লারার একটু সাহায্য নিয়ে জিতিয়েছিলেন তো আসলে ওয়ালশ!

উৎপল শুভ্র

৫ মার্চ ২০২১

লারার একটু সাহায্য নিয়ে জিতিয়েছিলেন তো আসলে ওয়ালশ!

কোর্টনি ওয়ালশের ব্যাটিং ছিল নির্মল আনন্দের উৎস

কোর্টনি ওয়ালশকে আমার কখনো কখনো হেক্টর হেনরিকে মনে হয়, হেক্টর হেনরিকেকে কোর্টনি ওয়ালশ। ওয়ালশকে না হয় চিনেছেন, এই হেক্টর হেনরিকেটা আবার কে? হেনরিকের সঙ্গে ম্যারাডোনার একটা যোগ আছে, ওয়ালশের সঙ্গে ব্রায়ান লারার। কী, আরও জট পাকিয়ে যাচ্ছে? ঠিক আছে, তাহলে বুঝিয়ে বলি।

কোর্টনি ওয়ালশ আর ব্রায়ান লারাকে চেনেন বলেই ধরে নিচ্ছি। ম্যারাডোনাকে তো অবশ্যই। বাকি থাকেন শুধু হেক্টর হেনরিকে। তাঁর কথা আগে বলে নিই।

১৯৮৬ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডিয়েগো ম্যারাডোনার দ্বিতীয় গোলটার কথা মনে আছে তো? কী অদ্ভুত প্রশ্ন! এটা কি আর ভোলার মতো। দ্বিতীয় গোলটা তো নয়ই, প্রথম গোলটাও না। প্রথম গোলটা না হয় ম্যারাডোনা আর ঈশ্বরের হাতের যৌথ প্রযোজনা। তবে দ্বিতীয় গোলটাতে কি আর কারও অবদান ছিল? এটা কেমনধারা একটা প্রশ্ন হয়ে গেল!  নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে ইংল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক দলকে পেছনে ফেলে করা গোলে আবার কার অবদান থাকবে! এমন ভেবে থাকলে পরিষ্কার বুঝতে পারছি, হেক্টর হেনরিকের বিখ্যাত ওই উক্তিটা আপনার জানা নেই।

ম্যাচশেষে আর্জেন্টিনার ড্রেসিংরুমে যখন ম্যারাডোনাকে ঘিরে উল্লাস চলছে, শাওয়ার থেকে বেরিয়ে এসে হেক্টর হেনরিকে বলেন, 'গোলটা নিয়ে তো অনেক বড় বড় কথা হচ্ছে। তা পাসটা কে দিয়েছিল, বলো দেখি।'

গল্পটা যতবার পড়ি বা বলি, অবধারিতভাবে আমার কোর্টনি ওয়ালশকে মনে পড়ে যায়। একটা লেখায় আমি লিখেওছিলাম, ম্যারাডোনার গোলটা যদি 'গোল অব দ্য সেঞ্চুরি' হয়, তাহলে তো হেক্টর হেনরিকের পাসটাকেও 'পাস অব দ্য সেঞ্চুরি' বলতে হয়।

তা হেক্টর হেনরিকের সঙ্গে কোর্টনি ওয়ালশের কী সম্পর্ক? দুজনের পরিচয় দূরে থাক, কেউ কারও নামও শুনেছেন বলে মনে হয় না। তারপরও কোর্টনি ওয়ালশকে আমার কখনো কখনো হেক্টর হেনরিকে মনে হয়, হেক্টর হেনরিকেকে কোর্টনি ওয়ালশ। বুঝিয়ে না বললে কারণটা আবিষ্কার করা মনে হয় না সম্ভব হবে আপনার পক্ষে। তাহলে বুঝিয়েই বলি। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্রিজটাউনে ব্রায়ান লারার অপরাজিত ১৫৩ রানের ওই ক্ল্যাসিক ইনিংসটির কথা কি আপনার মনে আছে? ম্যারাডোনার ওই গোল যেমন একক কীর্তিধন্য, ব্রিজটাউনের ওই টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ও বলতে গেলে লারার একক অবদান। 

এখানেও অবশ্য একজন 'হেক্টর এনরিকে' আছেন। নামটা আগেই বলে দেওয়ার তিনি কে, তা তো অনুমান করতেই পারছেন। ৩০৮ রানের জয়ের লক্ষ্য থেকে ৬ রান দূরে থাকতে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের নবম উইকেট। শেষ ব্যাটসম্যান কোর্টনি ওয়ালশ। যাঁর ব্যাটিংয়ে নিখাদ বিনোদন ছিল, কিন্তু এক বলের জন্যও নির্ভর করার মতো কোনো উপাদান ছিল না।

ওয়ালশ অবশ্য সেদিন ৫ বল টিকে যান। রান-টান করতে পারেননি, তার দরকারও ছিল না। সে জন্য লারা ছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে একক কৃতিত্বে কোনো ম্যাচ জেতানোর প্রসঙ্গ এলে অবধারিতভাবেই লারার ওই অপরাজিত ১৫৩ রানের ইনিংসের কথা আসে। ওই ইনিংসে আর কে কী করেছিলেন, তা আর মনেই থাকে না। মনে রাখার মতো কিছু তো আসলে আর কেউ করেনওনি। কোর্টনি ওয়ালশের কিন্তু ভিন্নমত আছে। 

অবিশ্বাস্য ওই জয়ের (২৪৮ রানে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের অষ্টম উইকেট) পর ওয়ালশ বলেন, "আই ওঅন দ্য ম্যাচ উইথ আ বিট অব হেল্প ফ্রম মিস্টার ব্রায়ান চার্লস লারা।"

কোর্টনি ওয়ালশ খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই খুব সজ্জন হিসাবে পরিচিত।  উদারতার দিক থেকেই তো দেখছি রীতিমতো মহামানব। ব্রায়ান লারার সামান্য সহায়তার কথা তো তিনি স্বীকার না করলেও পারতেন!

আরও পড়ুন:

ম্যারাডোনা আর হেনরিকের সেই গল্প

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ
আপনার মন্তব্য
আরও পড়ুন
×