টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের জয়-পরাজয়ের খেরোখাতা

উৎপল শুভ্র নির্বাচিত পাঠকের লেখা

জুবায়ের আহমেদ

৮ মে ২০২১

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের জয়-পরাজয়ের খেরোখাতা

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ পার করে ফেলেছে দুই যুগ, সিরিজ খেলেছে ৬৩টি। কিন্তু এই সিরিজগুলো থেকে বাংলাদেশের অর্জন কী? পরিসংখ্যান ঘেঁটে তা-ই জানানোর চেষ্টা করেছেন এক পাঠক।

১৯৮৬ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া বাংলাদেশ অনিয়মিতভাবে ক্রিকেট খেলতে থাকে পরবর্তী প্রায় এগারো বছর। ১৯৯৭ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের মাধ্যমে অর্জন করে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা৷ সেখানে পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ২০০০ সালে টেস্ট ক্রিকেটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।

তবে টেস্ট ক্রিকেটে ২১ বছর পেরোলেও ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাকের এই ফরম্যাটে টাইগারদের অবস্থান বেশ নাজুক। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের কম-বেশি সফলতা থাকলেও সাদা পোশাকের টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিকতার বালাই মাত্র নেই। ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলীন এই সংস্করণে হঠাৎ হঠাৎ সফলতা পাওয়ার বিপরীতে ২০১৯ সালে নবাগত আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরাজয় এবং ঘরের মাঠেই উইন্ডিজের খর্বশক্তির দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়া--এই ফরম্যাটটিতে এখনো পায়ের তলার মাটি যে শক্ত হয়নি বাংলাদেশের, তারই প্রমাণ দেয়। আমাদের তাই খুশি থাকতে হয় ছোট ছোট অর্জনেই। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে হারানো, শ্রীলংকার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারানো, সাকিব আল হাসানের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হওয়া, সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে মোহাম্মদ আশরাফুলের টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড, সোহাগ গাজীর একই টেস্টে সেঞ্চুরি আর হ্যাটট্রিকের রেকর্ড, টেস্ট অভিষেকেই ১০ নাম্বারে নেমে আবুল হাসান রাজুর সেঞ্চুরির রেকর্ড--টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য মোটাদাগে এগুলোই।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে অর্জন বোধ হয় সাকিবই। ছবি: এএফপি

ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে অভিষেক টেস্ট থেকে শুরু করে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার সাথে খেলা দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ পর্যন্ত ৬৩টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে তিন ম্যাচের সিরিজ ছিল মাত্র তিনটি। একটি করে পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও জিম্বাবুয়ের সাথে। সাতবার খেলেছে মাত্র এক ম্যাচের সিরিজ। বাকি ৫৩টি সিরিজ ছিল দুই ম্যাচের।

তিন ম্যাচের তিনটি সিরিজের মধ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল মুশফিক বাহিনী। টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য এই সিরিজেই। এছাড়া ২০০৩ সালে পাকিস্তানের সাথে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হলেও মুলতান টেস্টে প্রায় জিততে জিততে শেষে ইনজামামের সেঞ্চুরি ও আম্পায়ারদের ভুলের খেসারত দিয়ে এক উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। অপর তিন ম্যাচের সিরিজ ছিল ২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, সেখানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ।

২০০০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২৩ ম্যাচ খেলে ১৪ জয়, ৯২ পরাজয় ও ১৭ ম্যাচ ড্র করে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ ৭টি জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ২২ ম্যাচ খেলেছে এবং সর্বোচ্চ ১৭ ম্যাচে হারও তাদের বিপক্ষেই। সর্বোচ্চ চারটি ম্যাচ ড্র-ও শ্রীলংকার বিপক্ষেই। ২য় সর্বোচ্চ ১৮টি ম্যাচ খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ২য় সর্বোচ্চ ১২টি করে পরাজয়ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই, সমান সংখ্যক পরাজয় আছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও।

বাংলাদেশের খেলা ৬৩ সিরিজের মধ্যে সিরিজ জিতেছে পাঁচটি, এর মধ্যে উইন্ডিজের সাথে দুটি ও বাকি তিনটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আটটি সিরিজ ড্র। অপর ৫০টি সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের সাথে একমাত্র ম্যাচে পরাজয় ছিলো সবচেয়ে লজ্জাজনক। ৫০টি সিরিজ পরাজয়ের মধ্যে ৩৩টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। ১ ম্যাচের সিরিজ পরাজয়কে হোয়াইটওয়াশ হিসেবে ধরা হয়নি।

ড্র হওয়া ৮ সিরিজের মধ্যে দাপুটে ড্র ছিল ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (১-১) এবং ২০১৭ সালে শ্রীলংকা ও অস্ট্রেলিয়ার সাথে ১-১ সমতায় শেষ হওয়া সিরিজগুলোতে। এই তিনটি সিরিজেই তিন শক্তিশালী দলকে একটি করে ম্যাচে পরাজিত করে টাইগাররা।

সর্বশেষ শ্রীলংকার বিপক্ষে ষষ্ঠ অ্যাওয়ে টেস্ট সিরিজ খেলতে গিয়ে পঞ্চমবারের মতো সিরিজ পরাজয় বরণ করে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৭ সালে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-১ সমতায় ড্র করে ফেরার পর এবার সিরিজের প্রথম টেস্টে দাপুটে ড্র করলেও ২য় টেস্টে শেষ রক্ষা হয়নি মুমিনুল বাহিনীর। অভিষিক্ত স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমার স্পিন বিষে নীল হয়ে ১-০ ব্যবধানে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। এটি শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের নবম সিরিজ পরাজয়, শ্রীলংকার মাটিতে পঞ্চম। সদ্য সমাপ্ত ম্যাচটি শ্রীলংকার বিপক্ষে ২২তম ম্যাচে ১৭তম পরাজয়, বাকি পাঁচ ম্যাচের চারটিই শেষ হয়েছিল নিষ্ফলা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষিক্ত এক বাঁহাতি স্পিনারের স্পিন বিষেই নীল হয়েছে বাংলাদেশ। ছবি: এসএলসি

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০৯ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে ম্যাচ ও সিরিজের ফলাফলে পরিবর্তন আনা শুরু করে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে গল টেস্টে বীরদর্পে ড্রয়ের মাধ্যমে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এড়ানো শুরু করে বাংলাদেশ; অতঃপর ২০১৪, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০২১ সালে সিরিজ খেললেও হোয়াইটওয়াশ হয়নি। ২০১৭ সালে শ্রীলংকার মাটিতে বাংলাদেশের শততম টেস্টে জয় পেয়ে লঙ্কানদের প্রথমবারের মতো হারায় বাংলাদেশ এবং এই সিরিজেই প্রথমবারের মতো তাদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ ড্র করে। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দশ সিরিজে নয়টি পরাজয়ের বিপরীতে একটি সিরিজ ড্র হয়। এছাড়া ২০০১ সালে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো খেলতে নেমে হেরেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচেই মোহাম্মদ আশরাফুল সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন, যা এখনো রেকর্ড হিসেবে টিকে আছে।

আইসিসির সর্বশেষ টেস্ট সদস্য আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে বাংলাদেশ দল আয়ারল্যান্ডের সাথে ম্যাচ খেললেও এখনো আয়ারল্যান্ডের সাথে টেস্ট খেলা হয়নি।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×