অধিনায়ক মাশরাফির স্মরণীয় পাঁচ ম্যাচ, কষ্টের পাঁচ ম্যাচ

উৎপল শুভ্র

৫ অক্টোবর ২০২১

অধিনায়ক মাশরাফির স্মরণীয় পাঁচ ম্যাচ, কষ্টের পাঁচ ম্যাচ

মাশরাফি বিন মুর্তজা

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টস করতে নেমেই বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। ৭৮টি ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়ার পর হিসাবটা দাাঁড়িয়েছে ৪০টি জয়, ২৮টি পরাজয়। সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া ম্যাচের রাতে উৎপল শুভ্রর অনুরোধে অধিনায়ক হিসেবে স্মরণীয় পাঁচ জয় এবং সবচেয়ে কষ্টের পাঁচ পরাজয় বেছে নেওয়ার কঠিন কাজটা করেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

স্মরণীয় পাঁচ জয়

১. ইংল্যান্ড, অ্যাডিলেড, বিশ্বকাপ ২০১৫

ওটা ডু অর ডাই ম্যাচ ছিল। জানতাম, এরপর নিউজিল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচটা সবচেয়ে কঠিন হবে। কারণ নিউজিল্যান্ডে গিয়ে সবাই হারছিল, এমনকি অস্ট্রেলিয়াও হেরে এসেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য তাই এই ম্যাচটাই বড় সুযোগ ছিল। এ জন্য খুব করে চেয়েছিলাম, যা কিছু ঘটার আজই ঘটুক।বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার পর, অধিনায়ক মাশরাফির সবচেয়ে স্মরণীয় জয়ও এটাই। ছবি: গেটি ইমেজেস

২. ভারত, মিরপুর, ২০১৫

আমাদের দেশে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচ, যেটিতে জিতে আমরা সিরিজই জিতে গেলাম। ওই ম্যাচে মোস্তাফিজই ছিল আমার ট্রাম্পকার্ড। প্রথম ম্যাচে ওকে নামিয়ে ভারতকে চমকে দিয়েছিলাম, দ্বিতীয় ম্যাচেও তা-ই। ভারতের যে টিম ছিল, ওদের সঙ্গে আমাদের অনেক পার্থক্য, সেখানে প্রথম দুই ম্যাচ শেষেই সিরিজ জেতাটা ছিল দারুণ ব্যাপার।

৩. দক্ষিণ আফ্রিকা, মিরপুর, ২০১৫

আমি বলছি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটার কথা। প্রথম ম্যাচে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলাম সিরিজে, তার আগে ২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হারলাম। আমরা আবার পিছিয়ে যাচ্ছি কি না, প্রশ্ন ওঠা শুরু হলো। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০, ভারতের বিপক্ষে ২-১-এতগুলো জয়ের পর আমরা আবার চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে সিরিজ জেতাটা ছিল ভালো একটা টিম কালচার গড়ে ওঠার লক্ষণ।

৪. নিউজিল্যান্ড, কার্ডিফ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০১৭

দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা ছিল। আমাদের কাজ যতটুকু করার ছিল, তাহলো ওদেরকে হারিয়ে পরদিন অন্য ম্যাচের রেজাল্টের জন্য বসে থাকা। ওই পরিস্থিতিতে এই কাজটা করতে পারা…যে অবস্থা থেকে রিয়াদ আর সাকিব ব্যাট করে ম্যাচ জিতিয়েছে, সেটি ছিল অবিশ্বাস্য। আমি মনে করি না, এতে আমার নিজস্ব কোনো কীর্তি আছে। শুধু এতটুকুই, ৪১ ওভারে এসে আমি মোসাদ্দেককে ইউজ করেছিলাম। ওদের রানটা ও বড় করতে দেয়নি। বাদবাকি সব সাকিব আর রিয়াদের কৃতিত্ব।

৫. ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেন্ট কিটস, ২০১৮

সিরিজে ১-১ সমতা নিয়ে গায়ানা থেকে সেন্ট কিটসে এসেছিলাম। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সব সময়ই ডিফিকাল্ট টিম, মাঠ ছোট, সবকিছু বিপক্ষে। টিমের ভেতর একটা ব্যাপার চলছিল, গায়ানায় সিরিজটা শেষ হলেই ভালো হতো, সেন্ট কিটসে আমাদের কোনো চান্স নেই। ম্যাচের দিন সকালে সবাইকে ডেকে প্রায় আধা ঘণ্টা বোঝালাম, আগেই এমন ভাবব কেন? পরে তো ঠিকই জিতলাম।

সবচেয়ে স্মরণীয় ৫টি ম্যাচের কথা বলার পর মনে হচ্ছে, গত এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা বাদ দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। দলে একটার পর একটা ইনজুরি, প্রচণ্ড গরম, দুবাই থেকে আবুধাবিতে গিয়ে খেলা-সবকিছু মিলিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই জয়টা এক নম্বরেও যেতে পারে।

সবচেয়ে কষ্টের পাঁচ পরাজয়

১. নেদারল্যান্ডস, গ্লাসগো, ২০১০

ইংল্যান্ডে জেতার পর নেদারল্যান্ডসের কাছে হারাটা অনেক কষ্টের ছিল। আমার মনে হয় না, কেউ ভেবেছিল এই ম্যাচ হারব। ব্যাটিংয়ে আমাদের আরও রান হওয়ার কথা ছিল, ফিল্ডিংয়ে ক্যাচের পর ক্যাচ ড্রপ হয়েছে...শেষ পর্যন্ত তো হেরেই গেলাম।দৃশ্যটা ২০১১ বিশ্বকাপের, তবে হল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগের বছরের ম্যাচের সঙ্গে মানিয়ে যায় খুব। ছবি: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

২. ভারত, মিরপুর, ২০১৫

সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ। প্রথম দুই ম্যাচে জিতেছিলাম। তৃতীয়টা হেরে গেলাম শুধু টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং না করার ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। কেন ওই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল, সেই ডিটেলসে যাব না…তবে এখনো আফসোস হয়, সিরিজটা ৩-০ হতে পারত।

৩. দক্ষিণ আফ্রিকা, মিরপুর, ২০১৫ 

সিরিজের প্রথম ওয়ানডে...আবারও ভুল সিদ্ধান্ত। বৃষ্টির কারণে উইকেট দুই দিন ঢাকা ছিল। এরপরও আমরা টসে জিতে ব্যাটিং করলাম। কেন, এখানেও ডিটেলসে যাব না।

৪. ভারত, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সেমিফাইনাল ২০১৭

২৮ ওভারে ২ উইকেটে ১৫৪। তামিম-মুশফিক ব্যাট করছে, হঠাৎ ব্যাটিং ধস! ৩২০-৩৩০ রান হওয়ার কথা। অনিয়মিত এক বোলার এসে উইকেট নিয়ে গেল-কেদার যাদব!

৫. ভারত, এশিয়া কাপ ফাইনাল ২০১৮

সবকিছু ছাড়িয়ে এবারের এশিয়া কাপ ফাইনাল। পাঁচে রাখছি, তবে আসলে এক নম্বরেই থাকতে পারে। দুঃখটা অনেক বেশি লেগেছে। লিটনের এমন একটা হান্ড্রেড, অবিশ্বাস্য একটা হান্ড্রেড...এমন দারুণ একটা শুরু, আর ৩২ রান করে মিরাজের কিনা ক্র্যাম্প হয়ে গেল। মিরাজ যেমন ফিট, তাতে তো হাত ক্র্যাম্প করার কথা না। যে কারণে ওর বোলিংটাও করতে পারল না। এরপরও রুবেলের দুর্দান্ত বোলিং, ম্যাচ একদম ক্লোজ...

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×