২০০৬ বিশ্বকাপের আগে অমোঘ ভবিষ্যদ্বাণী

ব্রাজিল না হলে কে? ইতালি?

উৎপল শুভ্র

২৭ জানুয়ারি ২০২১

ব্রাজিল না হলে কে? ইতালি?

২০০৬ বিশ্বকাপের আগে সবার কথাবার্তায় মনে হচ্ছিল, ট্রফিটা বোধ হয় ব্রাজিল জিতেই গেছে! কিন্তু বিশ্বকাপ কি আর তা মেনে চলে? সম্ভাব্য বিশ্বকাপজয়ী নিয়ে লিখতে গিয়ে তাই চলে এসেছিল ইতালির নামও। যা আবার মিলেও গিয়েছিল!

প্রথম প্রকাশ: ৯ জুলাই, ২০০৬। প্রথম আলো।

পেশাগত জীবনে একটা ব্যাপার আমি অবশ্যপালনীয় বলে মেনে এসেছি। খেলা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা থেকে সব সময়ই শত হস্ত দূরে থেকেছি। নির্দিষ্ট কোনো ম্যাচ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করায় তাও সাহস করা যায়। কিন্তু অঘটনপটিয়সী বিশ্বকাপ কে জিতবে, এই ভবিষ্যদ্বাণী করা! যারা করতে পারেন, তারা মহান। জেনেশুনে হাঁড়িকাঠে গলা পেতে দেওয়ার মধ্যে আমি কোনো বীরত্ব দেখি না।

কিন্তু এত বুঝেও লাভটা কী হলো! তা-ই তো দিতে হচ্ছে। বিশ্বকাপ বিশেষ সংখ্যায় অপরিহার্য এই মূল লেখাটা লিখতে আর কাউকে যে রাজি করানো গেল না! তা ছাড়া আমি প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবল কভার করতে যাচ্ছি, ‘কে জিতবে’ এটা বলার দায়টা নাকি আমার ওপরই বর্তায়। আরে বাবা, কে জিতবে, এটা জানার জন্যই তো যাচ্ছি। ফিরে এসে না হয় বলি!

সেপ ব্ল্যাটার অবশ্য একটা এস্কেপ রুট দিয়ে রেখেছেন। ফিফা সভাপতি ঢাকা সফরে এসে করে গেছেন অমোঘ এক ভবিষ্যদ্বাণী। বিশ্বকাপ কে জিতবে? ব্ল্যাটারের উত্তর, ‘৯ জুলাইয়ের ম্যাচটিতে বিজয়ী দল।’ ৯ জুলাই বার্লিনে ফাইনাল, সেদিন যারা জিতবে, তারাই ২০০৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন। যত অঘটনই ঘটুক, এর কোনো নড়চড় হওয়ার উপায় নেই। ব্ল্যাটারের কত বুদ্ধি! এমনি এমনিই তো আর জাতিসংঘের চেয়েও বেশি সদস্য দেশবিশিষ্ট ফিফার সভাপতি হননি। যদিও ব্ল্যাটারের কথা উঠলেই আমার নাম না-জানা ওই জার্মান সাংবাদিকের কথা মনে পড়ে। ফিফার মহাসচিব থাকার সময় ব্ল্যাটার যখন গোলপোস্ট বড় করা, খেলোয়াড় সংখ্যা কমানোর মতো বৈপ্লবিক সব ধ্যানধারণা প্রবর্তন করার প্রস্তাব করছিলেন, ওই সাংবাদিক বলেছিলেন, ‘প্রতিদিন সকালে ব্ল্যাটারের মাথায় ১০১টি নতুন আইডিয়া আসে, তার মধ্যে ১০২টিই খারাপ।’

তবে বিশ্বকাপ-জয়ীর ভবিষ্যদ্বাণী করার ব্যাপারে সেপ ব্ল্যাটারের আইডিয়াটাকে ভালোই বলতে হবে। এবার এতটা নিরাপদ পথে না হাঁটলেও চলছে। প্রায় প্রতিবারই যেমন বিশ্বকাপ-পূর্ব ফেবারিটের নাম বলার সময়ই নানা মুনির নানা মতের দেখা মেলে, এবারের ঘটনা মোটেই তা নয়। এবার সব মুনিই একমত যে, ৯ জুলাই বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আবারও কাফুর হাতেই উঠবে বিশ্বকাপ। সোনার কাপ যাবে ফুটবলের পারিজাত বাগান ব্রাজিলে। ‘হেক্সা’র আনন্দ ভাসিয়ে দেবে কোপাকাবানা সৈকত। এটা শুধু ব্রাজিলিয়ানদেরই কল্পনাবিলাস নয়, এমনকি ‘চিরশত্রু’ আর্জেন্টাইনরাও এবার ব্রাজিলের শিরোপা জয়ে কোনো সংশয় দেখছে না। সে দেশের ‘লা ন্যাশিওন’ পত্রিকার এক জরিপে শতকরা ৯০ ভাগ আর্জেন্টাইনের ব্রাজিলকে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন বলে রায় দিয়ে দেওয়াটাকে বিস্ময়কর বললেও পুরোটা বলা হয় না। বেকেনবাওয়ার-প্লাতিনির মতো সাবেক বিশ্বকাপ গ্রেটরাও তো ব্রাজিল ছাড়া আর কাউকে বিজয়মঞ্চে দেখতে পাচ্ছেন না। তার মানে কী দাঁড়াল! ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন ধরে নিয়ে কে রানার্সআপ হবে, তা নিয়েই আলোচনা করা?

সমস্যা হলো, বিশ্বকাপ ফুটবল এমন সরলীকরণে বিশ্বাস করে না। গত বিশ্বকাপের আগে জার্মান কোচ রুডি ফোলার ফেবারিটরা যে সব সময় বিশ্বকাপ জেতে না, তা বোঝাতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘যদি তা-ই জিতত, তাহলে ব্রাজিল ১৪ বার চ্যাম্পিয়ন হতো।’ তখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ হয়েছে ১৬টি, ফোলার ১৪ বার বলেছিলেন কেন? হয়তো ১৯৫৪ ও ১৯৭৪ বিশ্বকাপের কথা মনে রেখেই। হাঙ্গেরি ও হল্যান্ডকে চ্যাম্পিয়ন ধরে নিয়েই শুরু হয়েছিল সে দুটি বিশ্বকাপ। ’৫৪-তে পুসকাসের হাঙ্গেরি আর ’৭৪-এ ক্রুইফের হল্যান্ড যখন ফাইনালে উঠল, প্রতিপক্ষ ছাড়া বিশ্বের আর কেউ তাদের পরাজয় কামনা করেনি। কিন্তু দুবারই যে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল জার্মানি, যাদের এসব ভাবালুতায় ভেসে যাওয়ার অভ্যাস নেই। পুরো বিশ্বের মানুষের মন রাঙিয়ে দেওয়ার পরও দুই কিংবদন্তি পুসকাস ও ক্রুইফের কাছে বিশ্বকাপ তাই অধরাই হয়ে থেকেছে।

ফেবারিটদের জন্য বিশ্বকাপ যে সব সময়ই খানাখন্দে ভরা, এটা জানতে ব্রাজিলকে হাঙ্গেরি-হল্যান্ডের উদাহরণ স্মরণ করার কোনো প্রয়োজন নেই। এই অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি হয়েছে তো তাদেরই। ১৯৫০, ১৯৮২, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিল ছাড়া আর কারো বিশ্বকাপ হাতে নেওয়ার অধিকার আছে বলে ভাবেননি কেউই। অথচ ব্রাজিল জেতেনি। উল্টোটা দেখুন। ১৯৭০, ১৯৯৪ ও ২০০২ বিশ্বকাপের আগে হলুদ-নীল জার্সিধারীদের সম্ভাবনা নিয়ে এমনকি ব্রাজিলিয়ানরাও খুব উচ্চকণ্ঠ ছিল না। অথচ সে তিনবার তারাই চ্যাম্পিয়ন। ইতিহাসের এই অংশটুকুই আসলে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা।

এমনিতে বিশ্বকাপের সম্ভাব্য বিজয়ী নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার কিছু ফর্মুলা থাকে।

বিবেচনা নম্বর এক: খেলাটা কোথায় হচ্ছে? ইউরোপে হলে ইউরোপের কোনো দল জিতবে, আর দক্ষিণ আমেরিকায় হলে সেখানকার কেউ।

একটা পাদটীকা অবশ্য লাগছে। নিজ মহাদেশের বাইরেও বিশ্বকাপ জিতে এই নিয়মের ব্যতিক্রমও ঘটিয়েছে ব্রাজিলই। ১৯৫৮ সালে ইউরোপেই (সুইডেন) তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়। ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ও নিজ মহাদেশের বাইরে। তবে জাপান-কোরিয়া ছিল ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা দুই মহাদেশের দলগুলোর জন্যই ‘নিরপেক্ষ’ ভূমি।

বিবেচনা নম্বর দুই: গতবার কে জিতেছিল? এ পর্যন্ত ১৭টি বিশ্বকাপে মাত্র দুটি দলই বিশ্বকাপ জিতে পরেরবার তা ধরে রাখতে পেরেছে। ১৯৩৪ ও ’৩৮-এ ইতালি এবং ১৯৫৮ ও ’৬২-তে ব্রাজিলের ওই যুগল সাফল্যকে ব্যতিক্রম ধরলে প্রতিবারই মহাদেশ বদল করেছে বিশ্বকাপ ট্রফি। একবার ইউরোপ জিতলে পরেরবার জিতেছে দক্ষিণ আমেরিকা। সে হিসেবে এবার ইউরোপের পালা। তবে নিয়মের যে ব্যতিক্রম হয়, ব্রাজিল ও ইতালি তো সেটি প্রমাণ করেছেই।

এ পর্যন্ত ১৭টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মাত্র সাতটি দেশ—ব্রাজিল পাঁচবার (১৯৫৮, ’৬২, ’৭০, ’৯৪ ও ২০০২), ইতালি (১৯৩৪, ’৩৮ ও ’৮২) ও জার্মানি (১৯৫৪, ’৭৪ ও ’৯০) তিনবার করে, উরুগুয়ে (১৯৩০ ও ’৫০) ও আর্জেন্টিনা (১৯৭৮ ও ’৮৬) দুবার করে এবং একবার করে ইংল্যান্ড (১৯৬৬) ও ফ্রান্স (১৯৯৮)। এদের মধ্যে উরুগুয়ে এবার নেই, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্লে-অফে হেরে গিয়ে এবার দর্শক হয়ে যেতে হয়েছে বিশ্বকাপের প্রথম চ্যাম্পিয়নদের। তা না হলেও অবশ্য উরুগুয়েকে নিয়ে খুব বেশি কথা খরচ করার কোনো কারণ থাকত না। এক সময়কার ফুটবল পরাশক্তি বহু দিন ধরেই খেলার চেয়ে মারধরের চর্চাই বেশি করে আসছে।

বাকি যে ছয় চ্যাম্পিয়ন আছে এবার, তাদের মধ্যেই কেউ বিশ্বকাপ জিতবে—এটা বলায় খুব বেশি ঝুঁকি নেই। বিশ্বকাপ জিততে দীর্ঘ ফুটবল ঐতিহ্য থাকাটা শুধু যে প্রয়োজন নয়, রীতিমতো অপরিহার্য, এর প্রমাণ বিশ্বকাপ নিয়মিতই দিয়ে এসেছে। ১৯৯৮ সালে ষোড়শ বিশ্বকাপে এসে যে নতুন চ্যাম্পিয়নের (ফ্রান্স) দেখা মিলল, এটা মনে করিয়ে দেবেন তো! ফ্রান্সকে যে বিশ্বকাপ জিততে এত দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে, এটাই আসলে বিস্ময়ের। ফুটবল ঐতিহ্যে ফ্রান্স তো বরাবরই বিশ্বের প্রথম সারির দেশ। বিশ্বকাপের ধারণা এসেছিল এক ফরাসি ভদ্রলোকের (জুলে রিমে) মাথা থেকে, ইউরো-চ্যাম্পিয়নশিপেরও তা-ই (অঁরি দেলুইনে), এমনকি অধুনা উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ নাম নেওয়া ইউরোপের ক্লাব-শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ইউরোপিয়ান কাপের স্বপ্নদ্রষ্টাও এক ফরাসি সাংবাদিক (লেকিপ সম্পাদক গ্যাব্রিয়েল হানো)। ফুটবলকে ফ্রান্স যা দিয়েছে, তার তুলনায় কমই পেয়েছে। ফরাসিরা জয়-পরাজয়ের চেয়ে খেলার শৈল্পিক দিকটিকে কখনোই কম গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেনি, একটা কারণ হয়তো এটা। আরেকটা কারণও ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি অবিচারের শিকারও সম্ভবত ফ্রান্সকেই হতে হয়েছে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়কে তাই বলতে হবে ফ্রান্সের ফুটবল সুকৃতির বিলম্বিত পুরস্কার।

ছয় চ্যাম্পিয়নের এক দেশ জার্মানিতেই এবার খেলা। বিশ্বকাপের চিরন্তন পরাশক্তি নিজেদের দেশে খেলছে, জার্মানির ফেবারিটের তালিকায় থাকাটা তাই অবধারিতই। সেই অবধারিত ব্যাপারটিই এবার ঘটছে না। এমনকি জার্মানরাও তাদের দলের সম্ভাবনা নিয়ে একেবারেই উচ্চকণ্ঠ নয়। অথচ স্বাগতিক হওয়াটা সব সময়ই বিশ্বকাপে বড় এক সুবিধা বলে বিবেচিত। ১৭ বারের মধ্যে ছয়বারই বিশ্বকাপ জিতেছে স্বাগতিক দেশ, এর মধ্যে জার্মানিও একবার। এক ব্রাজিল ছাড়া বিশ্বকাপজয়ী বাকি সব দেশই স্বাগতিক হিসেবে অন্তত একবার বিশ্বকাপ জিতেছে। যদিও সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে ১৯৬৬ বিশ্বকাপের আর্জেন্টাইন অধিনায়ক আন্তনিও রাতিন (ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে লাল কার্ড বিতর্কের জন্য বেশি পরিচিত) দাবি করেছেন, ১৯৭০ বিশ্বকাপের আগে বিশ্বকাপ স্যাটেলাইট টিভিতে সম্প্রচারিত না হওয়ায় আয়ের একমাত্র উত্স গেটমানি বাড়াতে স্বাগতিক দলকে ফাইনালে ওঠানোর দায়িত্বটা ফিফা নিজের কাঁধে তুলে নিত! রাতিনের অভিযোগে কিছুটা সত্যতা থাকলেও থাকতে পারে। তবে ১৯৭০ বিশ্বকাপকে স্যাটেলাইট টিভি-পূর্ব ও পরবর্তী সীমারেখা ধরে নিলে এই সময়েও তো তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে স্বাগতিক দল। তারপরও এবার জার্মানি কেন ফেবারিট নয়?

গ্যারি লিনেকার একবার ফুটবলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ফুটবল হলো ৯০ মিনিটের একটা খেলা, যাতে জার্মানি জেতে।’ ফুটবল যে খুব মজার খেলা, যাতে জেতার জন্য সব সময় ভালো না খেললেও চলে—এটা জার্মানির চেয়ে ভালো আর কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। জার্মান ফুটবল কখনোই মনোরঞ্জক নয়, তাদের ফুটবল সে লক্ষ্যে খেলাও হয় না। বরং সৃজনশীলতার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল নয় বলেই বিশ্বকাপে জার্মানির অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা। ’৯৪ ও ’৯৮ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে বিদায়কে ব্যতিক্রম ধরলে ’৬৬ থেকে ২০০২ পর্যন্ত ১০টি বিশ্বকাপের ৬টিরই ফাইনালে ছিল জার্মানি। এ কারণেই গত সাড়ে পাঁচ বছরেরও বেশি কোনো ফুটবল পরাশক্তিকে হারাতে না পারার পরও জার্মানির সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়ার আগে এবারও একটু ভাবতে হচ্ছে। কোনো ফুটবল পরাশক্তিকে না হারিয়ে জার্মানি ২০০২ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল কীভাবে—এই প্রশ্ন মনে জাগছে তো! টুর্নামেন্ট-পূর্ব দুই ফেবারিট আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়ে জার্মানির ফাইনালে ওঠার পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল। এবারও ক্লিন্সমান-বালাককে এমন ভাগ্যের ছোঁয়া পাওয়ার প্রত্যাশাতেই থাকতে হবে। অনেকে বলতে পারেন, বিশ্বকাপ ড্রতেই জার্মানদের তা পাওয়া শুরু হয়ে গেছে (তিন গ্রুপসঙ্গী পোল্যান্ড, কোস্টারিকা ও ইকুয়েডর)। জার্মানির এই গ্রুপ জিততে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে অন্য গ্রুপগুলোও যদি প্রত্যাশিত বিজয়ীকে পরের রাউন্ডে পাঠায়, তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালে অগ্নিপরীক্ষাতেই পড়তে হবে জার্মানিকে। প্রতিপক্ষ হবে আর্জেন্টিনা।

রাস্তায় বেরোলে বাতাসে উড়তে থাকা সারি সারি পতাকা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ-জ্বরে কাঁপতে থাকার ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিচ্ছে অনেক দিন থেকেই। হলুদ-সবুজ আর আকাশি-সাদা ডোরাকাটা পতাকারই যে সেখানে জয়জয়কার, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। ব্রাজিল তো চিরকালই এই গ্রহের জনপ্রিয়তম ফুটবল দল। ’৮৬ বিশ্বকাপ-পূর্ব বাংলাদেশেও ব্রাজিলের বাইরে কোনো দলের সমর্থক খুঁজতে অণুবীক্ষণ যন্ত্র লাগত। ’৮৬-তে ম্যারাডোনা-জাদু আর্জেন্টিনারও বিশাল ভক্তকুল তৈরি করে দিয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবলভক্তদের মধ্যে ‘কোন দু দলকে ফাইনালে দেখতে চান’—এই জরিপ চালালে অবধারিতভাবেই নাম আসবে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার। এবারের ফিকশ্চারে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সেই স্বপ্নের ফাইনালের সম্ভাবনা থাকছে। লাতিন আমেরিকান এই দু দল নিজেদের গ্রুপ জিতলে ফাইনালের আগে আর তাদের দেখা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো দুই লাতিন পরাশক্তি যদি সত্যিই ফাইনালে মুখোমুখি হয়, ব্রাজিলের চেয়ে অনেক বেশি দুস্তর পথ পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছবে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার মতো ইতালি, ফ্রান্স আর জার্মানিও যদি নিজেদের গ্রুপ জেতে, ফাইনালে ওঠার লড়াইটা হবে তাদেরই মধ্যে। এদিক থেকে ব্রাজিল অনেক সুবিধাজনক অবস্থায়। কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ স্পেন, সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড।

তবে এই সব হিসাব-নিকাশই অঘটনকে বিবেচনার বাইরে রেখে। গতবারের মতো এবারও আর্জেন্টিনা-ফ্রান্সের মতো বড় কোনো দল গ্রুপ পর্যায় থেকে বিদায় নিলে তো অবশ্যই, এমনকি তাদের কেউ গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে গেলেই বদলে যাবে পুরো চিত্রটা। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় মজা অঘটন হয়তো এবারও হবে। তবে গতবারের মতো অতটা ওলটপালট হওয়ার সম্ভাবনা এবার কম। বর্ষা এসে যাবে বলে কোরিয়া-জাপানে বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল একটু আগেভাগেই, বড় দলগুলোর তারকা খেলোয়াড়রা ইউরোপিয়ান লিগ খেলার ধকল সামলে ওঠার সময়ই পাননি। তুলনায় ছোট দলগুলোর খেলোয়াড়রা ছিল অনেক বেশি সতেজ। এবার বাড়তি ৯-১০ দিন ক্লান্তি আর অবসাদকে আর ম্যাচের ফল-নির্ধারক হতে দেবে বলে মনে হয় না।

ব্রাজিল ফেবারিট—এ তো চার বছর পরপর বিশ্বকাপ হয়, এটার মতোই ধ্রুবসত্য। তা তাদের স্বপ্নভঙ্গের কারণ হতে পারে কোন দল? ইংল্যান্ডকে নিয়ে এবার অনেক হইচই হচ্ছে। অবশ্য বলতে পারেন, এ আর নতুন কী, ইংলিশ মিডিয়ার কল্যাণে এটা তো প্রতিবারই হয়। গত কিছুদিন রুনির ইনজুরি নিয়ে লেখা পত্রপত্রিকার যতটা ভরে রেখেছে, রোনালদিনহো-রোনালদোকে নিয়েও ততটা লেখা হয়নি। অথচ রুনির যে ওই দুই ‘আর’-এর উচ্চতায় উঠতে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে, ইংলিশ মিডিয়া ছাড়া আর কারোরই এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। ইংল্যান্ডের ১৯৮৬ বিশ্বকাপের অধিনায়ক ব্রায়ান রবসনই বলেছেন আসল কথাটা। রুনি থাকলেই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ জিতবে—এ কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে রবসন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ব্রাজিলের তো পাঁচজন ‘রুনি’ আছে! সেই পাঁচ ‘রুনি’র একজন, রবিনহোর প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের প্রথম একাদশে জায়গাই হচ্ছে না!

রুনির ইনজুরির আগে এক সাক্ষাত্কারে ইংল্যান্ডের কোচ সভেন গোরান এরিকসন বলেছিলেন, “আমার কোনো প্ল্যান ‘বি’ নেই। কারণ আমার তো একটাই রুনি।” শেষ পর্যন্ত রুনি মাঠে নামতে না পারলে কেন এ কথা বলতে গিয়েছিলেন, এটা ভেবে নিজের ওপর বিরক্ত হতেই পারেন এরিকসন। রুনিকে ছাড়াও ইংল্যান্ড যথেষ্টই সমীহজাগানো দল, তবে ‘উইংলেস ওয়ান্ডার’দের কীর্তির পুনরাবৃত্তি ঘটানোর মতো কি? ১৯৬৬ সালে নিজেদের দেশে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে স্বাগতিক হওয়ার স্বাভাবিক সুবিধার বাইরেও নিয়মবহির্ভূত কিছু সুবিধাও ইংল্যান্ড পেয়েছিল বলে অভিযোগ। আরেকটি বিশ্বকাপ না জেতা পর্যন্ত এই অপবাদ থেকে ইংল্যান্ডের মুক্তি নেই। মনে রাখা ভালো, এর আগে-পরে ইংল্যান্ড আর কোনো বিশ্বকাপের ফাইনালেও উঠতে পারেনি। তারপরও ইংল্যান্ড এমন ফুটবল-পাগল দেশ যে, প্রতিবারই তারা স্বপ্ন দেখে। ২০০৬-এ ১৯৬৬ ফিরিয়ে আনার স্বপ্নপূরণের পথে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় ভয় কী? শুনে বিস্মিত হতে পারেন, তবে একটু স্মৃতি রোমন্থন করলে আপনিও একমত হবেন: নকআউট পর্ব থেকে পেনাল্টি শ্যুটআউটে বিদায়ের অভ্যাস!

আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের জন্য এটি গত বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্নকে কবর দেওয়ার মিশন। যুগ্ম ফেবারিট হিসেবে শুরু করে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায়—গতবারের এই অভিজ্ঞতাই হতে পারে এবার দল দুটির এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় পাথেয়। আর্জেন্টিনা দলে এবার ‘নতুন ম্যারাডোনা’র ছড়াছড়ি। রিকুয়েমে-মেসি-তেভেজরা কি ’৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়কের ছায়া থেকে বের করে আনতে পারবেন আর্জেন্টিনাকে? এ প্রশ্নের উত্তর প্রথম ম্যাচ থেকেই দিতে শুরু করতে হবে তাদের। প্রতি বিশ্বকাপেই যে একটা ‘গ্রুপ অব ডেথ’ থাকে, গতবারের মতো এবারও আর্জেন্টিনা পড়েছে সেই মৃত্যুকূপে। হল্যান্ড, সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রো প্রতিপক্ষ হিসেবে অবশ্যই কঠিনতর, তবে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা হবে আইভরি কোস্টের বিপক্ষে। আফ্রিকার পাঁচ দেশের মধ্যে দিদিয়ের দ্রগবার দলই সেরা, এটাই শুধু কারণ নয়। এটাই আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ, আর বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচের বিপদ সম্পর্কে আর্জেন্টিনার চেয়ে ভালো আর কে জানে! ১৯৮২ ও ১৯৯০ দু বিশ্বকাপেই আর্জেন্টিনা ছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। আরেকটি মিল, দুবারই প্রথম ম্যাচে হেরে বসেছিল তারা। ’৭৮ থেকে ’৯০ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপের তিনটিতেই ফাইনাল খেলেছে আর্জেন্টিনা, অথচ গত তিনবারে তাদের সেরা সাফল্য কোয়ার্টার ফাইনাল। আর্জেন্টাইনদের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে এই তিনটি বিশ্বকাপেরই ফাইনালে উঠেছে ‘চিরশক্র’ ব্রাজিল, চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুবার। হোসে পেকারম্যানের দল সেই জ্বালা জুড়ানোর উপায় হিসেবে ফিরে গেছে চিরন্তন সেই আর্জেন্টাইন পাসিং গেমে, যেখানে খেলোয়াড়দের চেয়ে বলই বেশি দৌড়াবে।

ফ্রান্স সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব সহজ। কেন? কারণ আপনি নিশ্চিন্তে বলে দিতে পারেন, ফ্রান্সের জার্সি গায়ে আর্সেনালের থিয়েরি অঁরি ও জুভেন্টাসের ডেভিড ত্রেজেগের দেখা মিললেই শুধু ফ্রান্সের আশা আছে। ক্লাব আর জাতীয় দলের হয়ে তারা যে একই খেলোয়াড়—দুই স্ট্রাইকারের জন্য এটা প্রমাণের শেষ সুযোগ এই বিশ্বকাপ। ’৯৮ বিশ্বকাপেও ফ্রান্সকে ভুগিয়েছিল স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতা, স্টাডে ডি ফ্রান্সের ওই আলোকোজ্জ্বল রাত এসেছিল জিদান-থুরামদের গোলের কল্যাণে। সে বিশ্বকাপে উইঙ্গার হিসেবে খেলে ৩ গোল করেছিলেন অঁরি, অথচ গত বিশ্বকাপে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলে তার একটিও গোল নেই! ফ্রান্সের কারোরই তো ছিল না। শুধু ফরাসিরাই নয়, অঁরি-ত্রেজেগের কাছ থেকে গোল প্রার্থনা করছেন নিরপেক্ষ ফুটবলপ্রেমীরাও। জিনেদিন জিদান নামের ফুটবল-শিল্পীকে যতটা বেশি সম্ভব মাঠে দেখতে পাওয়ার পূর্বশর্ত যে এটাই।

চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে বাদ রইল ইতালি। আরেক ফুটবল-পাগল দেশ এবং অনেক দিন হয়ে গেল বড় কোনো সাফল্যের দেখা পায়নি তারা। ১৯৮২-তে ইতালির বিশ্বকাপ জেতার কথা ছিল না। পাওলো রসির ম্যাজিকে জেতা সেই তৃতীয় বিশ্বকাপটিই হয়ে আছে তাদের সর্বশেষ সাফল্য। এবারের দলটির ক্ষমতা আছে এই সাফল্যখরা ঘোচানোর। ফুটবলামোদীদের বিরক্তি উত্পাদন না করেই তা করা সম্ভব। কারণ মার্সেলো লিপ্পির কোচিংয়ে চিরাচরিত নেতিবাচক ইতালিয়ান ফুটবল থেকে অনেকটাই সরে এসেছে বর্তমান দলটি। ফাইনালে ব্রাজিলের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হিসেবে তাদের নাম বলছেন অনেকেই। ফিকশ্চার ’৯৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা রেখেছেও। আর ‘ইউরোপে ইউরোপ’, ‘একবার দক্ষিণ আমেরিকা, একবার ইউরোপ’—এই প্রায় নিয়মের ব্যতিক্রম না হলে ৯ জুলাই শেষ হাসিটা হাসতে পারে ‘আজ্জুরি’রাই।

বিশ্বকাপের সম্ভাব্য বিজয়ী নিয়ে এত কথা বলে ফেললাম, অথচ ফিফা র‍্যাঙ্কিং আলোচনাতেই এল না! সেটি সামনে রেখেই লিখতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু সেদিকে আর বেশি তাকাইনি। এই র‍্যাঙ্কিংকে সহায় মানলে যে সব বোধ-বিবেচনা এলোমেলো হয়ে যাওয়ার জোগাড়! বিশ্বকাপের আগে সর্বশেষ প্রকাশিত র‍্যাঙ্কিং তালিকার শীর্ষ দশটি দল এ রকম: ১. ব্রাজিল ২. চেক প্রজাতন্ত্র ৩. হল্যান্ড ৪. মেক্সিকো ৫. যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেন ৭. পর্তুগাল ৮. ফ্রান্স ৯. আর্জেন্টিনা ১০. ইংল্যান্ড। দেখা যাচ্ছে, শীর্ষ দশে বিশ্বকাপজয়ী দলের সংখ্যা মাত্র ৪। ইতালির র্যাঙ্কিং ১৩, জার্মানির ১৯। এখন আপনি যদি এই র‍্যাঙ্কিংকে নমস্য মেনে আর্জেন্টিনা-ইতালি-ফ্রান্স-ইংল্যান্ডের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা মেক্সিকোর বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা বেশি বলে ঘোষণা করেন, সেটিকে শুধু র‍্যাঙ্কিংয়ের সমস্যা বলে পার পাবেন না। অনেকের মনেই অন্য সন্দেহ জাগবে!

র‍্যাঙ্কিংয়ে ব্রাজিলের পরই থাকা চেক প্রজাতন্ত্রের এটি প্রথম বিশ্বকাপ, তবে সেটি চেকোস্লোভাকিয়া ভাগ হয়ে যাওয়ায়। নইলে চেকদের ফুটবল-ঐতিহ্য সুপ্রাচীন, দুবার বিশ্বকাপ ফাইনালও খেলেছে তারা, তবে সর্বশেষটি ৪৪ বছর আগে (১৯৬২, চিলি)। শীর্ষ দশে থাকা এমন আরও দুটি দলের নামও করতে হবে, যাদের গর্ব করার মতো ফুটবল ঐতিহ্য, কিন্তু কোনোদিন বিশ্বকাপ জেতেনি। এর মধ্যে হল্যান্ড পরপর দুটি বিশ্বকাপের (’৭৪ ও ’৭৮) ফাইনাল (দুবারই স্বাগতিক দলের কাছে হার) এবং একবার সেমিফাইনাল (১৯৯৮) খেললেও স্পেন বিশ্বকাপের চিরন্তন আন্ডারঅ্যাচিভার। লা লিগা বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগ হয়ে আছে অনেক বছর। স্প্যানিশ খেলোয়াড়দের টেকনিক্যাল দক্ষতা বা ট্যাকটিক্যাল ওয়াকিবহালতা নিয়েও কোনো সংশয় নেই। অথচ চারবার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠাটাই হয়ে আছে স্পেনের সেরা বিশ্বকাপ-সাফল্য! এবার কি স্পেনের বছর হবে? প্রায় প্রতিটি বিশ্বকাপের আগেই স্প্যানিশরা এই প্রশ্ন করে আর আশায় বুক বাঁধে এবং শেষ পর্যন্ত হতাশায় পোড়ে।

১৯৭৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে ক্রুইফের হল্যান্ডের না জেতার বিস্ময়ের সঙ্গে একমাত্র ’৫৪-র ফাইনালে পুসকাসের হাঙ্গেরির না জেতারই তুলনা চলে। ’৭৪-এর কোচ টোটাল ফুটবলের জনক রাইনাস মিশেলসের (‘টোটাল ফুটবল’ নামটা দিয়েছিলেন এক সাংবাদিক, মিশেলস বলতেন ‘প্রেসিং ফুটবল’) হাতেই আশির দশকের শেষে পুনরুত্থান ঘটেছিল ডাচ ফুটবলের। ’৮৮-তে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর অনেক আশা নিয়ে ১৯৯০ বিশ্বকাপে গিয়েছিল খুলিত-বাস্তেন-রাইকার্ডের হল্যান্ড। কিন্তু বরাবরের মতো সেবারও হল্যান্ডের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াল হল্যান্ডই। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই শুরু হয়ে যাওয়া অন্তর্কলহ দ্বিতীয় রাউন্ডের বেশি এগোতে দিল না তাদের। এবারের দলটি তারকাজ্যোতিতে অনেক পিছিয়ে, রুড ফন নিস্টলরয় ছাড়া বড় তারকা বলতে গেলে নেই-ই। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে কোচ মার্কো ফন বাস্তেন দলে এমন একটা জিনিস এনেছেন, সব সময়ই যেটির বড় অভাব ছিল হল্যান্ড দলে। এক দল-এক প্রাণ হয়ে লড়াই করার মানসিকতা। এটি নিশ্চিত করতে এডগার ডাভিডস-ক্ল্যারেন্স সিডর্ফের মতো ইগোসর্বস্ব তারকাকে বাদ দিতেও দ্বিধা করেননি। এই একতাই হতে পারে তারুণ্যভাস্বর হল্যান্ডের বড় শক্তি। বিশ্বকাপের ‘ডার্ক হর্স’ও তাদেরই বলতে চাই।

ফিগো-ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা আছেন, তারপরও পর্তুগালের সবচেয়ে বড় তারকা কোচ লুই ফেলিপ স্কলারি। ‘বিগ ফিল’ বিশ্বকাপে নামছেন গতবারের সাফল্যের টাটকা স্মৃতিকে সঙ্গী করে। তবে পর্তুগাল আবারও তাকে সেই স্মৃতি উপহার দেবে—এটা একটু বাড়াবাড়ি প্রত্যাশাই। ইউসেবিওর বীরত্বে ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ আবির্ভাবেই সেমিফাইনালে খেলার পর আর মাত্র দুবারই (১৯৮৬ ও ২০০২) বিশ্বকাপ খেলেছে পর্তুগাল। একবারও প্রথম রাউন্ডের বৈতরণী পেরোনো হয়নি। এর মধ্যে গতবার তথাকথিত সোনালি প্রজন্মের প্রথম রাউন্ডেই মুখ থুবড়ে পড়াটা পর্তুগিজ ফুটবলে বড় যন্ত্রণা হয়ে আছে। স্কলারির জাদুস্পর্শে সেই যন্ত্রণা কতটা ঘুচবে কে জানে! তবে এটা নিশ্চিত যে, পর্তুগাল অনেক বড় দলেরই যন্ত্রণার কারণ হতে পারে।

এ ধরনের লেখায় উপসংহারটাই আসল। যেখানে ঘোষণা করা হবে সম্ভাব্য বিজয়ীর নাম এবং যেটি টুকে নিয়ে পাঠকরা অপেক্ষা করবেন, ‘দাঁড়াও, না মিললে হয়! পণ্ডিতি করার মজা বোঝাব!’ জেনেশুনে ওই ঝুঁকি নিতে যাব কেন! এতক্ষণ যা বলেছি, তা থেকে আপনিই যা বোঝার বুঝে নিন না! কী বললেন, তারপরও একটা ভবিষ্যদ্বাণী করতেই হবে?

যান, বলে দিলাম—টোগো বিশ্বকাপ জিতবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×