অভিষেকেই নিজেকে চিনিয়েছিলেন নাসির

উৎপল শুভ্র

২২ জুন ২০২১

অভিষেকেই নিজেকে চিনিয়েছিলেন নাসির

নাসির হোসেন। এটা ওয়ানডে অভিষেক ম্যাচের ছবি নয়, এর কয়েক মাস পরে পাকিস্তান সিরিজের

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল `দ্য ফিনিশার`। ম্যাচ শেষ করেই যে আসতেন তিনি। পথ হারিয়ে ফেলা সেই নাসির হোসেনের আর্ন্তর্জাতিক অভিষেকের কথা মনে করিয়ে দিতেই দশ বছরেরও আগের এই ম্যাচ রিপোর্ট খুঁজে বের করা। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই অভিষেকেই চিনিয়ে দিয়েছিলেন নিজেকে। ৫৮ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আট নম্বরে নেমে খেলেছিলেন ৬৩ রানের ইনিংস।

প্রথম প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০১১। প্রথম আলো।

বাংলাদেশ: ৪৭.৩ ওভারে ১৮৮। জিম্বাবুয়ে: ৪৪.১ ওভারে ১৯১/৩। ফল: জিম্বাবুয়ে ৭ উইকেটে জয়ী

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির আশারও তাহলে সমাধি হয়ে গেল!

সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারার পর বিপুল বিক্রমে ফিরে আসা এত দিন বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের সবচেয়ে পরিচিত গল্প হয়ে ছিল। বিপুল বিক্রম! উল্টো দ্বিতীয় ম্যাচে আরও বেশি ছন্নছাড়া বাংলাদেশ। পরাজয়ের ব্যবধান আরও বড়। দুঃস্বপ্নের এই সফরে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের মানসম্মান নিয়েই টানাটানি!

আবারও এক ইনিংস শেষেই ম্যাচ শেষ! ব্যাটসম্যানরা প্রমাণ করলেন, প্রথম ম্যাচের ব্যর্থতা কোনো দুর্ঘটনা ছিল না। তাঁরা ব্যাটিং ব্যাপারটা স্রেফ ভুলে গেছেন। প্রথম ম্যাচের ভুল থেকে শিখে উন্নতির প্রতিশ্রুতি ছিল। হ্যাঁ, চারটি রান বেশি করাকে যদি উন্নতি বলেন, তাহলে উন্নতি কিছুটা হয়েছে বটে!

আশরাফুল যেমন বলতে পারেন, প্রথম ম্যাচের চেয়ে তিন গুণ রান (৬) করেছি। শাহরিয়ার নাফীস দুই ম্যাচেই ১৪ করাটাকে দেখাতে পারেন ধারাবাহিকতার প্রমাণ হিসেবে। ইমরুল দুই বছর আগে জিম্বাবুয়েতে এসে পুরো সিরিজ বাইরে বসে ছিলেন। এবার দুই ম্যাচে ১১ ও ৮ রান করার পর তাঁর মনে হতেই পারে, ব্যাপারটা খুব একটা মন্দ ছিল না! মাহমুদউল্লাহ প্রথম ম্যাচে জঘন্য শট খেলে আউট হয়েছিলেন। কাল উতসেয়ার সোজা বলে ধোঁকা খেয়ে কট বিহাইন্ড। রানের হিসাবে আরও অবনতি—সেদিন ৫, এদিন ৩।

আর তামিম ইকবাল? ব্রায়ান ভিটরি সম্পর্কে ‘অর্ডিনারি’ মন্তব্যটা যে উদ্দেশ্যেই করে থাকুন, তা করে নিজেই নিজের ওপর চাপটা বাড়িয়ে নিয়েছেন। পরপর দুই ম্যাচে ভিটরির বলেই আউট হওয়ার পর সেই চাপ এখন পাহাড়প্রমাণ। একটু রান-টান করে আউট হলেও হতো। দুই ম্যাচে তো করলেন ৪ ও ৩ রান। গত এক-দেড় বছর দলের সেরা ব্যাটসম্যানের পারফরম্যান্সই যেন এই সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।

দুই ম্যাচে একই পাণ্ডুলিপি অনুসরণ করে গেল বাংলাদেশের ব্যাটিং। টপ-অর্ডার ধসে পড়ার পর কারও একটু হাল ধরা। যখন মানসম্মান বাঁচানোটাই বড় লক্ষ্য। প্রথম ম্যাচে সাকিব ও মুশফিকুর কাজটা করেছিলেন। কাল সাকিব ও রাজ্জাকের সামান্য সহযোগিতা নিয়ে তা করলেন অভিষিক্ত নাসির হোসেন। জীবনের প্রথম ওয়ানডেতে যখন ব্যাটিং করতে নামলেন,স্কোরবোর্ডে তখন ৬ উইকেটে ৫৮। আট নম্বরে নেমে পরিণত ব্যাটসম্যানের মতো খেলে ৬৩ রান। অন্ধকারে আলোর রেখা বলতেই পারেন। তবে অন্ধকার এখানে এমনই নিকষ যে, এই আলোর রেখা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে হতে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম।

ওয়ানডে অভিষেকেই হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন, সেঞ্চুরি সপ্তম ইনিংসেই। এই ছবিটা ২০১১ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে প্রথম সেঞ্চুরির পর

সাকিব যতক্ষণ খেলছিলেন, যথারীতি খুব স্বচ্ছন্দ বলে মনে হচ্ছিল। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁকে দেখেই একটু ভরসা পাওয়া যাচ্ছে, অথচ তিনি নামলেন কিনা ৬ নম্বরে! ১৮৮ পর্যন্ত যাওয়ায় রাজ্জাকেরও বড় অবদান। ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ ৩৫ রানের ইনিংস। নাসিরের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে ৬৫ রানের জুটিতে ওভারে সোয়া ছয়েরও বেশি রান এসেছে তাঁর ঝোড়ো ইনিংসটির কারণেই। তবে দলে রাজ্জাকের যে মূল ভূমিকা, সেটি এখন গভীর চিন্তার কারণ। বোলিং অনেক দিনই ধারহীন। কাল তো প্রথম ওভারে ১০ রান দেওয়ার পর আর বলই পেলেন না।

তবে এটাও সত্যি, এত ছোট স্কোর নিয়ে বোলিং করতে হলে বোলারদের বিচারটা ঠিক হয় না। রাজ্জাককে এখনো বড় হুমকি বলেই মানে জিম্বাবুয়ে। টার্গেটটা কম বলেই শুরুতেই রাজ্জাকের ওপর এমন চড়াও হতে পারলেন জিম্বাবুইয়ান ব্যাটসম্যানরা। তৃতীয় ওভারেই ব্রেন্ডন টেলরকে হারানোটাও এ কারণেই একদমই গায়ে লাগেনি জিম্বাবুয়ের। প্রথম ম্যাচের মতোই সিবান্দা ও মাসাকাদজার জুটিটাই ম্যাচে অভাবিত কিছু ঘটার সম্ভাবনা মুছে দিয়েছে। 

ম্যাচ ৪৫তম ওভারে শেষ হয়েছে সত্যি, তবে এর অনেক আগেই তো তা একেবারে ছেলেখেলায় পরিণত। সেটি আরও বেশি ছেলেখেলা মনে হলো বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের কারণে। মাহমুদউল্লাহ ক্যাচ ছাড়লেন। একবার পায়ের ফাঁক দিয়েই বল গলে গেল। ওভার থ্রো থেকে ৭ রান হয়ে যাওয়ার মতো বিরল ঘটনাও দেখতে হলো। হারতে হারতে আত্মবিশ্বাস তলানিতে চলে গেলেই একটা আন্তর্জাতিক দল এমন সব শিশুতোষ ভুল করে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির একটা আশা চাইলে এখনো করতে পারেন। ২০০৫ সালে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই প্রথম দুই ম্যাচে হারার পর পরের তিন ম্যাচে ফিরে এসে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে এই সফরের চার ম্যাচে বাংলাদেশ যা দেখাল, সেই আশা করলে আপনাকে বলতে হবে পৃথিবীর শেষ আশাবাদী।

আরও পড়ুন:

অন্ধকারে আলো হয়ে এলেন নাসির

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×