শুভ্র.আলাপে পাল্লেকেল টেস্টের সম্ভাব্য ফল

রিজওয়ান রেহমান সাদিদ

২৩ এপ্রিল ২০২১

শুভ্র.আলাপে পাল্লেকেল টেস্টের সম্ভাব্য ফল

শুভ্র.আলাপে নাজমূল আবেদীন ফাহিম ও উৎপল শুভ্র

উৎপলশুভ্রডটকমের ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের নিয়মিত আয়োজন শুভ্র.আলাপ-এর আজকের শোতে উৎপল শুভ্রর অতিথি ছিলেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ নাজমূল আবেদীন ফাহিম। দুজন মিলে বিশ্লেষণ করেছেন পাল্লেকেলে টেস্টের তৃতীয় দিন, অনুমান করার চেষ্টা করেছেন এই টেস্টের সম্ভাব্য পরিণতি। এখানে সেই আলাপের নির্বাচিত অংশ।

তিন দিনেও শেষ হয়নি পাল্লেকেলে টেস্টে দুই দলের একটি করে ইনিংস। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৫৪১ রান তুলে বাংলাদেশ ডিক্লেয়ার করার পর তৃতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২২৯। অবধারিতভাবেই তাই প্রশ্নটা উঁকি দিয়ে যাচ্ছে মনে, এই টেস্ট কি তবে অমীমাংসিতই থাকবে?

উৎপলশুভ্রডটকমের ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের নিয়মিত আয়োজন শুভ্র.আলাপের আজকের শোতে উৎপল শুভ্রর অতিথি ছিলেন ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ নাজমূল আবেদীন ফাহিম। শুরুতেই তাঁকে এই প্রশ্নটাই করলেন উৎপল শুভ্র। ফাহিমও মনে করছেন, এই টেস্টের সম্ভাব্য ফল হিসেবে ড্র-ই সম্ভবত আগে আসবে। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় তিনি বললেন, 'টেস্টটা এখন এমন এক জায়গায় আছে, যেখানে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ভাবতে পারে, টেস্টটা আমরা হারব না। হেরে যাওয়াটা একেবারে অসম্ভবও না কিন্তু, এখনো যদি আমরা খারাপ খেলি, তাহলে হেরেও যেতে পারি। তবে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, হারাটা বোধহয় খুব কঠিন হবে। এখান থেকে তাই শুধু দুটি ফলই হতে পারে। ড্রয়ের সম্ভাবনাটাই বোধ হয় তুলনামূলকভাবে বেশি, আবার বাংলাদেশ কিন্তু জিতেও যেতে পারে।'

এই টেস্ট ড্র হলে যে তা বড় একটা ঘটনা হবে, রেকর্ড দিয়ে সেটি মনে করিয়ে দিয়েছেন উৎপল শুভ্র। ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২৮টি টেস্ট ম্যাচের কোনোটিই ড্র হয়নি। মজার ব্যাপার, এই ২৮ টেস্টে শ্রীলঙ্কার জয়-পরাজয়ও সমান (১৪টি করে)।

সেই সম্ভাবনাকে এগিয়ে রেখেও দুজনই বললেন, তৃতীয় দিনের শেষ সেশনের খেলা থেকে বোঝা গেছে, এই উইকেট থেকে শেষ দুই দিনে আরও সাহায্য পাবেন স্পিনাররা। ফাহিম তাই বলছেন, 'বল মারাত্মক রকমের টার্ন না করলেও উইকেট এনে দেবার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ টার্ন মিলবে এই উইকেটেও, সঙ্গে সুবিধা পাওয়া যাবে বাড়তি বাউন্স থেকেও।' গত কয়েক সিরিজের তুলনায় বাংলাদেশি স্পিনাররা আজ তৃতীয় দিনে কিছুটা ভালো বল করেছেন বলেও মনে করছেন ফাহিম।

বাংলাদেশের জয়ের যে ক্ষীণ আশা এখনো দেখছেন তিনি, তার মূলে রয়েছেন ওই স্পিনাররাই। মেহেদী হাসান মিরাজের বোলিংয়ে মুগ্ধতার কথা বললেন উৎপল শুভ্র, 'মিরাজের বোলিংয়ের লাইন-লেংথ ছিল অসাধারণ। বিশেষ করে আমি মুগ্ধ যেভাবে মিরাজ দারুণ লাইনে বোলিং করে গেছেন।' ফাহিম পুরোপুরি একমত হয়ে যোগ করেছেন, 'মিরাজের বডি ল্যাঙ্গুয়েজটাও ছিল চোখে পড়ার মতো। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে শুরু করে নিয়ন্ত্রণ, সবখানেই মিলেছে আত্মবিশ্বাসের প্রমাণ। বোলিংটা যে ও এনজয় করছে, টিভিতে দেখেও তা বোঝা গেছে পরিষ্কার। তাইজুলও ভালো বোলিং করেছে। তবে তাইজুল যেটা করে, ভালো বোলিং করতে করতে একটা-দুটি খারাপ বল করে ফেলে।'

টেস্টের চতুর্থ দিনে স্পিনারদের ঘিরেই বাংলাদেশের পরিকল্পনা সাজানোর কথা বলছেন ফাহিম। স্পিনারদের জন্য কিছু পরামর্শও আছে তাঁর, 'বাংলাদেশি স্পিনাররা সাধারণত ফ্ল্যাটার ট্র‍্যাজেক্টরিতে বল করে। কিন্তু উইকেটে অনেক ঘাস থাকার কারণে উইকেটে ফ্ল্যাট বল করলে কোনো সুবিধাই আদায় করা যাবে না, বল স্কিড করে চলে যাবে। বরং বলে ফ্লাইট দিলে উইকেটে থাকা টার্ন ও বাউন্সের সুবিধাটা আদায় করে নেওয়া যাবে।'

মেহেদী হাসান মিরাজের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন উৎপল শুভ্র ও শুভ্র.আলাপের অতিথি নাজমূল আবেদীন ফাহিম দুজনই। ছবি: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট

টেস্টের প্রথম দিন শেষে আতহার আলী খানের সঙ্গে শুভ্র.আলাপে উৎপল শুভ্র জানিয়েছিলেন, এই টেস্টে বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাক নিয়ে তিনি খুব খুশি। তিন পেসার ও দুই স্পিনার মিলে একাদশে পাঁচজন বোলার ইতিবাচক একটা বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। আজকের শোতেও উৎপল শুভ্র বললেন, 'তিন পেসার নিয়ে খেলতে নামায় বহুদিন পর বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাককে টেস্টসুলভ মনে হচ্ছে।' সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সফলতম টেস্ট বোলার আবু জায়েদ রাহীর কাছ থেকে আরেকটু ভালো বোলিংয়ের প্রত্যাশা ছিল তাঁর; তবে বাকি দুজন, তাসকিন ও এবাদতের বোলিংয়ে তিনি মোটামুটি সন্তুষ্টই । নাজমূল আবেদীন ফাহিমও একমত এর সঙ্গে, 'পেস বোলাররা খুব ভালো বল করেছে। শর্ট অব লেংথে বল করে ব্যাটসম্যানদের ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে, প্রতিপক্ষকে কষ্ট করে রান করতে হচ্ছে। কাল সকাল-সকাল এক-দুটি উইকেট যদি পেস বোলাররা নিয়ে নেয়, সেটাও পরবর্তী সময়ে খুব কাজে আসবে আমাদের স্পিনারদের জন্য।'

তিন পেসারের মধ্যে উইকেট পেয়েছেন শুধু তাসকিন। তবে অনেক দিন পর বাংলাদেশের বোলিং অ্যাটাককে টেস্টসুলভ মনে হয়েছে দুজনের কাছেই। ছবি: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট

কিন্তু শেষে গিয়ে আবার অল্পের জন্য আক্ষেপে পুড়তে হবে না তো? তাহলে তো নিশ্চিত করেই কাঠগড়ায় উঠবেন ব্যাটসম্যানরা। শুরুতেই উইকেট হারানোর পর দুটি বড় পার্টনারশিপ হলেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা একটু বেশি সাবধানী খেলেছেন বলেই অনেকের ধারণা। নাজমূল আবেদীন ফাহিমও মনে করছেন, বড় পার্টনারশিপের এক পর্যায়ে কিছুটা আক্রমণাত্মক হওয়াই যেত। তা না হওয়াতেই বাংলাদেশ বড় স্কোর করে ফেলার পরও শ্রীলঙ্কা মনের জোরটা হারায়নি। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, 'একটা পার্টনারশিপ যখন হয়, তখন শুরুতে কিছুটা ধীরগতিতেই হয়। তবে এক পর্যায়ে গিয়ে কিছুটা গতি বাড়ানোরও প্রয়োজন হয়। আমার মনে হচ্ছে, এই কাজটা বোধহয় আমরা কোনো পার্টনারশিপেই করিনি। যখন আমরা পুরোপুরি সেটেলড, কন্ট্রোল করছি খেলাটা, তখনও কিন্তু আমাদের রানের চাকা সচল করার চেষ্টা আমরা করিনি। আমাদের পার্টনারশিপগুলো বড় হওয়াতে আমাদের দলীয় সংগ্রহটা খুব বড় হয়েছে, কিন্তু একই গতিতে খেলার কারণে দুটি ক্ষতিও হয়েছে। প্রথমত, কিছু রান আর সময় আমরা হারিয়েছি। এর মাধ্যমে শ্রীলঙ্কাকে হতোদ্যম না হয়ে ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগটাও আমরা দিয়েছি।'

এ প্রসঙ্গে উৎপল শুভ্র জানতে চেয়েছিলেন, একটু সাবধানী ব্যাটিংয়ের পেছনে সাম্প্রতিক ব্যর্থতারও কিছুটা ভূমিকা আছে কি না। সঙ্গে এই ব্যাটিং অ্যাপ্রোচে আসলে বাংলাদেশের কোচ আর অধিনায়কের ব্যক্তিত্বের প্রতিফলনই ঘটেছে বলে তাঁর ধারণার কথাও বলেছেন তিনি। জবাবে তাঁকে সমর্থনই করেছেন ফাহিম, 'ড্রেসিংরুমের আবহ, প্লেয়িং ফিলোসফি কিন্তু কোচ-অধিনায়কসহ সিনিয়র যে ক্রিকেটাররা আছেন, তাঁদের ওপরই নির্ভর করে। তাঁদের চিন্তাভাবনার প্রতিফলন মাঠের খেলায় নিশ্চিতভাবেই পড়ে। আমরা বাইরে থেকে হয়তো ভাবছি, আরেকটু অ্যাগ্রেসিভ হওয়া যেত কি না, থিংকট্যাংক হয়তো বা ভাবছিল "আমাদের আরেকটু সময় কাটানো প্রয়োজন, যেন হারার সুযোগটাই আর না থাকে"। এমন আলোচনা হলেও হতে পারে দলের ভেতরে।'

দুটি বড় পার্টনারশিপের পরও বাংলাদেশের ব্যাটিংটা একটু বেশিই সাবধানী মনে হয়েছে নাজমূল আবেদীন ফাহিমের কাছে। ছবি: শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট

আজকের শুভ্র.আলাপ-এর শিরোনাম ছিল, মীমাংসা হচ্ছে পাল্লেকেলেতে? কিন্তু আলোচনা শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তা ছড়িয়ে গেছে বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে। ফেসবুকে লাইভ দেখতে থাকা দর্শকের নানারকম প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তা হয়ে উঠেছে আরও বৈচিত্র্যময়। নাজমূল আবেদীন ফাহিম তাঁর দীর্ঘ কোচিং অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের ক্রিকেট ও বিভিন্ন ক্রিকেটারকে নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণের কথা বলেছেন। এর সঙ্গে যথারীতি যোগ হয়েছে দুর্দান্ত বিশ্লেষণ। উৎপল শুভ্র তাঁর দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সঙ্গত করেছেন তাঁর সঙ্গে। বলেছেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা, প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন মজার কিছু গল্পও। সেসব আলাদা কোনো লেখার মাধ্যমে জানানো যাবে কোনো এক সময়। 

তা না পড়ে আপনি যদি নিজেই দেখে নিতে চান, খেলা নিয়ে নির্মল আড্ডায় রূপ নেওয়া এই শুভ্র.আলাপ, চাইলেই তা দেখতে পারেন। ওয়েবসাইটের ভিডিও সেকশনে তো আছেই, ইউটিউবের লিংকটাও দেওয়া থাকল এখানেও:

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×