কনওয়েতে চড়ে লর্ডসে নামলেন ডব্লিউ জি-রণজিৎসিংজি

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

রিফাত এমিল

৩ জুন ২০২১

কনওয়েতে চড়ে লর্ডসে নামলেন ডব্লিউ জি-রণজিৎসিংজি

লর্ডসে রেকর্ড ভাঙা ইনিংস খেলার পথে ডেভন কনওয়ে

টেস্ট ক্যারিয়ারে এই দিনেই শেষবারের মতো মাঠে নেমেছিলেন ডব্লিউ জি গ্রেস। সেই স্মৃতি মনে করাতেই হয়তো আজকের দিনেই তাঁকে ছাড়িয়ে গেলেন ডেভন কনওয়ে, ছাড়িয়ে গেলেন রণজিৎসিংজিকেও। ইংল্যান্ডের মাঠে টেস্ট অভিষেকে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখন কনওয়ের।

ডব্লিউ জি গ্রেস। রণজিৎসিংজি। দুটি নাম। খুব পরিচিত লাগছে কি? না লাগারই কথা। ক্রিকেট ইতিহাসের মনোযোগী ছাত্র কিংবা খুব একটা খোঁজখবর না রাখলে না চেনাই স্বাভাবিক। আমিও যে খুব চিনে বসে আছি সে দাবি করছি না। তবে দুয়েকটা লেখা পড়েছি বলে আপনাদের চেনানোর কঠিন দায়িত্বটুকু নিলাম।

জুন, ১৮৯৯

এই দিনে শেষবার টেস্ট ক্রিকেট খেলতে নেমেছিলেন ডব্লিউ জি গ্রেস। ক্রিকেটের আদি ও আসল বুড়োর সেদিন বয়স ছিল ৫০ বছর ৩২০ দিন। একটি সম্পূরক তথ্য যোগ করি, ডব্লিউ জি গ্রেস সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট খেলার রেকর্ড গড়ে বিদায় নেন যে ম্যাচে, সে ম্যাচেই অভিষেক হয় উইলফ্রেড রোডসের। এর ৩১ বছর পরে রোডসই ভাঙেন ডব্লিউ জি গ্রেসের সবচেয়ে বেশি বয়সে টেস্ট খেলার রেকর্ড।

উইলফ্রেড রোডসের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য ৪০ হাজার ছুঁইছুঁই রান, বল হাতে ৪২০৪ উইকেটের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও আছে ৭০০-এর বেশি ক্যাচ। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে খেলেছেন হাজারের বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ।

অন্যদিকে ডব্লিউ জি গ্রেস 'ফাদার অব ক্রিকেট' নামেই পরিচিত। ১৮৪৮ সালের জুলাইয়ে ব্রিস্টলে জন্ম নেওয়া ভদ্রলোক উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস লম্বা দাড়ি রেখে স্বীকৃত ক্রিকেট খেলেছেন প্রায় ৪৩ বছর। এই লম্বা ক্যারিয়ারে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচ খেলেছেন ৮৭০টি, সব্যসাচী এই অলরাউন্ডার রান করেছেন ৫৪০০০-এর কিছু বেশি আর উইকেট নিয়েছেন প্রায় ২৮০০। আধুনিক ব্যাটিংয়ের জনক বলে মানা হয় তাঁকে। এখন স্বাভাবিক হয়ে যাওয়া ফ্রন্ট ফুট-ব্যাক ফুটে খেলাটা তিনিই শুরু করেছিলেন প্রথম। শুধু বোলার হিসেবেও যেকোনো দলে খেলতে পারতেন, ছিলেন মিডিয়াম পেসার।

ব্যাট হাতে ডব্লিউ জি গ্রেস। ছবি: অ্যালামি

তাঁর পুরো পরিবার জড়িত ছিল ক্রিকেটের সঙ্গে। তাঁর ছেলে, ভাই, চাচা, এমনকি চাচাতো ভাইয়েরাও খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। তাঁর পরিবারের দুজন খেলেছেন টেস্ট ক্রিকেট, আটজন খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট। দারুণ ব্যাপার হচ্ছে, ডব্লিউ জি গ্রেস তাঁর দুই ছেলের সঙ্গেও খেলেছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট।

ডব্লিউ জি গ্রেস ছিলেন একজন ডাক্তারও। ক্রিকেটের জন্য নিজের মেডিকেল ডিউটি ছেড়েছিলেন অনেক সময়! একবার তাঁর ক্যাচ নেওয়ার সময় এক ফিল্ডারের ধাতব বস্তুর আঘাত লাগলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। আরেকবার এক ক্রিকেটারের রেলিংয়ের সাথে লেগে গলা কেটে যাওয়ার অবস্থা হলে আধঘণ্টা ধরে তাঁর রক্তপাত বন্ধ করে জীবন বাঁচান গ্রেস।

আজকের দিনে শেষবার টেস্টে মাঠে নামা গ্রেস টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন ২২টি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৪২১১ রান, ২৫১ অর্ধশতক, ১২৪ শতক। বল হাতে ২৮০৯ উইকেট, ইনিংসে ৫ উইকেট ২৪০ বার ও ম্যাচে ১০ উইকেট ৬৪ বার। অবিশ্বাস্য ছিল তাঁর ৪৩ বছরের ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার।

উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস ১৯১৪ সালের ২৫ জুলাই নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংস খেলেন। এক ক্লাব ম্যাচে করেন ৬৯ রান। ক্রিকেট ছাড়ার এক বছরের মধ্যে পৃথিবীটাও ছেড়ে দেন 'বুড়ো' ডব্লিউ জি গ্রেস।

হুট করে গ্রেসকে নিয়ে পড়ছি কেন? পড়ার কারণ হলো তাঁকে ফের মনে করালেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নামা ডেভন কনওয়ে।

জুন, ২০২১

১৪১ বছরের পুরনো রেকর্ড ভাঙলেন ডেভন কনওয়ে। কনওয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট অভিষেকে সর্বোচ্চ রানে ভাঙলেন ডব্লিউ জি গ্রেসের ১৮৮০ সালের দ্য ওভালে করা ১৫২ রানের রেকর্ড। রণজিৎসিংজি ১৮৯৬ সালে করেছিলেন অপরাজিত ১৫৪ রান। দুজনকে দুইয়ে আর তিনে ঠেলে এখন টেস্ট অভিষেকে ইংল্যান্ডের মাটিতে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় একে কনওয়ে।

এভাবেই ফিরে আসে ক্রিকেট ইতিহাস; এভাবেই বুঝি বারবার ফিরে আসেন গ্রেস, রোডস, রণজিৎসিংজিরা...

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×