এমন টি-টোয়েন্টি সিরিজ কেউ দেখেনি আগে
উৎপলশুভ্রডটকম
১০ আগস্ট ২০২১
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ শেষ হলো বাংলাদেশের ৪-১ ব্যবধানে জয়ে। সিরিজে রেকর্ডও হলো অনেক এবং বেশির ভাগ রেকর্ডের শিরোনামই অবশ্য `সবচেয়ে কম` আর `সর্বনিম্ন` দিয়ে শুরু হচ্ছে।
ব্যাট চলবে সপাটে, মাঠে নামবে চার-ছক্কার ফুলঝুরি, মাঠের পাশে ক্ষণে ক্ষণেই জ্বলে উঠবে আলোর রোশনাই, দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য থাকবে চিয়ার লিডারদের বন্দোবস্ত… আদর্শ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বলতে এমন দৃশ্যগুলোই তো ভেসে ওঠে চোখের সামনে। অথচ বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে অন্যরকম টি-টোয়েন্টিই দেখল সবাই। করোনার থাবায় মাঠে দর্শক উপস্থিতি নিষিদ্ধ অনেক দিন, ছিল না আলোর ঝলকানিও, মাঠের ক্রিকেট দিয়েও এত 'নেই, নেই' শোর ভুলিয়ে দেওয়া গেল কি?
একবার পেছনে তাকিয়েই দেখুন না: প্রথম ম্যাচে বহু কষ্টেসৃষ্টে রানটা ১৩০ পার করল বাংলাদেশ, এবং ওই পুঁজিতেই বাংলাদেশ জয় পেল ২৩ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ১২১ রানের লক্ষ্য দাঁড় করিয়েও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ছিল বেশ ভালোভাবেই। নুরুল হাসান সোহান আর আফিফ হোসেন ধ্রুব ষষ্ঠ উইকেটে ৬৬ রানের জুটি না গড়লে সিরিজে সমতা আসতে পারত ওই ম্যাচেই। তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করেছিল আবার। প্রথম ম্যাচের চেয়ে রান কমল চারটি, আগের চাইতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইও হলো, তবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশই জিতল ৮ রানে।
অবস্থা তো এমনও দাঁড়াল, চতুর্থ ম্যাচে গিয়ে বাংলাদেশ থেমে গেল ১০৪ তুলতেই, এবং এ রান নিয়েই জয়ের আশাটা খুব স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছিল বিরতিতে। বাংলাদেশ ম্যাচটা হেরে গিয়েছিল বটে, তবে এর আগেই অস্ট্রেলিয়াকে ১৯ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করিয়েছিল বলে আফসোসও জাগল-- ড্যান ক্রিস্টিয়ান সাকিবের ওই ওভারটায় পাঁচ ছক্কা না হাঁকালে তো ফলটা নিশ্চিত করেই বদলাত।
সিরিজের শেষ ম্যাচে এসেও গল্পটা একই রইল। বাংলাদেশ শুরুর ৩ ওভারেই ৩৩ তুলে ফেলার পরও অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা বাংলাদেশকে আটকে দিলেন ১২২ রানে, যা দেখে অস্ট্রেলিয়া উইকেটের সুরটা ধরে ফেলেছে বলেই মনে হচ্ছিল। তবে দ্বিতীয় ইনিংস মাঠে গড়াতেই বোঝা গেল, ওই কাজটা কেবল বোলাররাই পেরেছেন। বাংলাদেশের রানটাই হিমালয় হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের সামনে। ১৪ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে গেল মাত্র ৬২ রানে, যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তাদের আগের সর্বনিম্ন ইনিংসের চেয়েও ১৭ রান কম।
সিরিজে সব মিলিয়ে রান ১০৬২। টেস্ট খেলুড়ে দুটি দলের মধ্যে ৫ ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সবচেয়ে কম রানের রেকর্ড এখন এটাই। আগের রেকর্ডটা অবশ্য বেশি নয়, মাত্র মাস দেড়েক পুরনো। গড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা। সেটিও ৪২৬ বেশি।
তা এমন সর্বনিম্নর রেকর্ডের বন্যাই তো বয়ে গেল এই সিরিজে। ১০ ইনিংসে ১৩০-এর ওপারে রানটা উঠল গেল একবার, ৫ ম্যাচের সিরিজেও মাত্র ৬৮ চার আর ৩০ ছয়, ওভারপ্রতি রান তোলার হারও যখন ৫.৮৫...তখন সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক।
সিরিজে সব মিলিয়ে রান ১০৬২। টেস্ট খেলুড়ে দুটি দলের মধ্যে ৫ ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সবচেয়ে কম রানের রেকর্ড এখন এটাই। আগের রেকর্ডটা অবশ্য বেশি নয়, মাত্র মাস দেড়েক পুরনো। গড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই সিরিজে রান উঠেছিল ১৪৮৮, বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের চেয়ে ৪২৬ বেশি।
এবারের সিরিজে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা অনেক কষ্টে স্কোরটা টেনে নিয়ে গিয়েছেন ১২০-এর ওপারে। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের ৭টি স্কোরই ছিল ১৬০-এর বেশি, উইকেট প্রতি রান উঠেছিল ২২.২০ করে। বিপরীতে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ব্যাটিং গড় ১৩.৯৭, কমপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে সবচেয়ে কম।
এবারের সিরিজে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ফিফটি করেছেন কেবল দুজন ব্যাটসম্যান। দুটিই তৃতীয় ম্যাচে, মাহমুদউল্লাহ ও মিচেল মার্শের ব্যাটে। কমপক্ষে পাঁচ ম্যাচ খেলা হয়েছে, এমন টুর্নামেন্টে এর চেয়েও কম অর্ধ শতক দেখা গিয়েছে একবার। ২০১৯ সালে সেন্ট্রাল আমেরিকান ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপে ১১ ম্যাচ খেলেও ফিফটি পেয়েছিলেন কেবল ইউসুফ ইব্রাহিম।
ব্যাটসম্যানদের যখন এমন সর্বনাশ, বোলারদের পৌষ মাস হওয়াটাই স্বাভাবিক। সিরিজে ওভারপ্রতি রান তোলার হার ছিল ৫.৮৫। পাঁচ ম্যাচ তো বহু দূরের কথা, তিন ম্যাচের সিরিজেও সবচেয়ে কম রান রেটের রেকর্ড এটাই। ব্যাটসম্যানরা প্রতি ১০০ বলে রান তুলেছেন ৯২.১৮ করে। ক্রিকেটের পেছনের কাতারের দলগুলোকে হিসাবের বাইরে রাখলে এটাও সর্বনিম্নই।
উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য দুরূহ তো ছিলই, মিরপুরের ভারি আউটফিল্ডও ভূমিকা রেখেছে রান কম হওয়ার পেছনে। পাঁচ ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এত কম চারও এর আগে দেখেনি ক্রিকেট। চার ম্যাচের সিরিজেই তো এর চেয়ে কম চার দেখা গিয়েছে মাত্র দুবার এবং দুটো ঘটনাই এ বছরের। বলকান কাপে বুলগেরিয়া-রোমানিয়া চার ম্যাচে ৪ মেরেছিল ৫৬টি, পাকিস্তান-ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৩০ কম।
সামনেই আসছে নিউজিল্যান্ড। দেখা যাক, সেখানে এই রেকর্ডটাও নতুন করে লেখা হয় কি না।