শুভ্র.আলাপের আড্ডায় টস নিয়ে পাইলটের সন্দেহ!

শুভ্র.আলাপের আড্ডায় টস নিয়ে পাইলটের সন্দেহ!

শুভ্র.আলাপে খালেদ মাসুদ পাইলট ও উৎপল শুভ্র

শুভ্র.আলাপে অতিথি হয়ে এসে খালেদ মাসুদ পাইলট কথা বললেন পাল্লেকেলেতে বাংলাদেশের টেস্ট বাঁচানোর সম্ভাবনা নিয়ে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুই অঙ্কের ঘরে আউট হওয়া নিয়েও মুখ খুলতে হয়েছে তাঁকে। তুলে গেলেন একটি প্রশ্নও, `দ্বিতীয় টেস্টের টসটা কি আদতেই শ্রীলঙ্কা জিতেছিল?`

সেবারও বাংলাদেশ গিয়েছিল শ্রীলঙ্কাতেই। সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা নেমেছিল কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে। তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ২৩৩। সেখান থেকে চতুর্থ দিনের খেলার ইতি ঘটল মাত্র ২৮ বলে। দর্শকদের কেউ একটু দেরি করে মাঠে এসে হয়তো অবাক হয়ে ভেবেছেন, 'বৃষ্টি-টৃষ্টি নেই, গোটা মাঠ ঝকঝক করছে রোদে, খেলা হচ্ছে না কেন!' এমনকি খেলা কাভার করতে মাঠে থাকা উৎপল শুভ্রর কাছে ফোন গিয়েছিল বাংলাদেশ থেকেও। ওই একই জিজ্ঞাসা নিয়ে--কী ব্যাপার, খেলা হচ্ছে না কেন?

২০০৭ সালের সেই সফরের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে আবারও। ফিরিয়ে আনছে পাল্লেকেলেতে চলমান টেস্ট। এবার শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৪৩৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশ তুলেছে ১৭৭, ম্যাচ বাঁচাতে পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের সম্বল সেই পাঁচ উইকেটই। ম্যাচ জয়ের প্রশ্ন তো অবান্তরই; মনে উল্টো শঙ্কায় ঘেরা প্রশ্ন জাগছে, শেষ দিনে বাংলাদেশ কতক্ষণ টিকবে? চৌদ্দ বছর আগের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তো?

উৎপলশুভ্রডটকম-এর ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজ উপলক্ষে নিয়মিত আয়োজন শুভ্র.আলাপে অতিথি হয়ে আসা খালেদ মাসুদ পাইলটকে একদম শুরুতেই ফেলা হলো এই প্রশ্নের মুখে। পাইলটের উত্তর শুনে তাঁকে আশাবাদীদের দলেই ফেলতে হচ্ছে। ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয়ের সম্ভাবনা ৯০-৯৫ শতাংশ বলে মানছেন, তারপরও লিটন দাস-মেহেদি হাসান মিরাজরা মিলে ম্যাচটা বাঁচিয়ে ফেলবেন বলেও একটা আশার রেখা উঁকি দিয়ে যাচ্ছে তাঁর মনে।

অনুষ্ঠানে আলাপ হলো বাংলাদেশের চতুর্থ দিনের ব্যাটিং নিয়েও। এত বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নামলে যা হয়, কারও ব্যাট থেকে বড় একটা ইনিংস আসতেই হয়। সেই বড় ইনিংসটা এলো না কারও ব্যাটেই। দুই অঙ্কের রানে পৌঁছেই ফেরত এলেন প্যাভিলিয়নে। বড় রান আসতে পারত তামিম ইকবালের ব্যাটে, এবারের সিরিজের আগের তিন ইনিংসেই যেমন এসেছিল। তবে দানে দান চার দান আর হলো না; ৯০, ৭৪ আর ৯২-এর পরে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হলেন মাত্র ২৪ রানেই। অবশ্য রমেশ মেন্ডিসের যে বলে আউট হয়েছেন তিনি, সে বলে তাঁর করার ছিল সামান্যই। উৎপল শুভ্র তো বলটির বর্ণনা দিয়ে দিচ্ছেন দুই শব্দেই, 'ড্রিম ডেলিভারি।'

তামিমকে এক ড্রিম ডেলিভারিতে ফিরিয়েছেন রমেশ মেন্ডিস। ছবি: এএফপি

এরপর গোটা দিনে এমন আরও কিছু 'স্বপ্নের মতো' বল করেছেন রমেশ মেন্ডিস। মুশফিকুর রহিমকে ফেরালেন যে বলটায়, সেটিকে ঠিক 'ড্রিম' ডেলিভারি না বললেও উইকেটে পড়ে আচমকা লাফিয়ে ওঠার কারণে সেটিকে 'আনপ্লেয়েবল' বলাই যায়। এর আগেই বার দুয়েক জীবন পাওয়া মুশফিককে যে বড় ইনিংস না খেলতে পারার দায়ে অভিযুক্ত করা যাচ্ছে না, তার কারণও সেটিই।

যা করা যাচ্ছে বাংলাদেশের মিডল-অর্ডারের আরেক স্তম্ভ মুমিনুল হককে। দলীয় ১৩৪ রানের মাথায় তিনি রমেশ মেন্ডিসের বলটিকে ঠিক কীভাবে খেলতে চেয়েছিলেন, বারংবার রিপ্লে দেখেও ঠাহর করা গেল না। খালেদ মাসুদ পাইলট একে 'লেট কাট' বলে কিছুটা সহানুভূতি দেখাতে চাইলেও মুমিনুল বিন্দুবিসর্গ মায়া-দয়া পাচ্ছেন না উৎপল শুভ্রের কাছ থেকে৷ শুভ্র সরাসরিই বললেন, 'ওটা কোনো শটই না। নাথিং শট।' মুমিনুল বলের লেংথের কারণে দোনামোনা ছিলেন বলেই অমনভাবে ব্যাট বাড়িয়ে দিয়েছেন বলেও ধারণা শুভ্রর।

মুমিনুলের শট নির্বাচন ভুল ছিল বলে পাইলট আবার যোগ করছেন সঙ্গে সঙ্গেই, 'টার্নিং উইকেট, যেখানে কখনো বল নামতেও পারে, টার্নও করতে পারে, স্ট্রেইট বলও আসতে পারে; সেখানে লেট কাট খেলা ঠিক না। আমি এখানে সেইফ জোনে থাকব, সোজা ব্যাটে খেলব।'

মুমিনুল যে শট খেলতে গিয়ে আউট হলেন, সেটিকে `নাথিং শট` না বলে উপায় নেই। ছবি: এসএলসি

প্রাভিন জয়াবিক্রমাকে নিয়ে উৎপল শুভ্র নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছিলেন আগের দিনের শুভ্র.আলাপেই। ম্যাচে এখন পর্যন্ত ৮-১৫০ বোলিং ফিগারে গড়ে ফেলেছেন শ্রীলঙ্কার মাটিতে অভিষেকে দ্বিতীয় সেরা বোলিংয়ের কীর্তি। অভিষেকে শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ ৮ উইকেট নেওয়ার কীর্তি তো হয়েই গেছে। পঞ্চম দিনে একটি উইকেট শিকারে হয়ে যাবেন সেরাই। তিনি আর রমেশ মিলে চোখে আঙুল দিয়েই যেন দেখিয়েছেন, ঘূর্ণিজালে ব্যাটসম্যানদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার সামান্যই ভূমিকা আছে। বিশ্লেষণও তো বলছে, প্রথম ইনিংসে যেখানে ২.৯ ডিগ্রি টার্ন আদায় করে নিতে পেরেছিলেন তাইজুল আর মিরাজ, প্রাভিন-রমেশ জুটি মিলে একই উইকেটে বল করে আদায় করেছেন ৪.৭ ডিগ্রি টার্ন।

স্বভাবতই তাই প্রশ্ন জেগেছে, সিরিজ শুরুর আগে শ্রীলঙ্কান স্পিনারদের চেয়ে বাংলাদেশি স্পিনাররা এগিয়ে বলে যে আলোচনা হচ্ছিল, তা কি তবে অসার বলেই প্রমাণিত হচ্ছে? খালেদ মাসুদ পাইলটের কাছে একই প্রশ্ন রাখা হলে তিনি এখনো ব্যাট ধরছেন তাইজুল-মিরাজের হয়েই। উইকেটের চরিত্রের কারণেই বাংলাদেশি স্পিনাররা তাঁদের অভিজ্ঞতা আর ম্যাচিউরিটির সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি বলে তাঁর মত। বাড়তি তথ্য হিসাবে খুবই কৌতূহলোদ্দীপক একটা কথাও বললেন। টস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে এই টেস্টে, এটা তো পাইলট না বললেও সবার কাছে স্পষ্ট। তবে টসকে ঘিরে কোনো ছলচাতুরির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে কি না, এমন একটা সন্দেহ হয়েছে তাঁর। যদিও কারও দিকে স্পষ্ট অভিযোগ তুলছেন না তিনি, তবে বলছেন, 'আপনি টসটা যদি দেখেন, অনেক দূরে কয়েন ছিল, সব লোকাল আম্পায়ার, লোকাল ম্যাচ রেফারি! ধরলাম আমরা হেরে গেছি, তবে এখানে কিন্তু এক পার্সেন্ট সুযোগটাও ক্যাচ করতে হবে। মাঠে সবাই কিন্তু এনিমি।' টসে 'জিতে' চোখ বুঁজে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছেন দিমুথ করুনারত্নে। তবে টসটা করুনারত্নেই জিতেছেন, এ ব্যাপারে মুমিনুল এক শ পার্সেন্ট নিশ্চিত হননি কেন, এ নিয়ে প্রশ্ন পাইলটের। টিভিতেও কয়েনটা দেখানো হয়নি বলে পাইলট আরও যোগ করলেন, 'আপনিও জানেন, টস নিয়ে এমন ঘটনা কিন্তু ডোমেস্টিকেও হয়েছে। বিপিএলেও হয়েছে।' 

সব 'এনিমি'দের রুখে দিয়ে কাল কোনোমতে ম্যাচ বাঁচানো কি সম্ভব হবে? উৎপল শুভ্র বলছেন, বাংলাদেশের এখন একজন খালেদ মাসুদ পাইলট লাগবে। ২০০৪ সালে সেন্ট লুসিয়াতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি করে পাইলটই তো বাঁচিয়েছিলেন বাংলাদেশকে।

পাইলটের সেঞ্চুরিতেই সেন্ট লুসিয়াতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ।

আর পাইলটের মতো একজন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান তো পাল্লেকেলেতেও উইকেটে আছেন! পাইলট ভরসা করছেন সেই লিটনেই, সঙ্গে আগের সিরিজেই সেঞ্চুরি করা মেহেদি হাসান মিরাজেও রাখছেন আস্থা। ব্যাটিংয়ে নামার অপেক্ষায় থাকা বাদবাকি ব্যাটসম্যানদেরও ভূমিকা রাখার সুযোগ দেখছেন তিনি। রান পাঁচ-ছয় যা-ই করুন না কেন, উইকেটে কিছুক্ষণ টিকে থেকে লিটন দাসদের সঙ্গ দিতে হবে তাঁদের। যেমন দিয়েছিলেন তাপস বৈশ্য কিংবা তারেক আজিজ, ২০০৪-য়ের সেন্ট লুসিয়াতে।

বাংলাদেশের জন্যে আশার বাণী বয়ে আনছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসও। সকাল থেকেই পাল্লেকেলের আকাশ ফুঁড়ে বৃষ্টি নামতে পারে অঝোর ধারায়, দুপুরের পর থেকে ৮০ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে প্রায় সব আবহাওয়ার পূর্বাভাসেই।

সিরিজ জয়ের আশায় লঙ্কা গিয়ে প্রকৃতির বদান্যতায় ড্র করাটা কি খুব ভালো দেখাবে? অত নৈতিক জয়-পরাজয় দেখার সুযোগ নেই ভাই! দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে গেছে, তখন রেকর্ডবুকে 'ড্র' লেখাটাকেই পরম প্রাপ্তি বলে ধরে নিতে হচ্ছে।

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×