জামাল ভুঁইয়া-তপু বর্মণদের জন্যও একটু হাততালি দিন
উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা
আরসিল আজিম মেনন
৪ জুন ২০২১
বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি দিন গত হয়েছে আজ অনেক বছর। এক পাঠক মনে করছেন, বাফুফে প্রচার চালায় না তেমন করে, মিডিয়াকর্মীদের কাছেও ফুটবলটা বিবেচিত হয় `সৎ ছেলে` হিসেবেই। তাই ফুটবলের সুদিন ফেরাতে হলে দায়িত্ব নিতে হবে দর্শকদেরই। কী করতে পারেন তাঁরা, তা নিয়ে লিখে পাঠালেন তিনি নিজেই।
কাল একটা বিষয় খুব ভালো মতোই চোখে বিঁধল। শুধু চোখেই নয়, বুকেও। কাতারে চলছে বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবল ম্যাচ, একই সময় চলছে ডিপিএলের ক্রিকেট ম্যাচ। দুটোই লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে। ঘরোয়া লিগের ক্রিকেট ম্যাচেও দর্শক সংখ্যা তখন প্রায় ১০ হাজার, বিপরীতে ফুটবল ম্যাচের ভিউয়ার আড়াই হাজারের কাছাকাছি মাত্র! অনেকে বলবেন, ফুটবল ম্যাচটা টিভিতে দেখার সুযোগ থাকায় অনেকে হয়তো টিভিতে দেখেছেন। খুবই ভালো কথা। আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, যে হাজার দশেক মানুষ তখন ক্রিকেট দেখছিলেন, বাফুফে কি আদৌ তাদের জানাতে পেরেছিল, বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছে? হ্যাঁ, ওই ১০ হাজার মানুষের কথাই বলতে হচ্ছে, কারণ যারা ডিপিএলের মতো একটা সাধারণ ম্যাচই মিস করতে চায় না, তাদের ক্রীড়াপ্রেম নিয়ে নিশ্চয়ই কোনো প্রশ্ন উঠবে না।
আর শুধু বাফুফেকে এককভাবে দোষী করা কেন? বাংলাদেশের কোনো সংবাদমাধ্যমকেও খুব একটা আগ্রহী মনে হয়নি ম্যাচটা নিয়ে, অথচ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ভারতের বিপক্ষে ওই ম্যাচটার পর বাংলাদেশ ফুটবল দল নিশ্চয়ই ওটুকু সমর্থন আশা করতেই পারত।
কালকে বাংলাদেশ যা খেলেছে, বিশেষত শেষ ১৫ মিনিট, তা সত্যিই প্রশংসা পাবার যোগ্য। অভিষিক্ত প্রবাসী ফুটবলার তারিক রায়হান কাজীর কথা আলাদা করে না বলে পারছি না। রক্ষণে তো ছিলেনই, সেই সাথে যখন প্রয়োজন ওভারল্যাপিং করে ওপরে উঠে এসেছেন, খেলোয়াড় মার্কিংয়েও ছিলেন অসাধারণ। যেন পণ করে নেমেছিলেন, 'বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী'। বোঝার এতটুকুও জো ছিল না যে, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তিনি খেলছেন প্রথম ম্যাচ।
আক্রমণে মতিন মিয়া যে গতি তুলছিলেন, শেষ কবে এমন কিছু দেখেছিল বাংলার ফুটবল? জেমি ডের ট্যাকটিকস আর খেলোয়াড় বদলের পরই যেন ভোজবাজির মতো বদলে গেল বাংলাদেশ! আরে, এ তো ফুটবল নয়, বাস্কেটবল দেখতে বসেছি! চোখ ফেরানো দায়! শ্রেয়তর প্রতিপক্ষের ওপর প্রেসিং করে বাংলাদেশ আর কখনো কি খেলেছে?
রাত জেগে ইউরোপিয়ান ফুটবল দেখুন; প্রিয় দলের জার্সি, প্রিয় খেলোয়াড় নিয়ে বন্ধুমহলে সারা বছর তর্ক করুন; নেইমার-রোনালদো-মেসিদের নিয়ে নিউজ-ফিডে ঝড় তুলুন; সমস্যা নেই কোনো। বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য আপনাকে অতটা করতে হবে না, শুধু বছরে দু'একটা দিন জামাল ভূঁইয়া, তপু বর্মণ, সোহেল রানা, জিকোদের জন্যেও হাততালি দিন। তাহলেই দেখবেন, আমাদের ফুটবল জেগে উঠেছে আবারও।