চার বছরে সিটির তৃতীয় লিগ জয়

এক ইউনাইটেড ভক্তও যখন মুগ্ধ গার্দিওলায়

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

স্বপ্ন চন্দ

১২ মে ২০২১

এক ইউনাইটেড ভক্তও যখন মুগ্ধ গার্দিওলায়

পেপ গার্দিওলা। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ নেন এবং সেই চ্যালেঞ্জে জেতেন। সেটাও তাঁর নিজস্ব স্টাইলে। ছবি: গেটি ইমেজেস

ঝাঁ-চকচকে স্টেডিয়াম, বিশ্বসেরা ফ্যাসিলিটি, বিশ্বসেরা প্লেয়ার–সবই আছে ম্যানচেস্টার সিটির। আরও কত ক্লাবেরই তো আছে! তাহলে চার বছরে সিটির তৃতীয় প্রিমিয়ার লিগ জয়ের রহস্য কী? তাদের যে একজন পেপ গার্দিওলাও আছেন! ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কঠিন সমর্থক হয়েও যাঁকে কুর্ণিশ না করে পারছেন না লেখক।

লিগের নিয়তি জানা হয়ে গেছে অনেক আগেই। ম্যানচেস্টারের দুই ক্লাব ৩২ ম্যাচ শেষে যখন ৭৪ আর ৬৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে, ২০১১-১২ এর অন্ধকার সিজনই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ভক্তদের দেখাচ্ছিল নিভু নিভু আশার আলো। সেবারও ৩২ ম্যাচ পর ম্যানচেস্টারকে দুই ভাগ করে রাখা লাল ও নীলকে আলাদা করে রেখেছিল আট পয়েন্টই। সেবার কেই-বা ভেবেছিল, আগুয়েরো এমন কাণ্ড ঘটিয়ে বসবেন! এবার উল্টোটা তো হতেই পারে। তা তো পারেই। তবে পরিস্থিতি তখন এমনই যে, সেই স্বপ্ন দেখাটাও দিবাস্বপ্নেরই নামান্তর। 

ম্যানচেস্টার সিটি তখন চলছে তিন-এর নামতার ছন্দে। হিসাব খুব সহজ। এক ম্যাচ সমান তিন পয়েন্ট, দুই ম্যাচ সমান ছয়…। যার ছন্দপতন লিগ রেকর্ড ভেঙে, ১৫ ম্যাচ পর। কে বলবে, দুই মাস আগেই, লেস্টার সিটি ইতিহাদে হেসেখেলে দিয়ে এসেছে পাঁচ গোল! সিটিকে নিয়ে উঠে গেছে হায় হায় রব! আট ম্যাচ পর লিগ পজিশন ১৩। ডিফেন্স ভঙ্গুর, একজন স্ট্রাইকার না হলে চলছেই না। কত সমস্যা! রুবেন ডিয়াস দেবদূত হয়ে এলেন প্রথম সমস্যার সমাধান হয়ে। কিন্তু স্ট্রাইকার, তার কী হবে? তা স্ট্রাইকার খেলাতেই হবে কেন? উত্তরে পাল্টা প্রশ্নটা কাল্পনিক হলেও গার্দিওলার মনে যে এমন কিছুই ছিল, অনুমান করাই যায়।

এটাই টিপিক্যাল পেপ গার্দিওলা। সবাই যখন সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত, তাঁর চিন্তা আউট অব দ্য বক্স সমাধানে।১৩ বছরে তো আর কম সমস্যায় পড়েননি। সমাধানও করেছেন। তবে মানুষ বোধ হয় তাঁর প্রাপ্যটা তাঁকে দেয়নি। স্পেনে থাকতে শুনেছেন লা মাসিয়ার সোনালি প্রজন্মের কারণেই তাঁর যত সাফল্য, আর জার্মানিতে শুনেছেন বুন্দেসলিগায় 'বায়ার্ন তো জিতবেই, এ আর নতুন কি!'–তাঁর থাকা-না থাকাটা যেন কিছু আসে যায় না। পারলে প্রিমিয়ার লিগে এসে কিছু করে দেখাক। এসব কথা গার্দিওলাও শুনেছেন কি না জানা নেই, তবে তিনি ঠিকই এসেছেন।   

তাতেই যে তির্যক কথাবার্তা সব থেমে গিয়েছে, তা নয়। ট্রান্সফার উইন্ডোতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ওড়ানো দিয়ে শুরু করে আরও কত কিছু নিয়ে কত প্রশ্ন। তিনিও নিয়ে এসেছেন নতুন নতুন উত্তর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যা ভ্রূ কুঁচকে দেয় সবার। কখনো যে তা ব্যাকফায়ার করেনি, তা না (গত কয়েক সিজনের চ্যাম্পিয়নস লিগ যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ), তবে দশবারের নয় বার ঠিকই কাজে দেয় তা। প্রথমে ভ্রূ কুঁচকে গেলেও পরে মনে হয়, আরে, আসলেই তো, এটা তো এভাবে করাই যায়। আগে কেন ভাবিনি!

সাফল্যের প্রতিচ্ছবি।  ছবি: ইএসপিএনের সৌজন্যে

সেই অকল্পনীয়কে ভাবার ক্ষমতাতেই গার্দিওলার মাস্টারি। সেটা ফুলব্যাককে ওভারল্যাপে না পাঠিয়ে মাঝমাঠে শর্টে আসা হোক বা ছয় মিডফিল্ডার নিয়ে স্ট্রাইকার ছাড়া সিস্টেম, সেটা স্পেন হোক বা জার্মানি বা ইংল্যান্ড– অ্যাডাপ্টিবিলিটির চূড়ান্ত উদাহরণ পেপ গার্দিওলা।

চার বছরের বেশি দায়িত্বে না থাকাটাকে নিয়ম করে ফেলেছিলেন। গত সিজনে অলিম্পিক লিওঁর কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায়ের পর তাই সিটিতে গার্দিওলার শেষ দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। সিটির ইতিহাসের পাতায় এরই মধ্যে স্বর্ণাক্ষরে লেখা তাঁর নাম। তাতে কী, কাজ তো এখনও বাকি। লক্ষ্য সেই একটাই। যার পেছনে দশ বছর ধরে ছুটে চলা।  

২৯ মে বহু আকাঙ্ক্ষার সেই চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল। গতকাল ওল্ড ট্রাফোর্ডে লেস্টার সিটির জয়ে জেতা হয়ে গেছে চার বছরে তৃতীয় লিগ। কাপ জেতা হয়ে গেছে আরও আগে। পাঁচ বছরের মহাকাব্যের পাণ্ডুলিপির শেষটা জানেন শুধু ফুটবল বিধাতাই, তা বিয়োগান্ত হলে বড় অবিচারই হবে পেপ গার্দিওলার প্রতি।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×