`কালো আর্মব্যান্ড প্রতিবাদ` নিয়ে গ্রান্ট ফ্লাওয়ার

`অ্যান্ডির সঙ্গে আমিও যোগ দিতে চেয়েছিলাম`

উৎপল শুভ্র

২৮ এপ্রিল ২০২১

`অ্যান্ডির সঙ্গে আমিও যোগ দিতে চেয়েছিলাম`

গ্রান্ট ফ্লাওয়ার। ছবি: এসেক্স ক্রিকেট ক্লাব

অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার থাকতে তাঁর ছায়াতেই ঢাকা পড়ে ছিলেন, তবে ২০০৪ সালে যখন এই ইন্টারভিউ করি, গ্রান্ট ফ্লাওয়ারই তখন জিম্বাবুয়ে দলের সবচেয়ে বড় ব্যাটিং তারকা। খেলা নিয়ে তো মন খুলেই কথা বলছিলেন। বিশ্বকাপে কালো আর্মব্যান্ড বেঁধে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের প্রতিবাদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাবেন বলে ভেবেছিলাম। উল্টো গ্রান্ট ফ্লাওয়ার নির্দ্বিধায় জানিয়ে দিলেন, তিনি নিজেও অ্যান্ডির সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন।

প্রথম প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৪। প্রথম আলো।

অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার তো গেছেনই। ফ্লাওয়ার ভাইদের মা-বাবাও জিম্বাবুয়ে ছেড়ে চলে গেছেন ইংল্যান্ডে। জিম্বাবুয়েতে গ্রান্ট ফ্লাওয়ার এখন একা। তারপরও জিম্বাবুয়েতেই থাকতে চান তিনি, কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই তাঁর কাছে ক্রিকেটার জীবনের মোক্ষ। অ্যান্ডির মতো এটিকে বিসর্জন দিতে রাজি নন। 

উৎপল শুভ্র: অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার চলে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই তো আপনি জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে সিনিয়র ব্যাটসম্যানে পরিণত হয়েছেন। কেমন লাগছে এতে?

গ্রান্ট ফ্লাওয়ার: (হাসি) কাল যা ব্যাট করলাম (হারারে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫ রান করে আউট হয়ে গিয়েছিলেন), তাতে তো আমাকে সবচেয়ে সিনিয়র বলে মনে হওয়ার কথা নয়। সিরিয়াসলি বলি, হ্যাঁ, এই দলে ম্যাচ খেলার দিক থেকে এবং রান করার দিক থেকে বাকি ব্যাটসম্যানদের চেয়ে আমি অনেকটা এগিয়ে। এটা বাড়তি একটা চাপ তো বটেই। তবে আপনি যখন দেশের পক্ষে খেলবেন, চাপ আপনার সঙ্গী হয়েই থাকবে। তবে জিম্বাবুয়ে দলে অনেক প্রতিভাবান তরুণ খেলোয়াড় এসেছে, তারা খুব ভালোও করছে।

শুভ্র: এই বাড়তি দায়িত্ব কি আপনার ব্যাটিংয়ের ধরনে কোনো পরিবর্তন এনেছে?

গ্রান্ট ফ্লাওয়ার: আসলে ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি সব সময়ই একটু রক্ষণশীল ঘরানার। আমি লম্বা সময় ধরে ব্যাট করতে পছন্দ করি। তাই বাড়তি দায়িত্ব আমার ব্যাটিংয়ে কোনো প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয় না।

ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে রক্ষণশীল ঘরানার বলতেন নিজেই । ছবি: ইএসপিএনক্রিকইনফো

শুভ্র: বাংলাদেশের বিপক্ষে গত দুটি সিরিজেই তো আপনি ছিলেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাই ভালোই ধারণা আছে আপনার। গত কিছুদিন বাংলাদেশ দলের খোঁজখবর কি রেখেছেন?

গ্রান্ট ফ্লাওয়ার: বাংলাদেশের খেলা দেখার সুযোগ হয়নি, তবে স্কোরকার্ড দেখেছি। এখানেও দুদিন দেখার পর মানতেই হবে যে, বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। বোলিং অনেক টাইট, অনেক বেশি ডিসিপ্লিনড। ফিল্ডিংয়ে তো গত দুটি সিরিজের তুলনায় অনেক উন্নতি দেখলাম। বাংলাদেশ দলকে আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী বলেও মনে হয়েছে। ভালো কিছু দলের বিপক্ষে ভালো খেলার পর তা অবশ্য হওয়ারই কথা। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছে, ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলেছে আর পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেই গিয়েছিল।

শুভ্র: এই প্রশ্নটা যে আসবে, এটা বোধ হয় আপনার জানাই ছিল। বিষয় অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। বিশ্বকাপে কী করতে যাচ্ছেন, তা কি আপনাকে আগেই বলেছিলেন?

গ্রান্ট ফ্লাওয়ার: হ্যাঁ, ও কী করতে যাচ্ছে, তা আমি জানতাম। এটা করা ভালো হবে না খারাপ হবে, এ নিয়ে আমরা আলোচনাও করেছি। শেষ পর্যন্ত ওর আর হেনরির (ওলোঙ্গা) মনে হয়েছে, এটা করা উচিত। করেছেও, এবং আমি জানি এ জন্য তাদের কোনো অনুতাপ নেই।

শুভ্র: আপনিও যদি অ্যান্ডির মতোই মনে করে থাকেন, তাহলে আপনিও ওদের সঙ্গে যোগ দিলেন না কেন?

গ্রান্ট ফ্লাওয়ার: আমিও যোগ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওরা ভাবল, একজন শ্বেতাঙ্গ আর একজন কৃষ্ণাঙ্গ হলেই ওদের বক্তব্যটা আরও জোরালো হবে। কয়েকজন শ্বেতাঙ্গের সঙ্গে শুধু একজন কৃষ্ণাঙ্গ থাকলে এটিকে একটা বর্ণবাদী রূপ দেওয়া যেত। ওরা যে অবসর নিয়েছিল, তা ঠিক হোক বা ভুল হোক, একজন সাদা আর একজন কালো মিলে তা করায় সেটি অনেক একতাবদ্ধ প্রতিবাদের মতো দেখিয়েছে।

শুভ্র: এ জন্য তো অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে বড় মূল্য দিতে হলো। বিসর্জন দিতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারই...

গ্রান্ট ফ্লাওয়ার: হ্যাঁ, তা দিতে হয়েছে। তবে এ নিয়ে ও অনেক ভেবেছে। এসেক্স আর সাউথ অস্ট্রেলিয়া থেকে ওর ভালো অফার ছিল। দুই দলই তিন বছরের চুক্তি করতে চাইছিল ওর সঙ্গে। অ্যান্ডি হুট করে ওই সিদ্ধান্ত নেয়নি, ভবিষ্যৎ ঠিক করে তারপরই যা করার করেছে।দুই ভাইয়ের সম্পর্কটা এমন খুনসুটিময়ই ছিল। ছবি: গেটি ইমেজেস

শুভ্র: স্টিভ ওয়াহ একবার বলেছিলেন, মার্ক ওয়াহ তাঁর কাছে অন্য আরেকজন খেলোয়াড়ের মতোই। তার চেয়ে বেশি কিছু নয়। অ্যান্ডি আর আপনার সম্পর্কটাও কি এ রকমই ছিল?

গ্রান্ট ফ্লাওয়ার: আমরা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। আমি বলব না, অ্যান্ডি আমার কাছে দলের অন্য যেকোনো খেলোয়াড়ের মতোই ছিল। আমরা সব সময়ই একসঙ্গে প্র্যাকটিস করতাম। যেকোনো সমস্যায় পড়লে পরামর্শ নিতাম অ্যান্ডির কাছ থেকেই। ওর মাথা খুব ভালো। চরিত্রের দিক থেকেও আমরা দুজন একটু দুই ধরনের। ও ধীরস্থির, শান্ত প্রকৃতির। আমি আবার একটু বেশিই ছটফটে। এটাই হয়তো আমাদের একে অন্যকে সাহায্য করায় কাজে আসত।

শুভ্র: একটা সময় তো অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারকে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান বলেও মানতেন অনেকে। র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরেও ছিলেন দীর্ঘদিন। অ্যান্ডির ব্যাটসম্যানশিপ থেকে কোনো একটা জিনিস নেওয়ার সুযোগ থাকলে আপনি কী নিতেন?

গ্রান্ট ফ্লাওয়ার: মানসিক দৃঢ়তা।

আরও পড়ুন: অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সাক্ষাৎকার

আরও পড়ুন: জিম্বাবুয়ে দলকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার!

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×