তাহলে টসে জিতে আগে ব্যাটিং কেন?
উৎপলশুভ্রডটকম
৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম ম্যাচটাতে ছিল রানের জন্য সংগ্রাম। টি-টোয়েন্টির উত্তেজনার লেশ মাত্রও যাতে ছিল না। শেষ বলে নিষ্পত্তি হওয়া দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ২-০-তে এগিয়ে যাওয়ার পর সন্দেহ কি, সব কিছুই ভালো দেখবেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তবে ফ্লাডলাইটের আলোয় ব্যাটিং করাটা তুলনামূলক সহজ হয়ে গেছে বলায় প্রশ্ন কিন্তু একটা ওঠেই।
যাক, এই ম্যাচটা অন্তত প্রশ্ন তুলবে না।
আগের কয়েক ম্যাচ ধরে যা হচ্ছিল, তাতে মিরপুরের উইকেটে হওয়া ২০ ওভারের ম্যাচগুলোকে আলাদা সংস্করণের মর্যাদা দেওয়া উচিত কি না, এমন সরস প্রশ্নও তুলেছিলেন অনেকে। এই ম্যাচটা অন্তত এসব জিজ্ঞাসা থেকে মুক্ত। এমনিতে ১৪২ রানের লক্ষ্য টি-টোয়েন্টিতে লো-স্কোরিং ম্যাচের কাতারে পড়লেও শেরে বাংলার উইকেটে এই রান তো রীতিমতো 'এভারেস্ট'। নিউজিল্যান্ডও সেই রান পাহাড়ে চড়ার চেষ্টা করে গেল শেষ ওভার পর্যন্ত। যদিও ব্যবধান থেকে গেল ৪ রানের।
তবে মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই কিউইদের ব্যাটিংয়ের এমন উন্নতি প্রশংসাই দাবি করে। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে এসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অবশ্য বললেন, পরে ব্যাট করাটাও সাহায্য করেছে নিউজিল্যান্ডকে। প্রথম ইনিংসে উইকেটে স্পিন ধরলেও ফ্লাডলাইটের আলোয় ব্যাট করা সহজই হয়ে গিয়েছিল কিছুটা। সেই সহায়তা কাজে লাগিয়ে নিউজিল্যান্ড ম্যাচটা টেনে নিতে পেরেছে শেষ বল পর্যন্ত। মাহমুদউল্লাহর কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে একটা প্রশ্ন কিন্তু অবধারিতভাবেই ওঠে। এটা কি শুধুই এই ম্যাচের জন্য ব্যতিক্রমী কোনো ঘটনা? তা যদি না হয়, তাহলে টসে জিতে কেন প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত?
ম্যাচের রোমাঞ্চ শেষ বল অব্দি জিইয়ে রাখার কিছুটা কৃতিত্ব (!) তো মোস্তাফিজুর রহমানও পাবেন। পুরো ম্যাচে অফ কাটারে নাস্তানাবুদ করে দেওয়া মোস্তাফিজ ইনিংস শেষের আগের বলটায় করতে চেয়েছিলেন ব্যাক অব দ্য হ্যান্ড স্লোয়ার। ভাবনায় কোনো গলদ না থাকলেও বিপত্তি ঘটেছিল প্রয়োগে। হাত থেকে পিছলে গিয়ে বলটা শুধু কোমর-উচ্চতার অনেক ওপরেই ওঠেনি, টম ল্যাথামের ব্যাটের ছোঁয়া লেগে ডিপ ফাইন লেগ দিয়ে চারও হয়ে যায়। ২ বলে ১৩ রানের সমীকরণটা তখন ২ বলে ৮। তার ওপর প্রথম বলটা 'ফ্রি হিট', ব্যাটসম্যানের হৃৎস্পন্দন দ্রুত করে দেওয়া আউট হওয়ার ভয় দূর করে দিয়ে যা ইচ্ছা মতো ব্যাট চালানোর ছাড়পত্র। স্ট্রাইকে আছেন বলতে গেলে ইনিংসের প্রায় পুরোটা সময় ব্যাটিং করা টম ল্যাথাম। ফ্রি হিট সম্বলিত দুই বলে চার রান করে ফেলাকে কিভাবে অসম্ভব মনে করবেন!
মাহমুদউল্লাহকেও কি তখন পেয়ে বসেছিল ম্যাচ হেরে যাওয়ার শঙ্কা? তখন যা-ই মনে হয়ে থাকুক, ম্যাচ শেষে জয় পেয়ে যাওয়ার পর তিনি জানালেন, মোস্তাফিজের ওপর তাঁর আস্থায় একটুও চিড় ধরেনি, 'মোস্তাফিজ নিজেকে ভালোভাবেই সামলে রাখতে পেরেছিল। ও ভালোভাবে শেষ করতে পারবে, এই বিশ্বাসটা ছিল এবং ও সেটাই করেছে।'
শেষের এই নাটকীয়তার একটা ভালো দিকও দেখছেন অধিনায়ক। হঠাৎই চাপে পড়ে যাওয়ার পরও ভালোভাবে শেষ করতে পারাটা মোস্তাফিজের মনেও একটু বাড়তি আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি যোগ করবে। টি-টোয়েন্টিতে এমন তো কতইহয়, ১২ বলে ব্যাটসম্যানকে করতে হবে ২৪ রান, কিংবা বোলারকে আটকে রাখতে হবে অল্প রানে। সেই চ্যালেঞ্জটা জিততে পারার অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করেই পক্ষে কাজ করে পরের ম্যাচগুলোতে।
মোস্তাফিজ যদি শেষটা সুন্দর করার কৃতিত্ব পান, তো শুরুর সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন মাহেদি হাসান। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। মাহমুদউল্লাহর মুখেও তাই মাহেদির প্রশংসা, 'মাহেদি খুব ভালো বোলিং করছে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দিচ্ছে আমাদের।'
মাহমুদউল্লাহকে তৃপ্তি দেওয়ার কথা ওপেনারদের ব্যাটিংও। আট ইনিংস পর উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ পেরিয়েছে বাংলাদেশ, যদিও নাঈম শেখের ৩৯ বলে ৩৯ রানের সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তবে মাহমুদউল্লাহ খুশি এই ব্যাটিংয়েই এবং সেটা উইকেটের চরিত্রের কারণেই, ‘এই উইকেটে নতুন বলে ব্যাট করা খুব কঠিন। তখন বলে সিম শক্ত থাকে, বেশ বাউন্স হয়, কিছু বল পিছলে যায়, কিছু বল খুব শার্প টার্ন করে।'
উইকেটের চ্যালেঞ্জ সামলে, ফিল্ডিংয়ের ফাঁক-ফোকড় বের করে ৫৯ রানের জুটি গড়েছেন বলে বরং ওপেনারদের প্রশংসা করার বিরল সুযোগ নিতে চাইলেন মাহমুদউল্লাহ, 'আমার মনে হয়, নাঈম ও লিটন খুব ভালো ব্যাটিং করেছে। পাওয়ার-প্লেতে আমাদের যেমন শুরু দরকার ছিল, ওরা ভালোভাবেই সেটা এনে দিয়েছে।' পাওয়ার প্লের ছয় ওভার বিনা উইকেটে ৩৬...মিরপুরে আগের ছয়টি ম্যাচ মনে রাখলে তো এটা স্বপ্নের সূচনা।
ওই পার্টনারশিপটাও অবশ্য স্কোরটা ১৪১ পর্যন্ত যেতে পারত না, যদি ব্যাট হাতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও না দাঁড়িয়ে না যেতেন। ৩২ বলে অপরাজিত ৩৭ রানের ইনিংসটা তাঁকে পাইয়ে দিয়েছে ম্যাচ-সেরার পুরস্কারও। তবে মাহমুদউল্লাহ খুশি দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরেই।
টি-টোয়েন্টিতে এর আগে এক বছরে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ৭টি ম্যাচ জিতেছিল ২০১৬ সালে। ২০২১ সালে এখনো বাকি অন্তত ৬ ম্যাচ, বাংলাদেশ এরই মধ্যে জিতে ফেলেছে ৮ ম্যাচ, র্যাঙ্কিংয়ে উঠে এসেছে ৭ নম্বরে। আগের ম্যাচ শেষেই সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, দিন শেষে জয়টাই আসল কথা। এদিনও মাহমুদউল্লাহ যা বললেন, তা শুনে মনে হওয়াই স্বাভাবিক, বাংলাদেশ বোধ হয় টিম মিটিংয়ে আলোচনা করে এটাকেই বড় করে দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত জয়টাই বড় কথা, তা সেটি যেভাবেই আসুক না কেন!