আইসিসি টুর্নামেন্টে সাকিবের `পাঁচে পাঁচ`
উৎপলশুভ্রডটকম
২০ অক্টোবর ২০২১
আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ সর্বশেষ যে পাঁচটি ম্যাচ জিতেছে, পাঁচটিতেই কমন থেকেছে একটি বিষয়। ম্যাচ-সেরার ট্রফি নিতে ডাক পড়েছে সাকিব আল হাসানের। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে শুরু এই ধারা ২০১৯ বিশ্বকাপ হয়ে বজায় রয়েছে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও। ওমানের বিপক্ষে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতিতে `পাঁচে পাঁচ` হয়ে গেছে সাকিবের।
সাদা বলের আইসিসি ইভেন্ট, তা হোক ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ বা চ্যাম্পিয়নস্ ট্রফি, কিংবা ২০ ওভারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ...বাংলাদেশের জন্য একটা ব্যাপার ‘ধ্রুব’ হয়ে থাকছে বছর চারেক ধরে। বাংলাদেশ জিতলে অবধারিতভাবেই ম্যাচ-সেরার পুরস্কার নিতে ডাক পড়বে সাকিব আল হাসানের।
আইসিসির বৈশ্বিক ইভেন্টে বাংলাদেশের সর্বশেষ পাঁচটি জয়েই ম্যাচ-সেরার পুরস্কার উঠেছে সাকিবের হাতে। সর্বশেষটির স্মৃতি তো একদমই টাটকা। কাল রাতে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পরাজয়ে বাংলাদেশের জন্য নকআউট হয়ে উঠেছিল ওমানের বিপক্ষে যে ম্যাচ, সেটিতে। যথারীতি সাকিবের অলরাউন্ড নৈপূণ্য, যথারীতি সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি। ব্যাটিংয়ে ৪২ রান করার পর ২৮ রানে ৩ উইকেট, এর মধ্যে পরপর দুই বল উইকেট নিয়ে জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। সাকিবের পাঁচে পাঁচ-ও হয়ে গেছে এতেই।
ওমান-ম্যাচের আগে এই ‘পাঁচ’-এর সর্বশেষ তিনটি ২০১৯ বিশ্বকাপে। শেষটার কারণে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত যে বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য বিস্মরণযোগ্য হয়ে আছে। তবে সাকিবের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ও আবার সেটিই। আট ম্যাচে ৬০৬ রান আর ১১ উইকেটের যুগলবন্দিতে অনেকের চোখে সাকিবই ছিলেন বিশ্বকাপের প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট। শেষ পর্যন্ত যে পুরস্কার পেয়েছেন কেন উইলিয়ামসন। যেটির কারণ হতে পারে একটাই, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের সাফল্যে অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ভূমিকাও বিবেচিত হওয়া। শুধু ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বিচার করলে তো সাকিবই ছিলেন অবিসংবাদিত সেরা।
সেই বিশ্বকাপেই তিনবার ম্যাচ-সেরার ট্রফি হাতে উঠেছে সাকিবের। বাংলাদেশ যে শুধু ওই তিনটি ম্যাচেই জিতেছিল, এটা তো অনুমান করতেই পারছেন। নইলে যে পাঁচে পাঁচের কথা বলা হলো, তা তো আর হয় না। সময়ের ক্রমানুসারে পিছিয়ে গেলে সাকিবের এই তিনটি ম্যাচ-সেরার পুরস্কার আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে।
ম্যাচ তিনটিতে সাকিবের পারফরম্যান্সও একটু মনে করিয়ে দেওয়া যাক:
১. ৫১ রান ও ৫/২৯, বিপক্ষ আফগানিস্তান।
২. অপরাজিত ১২৪ ও ২/৫৪, বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
৩. ৭৫ রান ও ১/৫০, বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা।
ওমান-ম্যাচের আগে ২০১৯ বিশ্বকাপের তিন...চারটির হিসাব তো পেয়েই গেলেন। বাকি থাকল একটি। সাকিবের পাঁচে পাঁচ-এর সূচনা যেখানে। এটা ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিখ্যাত সেই ম্যাচ। ৩৩ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে সাকিবের ২২৪ রানের পার্টনারশিপ। নিউজিল্যান্ডের ছুঁড়ে দেওয়া ২৬৬ রানের লক্ষ্য ১৬ বল বাকি থাকতেই টপকে যাওয়া। সেঞ্চুরি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহও। দলকে জিতিয়ে অপরাজিত বীরের বেশে মাঠও ছেড়েছিলেন। তারপরও আউট হওয়ার আগেই জয় নিশ্চিত করে দেওয়াতেই হয়তো ম্যাচ-সেরার পুরস্কারটা পেয়েছিলেন সাকিবই।
পাঁচে পাঁচের এই একটিতেই সাকিবের অলরাউন্ড নৈপূণ্যের কোনো ভূমিকা ছিল না। কারণ ১০ ওভার বোলিং করে ৫২ রান দিয়েও সেদিন তিনি কোনো উইকেট পাননি। ১১৪ রানের ইনিংসটির মাহাত্ম্য পরে আরও বেড়ে যায়, যখন এই জয় বাংলাদেশের সেমিফাইনালে উঠে যাওয়ার বাহন হয়ে দাঁড়ায়।
পাঁচে পাঁচকে 'ছয়ে ছয়' করার সুযোগ পাচ্ছেন সাকিব আগামীকালই। পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে হেরে গেলেও বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে ওঠার সম্ভাবনা সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যাবে না। তবে তাতে অনেক 'যদি', 'কিন্তু' মিশে থাকবে। পাপুয়া নিউ গিনির সঙ্গে সমীকরণ মেলানো জয় দিয়েই যা নিশ্চিত করে ফেলা বরং অনেক নিরাপদ।
আর বাংলাদেশ জিতলে ম্যাচ-সেরার ট্রফি নিতে কার ডাক পড়বে, তা তো আপনি জানেনই। সাদা বলে আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট যে ধারা অনুসরণ করে আসছে, তার ব্যতিক্রম হওয়ার আগ পর্যন্ত তো সাকিবের চেহারাই ভেসে উঠবে চোখে, তাই না?