পাবলিক কী ‌‘খেতে’ চায়?

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

হাসান উজ জামান

২০ মে ২০২১

পাবলিক কী ‌‘খেতে’ চায়?

পাবলিক যা খায়, তাই তাকে খেতে দেওয়া উচিত না। কারণ বেশির ভাগ পাবলিকের রুচিই অত্যন্ত নিম্নমানের। তারা বাজে খাবারটাই খেতে চায়। নিজের রুচি ভালো, এই ভেবে অহংকার করা কিংবা অন্য কাউকে ছোট করার কিছু নেই।  বরং কেন তারা বাজে খাবারটিই খেতে চায়, সেটি একটু ভেবে দেখতে পারি আমরা। 

গত এক যুগে সাধারণ আমজনতার কাছে ইন্টারনেটের সমার্থক হয়ে উঠা ফেসবুক পুরো পৃথিবী জুড়ে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে বললে হয়তো ভুল বলা হবে না। ফেসবুককে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ নতুন মাত্রা পেয়েছে। ফেসবুকের উথাল-পাথাল ঢেউ সংবাদ মাধ্যমকেও রীতিমতো এলোমেলো করে দিয়েছে। এই এক ফেসবুকের কারণেই পাবলিক মুহূর্তের খবর মুহূর্তেই পেতে চায়। তাৎক্ষণিক সংবাদ উৎপাদনের চাপেই কিনা প্রতিটি সংবাদ মাধ্যম তাদের বিজনেস মডেল পর্যন্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।

উৎপলশুভ্র.কম-এ পাঠক আসেন খেলার খবর পড়তে। আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছাও ছিল খেলা নিয়ে লিখার। কিন্তু গত ৭ মে উৎপলশুভ্র.কম-এ ‌‌‘পাবলিক খাবে আর আমাদের মিডিয়াও খাইয়ে যাচ্ছে’ শিরোনামে সাংবাদিক শাহরিয়ার ফিরোজের একটি অসাধারণ লেখা প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকার একজন নিয়মিত পাঠক হিসেবে পাবলিক কী ‌‘খায়’, সেটা নিয়ে আমার একান্ত নিজের কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। কিন্তু এক-দুই লাইনে ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে তা জানানো সম্ভব ছিল না। ঘটনাচক্রে ফেসবুকে আমার মন্তব্যের উত্তরে প্রিয় উৎপল শুভ্র বললেন, ‌‘দুই লাইনে বলা সম্ভব তো নয়ই, অনেক লাইনেই লিখে ফেলুন না। লিখে পাঠিয়ে দিন ওয়েবসাইটের জন্য। পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিটাও জানি।’ 

‌‘দ্য উৎপল শুভ্র’ বলেছেন, না লিখে কি আর উপায় থাকে? 

শুরুতেই পাঠকদের একটি কথা আবার মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছি। আমি ধর্ম কিংবা বিজ্ঞানের চিরন্তন সত্য বলে ধরে নেয়া কোন তত্ত্ব এখানে লিখছি না। মত-দ্বিমত থাকবে। আমি আমার একান্ত ব্যক্তিগত ধারণাই শুধু আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করব। 

প্রথম কথা হলো, পাবলিক যা খেতে চায়, মিডিয়া তাদের তাই খাওয়াচ্ছে- এই ঘটনায় আমি মোটেও বিচলিত নই। মিডিয়ার সব লোকেরা যে দেবদূত নন, এই সত্য বেশ আগেই বুঝতে পেরেছি। রাষ্ট্র ও নিজেদের স্বার্থের বাইরে গিয়ে কোন মিডিয়াই কিছু করে না, লিখে না, দেখায় না। মিডিয়ার কাজই তো প্রোপাগান্ডা মেশিনের মতো কাজ করে যাওয়া, নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। পাবলিককে গার্বেজ খাইয়ে তাদের লাভ হলে, তারা যে তাই করবেন, সেটা আর এমন বিচিত্র কি? 

প্রিয় পাঠক, এমন বড় বড় সব কথা নিশ্চয়ই আমার ছোট মুখে মানায় না। তাই চলুন বিখ্যাত একজন চিন্তাবিদ, দার্শনিক নোয়াম চমস্কির আশ্রয় নেই। চমস্কি এবং অধ্যাপক এডওয়ার্ড এস হারম্যানের গণমাধ্যম নিয়ে একটি খুবই বিখ্যাত ও আলোচিত বই আছে, নাম ‌‘Manufacturing consent: the political economy of the mass media’। এই বইয়ে দাঁত বসানোর মতো অবস্থায় এখনো যেতে পারিনি। কিন্তু লোক মুখে এই বইয়ের ব্যাপক প্রশংসা শুনে ইউটিউবে এই বই নিয়ে চমস্কির ইন্টারভিউ দেখেছি, কিছু আর্টিকেল পড়েছি। সাংবাদিকদের উদ্দেশে চমস্কি বলেছিলেন, জনগণ হচ্ছে বিভ্রান্ত পশুর মতো। জনগণকে বল প্রয়োগ করে যদি নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ না থাকে, তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ‌‘ক্যালকুলেটেড ম্যানুফ্যাকচার অফ কনসেন্ট’- এর মাধ্যমে।

মিডিয়া মানেই ভয়ংকর কিছু, সেটা বলা আমার উদ্দেশ্য না। সংখ্যায় কম হলেও সৎ সাংবাদিক আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। কিন্তু সব মিলিয়ে মিডিয়ার যা অবস্থা, তাতে পাবলিককে তাঁরা ‌‘গার্বেজ’ খাইয়ে দিচ্ছেন--এটি আমার কাছে অভূতপূর্ব কোন ব্যাপার মনে হয় না। কে কবে সাংবাদিক যতটুকু জানিয়েছে, তার বাইরে গিয়ে নিজ থেকে জেনেছেন? সাংবাদিকরা আমাদের যা দেয়, তাই ‘খেতে’ হয়।  

এখন আসি পাবলিক অর্থাৎ আমরা কী ‘খেতে’ চাই সে প্রসঙ্গে। এটির সরাসরি উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন। তারপরও যদি এক কথায় আমাকে উত্তর দিতেই হয়, আমি বলব, ‌‌‘যার যা “খেতে‌‘’ ভালো লাগে, সে তাই “খেতে” চায়।’

এখন কার কী ‘খেতে’ ভালো লাগে, সেটি আরেকটি প্রশ্ন বটে। 

(লেখার এই পর্যায়ে এসে আমার হঠাৎ মনে হলো, যাঁরা শাহরিয়ার ফিরোজের লেখা না পড়ে সরাসরি আমার লেখা পড়বেন, তাঁরা ‘খেতে’ শব্দটি দ্বারা বিভ্রান্ত হতে পারেন। এখানে পাঠকের সংবাদ পড়া ও সংবাদ দেখার রুচি বোঝাতে এই শব্দটি ব্যবহার করছি।)

কার কী ‘খেতে’ ভালো লাগে, সে ব্যাপারে উত্তর খোঁজার আগে আমার নিজের কী খেতে ভালো লাগে বা ভালো লাগত, তা নিয়ে কিছু বলতে চাই। 

একজন পাঠক হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা হলো, সময়ের সাথে সাথে রুচির পরিবর্তন হয়, মানুষ হিসেবে নিজের রুচি উন্নত করার সুযোগ থাকে।  ছোটবেলায় আমি অ্যাকশন হিরো রুবেলের নাম শুনে উত্তেজনায় কাত হয়ে পড়তাম। বিটিভির উপস্থাপক/ উপস্থাপিকা দুপুর তিনটায় যখন ঘোষণা করতেন, ‌‘আজকে দেখবেন পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র……… শ্রেষ্ঠাংশে রুবেল………’- এতটুকু শুনেই আমার আনন্দের আর কোনো সীমা থাকত না। সময়ের সাথে বড় হতে লাগলাম, অবাক হয়ে একদিন আবিষ্কার করলাম, নায়ক রুবেল আমার কাছে আর আগের মতো আকর্ষণীয় নয়। কেন এমনটা হলো, এই উত্তর তখনই খুঁজেছিলাম, কিন্তু পাইনি।ে

এক দিন নায়ক রিয়াজের একটি চলচ্চিত্র দেখছি। রিয়াজ কঠিন প্রেমে মজে আছেন। তিনি কোন এক জায়গা থেকে ফিরে এসে তার বন্ধু দিলদারের পাশে বসে আনমনে কথা বলে যাচ্ছেন। রিয়াজ এক সময় খেয়াল করলেন, দিলদার কোনো সাড়াশব্দ করছেন না। রিয়াজের মুখ দেখে বোঝা গেল, তিনি বেশ হকচকিয়ে গেছেন। হাত দিয়ে পাশে থাকা দিলদারের মনোযোগ আকর্ষণ করতে গিয়ে রিয়াজ বুঝতে পারলেন, ভিলেনের দল দিলদারকে জখম করে আধামরা করে ফেলেছে। 

প্রিয় পাঠক, বলুন তো, নায়ক রিয়াজ এরপর কী করেছিলেন? নিশ্চয়ই এমন প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে অনেকেই বলছেন, ‌‘কী আর করেছিল, হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে বন্ধুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল।’

আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, রিয়াজ তা করেননি। তিনি বন্ধুকে নিয়ে গেলেন ভিলেনদের আস্তানায়। এক এক করে সবাইকে পিটিয়ে তিনি দিলদারকে বলছিলেন, যে তার এই অবস্থা করেছে, তাকে চিনিয়ে দিতে। 
নায়কের এমন হিতাহিত জ্ঞান দেখে সেদিন বিরক্ত তো হয়েছিলামই, সেই সাথে এমন নির্বুদ্ধিতা দেখে হাসিও চেপে রাখতে পারিনি। বন্ধুর প্রতি নায়ক রিয়াজের এমন অভাবনীয় (!) ভালোবাসার এই ঘটনা থেকে, নায়ক রুবেলকে আমার কেন ভালো লাগছে না, সেই উত্তর পেয়েছিলাম।

আমি সেদিন উপলব্ধি করেছিলাম, আমি প্রশ্ন করতে শিখছি, চিন্তা করতে শিখছি। যে দৃশ্য দেখে নায়ককে আমার রীতিমতো বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মনে হয়েছিল, সেই একই দৃশ্যে নিশ্চয়ই অনেক মানুষ বন্ধুর প্রতি বন্ধুর গভীর ভালোবাসা অনুভব করে আবেগ-উত্তেজনায় হাত তালি দিয়েছে। বোধোদয় হওয়ার পর আমি এফডিসি-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্র দেখা বন্ধ করে দিলাম, কিন্তু তখনো আমার কাছে বলিউডের শাহরুখ, সালমান, অক্ষয় নমস্য ব্যক্তি।  

আরেকটু বড় হওয়ার পর দেখলাম, চিন্তায়-মননে আমার চেয়ে এগিয়ে থাকা মানুষজন বলিউডের মুভিকে গার্বেজ বলছে, তাঁরা বুদ হয়ে আছে হলিউডের মুভি, কিংবা টানটান উত্তেজনার কোনো টিভি সিরিজে। একসময় এফডিসি-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের মতো, বলিউডের শুধুমাত্র প্রেম-ভালোবাসা ও নাচ-গান কেন্দ্রিক চলচ্চিত্রকেও বাদ দিয়ে দিলাম। 

আমার উপলব্ধি হলো, মানুষ তো দারুণ একটি প্রাণী। সে চাইলেই নিজের মস্তিস্ককে শাণিয়ে নিয়ে নিজেকে উন্নত করতে পারে। এখন আমি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির পুরো ব্যাপারটিকে একটি অসীম সাইজের বিল্ডিং-এর মতো কল্পনা করি। কেউ হয়তো এই বিল্ডিং-এর পাঁচতলা দেখে দুনিয়াটা দেখছেন, কেউ হয়তো ৫০ তলা থেকে দুনিয়াটা দেখছেন, আবার কেউ কেউ হয়তো নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মস্তিস্ককে শাণিয়ে নিজেকে ৫০০ তলায় গেছেন।

প্রিয় পাঠক, এখন আপনিই বলুন, পাঁচতলা থেকে যিনি দুনিয়া দেখছেন, তিনি কী দেখবেন, কতটুকুই বা দেখতে পারবেন? আর যিনি ৫০ তলা থেকে দুনিয়া দেখছেন, তিনি কী দেখবেন? নিশ্চয়ই দুজনের দেখার-ভাবার পরিধি এক হবে না। ক্লাস নাইনে বেগম রোকেয়ার একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম। সেখানে একটি লাইন ছিল এমন- ‌‘অশিক্ষিত চক্ষু যেখানে ধূলি-কর্দম দেখে, শিক্ষিত চক্ষু সেখানে হীরা-মানিক দেখিতে পায়’।   

একটি ছোট উদাহরণ দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। অন্য অনেকের মতো হুমায়ূন আহমেদ আমার প্রিয় লেখক। হুমায়ূন ভক্তমাত্রই এটি জানেন যে, হুমায়ূনের প্রথম বই প্রকাশে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন আহমদ ছফা। যেই হুমায়ূনের প্রথম বই বগলদাবা করে প্রকাশকদের দ্বারে দ্বারে ছফা ঘুরেছিলেন, শেষের দিকে সেই হুমায়ূন সম্পর্কে ছফার মূল্যায়ন ছিল এমন, ‌‘জনপ্রিয়তার দিক থেকে দেখতে গেলে হুমায়ূন শরৎচন্দ্রের চাইতে বড়। মেরিটের দিক থেকে দেখতে গেলে হুমায়ূন নিমাই ভট্টাচার্যের সমান। আর হুমায়ূনের প্রশ্নটা হচ্ছে--হি ইস রাইটিং ফর বাজার।’

আহমদ ছফার মুখে এমন কথা শুনে বেশ কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন কিছুটা হলেও তার এই কথার মর্ম ধরতে পারি। 

আশা করছি, ‌‘যার যা পছন্দ, সে তাই খায়’ এবং ‌‘সময়ের সাথে খাওয়ার রুচির পরিবর্তন হয়’'– আমার এই দুই ভাবনার সাথে আপনারা কেউ কেউ এতক্ষণে একমত হয়েছেন। একমত না হলেও অবশ্য কিছু যায়-আসে না। ভিন্ন মত না থাকলে আমরা আর সভ্য কেন? 

অনেক পাঠকেরই এত দীর্ঘ লেখা পড়ে ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে। কিন্তু আরও একটি প্রশ্নের উত্তর না খুঁজলেই না। পাবলিক যা খায়, তাই কি তাকে খেতে দেয়া উচিত? 

না, পাবলিক যা খায়, তাই তাকে খেতে দেওয়া উচিত না। কারণ বেশির ভাগ পাবলিকের রুচিই অত্যন্ত নিম্নমানের। তারা বাজে খাবারটাই খেতে চায়। নিজের রুচি ভালো, এই ভেবে অহংকার করা কিংবা অন্য কাউকে ছোট করার কিছু নেই।  বরং কেন তারা বাজে খাবারটিই খেতে চায়, সেটি একটু ভেবে দেখতে পারি আমরা। 

আমরা বেশিরভাগ মানুষ আমাদের মস্তিস্ককে প্রস্তুত করেছি অলসভাবে। যদিও এর পেছনে আমাদের পরিবার, সমাজ, শিক্ষা ব্যবস্থার ভূমিকাটাই বেশি। অন্যদিকে বই পড়ে নিজেকে উন্নত করার প্রক্রিয়াটি একটি লম্বা এবং চলমান প্রক্রিয়া। এতে মস্তিস্ককে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয়। যেটি আমাদের বেশ যন্ত্রণা দেয়।

মানুষের চিন্তা বিকশিত করার যে প্রসেস, সেটি নির্ভর করে ‌‘শিক্ষা’-র ওপর। শিক্ষা শব্দটিকে আবার আমাকে অতি সতর্কতার সাথে ইনভার্টেড কমাবন্দী করতে হল। কারণ আমাদের বঙ্গ সমাজে তথ্য গলাধঃকরণকেই আমরা শিক্ষা বলে থাকি। এই শিক্ষা দিয়ে চিন্তার পরিধি কতটুকু বাড়ে, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমাদের দেশের ‌‘শিক্ষিত’ মানুষেরা দেশের যা অবস্থা বানিয়েছেন, তাতে এই শিক্ষাকে কেউ যদি উড়িয়ে দিতে চান, তাকে আমি দোষ দেব না।  

কথা হলো, বই পড়ে নিজেকে শিক্ষিত বা উন্নত করার প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট পরিশ্রমের কাজ। আমরা বেশিরভাগ মানুষ আমাদের মস্তিস্ককে প্রস্তুত করেছি অলসভাবে। যদিও এর পেছনে আমাদের পরিবার, সমাজ, শিক্ষা ব্যবস্থার ভূমিকাটাই বেশি। অন্যদিকে বই পড়ে নিজেকে উন্নত করার প্রক্রিয়াটি একটি লম্বা এবং চলমান প্রক্রিয়া। এতে মস্তিস্ককে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হয়। যেটি আমাদের বেশ যন্ত্রণা দেয়। সব মিলিয়ে সুযোগ থাকলেও বেশির ভাগ মানুষ নিজেদের উন্নত করতে চায় না। তারা চিন্তাহীন আরামের একটি জীবন বেছে নেয়। মস্তিস্কের সাধারণ ক্রিয়াকলাপকে চিন্তা করা বলে না। চিন্তাহীন একজন মানুষ আর একটি পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। 

প্রিয় পাঠক, শিক্ষায় অংশগ্রহণ করা জনগোষ্ঠীর যদি এই অবস্থা হয়, তবে যারা এতে অংশ নেয়ার সুযোগ পান না, কিংবা অন্যভাবে বললে আমাদের যেই বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠী  নিজেদের উন্নত করার সুযোগ পান না, তাদের কথা কি আপনাদের আলাদা করে ব্যাখ্যা করতে হবে? আশা করছি, সেই উত্তর আপনারা নিজেরাই খুঁজে নেবেন।

(চিন্তায় উন্নত হতে হলে বই পড়তেই হবে, এমনটা পুরোপুরি দাবি করতে পারছি না। কারণ এমন অনেককেই দেখেছি, যারা নিজেদের চারপাশের পরিবেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের উন্নত করছে। আমাদের মাশরাফি বিন মুর্তজা কিংবা সাকিব আল হাসান খুব বইপত্র পড়েছেন, এমনটা কখনো শুনিনি, কিন্তু পরিবেশের প্রভাবে, নিজেদের চেষ্টায় তারা সফল তো হয়েছেনই, তাদের কথা শুনলেও বোঝা যায় তারা চিন্তা-ভাবনায় যথেষ্ট উন্নত। কিন্তু এমন স্বশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা অতি নগণ্য।)

বর্তমান সময়ে ফেসবুক ‌‘শিক্ষিত’, ‌‘অশিক্ষিত’, ‌‘উন্নত’, ‌‘অনুন্নত’ সব মানুষকে এক জায়গায় নিয়ে এসেছে। যা দেখে আমাদের মনে হচ্ছে, কলি যুগ সন্নিকটে। বাস্তবতা হলো, মানুষের মনের ‌‘বিষ’, কিংবা ‌‘রুচির দৈন্য’ এর সবই আমাদের সমাজে বিদ্যমান ছিল। ফেসবুক কেবল নগ্নভাবে সব সামনে আনছে মাত্র। এর বেশি কিছুই না। তবে ফেসবুক মানুষের মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাদের আরও পশু করে তুলছে কি না, সেটি নিয়ে বিষদ গবেষণা করা যেতে পারে।  

আমার এই লেখাটি কিন্তু মোটেই সাংবাদিক শাহরিয়ার ফিরোজকে কাউন্টার দেয়ার উদ্দেশ্যে লেখা নয়।  শাহরিয়ার ফিরোজের লেখা আমি মুগ্ধ হয়েই পড়েছি। অনলাইনের যুগে মিডিয়ার দৈন্য দশা নিয়ে উনি সময়োপযোগী কথাই বলতে চেয়েছেন। আমি পুরো ব্যাপারটি নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ বললাম মাত্র। আশা করছি, আমার এই লেখা অনেক পাঠকদের চিন্তার খোরাক যোগাবে।  

কেউ কেউ নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে পাবলিক যা চাইবে, তাই ‘খেতে’ দেবে আবার কেউ কেউ শাহরিয়ার ফিরোজের মতো নীতি নৈতিকতাকে মাথায় রেখে রুচিশীল পাঠকশ্রেণী গড়ে তুলবেন। ভালো-মন্দের এই টানাটানিতেই তো এত দূর এল মানব সভ্যতা।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×