পুরো দল সঙ্গে নিয়ে ধোনির সেই অবাক প্রেস কনফারেন্স!

উৎপল শুভ্র

১৮ মে ২০২১

পুরো দল সঙ্গে নিয়ে ধোনির সেই অবাক প্রেস কনফারেন্স!

পুরো দলকে সঙ্গে নিয়ে প্রেস কনফারেন্সে মহেন্দ্র সিং ধোনি। নটিংহামে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ছবি: ইএসপিএনক্রিকইনফো

২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পরদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ। বাংলাদেশ পর্ব শেষে মহেন্দ্র সিং ধোনির অপেক্ষায় সাংবাদিককূল। কিছুক্ষণ পর সংবাদ সম্মেলন কক্ষের পেছনে কাচের দেয়ালের ওপাশে একে একে ভিড় করতে লাগলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। সাংবাদিকেরা তো যারপরনাই বিস্মিত। অনেক সাধ্যসাধনায় যেখানে ভারতীয় দলের অতিরিক্ত কাউকে সংবাদ সম্মেলনে আনা যায় না, সেখানে বিনা নোটিশে পুরো টিমই চলে আসছে নাকি! তা-ই এসেছিল।

প্রথম প্রকাশ: ৬ জুন ২০০৯। প্রথম আলো।

পরদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ। কিন্তু কাল দুপুরে নটিংহামের ট্রেন্ট ব্রিজের ঘটনাপ্রবাহে কারও মনে হতেই পারত, ধোনির দলের প্রতিপক্ষ বোধহয় শুধু বাংলাদেশ নয়। বাংলাদেশ দৃশ্যমান প্রতিপক্ষ, তবে অদৃশ্য প্রতিপক্ষ আরও বেশি অস্বস্তিকর। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম!

বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক-কোচের সংবাদ সম্মেলন শেষে মহেন্দ্র সিং ধোনির অপেক্ষায় সাংবাদিককূল। কিছুক্ষণ পর সংবাদ সম্মেলন কক্ষের পেছনে কাচের দেয়ালের ওপাশে একে একে ভিড় করতে লাগলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। সাংবাদিকেরা তো যারপরনাই বিস্মিত। অনেক সাধ্যসাধনায় যেখানে ভারতীয় দলের অতিরিক্ত কাউকে সংবাদ সম্মেলনে আনা যায় না, সেখানে বিনা নোটিশে পুরো টিমই চলে আসছে নাকি!

তা-ই এল। কোচ গ্যারি কারস্টেন ও তাঁর কোচিং সহযোগীসহ পুরো দল। মঞ্চে চেয়ার মাত্র তিনটি। তার দুটিতে বসলেন ধোনি আর কারস্টেন। অন্যরা তাদের ঘিরে গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে। বিস্ময়ের মাত্রা চরমে তুলে দিয়ে ধোনি একটা লিখিত বিবৃতি পড়তে শুরু করলেন। যেটি পড়া শেষ করেই বেরিয়ে গেল পুরো দল। আরে, পরদিনের ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনের কী হবে? বীরেন্দর শেবাগ হাসতে হাসতে বললেন, ‘হলোই তো! আর কী চাই?’

ভারতীয় দলের মিডিয়া ম্যানেজার পরে সাংবাদিকদের ধোনির ওই লিখিত বিবৃতির কপি সরবরাহ করায় সেটির বঙ্গানুবাদ আপনার জন্য তুলে দেওয়া যাচ্ছে। আগে বরং সেটি পড়ে নিন—

এই বার্তাটা ভারতের জনগণ ও বিশ্বজুড়ে ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের উদ্দেশে এবং এটি দেওয়া হচ্ছে পুরো দলের পক্ষ থেকে (যে কারণে আমরা সবাই এখানে)।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতিরত আমরা দারুণ একতাবদ্ধ একটা দল। টিম স্পিরিট অতীতের যেকোনো সময়ের মতো ভালো, খেলোয়াড়েরা সবাই মাঠে ও মাঠের বাইরে একে অন্যের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সম্প্রতি আমার ও শেবাগের মধ্যে বিরোধের যে খবর বেরিয়েছে, তা মিথ্যা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন সাংবাদিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের দলে যে দারুণ ঐক্য বজায় আছে, আমাদের ভক্ত ও সমর্থকেরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারেন।

অব্যাহত সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আমাদের সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা এই টুর্নামেন্টে আপনাদের বিনোদিত করতে উন্মুখ হয়ে আছি, যেটিতে আমরা খুব ভালো প্রস্তুতির আত্মবিশ্বাস নিয়ে টিম ইন্ডিয়া হিসেবে একতাবদ্ধ হয়ে খেলতে নামছি।

ভারতীয় সাংবাদিকদের বেশির ভাগের কথা শুনে মনে হলো না, ধোনির বিবৃতি তাঁরা বিশ্বাস করছেন। শেবাগের সঙ্গে ধোনির বিরোধের খবরটি কবে ছাপা হয়েছে—প্রশ্ন করায় একজন বললেন, ‘এটি তো গত দুই-তিন বছর ধরেই ছাপা হচ্ছে।’

কিন্তু ধোনি যে বললেন, ‘সম্প্রতি যে খবর বেরিয়েছে’! সাম্প্রতিক খবরটার জন্ম গত বুধবার ওভালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের প্রস্তুতি ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনের ঘটনায়। ফিটনেস সমস্যার কারণে শেবাগ ওই ম্যাচে খেলেননি। শেবাগের অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্নে ধোনি জবাব দিয়েছেন, ‘ওকে জিজ্ঞেস করুন।’ এই উত্তর থেকেই দুই-দুইয়ে চার মিলিয়ে নিয়েছেন কেউ কেউ। সেই ‘চার’-এর কথা লিখেও দিয়েছেন অনেকে। এরই জের ধোনির ওই নাটকীয় লিখিত বিবৃতি।

বীরেন্দর শেবাগের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা চলছে, এটা মিথ্যা প্রমাণ করতেই পুরো দল নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ধোনিসাংবাদিকেরা পাল্টা আক্রমণ পছন্দ করেন না। ভারতীয় দল বেরিয়ে যাওয়ার পরই আইসিসির মিডিয়া কর্মকর্তার ওপর চড়াও তাদের অনেকে। তাদের যৌক্তিক প্রশ্ন—ধোনি তাঁর কথা বলেছেন, ভালো কথা। কিন্তু পরদিনের ম্যাচের আগে আইসিসি নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন কেন হবে না?

আইসিসির মিডিয়া কর্মকর্তা ছুটলেন ধোনির পিছু পিছু। কিন্তু ধোনি সংবাদ সম্মেলনকক্ষ থেকে বেরিয়েই চড়ে বসেছেন গাড়িতে। গন্তব্য—লন্ডনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ব্যতিক্রমী খবরের রসদ পেয়ে উত্তেজিত সাংবাদিকদের দীর্ঘ অপেক্ষার পর এলেন গ্যারি কারস্টেন। একটু আগে ধোনির পাশে বসেই একাত্মতা ঘোষণা করে গেছেন। এবার আরও সুনির্দিষ্টভাবে দাঁড়ালেন দলের পাশে। যা বললেন তার অর্থ হলো—ধোনি ঠিকই করেছে। সংবাদমাধ্যমের অবশ্যই দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। যা মনে হয় লিখে দেওয়াটা অন্যায়।

পুরো ব্যাপারটা নিয়ে তাঁর বিরক্তির আসল কারণটাও ব্যাখ্যা করলেন, ‘আমাদের আসল শক্তিই টিম স্পিরিট। সেটিকে ধাক্কা দেয়, এমন কিছু হলে আমরা কেন তা সহ্য করব?’

মহেন্দ্র সিং ধোনি তা করেননি। ভারতীয় দলও নয়। তবে প্রতিবাদের এই অভিনব পথ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগে আরেকটি লড়াইয়েরও বোধহয় সূচনা করে দিল। মহেন্দ্র সিং ধোনি বনাম ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।

বিশ্বকাপের চেয়েও রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠার সব উপাদানই মজুদ এতে!

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×