বাংলাদেশ ছাড়া যে `হ্যাটট্রিক` শুধু পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার
শততম টেস্ট-ওয়ানডে-টি টোয়েন্টিতে জয়
উৎপল শুভ্র
২৩ জুলাই ২০২১
এর আগে নিজেদের শততম ওয়ানডেতে জিতেছে বাংলাদেশ, শততম টেস্টেও। এর সঙ্গে আজ যোগ হলো শততম টি-টোয়েন্টিতে জয়ও। তিন ফরম্যাটেই নিজেদের শততম ম্যাচে জয়ের যে `হ্যাটট্রিক` আছে আর শুধু দুটি দলের। পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার। শততম টেস্ট ও ওয়ানডেতে জয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যা করতে দেয়নি বাংলাদেশই।
সাকিব আল হাসান খেলেছেন, আবদুর রাজ্জাক দেখেছেন মাঠের বাইরে থেকে। ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর খুলনার সেই ম্যাচে যাঁরা খেলেছেন, তাঁদের মধ্যে এই দুজনই শুধু ছিলেন আজ হারারেতে। খুলনার ওই ম্যাচটাও ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেই জিম্বাবুয়ে দলের কেউই আজ ছিলেন না। ব্রেন্ডন টেলর থাকতে পারতেন। তবে তাঁকে নাকি ‘বিশ্রাম’ দেওয়া হয়েছে।
তা প্রায় ১৫ বছর আগের খুলনার ওই ম্যাচ নিয়ে টানাটানি কেন? কারণ তো আছেই। খুলনার ওই ম্যাচটা ছিল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অভিষেক। শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে প্রথম ম্যাচটার কথা তো মনে পড়তেই পারে। তার ওপর ঘটনাচক্রে প্রতিপক্ষ যেখানে একই দল।
হারারেতে শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ এক ওভার বাকি থাকতেই ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে, এটা তো মনে হয় আপনি জানেনই। এই জয়ে ব্যতিক্রমী একটা হ্যাটট্রিকও কিন্তু হয়ে গেল। শততম ম্যাচ জয়ের হ্যাটট্রিক।
এর আগে নিজেদের শততম ওয়ানডেতে জিতেছে বাংলাদেশ, শততম টেস্টেও, এর সঙ্গে যোগ হলো শততম টি-টোয়েন্টিতে জয়ও।
২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোতে বাংলাদেশ শততম টেস্টে জয় পাওয়ার পর রেকর্ড ঘেঁটে দেখেছিলাম, এর আগে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানেরও শততম টেস্ট ও ওয়ানডেতে জয়ের যুগলবন্দি আছে। এই তিন দলও কি বাংলাদেশের মতো শততম ম্যাচে জয়ের হ্যাটট্রিক করেছে?
এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে তিন দলের শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ফিরে যেতে হয়। না, বাংলাদেশ একা না; পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ারও আছে এই ‘হ্যাটট্রিক’। পাকিস্তানের শততম টি-টোয়েন্টিটি ছিল আবার ঢাকাতেই, যেটিতে তাদের না জিতে উপায় ছিল না। কারণ এশিয়া কাপের সেই ম্যাচে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।
অস্ট্রেলিয়া শততম টি-টোয়েন্টি খেলেছে এর প্রায় দুই বছর পর। বাংলাদেশের মতো তাদেরও প্রথম আর শততম টি-টোয়েন্টির প্রতিপক্ষ মিলে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার মিলটা অবশ্য বাংলাদেশের চেয়ে এক কাঠি সরেস। প্রতিপক্ষ তো মিলেছেই, সঙ্গে ভেন্যুও। তারিখটাও তো প্রায় মিলেই গিয়েছিল। ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি অকল্যান্ডের যে ইডেন পার্কে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের তো বটেই, ইতিহাসেরও প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিটি খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া; ২০১৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি একই মাঠে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে শততম টি-টোয়েন্টি।
শততম টেস্ট ও শততম ওয়ানডেতে জয় পাওয়া আরেক দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে শততম টি-টোয়েন্টিতে সেই সাফল্যের পুনরাবৃত্তি করতে পারেনি, এতে বাংলাদেশের ভূমিকা আছে। ২০১৮ সালে ফ্লোরিডার লডারহিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজর শততম টি-টোয়েন্টিতে তাদের হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশই।
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ আমেরিকায় কেন, এই প্রশ্নের উত্তর আপনি জানেন বলেই অনুমান করি। তারপরও মনে করিয়ে দিই, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ট্যুরে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচ হয়েছিল ফ্লোরিডায়। যার দুটিতেই জিতে সেন্ট কিটসে প্রথম ম্যাচে হেরে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিতে নিয়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শততম টি-টোয়েন্টিটা জিতেই সিরিজে সমতা এনেছিল বাংলাদেশ। পরদিনই সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মাত্র ১৫৫ রান করেও জিতেছিল ১৯ রানে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য হিসেবেও এর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন।
১২ ম্যাচের আর একটা একটু এদিক-ওদিক হলেই বলা যেত, বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমানে সমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২ ম্যাচে বাংলাদেশের ৫টি জয়, পরাজয় ৭টিতে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড দেখলে এটা একটু বিস্ময়ই জাগায়। ১০০ ম্যাচে মাত্র ৩৩টি জয়, যার বেশির ভাগ ‘ছোট’ দলের বিপক্ষে। টেস্ট প্লেয়িং দেশগুলোর মধ্যে অনুমিতভাবেই সবচেয়ে বেশি জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। ১৪ ম্যাচ খেলে ১০টি। এরপরই কি না টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ‘রাজা’ ওয়েস্ট ইন্ডিজ! যাদের বিপক্ষে ১২ ম্যাচের আর একটা একটু এদিক-ওদিক হলেই বলা যেত, বাংলাদেশ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সমানে সমান। এই কথার অর্থ তো বুঝেই ফেলেছেন আশা করি। তারপরও চিন্তা করার ঝামেলা থেকে আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিচ্ছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২ ম্যাচে বাংলাদেশের ৫টি জয়, পরাজয় ৭টিতে।
বড় দলগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ডকে এখনো টি-টোয়েন্টিতে হারাতেই পারেনি বাংলাদেশ। ভারতকেও ১১ ম্যাচে হারিয়েছে মাত্র একবার। পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি ম্যাচ বেশি খেলে জয়ের সংখ্যা দ্বিগুণ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বরং সে তুলনায় সাফল্য বেশি। ১১ ম্যাচে ৪টি জয়। এর মধ্যে দুটি আবার সর্বশেষ দুই ম্যাচে। তা-ও আবার শ্রীলঙ্কার মাটিতেই। ২০১৮ সালে ঘটনাবহুল, বিতর্কিত সেই নিদাহাস ট্রফিতে।
শততম ম্যাচে জয়ের হ্যাটট্রিক হয়েছে বটে, তবে শততম টি-টোয়েন্টির জয়টা অবশ্যই আগের দুটির মতো মহিমান্বিত নয়। ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শততম ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে জয়টা সেই সময়ের বিবেচনায় রীতিমতো অভাবিত ছিল। শততম টেস্টে জয়টাও তো তা-ই। কেন, তার উত্তর পরিসংখ্যান দিয়েই দিই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২২ টেস্টে বাংলাদেশের ওই একটাই জয়। এর সঙ্গে যখন যোগ করবেন, টেস্ট ম্যাচটা হয়েছিল শ্রীলঙ্কার মাটিতে, তখন আরও বেড়ে যাবে সেটির মহিমা।
শততম টি-টোয়েন্টিতে জয়টাতে এমন বাড়তি কোনো তৃপ্তি না থাকতে পারে, তবে ব্যতিক্রমী ওই ‘হ্যাটট্রিক’-এর জন্য হলেও তা মনে রাখতে পারেন। এমন একটা কীর্তি, যা অস্ট্রেলিয়া আর পাকিস্তান ছাড়া আর কোনো দেশের নেই, আর কী নিয়ে বাংলাদেশ এমন বলতে পারে, বলুন!