ত যাদের নেওয়ার দায়িত্ব, তারা নিক। এখন আপনি আমাকে ডিসিশান মেকারও বানাবেন, চিফ সিলেক্টরও বানাবেন। তাহলে কেমন করে হবে?
শুভ্র: কথাটা ঠিক যে, আমরা হয়তো আপনাদের কাছ থেকে একটু বেশিই আশা করি। আপনাদের কাজ তো আসলে খেলা। আপনাদের খেলার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসকদের। আপনারা খেলার বাইরে ভাববেন না কিছু। আপনাদের বিচার হবে পারফরম্যান্স দিয়ে।
সাকিব: ঠিক। একদম ঠিক।
সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব
সাক্ষাৎকারের তৃতীয় পর্ব